জেলেদের ১০ জনের একটি দল একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে মাছ ধরতে বেরিয়েছিলেন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে। দুদিন পর গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে হঠাৎ করে ইঞ্জিন চালিত একটি নৌকাযোগে ১৫-১৬ জনের এক দল ডাকাত তাদের নৌকায় অতর্কিত আক্রমণ করে। জেলেদের নৌকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাকাতরা জেলেদের চড়, থাপ্পর ও লাঠিপেটা করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের মাছ, জ্বালানি ও গ্যাস সিলিন্ডার ও নগদ টাকাসহ সবকিছুই লুট করে নিয়ে যায়।
জেলেদের ছেড়ে দিলেও ওই নৌকার মাঝিকে জিম্মি করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। ওইদিনই বরগুনা ও পাথরঘাটার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে আরও ছয়টি জেলে নৌকায় আক্রমণ করে জলদস্যুরা। সেখান থেকেও বেশ কয়েকজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
নৌডাকাতরা দুই দিন পর মুঠোফোনে পরিবার ও স্বজনদের মুক্তপণ দাবি করে। জনপ্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। ইতোমধ্যে ছয়জন জেলে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়ে জেলে পল্লীতে ফিরেছেন। এর মধ্যে একজন তিন লাখ, একজন আড়াই লাখ এবং একজন ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন।
নৌ-ডাকাত দলের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে ফিরে আসা জেলে বেলাল মিয়া গতকাল ফোনে সংবাদকে এসব কথা জানান।
এক নৌকার মাঝি কামাল জানিয়েছেন, জলদস্যুরা তাকে গভীর জঙ্গলে নিয়ে আটকে রাখে। পরে তার স্ত্রীকে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তার স্ত্রী তিন দফায় এক লাখ টাকা দেয়। আরও দুই লাখ টাকার জন্য হাতুড়ি দিয়ে ডাকাতরা কামালের হাঁটুতে পেটাতে থাকেন। চার দিন পর ২৪ নভেম্বর রাতে কামালকে জলদস্যুরা উপকূলে চোখবাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কুমিটোলা র্যাব সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বরগুনা, পাথরঘাটা ও পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উপকূলে জেলেদের নৌকায় ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত দস্যুদের এক সদস্য ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে গত মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে মুক্তিপণের পাঁচ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য দস্যুদের ধরতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
ঘটনার পর থেকে বরগুনা, পাথরঘাটাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে জেলে পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত। ধারকর্জ করে মুক্তিপণ দেয়ার পর তারা এখন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সমুদ্র ও স্থানীয় নদীতে মাছ ধরতে যেতেও তারা ভয় পাচ্ছেন।
র্যাব জানায়, জেলেদের নৌকায় ডাকাতির ঘটনায় বরগুনা পাথরঘাটা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৮ ও বঙ্গোপসাগরের অভ্যান্তরে ও সমুদ্রের নিকতবর্তী চরাঞ্চলে যেমনÑ ডালচর সোনার চর, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায়। এ ছাড়া র্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টারেও টহল পরিচালনা করে। র্যাবের টহল ও অভিযানে দস্যুরা গত ২৩ নভেম্বর অপহৃতদের নৌকায় রেখে পালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার রাতে র্যাব-৮ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নৌ-ডাকাতির মূল মুক্তিপণ সংগ্রহকারী ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে র্যাবকে বলেছে, মুক্তিপণ সংগ্রহে দুই থেকে তিনজন জড়িত। গ্রেপ্তারকৃত মৃধা মুক্তিপণ সংগ্রহের মূল হোতা। তার অধীনে বেশ কয়েকজন অর্থ সংগ্রহকারী রয়েছে। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। আর জেলেদের ব্যবহ্নত মোবাইল দিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে।
গ্রেপ্তারকৃত ইলিয়াসের স্থায়ী নিবাস পটুয়াখালী। সে দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করছে। সে গার্মেন্টকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী, সেমাই ও মিষ্টি তৈরির কারিগর, ইটভাটার শ্রমিক ইত্যাদি নানা পেশার পরিচয়ে ছদ্মবেশে ডাকাতির অর্থ সংগ্রহের কাজ করে। সংগ্রহ করা টাকা ডাকাত দলের সর্দারের নির্দেশমত সে সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে। সে সর্দারের আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। র্যাব বোলছে, গ্রেপ্তারকৃত ইলিয়াস জানিয়েছে, তার দলের সদস্যরা মাছ ধরার মৌসুমে বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকাতি করে। এ চক্র সদস্যরা একাধিক বিয়ে করে ছদ্ম বেশে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে বলেও বলছে র্যাব। র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদকে জানান, নৌকাতি চক্রের ১৫ থেকে ১৭ জন চিহ্নিত। তাদের ধরতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
