# বাবার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে নিকটাত্মীয় ও কিছু কর্মচারীর যোগসাজশ
সিলেটের ব্যাপক আলোচিত এক চরিত্র শিল্পপতি রাগীব আলী। তিনি ‘দানবীর’ হিসেবে পরিচিত। আবার সিলেটের হাজার কোটি টাকার দেবোত্তোর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান ‘প্রতারণা ও জালিয়াতির’ মাধ্যমে দখলের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।
এবার আবার আলোচনায় এসেছেন পারিবারিক ইস্যুতে। রাগীব আলীর বাংলোয় ডাকাতি মামলায় গত বুধবার তার মেয়ে রেজিনা কাদিরকে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত। এরপর থেকেই সিলেটজুড়ে রাগীব আলী পরিবারকে নিয়ে চলছে আলোচনা। কী কারণে এই ধণকুবেরের পরিবারে অর্ন্তকলহ এই প্রশ্ন এখন সিলেটজুড়ে।
জানা গেছে, রাগীব আলীর পরিবারে বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এই বিরোধ মূলত রাগীব আলীর সম্পদ নিয়ে। সম্প্রতি রেজিনাকান্ডে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।
শিক্ষা, চিকিৎসা, গণমাধ্যম, চা শিল্প, ব্যাংকসহ নানা খাতে বিনিয়োগ রয়েছে রাগীব আলীর। তার ধনসম্পদ নিয়ে সিলেটজুড়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। যদিও তার সম্পদের পরিমান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ২০১৩-১৪ সালের করবর্ষের সম্পদ বিবরণীর তালিকা অনুযায়ী দেশের শীর্ষ সম্পদশালী ৫০ ব্যক্তির মধ্যে ছিলো রাগীব আলীর নাম। এর বাইরেও রাগীব আলীর আরও সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা অনেকের।
রাগীব আলীর দুই সন্তান। ছেলে আব্দুল হাই ও মেয়ে রেজিনা কাদির। মেয়ে তার পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে থাকেন। আর ছেলে আব্দুল হাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাগীব আলীর সাথে তার মালনীছড়া চা-বাগানের বাংলোয় থাকেন।
রেজিনা কাদিরের অভিযোগ, তাকে পিতার সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিতের চক্রান্ত চলছে। রাগীব আলীর কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ড, ট্রাস্টি বোর্ডে রাখা হয়নি রেজিনা কাদিরের নাম। রাগীব আলীর অসুস্থতার সুযোগে তাদেরই কিছুৃ আত্মীয় ও কর্মচারী ষড়যন্ত্র করে তাকে বঞ্চিত করছেন বলে অভিযোগ রেজিনা কাদিরের।
তার সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে ২০২৪ সালের ৫ জুন ঢাকার মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়রি করেন রেজিনা কাদির।
সে ডায়রিতে ‘স্বাক্ষর জাল করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোনের আবেদন করা’ ও ‘পরস্পর যোগসাজশে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা’ প্রকাশ করেন রেজিনা কাদির।
ডায়রিতে রাগীব আলীর পুত্রবধূ সাদিকা জান্নাত চৌধুরী, লিডিং ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য দেওয়ান শাকিব আহম্মেদ, সহযোগী আজম আলী, শ্যামল পাশী ও লিডিং ইউনিভার্সিটির তৎকালীন ট্রেজারার বনমালী ভৌমিককে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে বাবার সাথে দীর্ঘদিন ধরে দেখাও করতে পারছিলেন না রিজিনা কাদির। তবে ভাইয়ের স্ত্রী সাদিকা জান্নাত সিলেটে না থাকার সুযোগে ২৯ জুলাই বাবার সাথে দেখা করতে সিলেট আসেন রেজিনা কাদির। সিলেটে এসেই মালনীছড়া বাগানে রাগীব আলোর বাংলোতে যান তিনি।
তবে বাংলোতে ঢোকার আগেই বাধার মুখে পড়তে হয় রেজিনা কাদির ও তার সঙ্গে কয়েকজনকে।
