রাজধানীর চাঁনখারপুলে জুলাইয়ের গণভ্যুত্থানের সময় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় দুই প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিন ও নিহত মেহেদী হাসান জুনায়েদ ওরফে মুস্তাকিমের বাবা শেখ জামাল সাক্ষ্য দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার প্রথমে আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তিনি ৫ অগাস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসার ছাদ থেকে গণভ্যুত্থানের সময়ের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে জানালা দিয়ে দেখেন পুলিশ কারফিউ বলছে। পরে ছাদ থেকে দেখতে পান ছাত্ররা শহীদ মিনারে জমায়েতের চেষ্টা করছে, কিন্তু পুলিশ বাধা দিচ্ছে। পুলিশের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা আশপাশের সড়কে সরে গেলে পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। আঞ্জুয়ারার মোবাইল ফোনে গুলিবিদ্ধ এক ছাত্রের ভিডিও নেওয়া হয়, যা ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়।
বিকালে ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারপতির বেঞ্চ শেখ জামালর সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তিনি ৫ অগাস্টের সকালে তার ছেলে জুনায়েদের সঙ্গে শেষ দেখা ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিশদ বিবরণ দেন। জুনায়েদ ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতাল ও ধূপখোলা মাঠে খোঁজাখুঁজি করেন, পরে তার মৃতদেহ বাসায় দেখতে পান।
শেখ জামাল অভিযোগ করেন, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি রাখেন। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “আমার একমাত্র সন্তান হারিয়ে আমি এখন কোনো কাজ করতে পারি না, পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।”
মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন ও অন্যান্য পুলিশ সদস্য। অন্য চার আসামি পলাতক রয়েছেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গত ১১ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয় এবং ২৫ মে ফরমাল চার্জ আকারে দাখিল করা হয়। তদন্তে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীরা নিহত হন।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, তদন্তে মোট ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি, ১৯টি ভিডিও ক্লিপ, ১১টি পত্রিকা প্রতিবেদন ও বিভিন্ন প্রমাণাদি সংগৃহীত হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে প্রকাশ পায়, তৎকালীন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ‘চীনিজ রাইফেল’ দিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার হয়।
জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছিল। এসব ঘটনার বিচার এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।
---
বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫
রাজধানীর চাঁনখারপুলে জুলাইয়ের গণভ্যুত্থানের সময় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় দুই প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিন ও নিহত মেহেদী হাসান জুনায়েদ ওরফে মুস্তাকিমের বাবা শেখ জামাল সাক্ষ্য দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার প্রথমে আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তিনি ৫ অগাস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসার ছাদ থেকে গণভ্যুত্থানের সময়ের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে জানালা দিয়ে দেখেন পুলিশ কারফিউ বলছে। পরে ছাদ থেকে দেখতে পান ছাত্ররা শহীদ মিনারে জমায়েতের চেষ্টা করছে, কিন্তু পুলিশ বাধা দিচ্ছে। পুলিশের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা আশপাশের সড়কে সরে গেলে পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। আঞ্জুয়ারার মোবাইল ফোনে গুলিবিদ্ধ এক ছাত্রের ভিডিও নেওয়া হয়, যা ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়।
বিকালে ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারপতির বেঞ্চ শেখ জামালর সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তিনি ৫ অগাস্টের সকালে তার ছেলে জুনায়েদের সঙ্গে শেষ দেখা ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিশদ বিবরণ দেন। জুনায়েদ ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতাল ও ধূপখোলা মাঠে খোঁজাখুঁজি করেন, পরে তার মৃতদেহ বাসায় দেখতে পান।
শেখ জামাল অভিযোগ করেন, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি রাখেন। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “আমার একমাত্র সন্তান হারিয়ে আমি এখন কোনো কাজ করতে পারি না, পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।”
মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন ও অন্যান্য পুলিশ সদস্য। অন্য চার আসামি পলাতক রয়েছেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গত ১১ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয় এবং ২৫ মে ফরমাল চার্জ আকারে দাখিল করা হয়। তদন্তে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীরা নিহত হন।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, তদন্তে মোট ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি, ১৯টি ভিডিও ক্লিপ, ১১টি পত্রিকা প্রতিবেদন ও বিভিন্ন প্রমাণাদি সংগৃহীত হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে প্রকাশ পায়, তৎকালীন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ‘চীনিজ রাইফেল’ দিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার হয়।
জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছিল। এসব ঘটনার বিচার এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।
---