alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনার পেছনে রয়েছে দ্বৈত প্রেমিকের নির্মম প্রতিশোধ নেয়ার গল্প। পুলিশ বলছে, ভগ্নিপতির মাধ্যমে ব্যারিস্টার মাসুদ নামে এক আইনজীবীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণি। বেশিরভাগ সময় প্রবাসে থাকা মাসুদ দেশে ফিরলে তার সঙ্গে লিভ টুগেদার করতেন এবং মাসুদের ভাড়া করে দেয়া বাসায় থাকতেন। এরইমধ্যে সান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নির্মম প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন ব্যারিস্টার মাসুদ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত হন ২য় বন্ধু সান। এরই ধারাবাহিকতায় ওই তরুণীকে বন্দী করে গণধর্ষণ করে ভিডিও পাঠানো হতো মাসুদকে।

এভাবে ২৫ দিন বন্দী থাকার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই তরুণীকে ২৯ মার্চ শুক্রবার রাতে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- ২য় বন্ধু সান, হিমেল, রকি ও সালমা ওরফে ঝুমুর। গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাবাদে পুলিশ এই দ্বৈত প্রেমিকের ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে। পরে সোমবার (১ এপ্রিল) তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এরআগে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী।

সোমবার নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক বলেন, মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ভবন থেকে ৯৯৯ এর কলে শিকলবন্দী অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী তরুণী জানায়, বাবা মায়ের বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকত। সেসময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক ব্যারিস্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ব্যারিস্টার মাসুদের সঙ্গে লিভ টুগেদার করত সে। মাসুদ বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকত। দেশে আসলে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সঙ্গে থাকত। পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ওই ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠে ওই নারী। যার সব খরচ বহন করত মাসুদ।

আসামি সালমা ও ভুক্তভোগী তরুণী একসঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করত। সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর গ্রিন সিটি এলাকায় ঘুরতে গিয়ে গ্রেপ্তার হিমেল ও সানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে সালমা, হিমেল ও সান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে আসামি সানের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সুবাদে হিমেল ও সান ভিকটিমের বাসায় আসা-যাওয়া করত। আসামি সানের সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর সম্পর্কের বিষয়টি ব্যারিস্টার মাসুদকে জানান সালমা।

ব্যারিস্টার মাসুদ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে শিক্ষা দিতে হবে বলে সালমাকে জানায়। মাসুদ সালমাকে ওই তরুণীকে আটক করে তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করতে বলে। মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে আটক ও ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকির সঙ্গে শেয়ার করে। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীর বাসায় আসামি সান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি সালমা রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে। পরে সান একাধিকবার ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর বাসায় এসে তাকে সারপ্রাইজ দেবে জানিয়ে তাকে চোখ বন্ধ করতে বলে। পরে ভুক্তভোগী নারী চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। হিমেল ভুক্তভোগী নারীকে একটি রুমে আটকে রেখে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর হিমেল ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সালমা বাইরে গিয়ে শেকল ও তালা কিনে নিয়ে আসে। ওইদিন বিকেলে আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর হাতে ও পায়ে শেকল লাগিয়ে রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সঙ্গে আটকে রাখে। এরপর গত ৭ মার্চ রাতে আসামি রকি জোরপূর্বক ওই নারীকে ধর্ষণ করে। আসামিরা শুধু খাওয়ার সময় ভুক্তভোগী নারীর হাতের শেকল খুলে দিত।

ডিসি আরও বলেন, গত ৮ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী নারীকে বিভিন্ন পর্ণ ভিডিও দেখায়। সে অনুযায়ী ওই নারীকে একই কাজ করতে বাধ্য করে। ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি সান, হিমেল, রকি ও সালমা বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্ণ ভিডিওর মতো করে আলাদা আলাদা পর্ণ ভিডিও ধারণ করে। প্রতিদিনের ধারণ করা ভিডিও সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের কাছে পাঠাতো। আসামিরা তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় ও অমানুষিক আচরণ করে।

গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় সালমা ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বাইরে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে সে জানালা দিয়ে চিৎকার দেয়। ওই তরুণীর চিৎকারে এক পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে শিকল বাধা অবস্থায় ওই ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে ও আলামত সংগ্রহ করে। বর্তমানে ওই নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন আছে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ডিসি।

