মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১ বছরেও শুরু হয়নি বিচারকাজ। তদন্ত শেষ করে এখনো আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১। যদিও হত্যার এক বছরের মাথায় খুনিদের শনাক্ত করে, হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে খসড়া চার্জশিট তুলে ধরেছিল সংস্থাটি।
এরই মধ্যে ৭০ বার আদালতে উঠেছে এ মামলার নথিপত্র। আদালত একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থাকে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল করার তাগিদ দিলেও তা আমলে নেয়নি সংস্থাটি। পক্ষান্তরে তদন্ত শেষ হয়নি দাবি করে বারবার সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে, যা অপরাধীদের শাস্তি এড়ানোর অঘোষিত ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলে দাবি নিহতের স্বজনদের।
রাজনৈতিক কারণে ত্বকী হত্যা হয়েছে এবং রাজনৈতিক কারণেই বিচারকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে মনে করেন ত্বকীর স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষী। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে প্রভাবশালী ওসমান পরিবার জড়িত থাকায় বিচারকাজ শুরু হচ্ছে না মন্তব্য করে ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, হত্যাকা-ের এক বছর হওয়ার আগে তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত শেষ করেছে। তারা বলেছিল, অচিরেই এই তদন্ত প্রতিবেদন আমরা আদালতে জমা দেবো। এর তিন মাসের মাথায় প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন, আমি ওসমান পরিবারকে দেখে রাখবো। তারপরই সমস্তকিছু বন্ধ হয়ে যায়। সে যাকে দেখে রাখবে বলে, তাকে বিচারের আওতায় আনার সাধ্য কার?
তবু ত্বকীর বাবা-মা ও শুভাকাক্সক্ষীরা বিশ^াস করেন বিচার একদিন হবেই। তাই ত্বকীরসহ সব হত্যা ও অবিচারের কথা তুলে ধরে নিয়মিত কর্মসূচি পালন ও বিচারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন এই পিতা। কিন্তু বিচার পাবার এই অপেক্ষা কত দীর্ঘ হবে তা জানে না কেউ!
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ওইদিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি।
পরদিন মেধাবী এই কিশোরের এ লেভেল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে সারাবিশ্বে ও রসায়নে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়। তবে রেজাল্টশিট দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। সেদিন রাতেই অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়।
পরে ১৮ মার্চ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি অবগতিপত্র দেন রফিউর রাব্বি।
শুরুতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা তদন্ত করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব-১১। হত্যাকা-ের এক বছরের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ত্বকী হত্যার কারণ স্পষ্ট, আসামিও চিহ্নিত। অভিযোগপত্রও প্রায় তৈরি। অল্প সময়ের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করা হবে।
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠক রফিউর রাব্বিকে ‘শায়েস্তা করতেই’ তার বড় ছেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানায় র্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। র্যাব জানায়, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন রফিউর রাব্বি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন একেএম শামীম ওসমান। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের মালিকেরা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। রাব্বি এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এসব কারণেই বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে শায়েস্তা করতে ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
আজমেরী ওসমানের ‘পরিকল্পনা, নির্দেশ ও সক্রিয় অংশগ্রহণে’ এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে বলেও জানায় র্যাব। আজমেরী সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে এবং বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা।
খসড়া অভিযোগপত্রে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ১১ জনের নাম উল্লেখ করে র্যাব। যার মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত থাকায় কথা জানিয়ে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। গ্রেপ্তারকৃতরা বর্তমানে জামিনে রয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি জামিনে থাকা ৫ অপরাধী আদালতে হাজিরা দিয়েছে বলে জানান ত্বকীর আইনজীবী প্রদীপ সাহা।
