alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনার পেছনে রয়েছে দ্বৈত প্রেমিকের নির্মম প্রতিশোধ নেয়ার গল্প। পুলিশ বলছে, ভগ্নিপতির মাধ্যমে ব্যারিস্টার মাসুদ নামে এক আইনজীবীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণি। বেশিরভাগ সময় প্রবাসে থাকা মাসুদ দেশে ফিরলে তার সঙ্গে লিভ টুগেদার করতেন এবং মাসুদের ভাড়া করে দেয়া বাসায় থাকতেন। এরইমধ্যে সান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নির্মম প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন ব্যারিস্টার মাসুদ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত হন ২য় বন্ধু সান। এরই ধারাবাহিকতায় ওই তরুণীকে বন্দী করে গণধর্ষণ করে ভিডিও পাঠানো হতো মাসুদকে।

এভাবে ২৫ দিন বন্দী থাকার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই তরুণীকে ২৯ মার্চ শুক্রবার রাতে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- ২য় বন্ধু সান, হিমেল, রকি ও সালমা ওরফে ঝুমুর। গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাবাদে পুলিশ এই দ্বৈত প্রেমিকের ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে। পরে সোমবার (১ এপ্রিল) তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এরআগে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী।

সোমবার নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক বলেন, মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ভবন থেকে ৯৯৯ এর কলে শিকলবন্দী অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী তরুণী জানায়, বাবা মায়ের বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকত। সেসময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক ব্যারিস্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ব্যারিস্টার মাসুদের সঙ্গে লিভ টুগেদার করত সে। মাসুদ বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকত। দেশে আসলে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সঙ্গে থাকত। পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ওই ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠে ওই নারী। যার সব খরচ বহন করত মাসুদ।

আসামি সালমা ও ভুক্তভোগী তরুণী একসঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করত। সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর গ্রিন সিটি এলাকায় ঘুরতে গিয়ে গ্রেপ্তার হিমেল ও সানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে সালমা, হিমেল ও সান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে আসামি সানের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সুবাদে হিমেল ও সান ভিকটিমের বাসায় আসা-যাওয়া করত। আসামি সানের সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর সম্পর্কের বিষয়টি ব্যারিস্টার মাসুদকে জানান সালমা।

ব্যারিস্টার মাসুদ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে শিক্ষা দিতে হবে বলে সালমাকে জানায়। মাসুদ সালমাকে ওই তরুণীকে আটক করে তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করতে বলে। মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে আটক ও ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকির সঙ্গে শেয়ার করে। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীর বাসায় আসামি সান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি সালমা রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে। পরে সান একাধিকবার ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর বাসায় এসে তাকে সারপ্রাইজ দেবে জানিয়ে তাকে চোখ বন্ধ করতে বলে। পরে ভুক্তভোগী নারী চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। হিমেল ভুক্তভোগী নারীকে একটি রুমে আটকে রেখে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর হিমেল ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সালমা বাইরে গিয়ে শেকল ও তালা কিনে নিয়ে আসে। ওইদিন বিকেলে আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর হাতে ও পায়ে শেকল লাগিয়ে রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সঙ্গে আটকে রাখে। এরপর গত ৭ মার্চ রাতে আসামি রকি জোরপূর্বক ওই নারীকে ধর্ষণ করে। আসামিরা শুধু খাওয়ার সময় ভুক্তভোগী নারীর হাতের শেকল খুলে দিত।

ডিসি আরও বলেন, গত ৮ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী নারীকে বিভিন্ন পর্ণ ভিডিও দেখায়। সে অনুযায়ী ওই নারীকে একই কাজ করতে বাধ্য করে। ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি সান, হিমেল, রকি ও সালমা বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্ণ ভিডিওর মতো করে আলাদা আলাদা পর্ণ ভিডিও ধারণ করে। প্রতিদিনের ধারণ করা ভিডিও সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের কাছে পাঠাতো। আসামিরা তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় ও অমানুষিক আচরণ করে।

গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় সালমা ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বাইরে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে সে জানালা দিয়ে চিৎকার দেয়। ওই তরুণীর চিৎকারে এক পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে শিকল বাধা অবস্থায় ওই ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে ও আলামত সংগ্রহ করে। বর্তমানে ওই নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন আছে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ডিসি।

এদিকে, গ্রেপ্তার ওই ৪ জনকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে তদন্ত কর্মকর্তাকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এরআগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর ফারুকুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডের পক্ষের শুনানি করেন।

শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আসামি সান ঘটনা বিষয়ে কিছু জানে না। আসামির সঙ্গে বাদীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে না করার কারণে এই মামলা সৃষ্টি হয়েছে। এরপর সান আদালতের উদ্দেশে বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, সংশ্লিষ্টদের সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে।

আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফসহ ৩৩ আসামি অভিযুক্ত

ছবি

ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতরা অচিরেই গ্রেফতার

ফরিদগঞ্জে মাকে জবাই করে হত্যা করলো ছেলে

সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলেসহ কারাগারে ৩

প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

মেয়েকে ধর্ষণের অপরাধে জন্মদাতা পিতার মৃত্যুদণ্ড

ছবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এক সদস্য গ্রেপ্তার

অর্থপাচার: সকল আসামিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডিবিতে ডাকা হয়েছে কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে

সখীপুরে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবা গাঁজাসহ গ্রেফতার দুই

রাবিতে শহীদ কামারুজ্জামান হল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

ছবি

ড. ইউনূসকে ২৩ মে পর্যন্ত জামিন

ছবি

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাই ও চুরি হওয়া ফোন সেট উদ্ধার

মতলবে ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুনের রহস্য উন্মোচন,মূল আসামী সহ ৩ জন গ্রেফতার

ছবি

লঞ্চে বোরকা পরে ছিনতাই করতেন তারা

বন্ধুর সহায়তায় প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করে ঘরের মালামাল লুট করে আপন ভাই

গাজীপুরে ৩জন ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক

ছবি

আইন অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দুদকের মামলায় সাবেক এমপি কাদের খানের চার বছরের দন্ড

গাজীপুরে পুত্রকে কুপিয়ে হত্যা, পিতা আটক

ছবি

এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

সিলেটে ‘ধর্ষক’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গ্রপ্তার করেছে র‌্যাব

ছবি

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

মুন্সীগঞ্জে ডালিম হ.ত্যা মামলার ৬ আসামি জেলহাজতে

ছবি

শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

ছবি

গেন্ডারিয়ায় ৯৮৩ পিস ভয়াবহ মাদক বুপ্রেনরফিনসহ গ্রেপ্তার কারবারি

ছবি

সিলেটে তরুণীকে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ অধরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ অভিযুক্তরা

নারায়ণগঞ্জে প্রেমিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের প্রতারণার মামলা

ছবি

মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫ জন

ছবি

দুই বছরের দণ্ড ২৭ বছর পর বাতিল, রায়ের কপি যাচ্ছে সব আদালতে

ছবি

মানিকদির জমি দখল নাজিমের দৌরাত্ম্য থামছেই না, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার পলাতক ২ আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ঢাকায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

রামুর কচ্ছপিয়ায় ছুরিকাঘাতে ছায়া হত্যার ঘটনায় আটক দুই

ছবি

মহেশখালীর সিরিয়াল কিলার আজরাইল গ্রেফতার

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনার পেছনে রয়েছে দ্বৈত প্রেমিকের নির্মম প্রতিশোধ নেয়ার গল্প। পুলিশ বলছে, ভগ্নিপতির মাধ্যমে ব্যারিস্টার মাসুদ নামে এক আইনজীবীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণি। বেশিরভাগ সময় প্রবাসে থাকা মাসুদ দেশে ফিরলে তার সঙ্গে লিভ টুগেদার করতেন এবং মাসুদের ভাড়া করে দেয়া বাসায় থাকতেন। এরইমধ্যে সান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নির্মম প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন ব্যারিস্টার মাসুদ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত হন ২য় বন্ধু সান। এরই ধারাবাহিকতায় ওই তরুণীকে বন্দী করে গণধর্ষণ করে ভিডিও পাঠানো হতো মাসুদকে।

