alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

গরুকাণ্ডে ফাঁসছেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান ও প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১৪ জুলাই ২০২৪

সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলোচিত ইমরান হোসেনের নাম। যার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি, প্রজনন ও বিক্রিসহ নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কাগজে-কলমে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন নন। এই ফার্মের প্রকৃত মালিক তৌহিদুল আলম জেনিথ। তিনি ইমরান হোসেনের বন্ধু।

আর সাদিক খামার নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মালিক ইমরান হোসেন। দুই বন্ধু মিলেমিশে গরু ব্যবসার মাফিয়া সিন্ডিকেট গড়ে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়েছেন বলে মনে করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গরুর খামার পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক অনিয়ম করেছেন ইমরান হোসেন ও তার সহযোগীরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তাও। অনুসন্ধান শেষে এখন চলছে মামলার প্রক্রিয়া। অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনের বিবেচনার জন্য রয়েছে, যেখানে টিমের সুপারিশে ইমরান হোসেন ও তৌহিদুল আলম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দুই পরিচালকসহ চার থেকে পাঁচজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মামলার আসামি হতে পারেন।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি অভিযান ও নথিপত্র সংগ্রহ শেষে অনুসন্ধান টিমের কাজ চলমান রয়েছে। মামলা কিংবা অন্য কোনো আইনি প্রক্রিয়া হলে দুদক থেকে অফিসিয়ালি জানানো হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিক পর্যবেক্ষণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে চলতি বছরের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে আমদানি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদন নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরুসহ বিভিন্ন জাতের ৪৪৮টি গরু জবাই দেয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে।

অন্যদিকে সাদিকের ইমরান কিংবা তার বন্ধু তৌহিদুল অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে ব্রাহমা গরু রেখে দিয়ে অন্য গরু জবাই দিয়েছেন। তিনি বলেন, চক্রটি নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু খামারে লুকিয়ে রেখেছিল। দুদকের অভিযানে ইতোমধ্যে ৬টি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিগুলোর সঠিক তথ্য নেই। তবে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, দুটি গরু ২ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি করা হয়েছে। বাকি ৭টি ?লুকিয়ে রাখা হয়েছে না-কি জবাই করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন কেন্দ্র থেকে কীভাবে সিমেন সংগ্রহ ও বাছুর উৎপাদন করে বিক্রি করা হলো, সেটা অবাক কাণ্ড। দুদকের অভিযানে ৭টি বাছুরও জব্দ করা হয়েছে। এখানে অবশ্যই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে।

সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে জব্দ হওয়ার পর ১৭টি ব্রাহমা গরুর দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। লালনপালন অবস্থায় দুটি গরু মারা যায়। বাকি ছিল ১৫টি গরু। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ওই ১৫টি গরুসহ মোট ৪৪৮টি গরু নিলাম ছাড়াই বুক ভ্যালু পদ্ধতিতে মাংস বিতরণের লক্ষ্যে জবাইয়ের জন্য ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনকে দেয়া হয়। গরুগুলো লালনপালন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর পেছনে মাসে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয় হতো। অর্থাৎ তিন বছরে আড়াই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে গরুগুলোর পেছনে।

সার্বিক পর্যবেক্ষণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে চলতি বছরের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে আমদানি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদন নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরুসহ বিভিন্ন জাতের ৪৪৮টি গরু জবাই দেয়ার পুরো প্রক্রিয়া অসঙ্গতি ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে

দুদক মনে করছে, একদিকে পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতি, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে গরুগুলোর পেছনে আড়াই কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যেহেতু নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুগুলোকে নিয়ে অবৈধ ব্যবসা করা হয়েছে, সেহেতু সরকারি ওই ব্যয়কে সরকারের ক্ষতিসাধন বা আত্মসাতের মতো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইমরান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিষিদ্ধ ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু কোনো ধরনের নিলাম ছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর মাধ্যমে জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি, গোপনে ব্রাহমা গরু বিক্রি ও গরুর সিমেন বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত ২,৩ ও ৪ জুলাই সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুর, সাভার, নরসিংদী ও খামারবাড়ি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্ব একটি টিম অভিযান চালায়। অভিযানে অধিকাংশ অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়।

২০২১ সালে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়। কিন্তু ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গরুগুলো কৌশলে সাদিক অ্যাগ্রোকে দেয়া হয়।

শাহীওয়াল জাতের নাম দিয়ে ২০২১ সালে জাল কাগজপত্র তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু দেশে আনেন ইমরান। ২০১৬ সালে সরকার ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

আমদানি নিষিদ্ধ উন্নত জাতের ওই গরুগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। একটি গরু তখনি মারা যায়। অন্য গরুগুলো পাঠানো হয় সাভারের গো প্রজনন কেন্দ্রে। সেখানে আরও দুটি মারা যায়। পরে গরু আমদানি নিয়ে ওই বছর (২০২১) হাইকোর্টেও শুনানি হয়েছিল। তখন আদালত কাস্টমস কর্মকর্তাদের গরুগুলো জব্দ করার সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেন। এরপর ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গরুগুলো সাভারের গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে লালনপালন করা হয়।

