ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমান সরকারি চাকরি করে দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তানের সাংসারিক দায়িত্ব পালনের পরও তাদের ও আত্মীয়-স্বজনের নামে গড়েছেন বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এ পর্যন্ত দেশেই তার প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকাতেই অন্তত দুই ডজন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে। তার অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধান তদন্তে নামা দুদক ও গোয়েন্দাদের ধারণা, চাকরির নামে সার্বক্ষণিক নানা অপতৎপরতায় জড়িত হয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির ব্যবস্থা করে দিয়ে অবৈধভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই রাজস্ব কর্মকর্তা।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানের এই রাজস্ব কর্মকর্তার চারটি ফ্ল্যাট। সেখানেই প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে সপরিবারে বাস করতেন মতিউর। দ্বিতীয় বিয়েতেও অসুবিধা হয়নি তার। তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার থাকেন লালমাটিয়ার ভবনে। তার নামে কাকরাইলেও একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন মতিউর। তার অবৈধ টাকায় ধানমণ্ডিতে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। দুদকের গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মতিউরের এসব সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া প্রথম স্ত্রীর সন্তান ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে গাজীপুর, সাভার, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাটণ্ডপ্লট, রিসোর্ট রয়েছে এই রাজস্ব কর্মকর্তার। মতিউর সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআর করেছেন। শেয়ারবাজারে মতিউরের নিজের নামে অর্ধশত কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে বলেও জানা গেছে। শেয়ারবাজার কারসাজিতেও তার হাত রয়েছে।
দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ বানিয়ে আইনগত ঝামেলা এড়াতে নিজের নাম এড়িয়ে স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদগুলো গড়েছেন মতিউর রহমান। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মতিউর তার ছেলেকেও কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিওসহ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা।
ছেলেকে কিনে দিয়েছেন দামি পাখিও। যদিও পাখি ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তার পরিচিত কাস্টমস কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বেনামে এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
টঙ্গীতে ৪০ হাজার বর্গফুটের জায়গায় ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং ও অ্যাকসেসরিজ কারখানা রয়েছে তার। যদিও কাগজে-কলমে কারখানার মালিক তার ভাই এম এ কাইয়ুম হাওলাদার। ময়মনসিংহের ভালুকায় ৩০০ বিঘা জমিতে গ্লোবাল সুজ নামের দুটি জুতা তৈরির কারখানা রয়েছে। নরসিংদীতে পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্টের মালিকানায় আছেন তার ছেলে ও মেয়ে, ভেতরের পুকুরের মালিক তার প্রথম স্ত্রী লাকী। এ ছাড়া পূর্বাচলে আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পটের মালিকও তিনি। গাজীপুর সদর এলাকায় নানা নামে তার বহু সম্পদ রয়েছে। ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে জমি রয়েছে।
সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তাদের মতে, মতিউর এনবিআরের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সিন্ডিকেটের দাপটে রাজস্ব বোর্ডের সৎ কর্মকর্তারা কোণঠাসা ছিল। অনেকেই মতিউরকে এনবিআরের রাজা হিসেবে মন্তব্য করেন। আর কেউ যদি মতিউর সিন্ডিকেটের বাহিরে কথা বলত। তাকে বদলিসহ নানা ধরনের হয়রানীও করা হত বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, মতিউরের একাধিক বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। এই সংখ্যা ২০টির বেশি হবে বলে ধারণা। একটি বন্ড লাইসেন্স কমপক্ষে ২ কোটি টাকা। এনবিআরের এক কর্মকর্তার অস্টেলিয়ায় বাড়ি আছে বলে এনবিআরের একজন সাবেক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। এনবিআরে মতিউর সিন্ডিকেটের অনেকের দেশে বিদেশে সম্পদ রয়েছে। অনুসন্ধান চালালে আরও ভয়াবহ কাহিনী বেরিয়ে আসবে। কাস্টমর্সের লোভনীয় পদগুলোতে কাকে পদায়ন করা হবে। তাও মতিউর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সূত্র জানায়, মতিউর সিন্ডিকেটের একজন কর্মকর্তারা বাসা থেকে কয়েক কোটি টাকার স্বর্ণ ছিল। পরে তা লুট হয়ে গেলেও ওই কর্মকর্তা থানায় অভিযোগ করেনি। এই সব সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে অনেক ব্যবসায়ী জিম্মি ছিল। একটি সিরামিক কোম্পানির একজন ম্যানেজার মতিউর সিন্ডিকেটের মানসিক নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এইভাবে এনবিআরের কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছে। এদেরকে নিয়ে আরও তদন্ত করলে লুটপাটের নানা কাহিনী বেরিয়ে আসবে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত রোববার সন্ধ্যার আগে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা। মতিউরের ঘনিষ্ঠ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর মতিউর রহমান ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে। তবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এর সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা দেশের সব স্থল, আকাশ ও নৌপথে দিয়ে যাতে মতিউর দেশত্যাগ করতে না পারে তার জন্য আদালতের নির্দেশের পর তারা দায়িত্ব পালন করছেন। আর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সতর্ক আছেন।
মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমান সরকারি চাকরি করে দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তানের সাংসারিক দায়িত্ব পালনের পরও তাদের ও আত্মীয়-স্বজনের নামে গড়েছেন বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এ পর্যন্ত দেশেই তার প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকাতেই অন্তত দুই ডজন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে। তার অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধান তদন্তে নামা দুদক ও গোয়েন্দাদের ধারণা, চাকরির নামে সার্বক্ষণিক নানা অপতৎপরতায় জড়িত হয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির ব্যবস্থা করে দিয়ে অবৈধভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই রাজস্ব কর্মকর্তা।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানের এই রাজস্ব কর্মকর্তার চারটি ফ্ল্যাট। সেখানেই প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে সপরিবারে বাস করতেন মতিউর। দ্বিতীয় বিয়েতেও অসুবিধা হয়নি তার। তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার থাকেন লালমাটিয়ার ভবনে। তার নামে কাকরাইলেও একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন মতিউর। তার অবৈধ টাকায় ধানমণ্ডিতে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। দুদকের গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মতিউরের এসব সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া প্রথম স্ত্রীর সন্তান ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে গাজীপুর, সাভার, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাটণ্ডপ্লট, রিসোর্ট রয়েছে এই রাজস্ব কর্মকর্তার। মতিউর সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে এফডিআর করেছেন। শেয়ারবাজারে মতিউরের নিজের নামে অর্ধশত কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে বলেও জানা গেছে। শেয়ারবাজার কারসাজিতেও তার হাত রয়েছে।
দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ বানিয়ে আইনগত ঝামেলা এড়াতে নিজের নাম এড়িয়ে স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদগুলো গড়েছেন মতিউর রহমান। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মতিউর তার ছেলেকেও কিনে দিয়েছিলেন প্রাডো, প্রিমিওসহ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি তার বিভিন্ন কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা।
ছেলেকে কিনে দিয়েছেন দামি পাখিও। যদিও পাখি ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তার পরিচিত কাস্টমস কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বেনামে এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
টঙ্গীতে ৪০ হাজার বর্গফুটের জায়গায় ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং ও অ্যাকসেসরিজ কারখানা রয়েছে তার। যদিও কাগজে-কলমে কারখানার মালিক তার ভাই এম এ কাইয়ুম হাওলাদার। ময়মনসিংহের ভালুকায় ৩০০ বিঘা জমিতে গ্লোবাল সুজ নামের দুটি জুতা তৈরির কারখানা রয়েছে। নরসিংদীতে পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্টের মালিকানায় আছেন তার ছেলে ও মেয়ে, ভেতরের পুকুরের মালিক তার প্রথম স্ত্রী লাকী। এ ছাড়া পূর্বাচলে আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পটের মালিকও তিনি। গাজীপুর সদর এলাকায় নানা নামে তার বহু সম্পদ রয়েছে। ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে জমি রয়েছে।
সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তাদের মতে, মতিউর এনবিআরের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সিন্ডিকেটের দাপটে রাজস্ব বোর্ডের সৎ কর্মকর্তারা কোণঠাসা ছিল। অনেকেই মতিউরকে এনবিআরের রাজা হিসেবে মন্তব্য করেন। আর কেউ যদি মতিউর সিন্ডিকেটের বাহিরে কথা বলত। তাকে বদলিসহ নানা ধরনের হয়রানীও করা হত বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, মতিউরের একাধিক বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। এই সংখ্যা ২০টির বেশি হবে বলে ধারণা। একটি বন্ড লাইসেন্স কমপক্ষে ২ কোটি টাকা। এনবিআরের এক কর্মকর্তার অস্টেলিয়ায় বাড়ি আছে বলে এনবিআরের একজন সাবেক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। এনবিআরে মতিউর সিন্ডিকেটের অনেকের দেশে বিদেশে সম্পদ রয়েছে। অনুসন্ধান চালালে আরও ভয়াবহ কাহিনী বেরিয়ে আসবে। কাস্টমর্সের লোভনীয় পদগুলোতে কাকে পদায়ন করা হবে। তাও মতিউর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সূত্র জানায়, মতিউর সিন্ডিকেটের একজন কর্মকর্তারা বাসা থেকে কয়েক কোটি টাকার স্বর্ণ ছিল। পরে তা লুট হয়ে গেলেও ওই কর্মকর্তা থানায় অভিযোগ করেনি। এই সব সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে অনেক ব্যবসায়ী জিম্মি ছিল। একটি সিরামিক কোম্পানির একজন ম্যানেজার মতিউর সিন্ডিকেটের মানসিক নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এইভাবে এনবিআরের কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছে। এদেরকে নিয়ে আরও তদন্ত করলে লুটপাটের নানা কাহিনী বেরিয়ে আসবে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত রোববার সন্ধ্যার আগে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা। মতিউরের ঘনিষ্ঠ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর মতিউর রহমান ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে। তবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এর সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা দেশের সব স্থল, আকাশ ও নৌপথে দিয়ে যাতে মতিউর দেশত্যাগ করতে না পারে তার জন্য আদালতের নির্দেশের পর তারা দায়িত্ব পালন করছেন। আর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সতর্ক আছেন।