কেমন আছেন জানতে চাইলে ত্বকীর মা রওনক রেহানা বলেন, সবসময়ই এক রকম কাটে। সবসময় মনে হয়, ছেলেটাকে রাখতে পারলাম না। বার বার এটাই মনে হয়। ভাবি, কি করলে ছেলেটাকে রাখাযেত। কীভাবে চলে গেল। ওরা কেন এ রকম করলো! ওদের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। আমার ছেলের সঙ্গেও কোনো শত্রুতা ছিল না। শত্রুতার কোনো প্রশ্নই উঠে না। তার (ত্বকীর পিতা) সঙ্গেই বা কি! মানুষ মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কথা বলে, এটার জন্য ছেলেটাকে মেরে ফেলবে! সারাক্ষণই এটা ভাবি। বছরের এই সময় বলে না। সবসময়ই ভাবি।
অভিযোগপত্রের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। আমাদের সঙ্গে র্যাব হেড কোয়ার্টারও তদন্ত করছে। তবে কবে নাগাদ অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে সেই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ শহরে আলোকশিখা প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। প্রতি মাসের ৮ তারিখ এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি থেকে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্জের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ বলেন, র্যাব তদন্ত করে কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে তাদের ১১ জনের নাম প্রকাশ করেছিল। র্যাবের প্রধান কর্মকর্তা দেশেবাসীকে জানিয়েছে। এরপরও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। র্যাব যাদের নাম প্রকাশ করেছে, ত্বকীর ঘাতকরা প্রশাসনের সহায়তায়, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ছত্রচ্ছায়ায় আছে।
রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সন্তানরা ত্বকীকে হত্যা করেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তার বন্ধুরা ত্বকীকে হত্যা করেছে। সেটা র্যাবই বলে দিয়েছে, সারাদেশবাসী জানে। তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিচারকে আটকে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি জানেন কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে। তাই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের অধীনে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ত্বকী হত্যার ১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। ৬ মার্চ বন্দর উপজেলায় সিরাজ শাহর আস্তানায় ত্বকীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল। বিকেলে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ৭ মার্চ বিকালে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল পার্কে শিশু সমাবেশ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। ৮ মার্চ বিকেলে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে “নবম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা” এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
বুধবার, ০৬ মার্চ ২০২৪
মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১ বছরেও শুরু হয়নি বিচারকাজ। তদন্ত শেষ করে এখনো আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১। যদিও হত্যার এক বছরের মাথায় খুনিদের শনাক্ত করে, হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে খসড়া চার্জশিট তুলে ধরেছিল সংস্থাটি।
এরই মধ্যে ৭০ বার আদালতে উঠেছে এ মামলার নথিপত্র। আদালত একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থাকে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল করার তাগিদ দিলেও তা আমলে নেয়নি সংস্থাটি। পক্ষান্তরে তদন্ত শেষ হয়নি দাবি করে বারবার সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে, যা অপরাধীদের শাস্তি এড়ানোর অঘোষিত ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলে দাবি নিহতের স্বজনদের।
রাজনৈতিক কারণে ত্বকী হত্যা হয়েছে এবং রাজনৈতিক কারণেই বিচারকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে মনে করেন ত্বকীর স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষী। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে প্রভাবশালী ওসমান পরিবার জড়িত থাকায় বিচারকাজ শুরু হচ্ছে না মন্তব্য করে ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, হত্যাকা-ের এক বছর হওয়ার আগে তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত শেষ করেছে। তারা বলেছিল, অচিরেই এই তদন্ত প্রতিবেদন আমরা আদালতে জমা দেবো। এর তিন মাসের মাথায় প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন, আমি ওসমান পরিবারকে দেখে রাখবো। তারপরই সমস্তকিছু বন্ধ হয়ে যায়। সে যাকে দেখে রাখবে বলে, তাকে বিচারের আওতায় আনার সাধ্য কার?
তবু ত্বকীর বাবা-মা ও শুভাকাক্সক্ষীরা বিশ^াস করেন বিচার একদিন হবেই। তাই ত্বকীরসহ সব হত্যা ও অবিচারের কথা তুলে ধরে নিয়মিত কর্মসূচি পালন ও বিচারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন এই পিতা। কিন্তু বিচার পাবার এই অপেক্ষা কত দীর্ঘ হবে তা জানে না কেউ!