কোরবানির ঈদের সময় ছাগলকাণ্ডে জড়িয়ে আলোচনায় আসা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ছাগলটি সাদিক অ্যাগ্রো থেকে কিনে এক লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছিলেন। এ বিষয়টি ফেসবুকে প্রচার হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। উঠে আসে ইফাতের বাবা মতিউরের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বিশাল সম্পদের ভান্ডারের খবর। পাশাপাশি সাদিক অ্যাগ্রোকে নিয়েও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ঈদের পর অবৈধভাবে খাল ও সিটি করপোরেশনের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা সাদিক অ্যাগ্রোর খামার ভেঙে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

ছবি

শ্রীনগরে স্বপন মেম্বার ধর্ষণ ও পর্ণোগ্রাফি মামলায় গ্রেফতার

সোনারগাঁয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে স্কুল ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, পুলিশের উদাসীনতায় ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা

শেখ হাসিনার বিচার শুরুর নির্দেশ, রাজসাক্ষী হতে চান সাবেক আইজিপি মামুন

ছবি

হাতিরঝিলের হত্যা মামলায় সুব্রত বাইনকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

ছবি

‘বিদেশ থেকে প্রমাণ না মেলায় তদন্ত বিলম্বিত’ — দুদক

ছবি

মালয়েশিয়ায় ‘জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা’: ঢাকায় ৩৫ প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

লোহাগাড়ায় ১১ মৃত্যু: অবশেষে ধরা পড়লেন বাস চালক সোহেল

ছবি

অস্ত্র মামলায় আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড

ছবি

পলাতক ২৩ জনকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ, হাজির না হলে অনুপস্থিতিতেই বিচার

ছবি

পীরগাছায় পুলিশের অভিযানে চুরি হওয়া ৩ মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার ৫

ছবি

মুরাদনগরে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মূল উসকানিদাতা ভাই শাহ পরাণ: পরিকল্পনায় ‘মব’, ভিডিওও তার ‘নির্দেশে’

ছবি

মুরাদনগরে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড

ভোটবিহীন নির্বাচন মামলায় নূরুল হুদা কারাগারে, পেলেন না জামিন

ছবি

শেখ রেহানার স্বামী ও তারিক সিদ্দিকের সম্পত্তি জব্দের আদেশ

ছবি

আদালত অবমাননায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

ছবি

বিএনপির মামলায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জবানবন্দি রেকর্ড শুরু

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলা: বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তিনটি হত্যা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ, আছেন সাবেক এসপিও

ধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর, ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

রূপগঞ্জে মদ্যপ অবস্থায় অশোভন আচরণ, প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে গুলি

নাইক্ষ্যংছড়িতে ইমাম হত্যা,৫ জনকে আসামী করে মামলা

ছবি

হত্যা মামলায় ইনু, কামাল, পলকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখালো আদালত

ছবি

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলায় প্রিন্স মামুনের বিচার শুরু

ছবি

ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে দুদক চেয়ারম্যান, টিউলিপকে বাংলাদেশি নাগরিক বলেও মন্তব্য

ছবি

১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ, এস আলম গ্রুপ ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

‘ভোটের প্রতারণা’ অভিযোগে রিমান্ড শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি নূরুল হুদার

ছবি

নগদের ১ কোটি টাকার ডাকাতি: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, উদ্ধার সাড়ে ৩২ লাখ

ছবি

স্বপ্না হত্যা: থানা থেকে সিআইডি, তবু রহস্য অজানা

ছবি

সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাল অপহরণ ও হত্যার আসামি

ছবি

আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের সহায়তাকারী নিযুক্ত

ছবি

সবজি ব্যবসায়ী শাওন হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান ৪ দিনের রিমান্ডে, আনিসুল হক গ্রেপ্তার

মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৫ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

ছবি

কেরাণীগঞ্জে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার মৃত্যুদণ্ড

ছবি

রংপুরের কাউনিয়ায় টিসিবির কার্ড বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

ছবি

মানিলন্ডারিং তদন্ত: তিন সহযোগীর বিদেশ যাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

গরুকাণ্ডে ফাঁসছেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান ও প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ১৪ জুলাই ২০২৪

সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলোচিত ইমরান হোসেনের নাম। যার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি, প্রজনন ও বিক্রিসহ নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কাগজে-কলমে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন নন। এই ফার্মের প্রকৃত মালিক তৌহিদুল আলম জেনিথ। তিনি ইমরান হোসেনের বন্ধু।

