alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ড্রেজিংয়ের নামে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট

রফিকুল ইসলাম,প্রতিনিধি,শিবালয় (মানিকগঞ্জ) : বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

নৌ-পথে ন্যাব্যতা সংকট কাটানোর জন্য এক নাগারে দীর্ঘদিন ড্রেজিং করা হলেও সমস্যা কাটছে না। ভরা বর্ষা মৌসুম থেকেই এই ড্রেজিং খেলা শুরু হলেও অজ্ঞাত ও রহস্যজনক কারণে ন্যাব্যতা সংকটের উন্নতি না হয়ে আরো অবনতি হয়েছে। যার ফলে আরিচা-কাজীরহাট-বাঘাবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে চলাচলরত ফেরীগুলো মাঝে মধ্যেই ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। কয়েকটি ড্রেজিং দিয়ে কতটুকু মাটি বা পলি অপসারিত হচ্ছে তার কোন সঠিক হিসাব কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না। ড্রেজিং দ্বারা “সরকার কা-মাল দরিয়া মে ঢাল” কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।

বিগত দিনগুলোতে পর্যবেক্ষণ করে এবং এলাকাবাসীর নিকট হতে জানা গেছে,কয়েকমাস যাবত উল্লেখিত নৌ-চ্যানেল খনন করছে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং ইউনিটের কয়েকটি ড্রেজার। কিন্তু অতি বিস্ময়ের ব্যাপার হলো উক্ত নৌ চ্যানেলের তেমন উন্নতি হচ্ছে না। অথচ এই কাজে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। এসব ব্যাপারে কথা বলতে চাইলেও সংস্লিষ্ট কোন কর্মকর্তাই সহজেই কথা বলতে চাইছেন না। মাটি কাটা এবং নদীর বালি নদীতেই ফেলার এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী বলেছেন, ড্রেজার সংস্লিষ্টরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই নদীর বালু নদীর উজানে ফেলছেন যাতে সেই বালু আবার যথাস্থানেই আগের অবস্থা তৈরি করে এবং ড্রেজিং কার্যক্রম ডিলে করা যায়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে। কিন্তু সংস্লিষ্ঠ অনেকেরই পকেট ভরবে। যমুনার নাব্যতা ঠিক রাখতে কয়েক মাস যাবত যে চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে সেই চ্যানেল দিয়েই ফেরি চলাচল করতে পারেনি বিগত তিনদিন। অর্থাৎ এতোদিন ধরে চ্যানেলে পলি অপসারিত হলেও তা আবার পূর্বের স্থানে চলে এসেছে বলেই প্রমানিত হচ্ছে। এভাবে ড্রেজিংয়ের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়েছে বলে স্থানীয়রা ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন।

এসব বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ বলেছেন, আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী ২৮ জুলাই ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ২৪ অক্টোবর হতে নাব্যতা ঠিক রাখতে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করেছে। এই মুহুর্তে নদীতে ¯্রােতের বেগ ও ভরাটের রেটও বেশী। নদীর তলদেশ স্থিতিশীল না। তাই এখন নদীতে ড্রেজিংয়ের দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি অবস্থায় সুফল পাওয়া যাবে। এ মুহূর্তে ফেরীরুট তথা নৌপথ সচল রাখার জন্য এভাবেই ড্রেজিং কাজ চলমান রাখতে হবে,অন্য কোন বিকল্প নেই। ড্রেজিং করতে বাজেটের ব্যাপারে তিনি কিছুই বলেননি।