অভিযোগ রয়েছে, রাগীব আলীর বাংলোর ফটকে রেজিনা কাদিরের সঙ্গে আসা লোকদের মারধর করা হয়। এরপর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই বাংলোর নিরাপত্তাকর্মী ও বাগান শ্রমিকরা রোজিনা কাদিরের সঙ্গে আসা লোকজনকে মারধর করেন। রেজিনা কাদির ‘জোর করে রাগীব আলীর সম্পত্তি লিখে নিতে পারেন’ এমন আশঙ্কা থেকে ওই পরিবারের ঘনিষ্ট একটি গোষ্টির ইন্ধনে রেজিনার সঙ্গীদের মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। মারধরের পর ৭ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ওইদিন রোজিনা কাদির বাবার সাথে থাকতে চাইলেও রাগীব আলী সম্মত হননি।
এ ঘটনার জেরে ৩১ জুলাই মালনীছড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার তালুকদার বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় রাগীব আলীর বাংলো থেকে ‘নথিপত্র লুট’ ‘আলাদা কিছু কাগজে স্বাক্ষর’ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় সঙ্গী ৭ জনসহ রেজিনা কাদিরকেও অভিযুক্ত করা হয়। আগেই আটক হওয়া ৭ জনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আর গত বুধবার রেজিনা কাদির আত্মসমর্পন করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
পারিবারিক এই বিরোধ নিয়ে শিল্পপতি রাগীব আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠজন দেওয়ান সাকিব আহমেদের সাথে বিকেল পাঁচটায় যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছুক্ষণ পরে বিস্তারিত জানাবেন বলে আর যোগাযোগ করেননি।
এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, মেয়ে রেজিনা তার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। এসময় মেয়ের সাথে থাকা লোকদের বাগানের শ্রমিক ও নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতাহাতি হয়। এরপর এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে রেজিনা কাদিরসহ ৭ জন কারাগারে আছেন।
রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫
# বাবার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে নিকটাত্মীয় ও কিছু কর্মচারীর যোগসাজশ
সিলেটের ব্যাপক আলোচিত এক চরিত্র শিল্পপতি রাগীব আলী। তিনি ‘দানবীর’ হিসেবে পরিচিত। আবার সিলেটের হাজার কোটি টাকার দেবোত্তোর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান ‘প্রতারণা ও জালিয়াতির’ মাধ্যমে দখলের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।
এবার আবার আলোচনায় এসেছেন পারিবারিক ইস্যুতে। রাগীব আলীর বাংলোয় ডাকাতি মামলায় গত বুধবার তার মেয়ে রেজিনা কাদিরকে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত। এরপর থেকেই সিলেটজুড়ে রাগীব আলী পরিবারকে নিয়ে চলছে আলোচনা। কী কারণে এই ধণকুবেরের পরিবারে অর্ন্তকলহ এই প্রশ্ন এখন সিলেটজুড়ে।
জানা গেছে, রাগীব আলীর পরিবারে বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এই বিরোধ মূলত রাগীব আলীর সম্পদ নিয়ে। সম্প্রতি রেজিনাকান্ডে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।
শিক্ষা, চিকিৎসা, গণমাধ্যম, চা শিল্প, ব্যাংকসহ নানা খাতে বিনিয়োগ রয়েছে রাগীব আলীর। তার ধনসম্পদ নিয়ে সিলেটজুড়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। যদিও তার সম্পদের পরিমান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ২০১৩-১৪ সালের করবর্ষের সম্পদ বিবরণীর তালিকা অনুযায়ী দেশের শীর্ষ সম্পদশালী ৫০ ব্যক্তির মধ্যে ছিলো রাগীব আলীর নাম। এর বাইরেও রাগীব আলীর আরও সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা অনেকের।
রাগীব আলীর দুই সন্তান। ছেলে আব্দুল হাই ও মেয়ে রেজিনা কাদির। মেয়ে তার পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে থাকেন। আর ছেলে আব্দুল হাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাগীব আলীর সাথে তার মালনীছড়া চা-বাগানের বাংলোয় থাকেন।
