alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

সোনারগাঁয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলে মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজি, বিকাশে চাঁদা নেয় রনি হাসান

প্রতিনিধি, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নৌ পুলিশকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে মেঘনা নদীতে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান থেকে প্রকাশ্যে ও মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে নেয়া হয় চাঁদা। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে সেই নৌযান শ্রমিকদের বেধরক মারধর করা হয়। অস্ত্র দেখিয়ে দেয়া হয় হত্যার হুমকি।

নদীতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে নৌ-পুলিশের টহল থাকলেও চাঁদাবাজদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা থাকায় কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

নিরাপত্তা দেয়ার নামে পুলিশও করছে চাঁদাবাজি। বর্তমানে সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর ত্রাস হিসেবে পরিচিত ডাকাতি, মারামারিসহ একাধিক মামলার আসামী এই চাঁদাবাজের নাম রনি হাসান। মেঘনা নদীর আড়াইহাজার উপজেলার খাগকান্দা এলাকা থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া পর্যন্ত চলে রনি হাসানের চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজির টাকা নৌ ফাঁড়ি ইনচার্জ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত ভাগ পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাঁদাবাজ রনি হাসান এবং পুলিশের চাঁদা নেয়ার বিষয়টি নৌ শ্রমিকদের অভিযোগের প্রায় ১৭ টি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও পৌরসভাধীন সাহাপুর গ্রামের নুরা মিস্ত্রির ছেলে রনি হাসান এক সময় পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের শ্রমিক হিসেবে দৈনিক ৩শ’ টাকার বিনিময়ে মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদা আদায় করতো। পরবর্তীতে সে জাকির হোসেনকে পল্টি দিয়ে নিজের সিন্ডিকেট করে নদীতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি শুরু করে মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, নরসিংদী ও ভৈরব থেকে সোনারগাঁ হয়ে ঢাকা, চাঁদপুর নৌ রুটে চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে রনি।

মেঘনা নদীর এই নৌ রুটে শত শত বাল্কহেড, বার্জ, কার্গো, ইঞ্জিন চালিত বালুবাহী নৌকা, চুনা পাথর, ও কয়লাসহ বিভিন্ন পন্য পরিবহন করা হয়। সেসব নৌযানকে টার্গেট করে রনি হাসান ও তার সিন্ডেকেট চাঁদাবাজি করে থাকে। প্রতিদিন এসব নৌযান থেকে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকে রনি। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের করা হয় বেধরক মারধর। এমনকি অস্ত্র দেখিয়ে দেয়া হয় হত্যার হুমকিও। তাই প্রাণভয়ে ও নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য রনিকে প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে পন্য পরিবহন করেন নৌযান শ্রমিকরা। তবে কিছু নৌযান থেকে নগদ ও অধিকাংশ নৌযান থেকে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা নেয় রনি হাসান।

চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে মেঘনা নদীতে বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁরি পুলিশ নদীতে টহলরত থাকলেও চাঁদাবাজদের সাথে সখ্যতা থাকায় এবং মোটা অঙ্কের মাসোহারা পাওয়ায় তারা প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া নিরাপত্তা দেয়ার আড়ালে পুলিশও করছে চাঁদাবাজি। তারা ২ শ’ টাকা করে প্রতিটি পণ্যবাহী নৌযান থেকে নেন। যদি কোনো নৌযান থেকে পুলিশের কাছে চাঁদাবাজ রনি হাসানের নাম বলা হয় তাহলে পুলিশ ২শ টাকার পরিবর্তে ১শ’ টাকা নেয়। আবার অনেক নৌযান এমনিতেই ছেড়ে দেয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রনি সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে টাকা পয়সা লুটে নেয়। সেখানে পুলিশকেও নিরাপত্তা দিতে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে নৌযান মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বিঘেœ চলাচলের সুযোগ করে দেবে বলে তাদের সঙ্গে চুক্তিবন্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিলেই কেউ তাদের সমস্যা সৃষ্টি করে না। পুলিশ থাকেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে। চুক্তির টাকা থেকে পুলিশও ভাগ পেয়ে থাকেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। বৈদ্যেরবাজার এলাকার নৌ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন মাসোহারা। তাই চাঁদাবাজ রনিকে গ্রেপ্তারে কোন ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানিয়েছেন, রনি মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ত্রাস। তার সিন্ডিকেটে মেঘনা উপজেলার আব্দুল বারেকের তিন ছেলে আলী হোসেন, আবুল হাসনাত ও মহসিন জড়িত। কিছুদিন বৈদ্যেরবাজার এলাকার কয়েকজন যুবক নদীতে তাদের সঙ্গে কাজ করলেও এখন আর করেন না বলে তার দাবি। তাদের মাধ্যমেই শ্রমিকদের মারধর করে থাকেন। মারধরের ভয়ে নৌ মালিক ও শ্রমিকরা তার সঙ্গে আঁতাত করে বিকাশে টাকা পৌছে দেন। নৌ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ফাঁড়ি পুলিশদের ম্যানেজ করেই এ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন করে এবং রাতের বেলা ডাকাতি করেন। রনি ২০২২ সালে নগদ প্রায় ১৩ লাখ টাকা, ল্যাপটপ ও ১৩ টি মোবাইল সিমসহ গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় ডাকাতি, মারামারিসহ দেশের বিভিন্ন থায়ায় ১০ টি চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। সরেজমিনে মেঘনা নদীর নলচর এলাকায় গিয়ে নৌ যানকে থামাতে বললেই রনি ভাইয়ের বডি বলে দাবি করেন। রনির বডি বলার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, বিকাশের মাধ্যমে প্রতিটি বডির জন্য তাকে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকা দিলেই নির্বিঘেœ হামলা ও মারধর ছাড়াই তারা চলাচল করতে পারেন।

এসময় বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ২টি ট্রলারকে নদীতে টহল দিতে দেখা যায়।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত রনি হাসান মোবাইলে জানান, তিনি বর্তমানে বন্দর উপজেলার তিনগাঁও এলাকায় থাকেন। চাঁদাবাজির বিষয়টি সত্য নয়। টাকাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলাম সত্য। তবে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নৌযান শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে টহল দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি সত্য নয়। শ্রমিকরা পুলিশের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানালে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়াও বিকাশে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বিকাশের মাধ্যমে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। পুলিশ চাঁদাবাজের পক্ষে অবস্থান নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তাছাড়া নৌ ফাঁড়ি পুলিশের বিষয়ে চাঁদা আদায়ের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছবি

মিডফোর্ড হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্তদের একজন বলছে ‘আমি শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম, কাউকে মারিনি’, অন্যজন নিজেকে ‘ফাঁসানো’র দাবি

ছবি

১০ মাসে সাড়ে সাত হাজার গ্রেপ্তার, পাঁচ শতাধিক অস্ত্র উদ্ধার:র‌্যাব

ছবি

শ্রীনগরে স্বপন মেম্বার ধর্ষণ ও পর্ণোগ্রাফি মামলায় গ্রেফতার

সোনারগাঁয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে স্কুল ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, পুলিশের উদাসীনতায় ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা

শেখ হাসিনার বিচার শুরুর নির্দেশ, রাজসাক্ষী হতে চান সাবেক আইজিপি মামুন

ছবি

হাতিরঝিলের হত্যা মামলায় সুব্রত বাইনকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

ছবি

‘বিদেশ থেকে প্রমাণ না মেলায় তদন্ত বিলম্বিত’ — দুদক

ছবি

মালয়েশিয়ায় ‘জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা’: ঢাকায় ৩৫ প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

লোহাগাড়ায় ১১ মৃত্যু: অবশেষে ধরা পড়লেন বাস চালক সোহেল

ছবি

অস্ত্র মামলায় আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড

ছবি

পলাতক ২৩ জনকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ, হাজির না হলে অনুপস্থিতিতেই বিচার

ছবি

পীরগাছায় পুলিশের অভিযানে চুরি হওয়া ৩ মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার ৫

ছবি

মুরাদনগরে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মূল উসকানিদাতা ভাই শাহ পরাণ: পরিকল্পনায় ‘মব’, ভিডিওও তার ‘নির্দেশে’