একই বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চিফ ইনজিনিয়ার রাকিবুল ইসলাম বলেছেন, নৌ-পথগুলোতে আমাদের নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর হতে ড্রেজিং করা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই ১৬টি ড্রেজার পাঠানো হয়েছে। যা ২০টি পর্যন্ত হবে এবং ইতিমধ্যেই ৯টি ড্রেজার তাদের খনন কাজ চালাচ্ছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ৪১ লক্ষ ঘনমিটার মাটি কাটার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার জন্য খরচ হবে ২০ লক্ষ লিটার তেল। যা সরাসরি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) হতে সরবরাহ নেওয়া হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, নদীতে ¯্রােত বেশী হওয়ার কারণেই ড্রেজার এবং ফেরী যথাস্থানে ঠিকমতো ধরে রাখা যাচ্ছে না। তদুপরি ড্রেজিং কার্যক্রম যথারীতি চলছে এবং খুব দ্রুতই সমস্যা কেটে যাবে।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বিপিসির চেয়ারম্যানকে কল করলে তার পিএস বলেছেন, স্যার জরুরী মিটিংয়ে আছেন এখন কোন কথা বলতে পারবেন না। তবে ডিজেল সরবরাহের সাথে জড়িত একাধিকসূত্রে জানা গেছে, ডিজেলের ডিপো রেট একশত এক টাকা বাইশ পয়সা। সেই হিসাবে ২০ লক্ষ লিটারের দাম ২০ কোটি ২৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। যা গত বছর খরচ হয়েছিল ২৩ কোটি ৭ লক্ষ টাকা এবং ড্রেজিং শুরু হয়েছিল ১১ জুলাই। অর্থাৎ বিগত ৩০ বছরে এই নৌ পথে ড্রেজিং কাজের জন্য সরকারের খরচ ৬০৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। এর সাথে যোগ হবে মেইনটেনেন্সের খরচ। সবযোগ করলে কমবেশী ৭০০ কোটি টাকার। দেখা যাচ্ছে এই নৌ পথটি যেন সরকারের টাকা খরচ বা লুটপাটের মহা আস্তানা। এব্যাপারে এলাকার অনেকেই বলেছেন, খোজ নিয়ে দেখেন ড্রেজিংয়ে কর্মরত প্রায় সকলেই কোটিপতি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নদী বিশেষজ্ঞ বলছেন, নৌপথগুলোতে অবৈজ্ঞানিকভাবে ড্রেজিং কার্যক্রম করা এবং নির্দিষ্ট একক কোন প্রতিষ্ঠান দায়িত্বরত না থাকাসহ যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার অভাব ও লুটপাটের মনোভাবের কারণেই ড্রেজিংয়ে আশানুরুপ সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক টন পন্য পরিবহনে প্রতিকিলোমিটারে সড়ক পথে ব্যয় হয় ৪ টাকা ৫০ পয়সা, রেলপথে ২ টাকা ৫০ পয়সা এবং নৌ-পথে মাত্র ৯৯ পয়সা। ফলে নৌ পথে পন্য পরিবহন নির্বিঘœ ও নিয়মিত হলে উর্ধ্বগতির বাজার নিয়ন্ত্রন অনেকটাই সহজ হতো।

এদিকে বিশ্বস্থসূত্রে জানা গেছে, ২৬ ইঞ্চি ২০ ইঞ্চি এবং ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের কাটার দিয়ে ড্রেজিং কাজ করা হচ্ছে। এসব ড্রেজার দিয়ে যথাক্রমে প্রতি ঘন্টায় ৫০০, ৩৫০ ও ৩০০ ঘনফুট মাটি কাটা যায়। প্রতিটি ড্রেজার স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা চালানো যায়। বিগত ৬৭ দিনে কমবেশী ১৩ লক্ষ ঘনমিটার মাটি কাটা হয়েছে। অর্থাৎ বিগত প্রায় ২ মাসে লক্ষ মাত্রার তিন ভাগের এক ভাগেরও কম মাটি কাটা হয়েছে। সেই হিসাবে লক্ষ মাত্রায় পৌছাতে আরো ৪ মাস লাগবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইনজিনিয়ার বলেছেন, যে পরিমান মাটি কাটা দেখানো হয়েছে সেই মাটি যদি নদী তীরে ফেলা হতো তাহলে তীরবর্তী এলাকায় একটি ছোট বাধ হয়ে যেত। ড্রেজিংকৃত নদীর মাটি নদীর উজানেই ফেলতে দেখা গেছে। এতে যমুনার ¯্রােতের টানে আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে নির্ধারিত নৌ-চ্যানেল। বিগত কয়েকমাস ধরে এভাবেই ড্রেজিংয়ের খেলা চলছে আরিচার যমুনায় ও পাটুরিয়ার পদ্মায়। এতে পানিতেই গচ্ছা যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। শিবালয়ের সিনিয়র সাংবাদিক মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ শাহজাহান বিশ্বাস ক্ষোভের সাথে বলেছেন “ড্রেজিংয়ের নামে পানির নীচে কি করে, সেটা ওরা জানে আর আল্লাহ জানে।” যত ফাকি-ঝুকির কাজ আছে এই ড্রেজিং ইউনিটে। ড্রেজিংকৃত মাটি নদীতে ফেলার কোন বিধান না থাকলেও নদীর মাটি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। সরেজমিনে এমনও দেখা গেছে, খননকৃত একটি ড্রেজারের মাটি আরেকটি ড্রেজারের খননকৃত স্থানে এবং তার আশপাশেই ফেলা হচ্ছে। ফলে সারামাস খনন করেও তেমন কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এটা এক ধরনের শুভংকরের ফাঁকি বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