এদিকে, গ্রেপ্তার ওই ৪ জনকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে তদন্ত কর্মকর্তাকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এরআগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর ফারুকুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডের পক্ষের শুনানি করেন।

শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আসামি সান ঘটনা বিষয়ে কিছু জানে না। আসামির সঙ্গে বাদীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে না করার কারণে এই মামলা সৃষ্টি হয়েছে। এরপর সান আদালতের উদ্দেশে বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, সংশ্লিষ্টদের সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে।

ছবি

চুনারুঘাটে হামলা করে জমি দখলের চেষ্টায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার -৩

নোয়াখালীর শীর্ষ সন্ত্রাসী খালাসি সুমন গ্রেপ্তার.

যশোরে চাঞ্চল্যকর মিঠু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি গ্রেফতার

ছবি

সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বিমানবন্দরে আটক

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সোনাসহ দুই নারী আটক

ছবি

কারাগার থেকে পালানো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ‘গন্ডার’কে গ্রেফতার করল র‌্যাব

ছবি

চিকিৎসকদের ওপর হামলা, গাইবান্ধা থেকে সঞ্জয় পাল গ্রেপ্তার

প্রভাবশালীদের দখলে বটতলী খাল : বানের পানি নামছে না, ভোগান্তিতে হাজার হাজার পরিবার

নোয়াখালীতে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

যমুনা সার কারখানায় চাঁদাবাজি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মারামারি, আহত -৭

শ্রীনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত-৩

ফরিদপুরে হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদন্ড

ছবি

গণহত্যায় উস্কানি : ৩০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

যাত্রাবাড়ীতে অন্তঃসত্ত্বার পেটে ছুরিকাঘাত গর্ভের সন্তানসহ মৃত্যু

ওসমানীতে ১৬ কেজি স্বর্ণসহ দুবাই ফেরত যাত্রী আটক

মোংলায় ছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

ছবি

র‍্যাবের ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলি’ : সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকও হত্যা মামলার আসামি

ছবি

শেখ হাসিনার প্রশ্রয় না পেলে আনভীররা বেপরোয়া হতো না : মুনিয়ার বোন

ছবি

শেখ হাসিনার সঙ্গে এবার রেহানা, জয় এবং পুতুলও আসামি

নরসিংদীতে ডিম ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

সাবেক আইজিপি মামুনসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলা

যশোরে ইটভাটা শ্রমিক রওশনারা হত্যা মামলায় প্রেমিক আলাউদ্দিনের যাবজ্জীবন

ছবি

সাভারে সাবেক দুই এমপিসহ ১১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

ছবি

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঘুষবাণিজ্যের তদন্তে দুদক

ছবি

র‍্যানসমওয়্যার হামলাকারীদের চুরি করা তথ্য ব্যবহার নিয়ে সফোসের প্রতিবেদন প্রকাশ

ছবি

কর্মীদের ওপর হামলা ও স্থাপনার ক্ষতিসাধনের বিচার দাবি সাইনোভিয়া ফার্মার

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রীরা ও আওয়ামী লীগসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

‘গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা...’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা

ছবি

মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক দখলের চেষ্টা, গুলিতে আহত ৬

ছবি

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা, গুলিবিদ্ধ ৬

ছবি

মোরেলগঞ্জে পুলিশসহ ১০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা-ভাঙচুর

হবিগঞ্জে সেনা সদস্য পরিচয়ে পুলিশ ফাঁড়ির মোটর সাইকেল চুরি, আটক ৩

সাতক্ষীরায় আ’লীগ নেতা ও হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন

ছবি

স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছেন ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর

প্রশ্নফাঁস : পিএসসির ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

ছবি

সেতু ভবনে হামলা : আসিফ মাহতাব ও সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ৬ দিনের রিমান্ডে

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনার পেছনে রয়েছে দ্বৈত প্রেমিকের নির্মম প্রতিশোধ নেয়ার গল্প। পুলিশ বলছে, ভগ্নিপতির মাধ্যমে ব্যারিস্টার মাসুদ নামে এক আইনজীবীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণি। বেশিরভাগ সময় প্রবাসে থাকা মাসুদ দেশে ফিরলে তার সঙ্গে লিভ টুগেদার করতেন এবং মাসুদের ভাড়া করে দেয়া বাসায় থাকতেন। এরইমধ্যে সান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নির্মম প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন ব্যারিস্টার মাসুদ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত হন ২য় বন্ধু সান। এরই ধারাবাহিকতায় ওই তরুণীকে বন্দী করে গণধর্ষণ করে ভিডিও পাঠানো হতো মাসুদকে।