ছবি

মুরাদনগরে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড

ভোটবিহীন নির্বাচন মামলায় নূরুল হুদা কারাগারে, পেলেন না জামিন

ছবি

শেখ রেহানার স্বামী ও তারিক সিদ্দিকের সম্পত্তি জব্দের আদেশ

ছবি

আদালত অবমাননায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

ছবি

বিএনপির মামলায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জবানবন্দি রেকর্ড শুরু

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলা: বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তিনটি হত্যা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ, আছেন সাবেক এসপিও

ধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর, ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

রূপগঞ্জে মদ্যপ অবস্থায় অশোভন আচরণ, প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে গুলি

নাইক্ষ্যংছড়িতে ইমাম হত্যা,৫ জনকে আসামী করে মামলা

ছবি

হত্যা মামলায় ইনু, কামাল, পলকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখালো আদালত

ছবি

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলায় প্রিন্স মামুনের বিচার শুরু

ছবি

ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে দুদক চেয়ারম্যান, টিউলিপকে বাংলাদেশি নাগরিক বলেও মন্তব্য

ছবি

১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ, এস আলম গ্রুপ ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

‘ভোটের প্রতারণা’ অভিযোগে রিমান্ড শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি নূরুল হুদার

ছবি

নগদের ১ কোটি টাকার ডাকাতি: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, উদ্ধার সাড়ে ৩২ লাখ

ছবি

স্বপ্না হত্যা: থানা থেকে সিআইডি, তবু রহস্য অজানা

ছবি

সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাল অপহরণ ও হত্যার আসামি

ছবি

আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের সহায়তাকারী নিযুক্ত

ছবি

সবজি ব্যবসায়ী শাওন হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান ৪ দিনের রিমান্ডে, আনিসুল হক গ্রেপ্তার

মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৫ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

ছবি

কেরাণীগঞ্জে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার মৃত্যুদণ্ড

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

সোনারগাঁয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলে মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজি, বিকাশে চাঁদা নেয় রনি হাসান

প্রতিনিধি, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নৌ পুলিশকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে মেঘনা নদীতে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান থেকে প্রকাশ্যে ও মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে নেয়া হয় চাঁদা। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে সেই নৌযান শ্রমিকদের বেধরক মারধর করা হয়। অস্ত্র দেখিয়ে দেয়া হয় হত্যার হুমকি।

নদীতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে নৌ-পুলিশের টহল থাকলেও চাঁদাবাজদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা থাকায় কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

নিরাপত্তা দেয়ার নামে পুলিশও করছে চাঁদাবাজি। বর্তমানে সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর ত্রাস হিসেবে পরিচিত ডাকাতি, মারামারিসহ একাধিক মামলার আসামী এই চাঁদাবাজের নাম রনি হাসান। মেঘনা নদীর আড়াইহাজার উপজেলার খাগকান্দা এলাকা থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া পর্যন্ত চলে রনি হাসানের চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজির টাকা নৌ ফাঁড়ি ইনচার্জ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত ভাগ পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাঁদাবাজ রনি হাসান এবং পুলিশের চাঁদা নেয়ার বিষয়টি নৌ শ্রমিকদের অভিযোগের প্রায় ১৭ টি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও পৌরসভাধীন সাহাপুর গ্রামের নুরা মিস্ত্রির ছেলে রনি হাসান এক সময় পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের শ্রমিক হিসেবে দৈনিক ৩শ’ টাকার বিনিময়ে মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদা আদায় করতো। পরবর্তীতে সে জাকির হোসেনকে পল্টি দিয়ে নিজের সিন্ডিকেট করে নদীতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি শুরু করে মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, নরসিংদী ও ভৈরব থেকে সোনারগাঁ হয়ে ঢাকা, চাঁদপুর নৌ রুটে চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে রনি।