এসব বিষয়ে বিআইডব্লিটিএর চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেছেন, ড্রেজিংকৃত কোন মাটি নদীতে ফেলা হয় না। তবে লঞ্চঘাট বরাবর খননকৃত নতুন চ্যানেলের মাটি চ্যানেল এলাকার পার্শ্বে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইআইজিএস কর্তৃক নির্দেশিত চরে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। একই বিষয়ে সিইআইজিএস কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এসব বিষয়ে ফাইল না দেখে কিছুই বলতে পারবো না।

যাত্রাবাড়ীতে বৃক্ষমেলায় ককটেল বিস্ফোরণ

সার্ভার হ্যাক, রাজউকে ভবনের নকশার ভূয়া‘অনুমোদন’

ছবি

দুদকের অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার জমি ও গাড়ি গোপনের প্রমাণ, আইনগত পদক্ষেপ চায় কমিশন

ছবি

পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ধর্ষণের মামলা, বাদী ব্যাংক কর্মকর্তা

ছবি

রাজধানীতে বিএনপি কর্মীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম, ভিডিও ভাইরাল

ছবি

ধর্ষণ ও মারধরের মামলায় কণ্ঠশিল্পী নোবেল কারাগারে

ছবি

গায়ক নোবেল গ্রেপ্তার

সাভারে গুলিতে রং মিস্ত্রি হত্যা

ছবি

সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়াসহ ৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

বিজিবি’র সাবেক ডিজি সাফিনুল ও স্ত্রীর আরও ৮ ব্যাংক হিসাব জব্দ

ছবি

নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

ছবি

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে দুই মামলায় জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

ছবি

অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার

ছবি

নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে বরখাস্ত সৈনিক নাঈমুল গ্রেপ্তার

ছবি

কেরানীগঞ্জে শিশু ধর্ষণের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ছবি

আত্মসমর্পণের পর জামিন পাননি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান

মোহাম্মদপুরে ছিনতাইকারী সন্দেহে দুজনকে গণপিটুনি, নিহত ১

ছবি

দুদকের আবেদনে হারুন অর রশীদের আরো পরিবারসহ শ্বশুরের সম্পদ জব্দের আদেশ আদালতের

ছবি

হাইকোর্টে রমনা বটমুল বোমা হামলা মামলার রায়: দুইজনের যাবজ্জীবন, নয়জনের ১০ বছর কারাদণ্ড

ছবি

নিখোঁজের একদিন পর বস্তায় মিলল শিশুর মরদেহ, শরীরে পোড়ার চিহ্ন

ছবি

শেওড়াপাড়ায় খুন হওয়া দুই বোনের ঘটনায় খালাতো ভাই গ্রেপ্তার, পাঠানো হয়েছে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে

শেওড়াপাড়ায় দুই বোন খুন: সিসিটিভিতে দেখা যুবক গ্রেপ্তার, খালাদের খুন করেন ভাগ্নে

ছবি

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক বিডিআর সদস্য রেজাউল গ্রেপ্তার

সম্পত্ত্বির দ্বন্দে শেওড়াপাড়ায় ২ বোনকে হত্যা, গ্রেফতার ১

পলাশে তুচ্ছ ঘটনায় দিনমজুরকে ছুরিরকাঘাতে হত্যা

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: তৌফিক–ই–ইলাহীর জামিন আবেদন খারিজ, ফারুক খানের শুনানি সোমবার

ছবি

সায়েন্স ল্যাব থেকে গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা

৫০ কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগে সিলেট বিআরটিএ দুদকের অভিযান, ব্ল্যাঙ্ক চেক উদ্ধার

ছবি

সার আত্মসাৎ , সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

সালমান এফ রহমানসহ পরিবারের ৯৪ কোম্পানির শেয়ার ও ১০৭ বিও হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

অভিনেতা সিদ্দিক সাত দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে

ছবি

কোটি টাকা চাঁদা দাবি, কলাবাগান থানার ওসি ও এসআই প্রত্যাহার

ছবি

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল হত্যা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন

ছবি

তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

ছবি

আখাউড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ৮ মাদকসেবীর কারাদন্ড

ছবি

শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মাগুরায় আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ড্রেজিংয়ের নামে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট

রফিকুল ইসলাম,প্রতিনিধি,শিবালয় (মানিকগঞ্জ)

বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

নৌ-পথে ন্যাব্যতা সংকট কাটানোর জন্য এক নাগারে দীর্ঘদিন ড্রেজিং করা হলেও সমস্যা কাটছে না। ভরা বর্ষা মৌসুম থেকেই এই ড্রেজিং খেলা শুরু হলেও অজ্ঞাত ও রহস্যজনক কারণে ন্যাব্যতা সংকটের উন্নতি না হয়ে আরো অবনতি হয়েছে। যার ফলে আরিচা-কাজীরহাট-বাঘাবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে চলাচলরত ফেরীগুলো মাঝে মধ্যেই ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। কয়েকটি ড্রেজিং দিয়ে কতটুকু মাটি বা পলি অপসারিত হচ্ছে তার কোন সঠিক হিসাব কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না। ড্রেজিং দ্বারা “সরকার কা-মাল দরিয়া মে ঢাল” কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।

বিগত দিনগুলোতে পর্যবেক্ষণ করে এবং এলাকাবাসীর নিকট হতে জানা গেছে,কয়েকমাস যাবত উল্লেখিত নৌ-চ্যানেল খনন করছে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং ইউনিটের কয়েকটি ড্রেজার। কিন্তু অতি বিস্ময়ের ব্যাপার হলো উক্ত নৌ চ্যানেলের তেমন উন্নতি হচ্ছে না। অথচ এই কাজে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। এসব ব্যাপারে কথা বলতে চাইলেও সংস্লিষ্ট কোন কর্মকর্তাই সহজেই কথা বলতে চাইছেন না। মাটি কাটা এবং নদীর বালি নদীতেই ফেলার এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী বলেছেন, ড্রেজার সংস্লিষ্টরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই নদীর বালু নদীর উজানে ফেলছেন যাতে সেই বালু আবার যথাস্থানেই আগের অবস্থা তৈরি করে এবং ড্রেজিং কার্যক্রম ডিলে করা যায়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে। কিন্তু সংস্লিষ্ঠ অনেকেরই পকেট ভরবে। যমুনার নাব্যতা ঠিক রাখতে কয়েক মাস যাবত যে চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে সেই চ্যানেল দিয়েই ফেরি চলাচল করতে পারেনি বিগত তিনদিন। অর্থাৎ এতোদিন ধরে চ্যানেলে পলি অপসারিত হলেও তা আবার পূর্বের স্থানে চলে এসেছে বলেই প্রমানিত হচ্ছে। এভাবে ড্রেজিংয়ের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়েছে বলে স্থানীয়রা ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন।

এসব বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ বলেছেন, আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী ২৮ জুলাই ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ২৪ অক্টোবর হতে নাব্যতা ঠিক রাখতে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করেছে। এই মুহুর্তে নদীতে ¯্রােতের বেগ ও ভরাটের রেটও বেশী। নদীর তলদেশ স্থিতিশীল না। তাই এখন নদীতে ড্রেজিংয়ের দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি অবস্থায় সুফল পাওয়া যাবে। এ মুহূর্তে ফেরীরুট তথা নৌপথ সচল রাখার জন্য এভাবেই ড্রেজিং কাজ চলমান রাখতে হবে,অন্য কোন বিকল্প নেই। ড্রেজিং করতে বাজেটের ব্যাপারে তিনি কিছুই বলেননি।

একই বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চিফ ইনজিনিয়ার রাকিবুল ইসলাম বলেছেন, নৌ-পথগুলোতে আমাদের নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর হতে ড্রেজিং করা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই ১৬টি ড্রেজার পাঠানো হয়েছে। যা ২০টি পর্যন্ত হবে এবং ইতিমধ্যেই ৯টি ড্রেজার তাদের খনন কাজ চালাচ্ছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ৪১ লক্ষ ঘনমিটার মাটি কাটার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার জন্য খরচ হবে ২০ লক্ষ লিটার তেল। যা সরাসরি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) হতে সরবরাহ নেওয়া হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, নদীতে ¯্রােত বেশী হওয়ার কারণেই ড্রেজার এবং ফেরী যথাস্থানে ঠিকমতো ধরে রাখা যাচ্ছে না। তদুপরি ড্রেজিং কার্যক্রম যথারীতি চলছে এবং খুব দ্রুতই সমস্যা কেটে যাবে।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বিপিসির চেয়ারম্যানকে কল করলে তার পিএস বলেছেন, স্যার জরুরী মিটিংয়ে আছেন এখন কোন কথা বলতে পারবেন না। তবে ডিজেল সরবরাহের সাথে জড়িত একাধিকসূত্রে জানা গেছে, ডিজেলের ডিপো রেট একশত এক টাকা বাইশ পয়সা। সেই হিসাবে ২০ লক্ষ লিটারের দাম ২০ কোটি ২৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। যা গত বছর খরচ হয়েছিল ২৩ কোটি ৭ লক্ষ টাকা এবং ড্রেজিং শুরু হয়েছিল ১১ জুলাই। অর্থাৎ বিগত ৩০ বছরে এই নৌ পথে ড্রেজিং কাজের জন্য সরকারের খরচ ৬০৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। এর সাথে যোগ হবে মেইনটেনেন্সের খরচ। সবযোগ করলে কমবেশী ৭০০ কোটি টাকার। দেখা যাচ্ছে এই নৌ পথটি যেন সরকারের টাকা খরচ বা লুটপাটের মহা আস্তানা। এব্যাপারে এলাকার অনেকেই বলেছেন, খোজ নিয়ে দেখেন ড্রেজিংয়ে কর্মরত প্রায় সকলেই কোটিপতি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নদী বিশেষজ্ঞ বলছেন, নৌপথগুলোতে অবৈজ্ঞানিকভাবে ড্রেজিং কার্যক্রম করা এবং নির্দিষ্ট একক কোন প্রতিষ্ঠান দায়িত্বরত না থাকাসহ যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার অভাব ও লুটপাটের মনোভাবের কারণেই ড্রেজিংয়ে আশানুরুপ সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক টন পন্য পরিবহনে প্রতিকিলোমিটারে সড়ক পথে ব্যয় হয় ৪ টাকা ৫০ পয়সা, রেলপথে ২ টাকা ৫০ পয়সা এবং নৌ-পথে মাত্র ৯৯ পয়সা। ফলে নৌ পথে পন্য পরিবহন নির্বিঘœ ও নিয়মিত হলে উর্ধ্বগতির বাজার নিয়ন্ত্রন অনেকটাই সহজ হতো।