জেলেদের ১০ জনের একটি দল একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে মাছ ধরতে বেরিয়েছিলেন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে। দুদিন পর গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে হঠাৎ করে ইঞ্জিন চালিত একটি নৌকাযোগে ১৫-১৬ জনের এক দল ডাকাত তাদের নৌকায় অতর্কিত আক্রমণ করে। জেলেদের নৌকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাকাতরা জেলেদের চড়, থাপ্পর ও লাঠিপেটা করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের মাছ, জ্বালানি ও গ্যাস সিলিন্ডার ও নগদ টাকাসহ সবকিছুই লুট করে নিয়ে যায়।
জেলেদের ছেড়ে দিলেও ওই নৌকার মাঝিকে জিম্মি করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। ওইদিনই বরগুনা ও পাথরঘাটার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে আরও ছয়টি জেলে নৌকায় আক্রমণ করে জলদস্যুরা। সেখান থেকেও বেশ কয়েকজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
নৌডাকাতরা দুই দিন পর মুঠোফোনে পরিবার ও স্বজনদের মুক্তপণ দাবি করে। জনপ্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। ইতোমধ্যে ছয়জন জেলে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়ে জেলে পল্লীতে ফিরেছেন। এর মধ্যে একজন তিন লাখ, একজন আড়াই লাখ এবং একজন ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন।
নৌ-ডাকাত দলের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে ফিরে আসা জেলে বেলাল মিয়া গতকাল ফোনে সংবাদকে এসব কথা জানান।
এক নৌকার মাঝি কামাল জানিয়েছেন, জলদস্যুরা তাকে গভীর জঙ্গলে নিয়ে আটকে রাখে। পরে তার স্ত্রীকে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তার স্ত্রী তিন দফায় এক লাখ টাকা দেয়। আরও দুই লাখ টাকার জন্য হাতুড়ি দিয়ে ডাকাতরা কামালের হাঁটুতে পেটাতে থাকেন। চার দিন পর ২৪ নভেম্বর রাতে কামালকে জলদস্যুরা উপকূলে চোখবাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কুমিটোলা র্যাব সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বরগুনা, পাথরঘাটা ও পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উপকূলে জেলেদের নৌকায় ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত দস্যুদের এক সদস্য ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে গত মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে মুক্তিপণের পাঁচ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য দস্যুদের ধরতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
ঘটনার পর থেকে বরগুনা, পাথরঘাটাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে জেলে পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত। ধারকর্জ করে মুক্তিপণ দেয়ার পর তারা এখন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সমুদ্র ও স্থানীয় নদীতে মাছ ধরতে যেতেও তারা ভয় পাচ্ছেন।
র্যাব জানায়, জেলেদের নৌকায় ডাকাতির ঘটনায় বরগুনা পাথরঘাটা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৮ ও বঙ্গোপসাগরের অভ্যান্তরে ও সমুদ্রের নিকতবর্তী চরাঞ্চলে যেমনÑ ডালচর সোনার চর, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায়। এ ছাড়া র্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টারেও টহল পরিচালনা করে। র্যাবের টহল ও অভিযানে দস্যুরা গত ২৩ নভেম্বর অপহৃতদের নৌকায় রেখে পালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার রাতে র্যাব-৮ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নৌ-ডাকাতির মূল মুক্তিপণ সংগ্রহকারী ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে র্যাবকে বলেছে, মুক্তিপণ সংগ্রহে দুই থেকে তিনজন জড়িত। গ্রেপ্তারকৃত মৃধা মুক্তিপণ সংগ্রহের মূল হোতা। তার অধীনে বেশ কয়েকজন অর্থ সংগ্রহকারী রয়েছে। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। আর জেলেদের ব্যবহ্নত মোবাইল দিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে।
গ্রেপ্তারকৃত ইলিয়াসের স্থায়ী নিবাস পটুয়াখালী। সে দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করছে। সে গার্মেন্টকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী, সেমাই ও মিষ্টি তৈরির কারিগর, ইটভাটার শ্রমিক ইত্যাদি নানা পেশার পরিচয়ে ছদ্মবেশে ডাকাতির অর্থ সংগ্রহের কাজ করে। সংগ্রহ করা টাকা ডাকাত দলের সর্দারের নির্দেশমত সে সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে। সে সর্দারের আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। র্যাব বোলছে, গ্রেপ্তারকৃত ইলিয়াস জানিয়েছে, তার দলের সদস্যরা মাছ ধরার মৌসুমে বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকাতি করে। এ চক্র সদস্যরা একাধিক বিয়ে করে ছদ্ম বেশে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে বলেও বলছে র্যাব। র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদকে জানান, নৌকাতি চক্রের ১৫ থেকে ১৭ জন চিহ্নিত। তাদের ধরতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।