এভাবে ২৫ দিন বন্দী থাকার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই তরুণীকে ২৯ মার্চ শুক্রবার রাতে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- ২য় বন্ধু সান, হিমেল, রকি ও সালমা ওরফে ঝুমুর। গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাবাদে পুলিশ এই দ্বৈত প্রেমিকের ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে। পরে সোমবার (১ এপ্রিল) তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এরআগে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী।

সোমবার নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক বলেন, মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ভবন থেকে ৯৯৯ এর কলে শিকলবন্দী অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী তরুণী জানায়, বাবা মায়ের বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকত। সেসময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক ব্যারিস্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ব্যারিস্টার মাসুদের সঙ্গে লিভ টুগেদার করত সে। মাসুদ বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকত। দেশে আসলে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সঙ্গে থাকত। পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ওই ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠে ওই নারী। যার সব খরচ বহন করত মাসুদ।

আসামি সালমা ও ভুক্তভোগী তরুণী একসঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করত। সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর গ্রিন সিটি এলাকায় ঘুরতে গিয়ে গ্রেপ্তার হিমেল ও সানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে সালমা, হিমেল ও সান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে আসামি সানের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সুবাদে হিমেল ও সান ভিকটিমের বাসায় আসা-যাওয়া করত। আসামি সানের সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর সম্পর্কের বিষয়টি ব্যারিস্টার মাসুদকে জানান সালমা।

ব্যারিস্টার মাসুদ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে শিক্ষা দিতে হবে বলে সালমাকে জানায়। মাসুদ সালমাকে ওই তরুণীকে আটক করে তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করতে বলে। মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে আটক ও ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকির সঙ্গে শেয়ার করে। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীর বাসায় আসামি সান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি সালমা রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে। পরে সান একাধিকবার ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর বাসায় এসে তাকে সারপ্রাইজ দেবে জানিয়ে তাকে চোখ বন্ধ করতে বলে। পরে ভুক্তভোগী নারী চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। হিমেল ভুক্তভোগী নারীকে একটি রুমে আটকে রেখে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর হিমেল ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সালমা বাইরে গিয়ে শেকল ও তালা কিনে নিয়ে আসে। ওইদিন বিকেলে আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর হাতে ও পায়ে শেকল লাগিয়ে রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সঙ্গে আটকে রাখে। এরপর গত ৭ মার্চ রাতে আসামি রকি জোরপূর্বক ওই নারীকে ধর্ষণ করে। আসামিরা শুধু খাওয়ার সময় ভুক্তভোগী নারীর হাতের শেকল খুলে দিত।

ডিসি আরও বলেন, গত ৮ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী নারীকে বিভিন্ন পর্ণ ভিডিও দেখায়। সে অনুযায়ী ওই নারীকে একই কাজ করতে বাধ্য করে। ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি সান, হিমেল, রকি ও সালমা বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্ণ ভিডিওর মতো করে আলাদা আলাদা পর্ণ ভিডিও ধারণ করে। প্রতিদিনের ধারণ করা ভিডিও সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের কাছে পাঠাতো। আসামিরা তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় ও অমানুষিক আচরণ করে।

গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় সালমা ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বাইরে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে সে জানালা দিয়ে চিৎকার দেয়। ওই তরুণীর চিৎকারে এক পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে শিকল বাধা অবস্থায় ওই ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে ও আলামত সংগ্রহ করে। বর্তমানে ওই নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন আছে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ডিসি।

এদিকে, গ্রেপ্তার ওই ৪ জনকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে তদন্ত কর্মকর্তাকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এরআগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর ফারুকুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডের পক্ষের শুনানি করেন।

শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আসামি সান ঘটনা বিষয়ে কিছু জানে না। আসামির সঙ্গে বাদীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে না করার কারণে এই মামলা সৃষ্টি হয়েছে। এরপর সান আদালতের উদ্দেশে বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, সংশ্লিষ্টদের সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে।

back to top