এদিকে বিশ্বস্থসূত্রে জানা গেছে, ২৬ ইঞ্চি ২০ ইঞ্চি এবং ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের কাটার দিয়ে ড্রেজিং কাজ করা হচ্ছে। এসব ড্রেজার দিয়ে যথাক্রমে প্রতি ঘন্টায় ৫০০, ৩৫০ ও ৩০০ ঘনফুট মাটি কাটা যায়। প্রতিটি ড্রেজার স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা চালানো যায়। বিগত ৬৭ দিনে কমবেশী ১৩ লক্ষ ঘনমিটার মাটি কাটা হয়েছে। অর্থাৎ বিগত প্রায় ২ মাসে লক্ষ মাত্রার তিন ভাগের এক ভাগেরও কম মাটি কাটা হয়েছে। সেই হিসাবে লক্ষ মাত্রায় পৌছাতে আরো ৪ মাস লাগবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইনজিনিয়ার বলেছেন, যে পরিমান মাটি কাটা দেখানো হয়েছে সেই মাটি যদি নদী তীরে ফেলা হতো তাহলে তীরবর্তী এলাকায় একটি ছোট বাধ হয়ে যেত। ড্রেজিংকৃত নদীর মাটি নদীর উজানেই ফেলতে দেখা গেছে। এতে যমুনার ¯্রােতের টানে আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে নির্ধারিত নৌ-চ্যানেল। বিগত কয়েকমাস ধরে এভাবেই ড্রেজিংয়ের খেলা চলছে আরিচার যমুনায় ও পাটুরিয়ার পদ্মায়। এতে পানিতেই গচ্ছা যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। শিবালয়ের সিনিয়র সাংবাদিক মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ শাহজাহান বিশ্বাস ক্ষোভের সাথে বলেছেন “ড্রেজিংয়ের নামে পানির নীচে কি করে, সেটা ওরা জানে আর আল্লাহ জানে।” যত ফাকি-ঝুকির কাজ আছে এই ড্রেজিং ইউনিটে। ড্রেজিংকৃত মাটি নদীতে ফেলার কোন বিধান না থাকলেও নদীর মাটি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। সরেজমিনে এমনও দেখা গেছে, খননকৃত একটি ড্রেজারের মাটি আরেকটি ড্রেজারের খননকৃত স্থানে এবং তার আশপাশেই ফেলা হচ্ছে। ফলে সারামাস খনন করেও তেমন কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এটা এক ধরনের শুভংকরের ফাঁকি বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

এসব বিষয়ে বিআইডব্লিটিএর চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেছেন, ড্রেজিংকৃত কোন মাটি নদীতে ফেলা হয় না। তবে লঞ্চঘাট বরাবর খননকৃত নতুন চ্যানেলের মাটি চ্যানেল এলাকার পার্শ্বে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইআইজিএস কর্তৃক নির্দেশিত চরে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। একই বিষয়ে সিইআইজিএস কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এসব বিষয়ে ফাইল না দেখে কিছুই বলতে পারবো না।

back to top