রেজিনা কাদিরের অভিযোগ, তাকে পিতার সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিতের চক্রান্ত চলছে। রাগীব আলীর কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ড, ট্রাস্টি বোর্ডে রাখা হয়নি রেজিনা কাদিরের নাম। রাগীব আলীর অসুস্থতার সুযোগে তাদেরই কিছুৃ আত্মীয় ও কর্মচারী ষড়যন্ত্র করে তাকে বঞ্চিত করছেন বলে অভিযোগ রেজিনা কাদিরের।
তার সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে ২০২৪ সালের ৫ জুন ঢাকার মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়রি করেন রেজিনা কাদির।
সে ডায়রিতে ‘স্বাক্ষর জাল করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোনের আবেদন করা’ ও ‘পরস্পর যোগসাজশে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা’ প্রকাশ করেন রেজিনা কাদির।
ডায়রিতে রাগীব আলীর পুত্রবধূ সাদিকা জান্নাত চৌধুরী, লিডিং ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য দেওয়ান শাকিব আহম্মেদ, সহযোগী আজম আলী, শ্যামল পাশী ও লিডিং ইউনিভার্সিটির তৎকালীন ট্রেজারার বনমালী ভৌমিককে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে বাবার সাথে দীর্ঘদিন ধরে দেখাও করতে পারছিলেন না রিজিনা কাদির। তবে ভাইয়ের স্ত্রী সাদিকা জান্নাত সিলেটে না থাকার সুযোগে ২৯ জুলাই বাবার সাথে দেখা করতে সিলেট আসেন রেজিনা কাদির। সিলেটে এসেই মালনীছড়া বাগানে রাগীব আলোর বাংলোতে যান তিনি।
তবে বাংলোতে ঢোকার আগেই বাধার মুখে পড়তে হয় রেজিনা কাদির ও তার সঙ্গে কয়েকজনকে।
অভিযোগ রয়েছে, রাগীব আলীর বাংলোর ফটকে রেজিনা কাদিরের সঙ্গে আসা লোকদের মারধর করা হয়। এরপর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই বাংলোর নিরাপত্তাকর্মী ও বাগান শ্রমিকরা রোজিনা কাদিরের সঙ্গে আসা লোকজনকে মারধর করেন। রেজিনা কাদির ‘জোর করে রাগীব আলীর সম্পত্তি লিখে নিতে পারেন’ এমন আশঙ্কা থেকে ওই পরিবারের ঘনিষ্ট একটি গোষ্টির ইন্ধনে রেজিনার সঙ্গীদের মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। মারধরের পর ৭ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ওইদিন রোজিনা কাদির বাবার সাথে থাকতে চাইলেও রাগীব আলী সম্মত হননি।
এ ঘটনার জেরে ৩১ জুলাই মালনীছড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার তালুকদার বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় রাগীব আলীর বাংলো থেকে ‘নথিপত্র লুট’ ‘আলাদা কিছু কাগজে স্বাক্ষর’ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় সঙ্গী ৭ জনসহ রেজিনা কাদিরকেও অভিযুক্ত করা হয়। আগেই আটক হওয়া ৭ জনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আর গত বুধবার রেজিনা কাদির আত্মসমর্পন করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
পারিবারিক এই বিরোধ নিয়ে শিল্পপতি রাগীব আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠজন দেওয়ান সাকিব আহমেদের সাথে বিকেল পাঁচটায় যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছুক্ষণ পরে বিস্তারিত জানাবেন বলে আর যোগাযোগ করেননি।
এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, মেয়ে রেজিনা তার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। এসময় মেয়ের সাথে থাকা লোকদের বাগানের শ্রমিক ও নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতাহাতি হয়। এরপর এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে রেজিনা কাদিরসহ ৭ জন কারাগারে আছেন।