এভাবে ২৫ দিন বন্দী থাকার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই তরুণীকে ২৯ মার্চ শুক্রবার রাতে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- ২য় বন্ধু সান, হিমেল, রকি ও সালমা ওরফে ঝুমুর। গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাবাদে পুলিশ এই দ্বৈত প্রেমিকের ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে। পরে সোমবার (১ এপ্রিল) তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এরআগে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী।

সোমবার নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক বলেন, মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ভবন থেকে ৯৯৯ এর কলে শিকলবন্দী অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী তরুণী জানায়, বাবা মায়ের বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকত। সেসময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক ব্যারিস্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ব্যারিস্টার মাসুদের সঙ্গে লিভ টুগেদার করত সে। মাসুদ বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকত। দেশে আসলে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সঙ্গে থাকত। পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ওই ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠে ওই নারী। যার সব খরচ বহন করত মাসুদ।

আসামি সালমা ও ভুক্তভোগী তরুণী একসঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করত। সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর গ্রিন সিটি এলাকায় ঘুরতে গিয়ে গ্রেপ্তার হিমেল ও সানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে সালমা, হিমেল ও সান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে আসামি সানের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সুবাদে হিমেল ও সান ভিকটিমের বাসায় আসা-যাওয়া করত। আসামি সানের সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর সম্পর্কের বিষয়টি ব্যারিস্টার মাসুদকে জানান সালমা।

ব্যারিস্টার মাসুদ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে শিক্ষা দিতে হবে বলে সালমাকে জানায়। মাসুদ সালমাকে ওই তরুণীকে আটক করে তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করতে বলে। মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে আটক ও ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকির সঙ্গে শেয়ার করে। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীর বাসায় আসামি সান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি সালমা রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে। পরে সান একাধিকবার ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর বাসায় এসে তাকে সারপ্রাইজ দেবে জানিয়ে তাকে চোখ বন্ধ করতে বলে। পরে ভুক্তভোগী নারী চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। হিমেল ভুক্তভোগী নারীকে একটি রুমে আটকে রেখে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর হিমেল ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সালমা বাইরে গিয়ে শেকল ও তালা কিনে নিয়ে আসে। ওইদিন বিকেলে আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর হাতে ও পায়ে শেকল লাগিয়ে রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সঙ্গে আটকে রাখে। এরপর গত ৭ মার্চ রাতে আসামি রকি জোরপূর্বক ওই নারীকে ধর্ষণ করে। আসামিরা শুধু খাওয়ার সময় ভুক্তভোগী নারীর হাতের শেকল খুলে দিত।

ডিসি আরও বলেন, গত ৮ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী নারীকে বিভিন্ন পর্ণ ভিডিও দেখায়। সে অনুযায়ী ওই নারীকে একই কাজ করতে বাধ্য করে। ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি সান, হিমেল, রকি ও সালমা বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্ণ ভিডিওর মতো করে আলাদা আলাদা পর্ণ ভিডিও ধারণ করে। প্রতিদিনের ধারণ করা ভিডিও সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের কাছে পাঠাতো। আসামিরা তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় ও অমানুষিক আচরণ করে।

গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় সালমা ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বাইরে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে সে জানালা দিয়ে চিৎকার দেয়। ওই তরুণীর চিৎকারে এক পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে শিকল বাধা অবস্থায় ওই ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে ও আলামত সংগ্রহ করে। বর্তমানে ওই নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন আছে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ডিসি।

এদিকে, গ্রেপ্তার ওই ৪ জনকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে তদন্ত কর্মকর্তাকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এরআগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর ফারুকুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডের পক্ষের শুনানি করেন।

শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আসামি সান ঘটনা বিষয়ে কিছু জানে না। আসামির সঙ্গে বাদীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে না করার কারণে এই মামলা সৃষ্টি হয়েছে। এরপর সান আদালতের উদ্দেশে বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, সংশ্লিষ্টদের সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে।

back to top