প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে
ঘাতক গ্রেপ্তার
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ভাবলা গ্রামে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং দুই সন্তান খুন হয়। শনিবার (২১ মে) রাতে চাকু ও ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে গিয়াসউদ্দিন নামক এক ব্যক্তি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। গিয়াস উদ্দিন পিবিআইয়ের কাছে স্বীকার করেছে যে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে ঘরে রাখা চাকু ও ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে তার স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৬), ছেলে রাব্বি শেখ (১২) এবং মেয়ে রাকিবা আক্তারকে (৭) হত্যা করেছে। এলাকাবাসীর তথ্যমতে জানা যায় নিহত রহিমা পেশায় একজন দর্জি।
রোববার (২২ মে) বিকেল ৪টার দিকে পিবিআইয়র কাছে আটকের পর গিয়াস উদ্দিন শেখ জিজ্ঞাসাবাদে মৌখিকভাবে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও ব্যাটসহ অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাড়ি থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়।
গিয়াস উদ্দিন শেখ (৪৫) বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়ার আড়াল এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টেন্ডারের মাধ্যমে রঙের কাজ করেন। তিনি বেশির ভাগ সময় গাজীপুরে অবস্থান করেন। আর দুই সন্তানকে নিয়ে রাহিমা বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। শনিবার বিকেলে গিয়াস উদ্দিন গাজীপুরের কর্মস্থলে যান। স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে তিনি রোববার সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর থেকে বাড়িতে যান। স্থানীয় লোকজন বলেন, সকাল ৮টার দিকে স্থানীয় এক নারী বানাতে দেয়া পোশাক আনতে যান রাহিমা বেগমের বাড়িতে। বাইরে থেকে দরজা আটকানো দেখে বেশ কয়েকবার নাম ধরে সজোরে ডাকাডাকি করেন তিনি। কিন্তু আশপাশ থেকে কারো কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে কৌতূহলবশত দরজার নিচ দিয়ে ঘরের ভেতরে তাকান তিনি। এ সময় তিনি রক্ত দেখতে পেয়ে চিৎকার দেন। তখন স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীরা এসে ওই ঘরের একটি জানালা ভেঙে ঘরের ভেতর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর বেলাব থানা-পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বেলাব থানার ওসি সাফায়েত হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান ঘটনাস্থলে আসার পর লাশ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। এ সময় দুই ঘরের দরজা খুলে নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পিবিআই বলছে, আটকের পর গিয়াস উদ্দিন শেখ তাদের কাছে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, শনিবার রাতে তিনি গোপনে বাড়িতে আসেন। পরে স্ত্রী রাহিমা বেগমের কক্ষে ঢুকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে পেটান। এরপর মেঝেতে ফেলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন তিনি। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত দুই সন্তানদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ওই ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে দুই ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখে তিনি চলে যান।
পিবিআই জানায়, কী কারণে এই হত্যাকান্ড, সে বিষয়ে নিজেদের মতো করে তদন্ত করছিল ডিবি, র্যাব, সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ কর্মকর্তারা। গিয়াস উদ্দিন শেখও তাদের তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু তাকে খুবই নির্বিকার লাগছিল। স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। প্রথমে তাকে সন্দেহ হয়নি। তিনি পিবিআইকে জানান যে, তিনি ঘটনার সময় গাজীপুরে ছিলেন। পরে তদন্তের জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে পিবিআই জানতে পারে, হত্যাকান্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। এরপরই সন্দেহ থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর জেরার মুখে তিনি পিবিআইয়ের কাছে মৌখিকভাবে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
বাড়িটিতে পাশাপাশি লাগোয়া দুটি মাটির ঘর। পশ্চিম দিকের ঘরটিতে থাকতেন রাহিমা বেগম। দক্ষিণ দিকের ঘরে থাকত রাব্বি ও রাকিবা। নিজ নিজ ঘরেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। রাহিমা বেগমের রক্তাক্ত লাশ পড়ে ছিল ঘরের মেঝেতে। অন্যদিকে রাব্বি ও রাকিবার লাশ পড়ে ছিল তাদের খাটের ওপরে। বাড়িটির সামনেই বিশাল খোলা মাঠ। অন্তত ৫০ গজ দূরত্বে দুই দিকে দুটি বাড়ি আছে। আশপাশে আর কোন বাড়িঘর নেই।
আটকের আগে গিয়াস উদ্দিন শেখের অভিযোগ ছিল, ১০-১২ দিন আগে বাড়িতে কয়েকটি গাছ কেটেছিলেন তিনি। এ নিয়ে তখন তার এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ওই চাচাতো ভাই তাদের গাছগুলো বিক্রি করতে দেননি। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক বাড়লে তিনি হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন। তবে আটকের পরে পিবিআইয়ের কাছে তার ভাষ্য, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে তিনি এই কান্ড করেছেন।