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ওইদিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি।
পরদিন মেধাবী এই কিশোরের এ লেভেল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে সারাবিশ্বে ও রসায়নে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়। তবে রেজাল্টশিট দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। সেদিন রাতেই অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়।
পরে ১৮ মার্চ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি অবগতিপত্র দেন রফিউর রাব্বি।
শুরুতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা তদন্ত করলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব-১১। হত্যাকা-ের এক বছরের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ত্বকী হত্যার কারণ স্পষ্ট, আসামিও চিহ্নিত। অভিযোগপত্রও প্রায় তৈরি। অল্প সময়ের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করা হবে।
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠক রফিউর রাব্বিকে ‘শায়েস্তা করতেই’ তার বড় ছেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানায় র্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। র্যাব জানায়, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন রফিউর রাব্বি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন একেএম শামীম ওসমান। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের মালিকেরা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। রাব্বি এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এসব কারণেই বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে শায়েস্তা করতে ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
আজমেরী ওসমানের ‘পরিকল্পনা, নির্দেশ ও সক্রিয় অংশগ্রহণে’ এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে বলেও জানায় র্যাব। আজমেরী সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে এবং বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা।
খসড়া অভিযোগপত্রে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ১১ জনের নাম উল্লেখ করে র্যাব। যার মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত থাকায় কথা জানিয়ে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। গ্রেপ্তারকৃতরা বর্তমানে জামিনে রয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি জামিনে থাকা ৫ অপরাধী আদালতে হাজিরা দিয়েছে বলে জানান ত্বকীর আইনজীবী প্রদীপ সাহা।
কেমন আছেন জানতে চাইলে ত্বকীর মা রওনক রেহানা বলেন, সবসময়ই এক রকম কাটে। সবসময় মনে হয়, ছেলেটাকে রাখতে পারলাম না। বার বার এটাই মনে হয়। ভাবি, কি করলে ছেলেটাকে রাখাযেত। কীভাবে চলে গেল। ওরা কেন এ রকম করলো! ওদের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। আমার ছেলের সঙ্গেও কোনো শত্রুতা ছিল না। শত্রুতার কোনো প্রশ্নই উঠে না। তার (ত্বকীর পিতা) সঙ্গেই বা কি! মানুষ মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কথা বলে, এটার জন্য ছেলেটাকে মেরে ফেলবে! সারাক্ষণই এটা ভাবি। বছরের এই সময় বলে না। সবসময়ই ভাবি।
অভিযোগপত্রের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। আমাদের সঙ্গে র্যাব হেড কোয়ার্টারও তদন্ত করছে। তবে কবে নাগাদ অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে সেই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ শহরে আলোকশিখা প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। প্রতি মাসের ৮ তারিখ এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি থেকে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্জের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ বলেন, র্যাব তদন্ত করে কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে তাদের ১১ জনের নাম প্রকাশ করেছিল। র্যাবের প্রধান কর্মকর্তা দেশেবাসীকে জানিয়েছে। এরপরও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। র্যাব যাদের নাম প্রকাশ করেছে, ত্বকীর ঘাতকরা প্রশাসনের সহায়তায়, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ছত্রচ্ছায়ায় আছে।
রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সন্তানরা ত্বকীকে হত্যা করেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তার বন্ধুরা ত্বকীকে হত্যা করেছে। সেটা র্যাবই বলে দিয়েছে, সারাদেশবাসী জানে। তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিচারকে আটকে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি জানেন কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে। তাই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের অধীনে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ত্বকী হত্যার ১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। ৬ মার্চ বন্দর উপজেলায় সিরাজ শাহর আস্তানায় ত্বকীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল। বিকেলে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ৭ মার্চ বিকালে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল পার্কে শিশু সমাবেশ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। ৮ মার্চ বিকেলে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে “নবম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা” এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।