আর সাদিক খামার নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মালিক ইমরান হোসেন। দুই বন্ধু মিলেমিশে গরু ব্যবসার মাফিয়া সিন্ডিকেট গড়ে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়েছেন বলে মনে করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গরুর খামার পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক অনিয়ম করেছেন ইমরান হোসেন ও তার সহযোগীরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তাও। অনুসন্ধান শেষে এখন চলছে মামলার প্রক্রিয়া। অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনের বিবেচনার জন্য রয়েছে, যেখানে টিমের সুপারিশে ইমরান হোসেন ও তৌহিদুল আলম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দুই পরিচালকসহ চার থেকে পাঁচজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মামলার আসামি হতে পারেন।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি অভিযান ও নথিপত্র সংগ্রহ শেষে অনুসন্ধান টিমের কাজ চলমান রয়েছে। মামলা কিংবা অন্য কোনো আইনি প্রক্রিয়া হলে দুদক থেকে অফিসিয়ালি জানানো হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিক পর্যবেক্ষণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে চলতি বছরের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে আমদানি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদন নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরুসহ বিভিন্ন জাতের ৪৪৮টি গরু জবাই দেয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে।

অন্যদিকে সাদিকের ইমরান কিংবা তার বন্ধু তৌহিদুল অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে ব্রাহমা গরু রেখে দিয়ে অন্য গরু জবাই দিয়েছেন। তিনি বলেন, চক্রটি নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু খামারে লুকিয়ে রেখেছিল। দুদকের অভিযানে ইতোমধ্যে ৬টি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিগুলোর সঠিক তথ্য নেই। তবে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, দুটি গরু ২ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি করা হয়েছে। বাকি ৭টি ?লুকিয়ে রাখা হয়েছে না-কি জবাই করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন কেন্দ্র থেকে কীভাবে সিমেন সংগ্রহ ও বাছুর উৎপাদন করে বিক্রি করা হলো, সেটা অবাক কাণ্ড। দুদকের অভিযানে ৭টি বাছুরও জব্দ করা হয়েছে। এখানে অবশ্যই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে।

সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে জব্দ হওয়ার পর ১৭টি ব্রাহমা গরুর দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। লালনপালন অবস্থায় দুটি গরু মারা যায়। বাকি ছিল ১৫টি গরু। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ওই ১৫টি গরুসহ মোট ৪৪৮টি গরু নিলাম ছাড়াই বুক ভ্যালু পদ্ধতিতে মাংস বিতরণের লক্ষ্যে জবাইয়ের জন্য ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনকে দেয়া হয়। গরুগুলো লালনপালন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর পেছনে মাসে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয় হতো। অর্থাৎ তিন বছরে আড়াই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে গরুগুলোর পেছনে।

সার্বিক পর্যবেক্ষণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে চলতি বছরের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে আমদানি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদন নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরুসহ বিভিন্ন জাতের ৪৪৮টি গরু জবাই দেয়ার পুরো প্রক্রিয়া অসঙ্গতি ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে

দুদক মনে করছে, একদিকে পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতি, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে গরুগুলোর পেছনে আড়াই কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যেহেতু নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুগুলোকে নিয়ে অবৈধ ব্যবসা করা হয়েছে, সেহেতু সরকারি ওই ব্যয়কে সরকারের ক্ষতিসাধন বা আত্মসাতের মতো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইমরান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিষিদ্ধ ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু কোনো ধরনের নিলাম ছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর মাধ্যমে জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি, গোপনে ব্রাহমা গরু বিক্রি ও গরুর সিমেন বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত ২,৩ ও ৪ জুলাই সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুর, সাভার, নরসিংদী ও খামারবাড়ি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্ব একটি টিম অভিযান চালায়। অভিযানে অধিকাংশ অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়।

২০২১ সালে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়। কিন্তু ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গরুগুলো কৌশলে সাদিক অ্যাগ্রোকে দেয়া হয়।

শাহীওয়াল জাতের নাম দিয়ে ২০২১ সালে জাল কাগজপত্র তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু দেশে আনেন ইমরান। ২০১৬ সালে সরকার ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

আমদানি নিষিদ্ধ উন্নত জাতের ওই গরুগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। একটি গরু তখনি মারা যায়। অন্য গরুগুলো পাঠানো হয় সাভারের গো প্রজনন কেন্দ্রে। সেখানে আরও দুটি মারা যায়। পরে গরু আমদানি নিয়ে ওই বছর (২০২১) হাইকোর্টেও শুনানি হয়েছিল। তখন আদালত কাস্টমস কর্মকর্তাদের গরুগুলো জব্দ করার সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেন। এরপর ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গরুগুলো সাভারের গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে লালনপালন করা হয়।

কোরবানির ঈদের সময় ছাগলকাণ্ডে জড়িয়ে আলোচনায় আসা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ছাগলটি সাদিক অ্যাগ্রো থেকে কিনে এক লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছিলেন। এ বিষয়টি ফেসবুকে প্রচার হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। উঠে আসে ইফাতের বাবা মতিউরের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বিশাল সম্পদের ভান্ডারের খবর। পাশাপাশি সাদিক অ্যাগ্রোকে নিয়েও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ঈদের পর অবৈধভাবে খাল ও সিটি করপোরেশনের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা সাদিক অ্যাগ্রোর খামার ভেঙে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

back to top