তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে চায় দুদক -সচিব
রাষ্ট্রয়াত্ত বেসিক ব্যাংকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে মামলা করতে ৫ বছর সময় নেয়ার পর তদন্তে ৭ বছর সময় পার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভুয়া নথিপত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেয়ার ঘটনা প্রকাশ হলে অনুসন্ধান করে মামলা করতে দুদক ৫ বছর পার করেছিল। সাত বছর আগে সাবেক এমডি কাজী ফকরুল ইসলামসহ ১২০ জনের নামে দুদক যে ৫৬ মামলা করেছে তা আগামী ৩ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যার ফলে আগামী ৩ মাসের মধ্যে এসব মামলা তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে চাচ্ছে কমিশন। আর এ কারণে দ্রুত তদন্ত শেষ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
গতকাল এক ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ১২০ জনের বিরুদ্ধে যে ৫৬টি মামলা হয়েছে সেই মামলার তদন্ত কার্যক্রম আগামী ৩ মাসের মধ্যে শেষ করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে করা এসব তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পরপরই অনুসন্ধানে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনাপর্ষদের বিরুদ্ধে। প্রায় পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিনদিনে টানা ৫৬টি মামলা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ৮২ জন, ব্যাংকার ২৭ ও ভূমি জরিপকারী ১১ জন। যদিও এসব মামলায় ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। এ নিয়ে সমালোচনায় পড়েন দুদক কমিশন।
দুদক সচিব বলেন, আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার তদন্তকাজ যাতে নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হয়, সে লক্ষ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে।
দুদক সচিব বলেন, বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার প্রতিটির সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়। সে কারণেই সময় লাগছে। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছি।
দুদক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋন কেলেঙ্কারীর অভিযোগে অনুসন্ধানে নামলেও অনিয়মের মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখা থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখা থেকে ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখা থেকে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখা থেকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় তখন মামলায় বলা হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান এখনও চলছে। এছাড়া বেসিক ব্যাংকসংক্রান্ত বিষয়ে আরও পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।
ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোন মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে দুদকের বরাবরই বক্তব্য ছিল, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দালিলিকভাবে আবদুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে দুদকের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে গণমাধ্যমের সামনে নিজের ভুল স্বীকার করে বেসিক ব্যাংকের একসময়ের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু বলেছিলেন, ‘আমি যা করেছি সরল মনে করেছি। অনেকক্ষেত্রে ভুল করেছি। তবে সব দায় আমার নয়। কারণ, বোর্ডের অনুমোদনের বাইরে আমি কিছু করিনি।’ জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের সাবেক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের দল।
তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে চায় দুদক -সচিব
শুক্রবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২২
রাষ্ট্রয়াত্ত বেসিক ব্যাংকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে মামলা করতে ৫ বছর সময় নেয়ার পর তদন্তে ৭ বছর সময় পার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভুয়া নথিপত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেয়ার ঘটনা প্রকাশ হলে অনুসন্ধান করে মামলা করতে দুদক ৫ বছর পার করেছিল। সাত বছর আগে সাবেক এমডি কাজী ফকরুল ইসলামসহ ১২০ জনের নামে দুদক যে ৫৬ মামলা করেছে তা আগামী ৩ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যার ফলে আগামী ৩ মাসের মধ্যে এসব মামলা তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে চাচ্ছে কমিশন। আর এ কারণে দ্রুত তদন্ত শেষ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
গতকাল এক ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ১২০ জনের বিরুদ্ধে যে ৫৬টি মামলা হয়েছে সেই মামলার তদন্ত কার্যক্রম আগামী ৩ মাসের মধ্যে শেষ করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে করা এসব তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পরপরই অনুসন্ধানে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনাপর্ষদের বিরুদ্ধে। প্রায় পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিনদিনে টানা ৫৬টি মামলা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ৮২ জন, ব্যাংকার ২৭ ও ভূমি জরিপকারী ১১ জন। যদিও এসব মামলায় ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। এ নিয়ে সমালোচনায় পড়েন দুদক কমিশন।
দুদক সচিব বলেন, আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার তদন্তকাজ যাতে নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হয়, সে লক্ষ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে।
দুদক সচিব বলেন, বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার প্রতিটির সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়। সে কারণেই সময় লাগছে। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছি।
দুদক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋন কেলেঙ্কারীর অভিযোগে অনুসন্ধানে নামলেও অনিয়মের মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখা থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখা থেকে ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখা থেকে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখা থেকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় তখন মামলায় বলা হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান এখনও চলছে। এছাড়া বেসিক ব্যাংকসংক্রান্ত বিষয়ে আরও পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।
ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোন মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে দুদকের বরাবরই বক্তব্য ছিল, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দালিলিকভাবে আবদুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে দুদকের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে গণমাধ্যমের সামনে নিজের ভুল স্বীকার করে বেসিক ব্যাংকের একসময়ের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু বলেছিলেন, ‘আমি যা করেছি সরল মনে করেছি। অনেকক্ষেত্রে ভুল করেছি। তবে সব দায় আমার নয়। কারণ, বোর্ডের অনুমোদনের বাইরে আমি কিছু করিনি।’ জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের সাবেক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের দল।