মেঘনা নদীর এই নৌ রুটে শত শত বাল্কহেড, বার্জ, কার্গো, ইঞ্জিন চালিত বালুবাহী নৌকা, চুনা পাথর, ও কয়লাসহ বিভিন্ন পন্য পরিবহন করা হয়। সেসব নৌযানকে টার্গেট করে রনি হাসান ও তার সিন্ডেকেট চাঁদাবাজি করে থাকে। প্রতিদিন এসব নৌযান থেকে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকে রনি। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের করা হয় বেধরক মারধর। এমনকি অস্ত্র দেখিয়ে দেয়া হয় হত্যার হুমকিও। তাই প্রাণভয়ে ও নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য রনিকে প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে পন্য পরিবহন করেন নৌযান শ্রমিকরা। তবে কিছু নৌযান থেকে নগদ ও অধিকাংশ নৌযান থেকে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা নেয় রনি হাসান।

চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে মেঘনা নদীতে বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁরি পুলিশ নদীতে টহলরত থাকলেও চাঁদাবাজদের সাথে সখ্যতা থাকায় এবং মোটা অঙ্কের মাসোহারা পাওয়ায় তারা প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া নিরাপত্তা দেয়ার আড়ালে পুলিশও করছে চাঁদাবাজি। তারা ২ শ’ টাকা করে প্রতিটি পণ্যবাহী নৌযান থেকে নেন। যদি কোনো নৌযান থেকে পুলিশের কাছে চাঁদাবাজ রনি হাসানের নাম বলা হয় তাহলে পুলিশ ২শ টাকার পরিবর্তে ১শ’ টাকা নেয়। আবার অনেক নৌযান এমনিতেই ছেড়ে দেয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রনি সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে টাকা পয়সা লুটে নেয়। সেখানে পুলিশকেও নিরাপত্তা দিতে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে নৌযান মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বিঘেœ চলাচলের সুযোগ করে দেবে বলে তাদের সঙ্গে চুক্তিবন্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিলেই কেউ তাদের সমস্যা সৃষ্টি করে না। পুলিশ থাকেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে। চুক্তির টাকা থেকে পুলিশও ভাগ পেয়ে থাকেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। বৈদ্যেরবাজার এলাকার নৌ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন মাসোহারা। তাই চাঁদাবাজ রনিকে গ্রেপ্তারে কোন ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানিয়েছেন, রনি মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ত্রাস। তার সিন্ডিকেটে মেঘনা উপজেলার আব্দুল বারেকের তিন ছেলে আলী হোসেন, আবুল হাসনাত ও মহসিন জড়িত। কিছুদিন বৈদ্যেরবাজার এলাকার কয়েকজন যুবক নদীতে তাদের সঙ্গে কাজ করলেও এখন আর করেন না বলে তার দাবি। তাদের মাধ্যমেই শ্রমিকদের মারধর করে থাকেন। মারধরের ভয়ে নৌ মালিক ও শ্রমিকরা তার সঙ্গে আঁতাত করে বিকাশে টাকা পৌছে দেন। নৌ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ফাঁড়ি পুলিশদের ম্যানেজ করেই এ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন করে এবং রাতের বেলা ডাকাতি করেন। রনি ২০২২ সালে নগদ প্রায় ১৩ লাখ টাকা, ল্যাপটপ ও ১৩ টি মোবাইল সিমসহ গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় ডাকাতি, মারামারিসহ দেশের বিভিন্ন থায়ায় ১০ টি চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। সরেজমিনে মেঘনা নদীর নলচর এলাকায় গিয়ে নৌ যানকে থামাতে বললেই রনি ভাইয়ের বডি বলে দাবি করেন। রনির বডি বলার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, বিকাশের মাধ্যমে প্রতিটি বডির জন্য তাকে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকা দিলেই নির্বিঘেœ হামলা ও মারধর ছাড়াই তারা চলাচল করতে পারেন।

এসময় বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ২টি ট্রলারকে নদীতে টহল দিতে দেখা যায়।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত রনি হাসান মোবাইলে জানান, তিনি বর্তমানে বন্দর উপজেলার তিনগাঁও এলাকায় থাকেন। চাঁদাবাজির বিষয়টি সত্য নয়। টাকাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলাম সত্য। তবে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নৌযান শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে টহল দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি সত্য নয়। শ্রমিকরা পুলিশের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানালে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়াও বিকাশে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বিকাশের মাধ্যমে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। পুলিশ চাঁদাবাজের পক্ষে অবস্থান নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তাছাড়া নৌ ফাঁড়ি পুলিশের বিষয়ে চাঁদা আদায়ের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

back to top