প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে
ঘাতক গ্রেপ্তার
রোববার, ২২ মে ২০২২
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ভাবলা গ্রামে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং দুই সন্তান খুন হয়। শনিবার (২১ মে) রাতে চাকু ও ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে গিয়াসউদ্দিন নামক এক ব্যক্তি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। গিয়াস উদ্দিন পিবিআইয়ের কাছে স্বীকার করেছে যে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে ঘরে রাখা চাকু ও ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে তার স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৬), ছেলে রাব্বি শেখ (১২) এবং মেয়ে রাকিবা আক্তারকে (৭) হত্যা করেছে। এলাকাবাসীর তথ্যমতে জানা যায় নিহত রহিমা পেশায় একজন দর্জি।
রোববার (২২ মে) বিকেল ৪টার দিকে পিবিআইয়র কাছে আটকের পর গিয়াস উদ্দিন শেখ জিজ্ঞাসাবাদে মৌখিকভাবে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও ব্যাটসহ অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাড়ি থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়।
গিয়াস উদ্দিন শেখ (৪৫) বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়ার আড়াল এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টেন্ডারের মাধ্যমে রঙের কাজ করেন। তিনি বেশির ভাগ সময় গাজীপুরে অবস্থান করেন। আর দুই সন্তানকে নিয়ে রাহিমা বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। শনিবার বিকেলে গিয়াস উদ্দিন গাজীপুরের কর্মস্থলে যান। স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে তিনি রোববার সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর থেকে বাড়িতে যান। স্থানীয় লোকজন বলেন, সকাল ৮টার দিকে স্থানীয় এক নারী বানাতে দেয়া পোশাক আনতে যান রাহিমা বেগমের বাড়িতে। বাইরে থেকে দরজা আটকানো দেখে বেশ কয়েকবার নাম ধরে সজোরে ডাকাডাকি করেন তিনি। কিন্তু আশপাশ থেকে কারো কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে কৌতূহলবশত দরজার নিচ দিয়ে ঘরের ভেতরে তাকান তিনি। এ সময় তিনি রক্ত দেখতে পেয়ে চিৎকার দেন। তখন স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীরা এসে ওই ঘরের একটি জানালা ভেঙে ঘরের ভেতর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর বেলাব থানা-পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বেলাব থানার ওসি সাফায়েত হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান ঘটনাস্থলে আসার পর লাশ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। এ সময় দুই ঘরের দরজা খুলে নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পিবিআই বলছে, আটকের পর গিয়াস উদ্দিন শেখ তাদের কাছে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, শনিবার রাতে তিনি গোপনে বাড়িতে আসেন। পরে স্ত্রী রাহিমা বেগমের কক্ষে ঢুকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে পেটান। এরপর মেঝেতে ফেলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন তিনি। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত দুই সন্তানদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ওই ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে দুই ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখে তিনি চলে যান।
পিবিআই জানায়, কী কারণে এই হত্যাকান্ড, সে বিষয়ে নিজেদের মতো করে তদন্ত করছিল ডিবি, র্যাব, সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ কর্মকর্তারা। গিয়াস উদ্দিন শেখও তাদের তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু তাকে খুবই নির্বিকার লাগছিল। স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। প্রথমে তাকে সন্দেহ হয়নি। তিনি পিবিআইকে জানান যে, তিনি ঘটনার সময় গাজীপুরে ছিলেন। পরে তদন্তের জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে পিবিআই জানতে পারে, হত্যাকান্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। এরপরই সন্দেহ থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর জেরার মুখে তিনি পিবিআইয়ের কাছে মৌখিকভাবে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
বাড়িটিতে পাশাপাশি লাগোয়া দুটি মাটির ঘর। পশ্চিম দিকের ঘরটিতে থাকতেন রাহিমা বেগম। দক্ষিণ দিকের ঘরে থাকত রাব্বি ও রাকিবা। নিজ নিজ ঘরেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। রাহিমা বেগমের রক্তাক্ত লাশ পড়ে ছিল ঘরের মেঝেতে। অন্যদিকে রাব্বি ও রাকিবার লাশ পড়ে ছিল তাদের খাটের ওপরে। বাড়িটির সামনেই বিশাল খোলা মাঠ। অন্তত ৫০ গজ দূরত্বে দুই দিকে দুটি বাড়ি আছে। আশপাশে আর কোন বাড়িঘর নেই।
আটকের আগে গিয়াস উদ্দিন শেখের অভিযোগ ছিল, ১০-১২ দিন আগে বাড়িতে কয়েকটি গাছ কেটেছিলেন তিনি। এ নিয়ে তখন তার এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ওই চাচাতো ভাই তাদের গাছগুলো বিক্রি করতে দেননি। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক বাড়লে তিনি হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন। তবে আটকের পরে পিবিআইয়ের কাছে তার ভাষ্য, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে তিনি এই কান্ড করেছেন।