alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

আইডিয়ালের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আতিক দম্পতির অবৈধ সম্পদ

সাইফ বাবলু : সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২

# শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ

সম্পদ অর্জনের উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন

# নতুন করে অনুসন্ধান কমিটি পুনঃগঠন

# দায়মুক্তি পেতে বিভিন্ন মহলে তৎবির

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান খান ও তার স্ত্রী ভিশন-৭১ ডেভলেপমেন্টের পরিচালক নাহিদা আক্তারের (নিপা) অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান নতুন করে করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে এ দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মাহাবুবুল আলম যে প্রতিবেদন দাখিল করছে তাতে সন্তুষ্ঠ নয় দুদক। তবে পুনঃতদন্ত ঠেকাতে আতিক বিপুল পরিমান অর্থ দিয়েছে বিভিন্ন মহলে এমন অভিযোগ উঠেছে।

জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন শিবলি তার কার্যালয়ে জানিয়েছেন, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আতিক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি নানা কারণে অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করে কমিশন নতুন করে অনুসন্ধানের জন্য একটি টিম গঠন করে দিয়েছেন।

দুদকের পদস্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, আতিকুর রহমান দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে পক্ষপাত করা অথবা তাকে বাঁচিয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেয়ার একটি চেষ্ঠার কথা কমিশনের কানে এসেছে। তাই কমিশন আগের অনুসন্ধান প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে নতুন করে টিম গঠন করেছে। এবং টিমের প্রধান ও তদারকিতে দুজন পরিচালককে যুক্ত করা হয়েছে যাতে তদন্ত কর্মকর্তা কোনভাবেই অসংলগ্ন অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে না পারে।

কমিশনের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত ২ এর পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কথিত প্রকৌশলী আতিক-দম্পতির সম্পদের হিসেব চেয়ে দেয়া নোটিশে নির্ধারিত সময়েই তারা তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। অনুসন্ধান কর্মকর্তা সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তবে কমিশন মনে করছে যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তা নতুন করে তদন্ত করা প্রয়োজন। এজন্য নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

গত ১৪ আগস্ট দুদক পরিচালক মুহাম্মদ মনরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে আতিক-দম্পতির সম্পদের হিসেব চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়। আতিক-দম্পতিকে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়, প্রাপ্ততথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বস জন্মেছে, আপনি-আপনারা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। চিঠিতে আরও বলা হয়, আপনার এবং আপনার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে-বেনামে অর্জিত অস্থাবর সম্পত্তি দায়-দেনা, আয়ের উৎস এবং তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী এই আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে প্রেরিত সংযুক্ত ছকে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে বা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৮-এর উপধারা (২) মোতাবেক এ দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চলতি বছরের ২৫ মে প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল দুদক। তখন দুদক দেশের ১৫টি ব্যাংকে আতিকুর রহমানের ৯৭টি একাউন্ট থাকার তথ্য পেয়েছে। এসব ব্যাংকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১১০ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে কমিশনের কাছে তথ্য রয়েছে। আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি বাণিজ্যের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। রামপুরার বনশ্রী মসজিদে মার্কেটে বিশ্বাস লাইব্রেরী রয়েছে। আফতাবনগরে বি-ব্লকে বিম্বাস বাজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান, একই এলাকার ৫ নম্বর সড়কে ১২ নম্বর প্লটে ভিশন-৭১ নামে একটি রিয়েল এস্টটে অফিস, আফতাবনগরে চারটি বাড়ি এবং বনশশ্রীতে আরও ১টি বাড়ি সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বনশ্রী এলাকায় খান ফিলিং অ্যান্ড এলপিজি, আফতাবনগরে ন্যাশনাল ফ্রায়ডে কিচেন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে আতিকুর রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, স্ত্রী নাহিদা আক্তার নীপা, বড় ভাই আবদুস সালাম খান, ফজলুর রহমান খান ও শ্বশুর নুরুল ইসলামের নামেও লেনদেন হয়েছে।

এর আগে আইডিয়ালের উপসহকারি প্রকৌশলী আতিকের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা তাকে অবৈধভাবে ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ অর্জনের বিষয়ে তার বক্তব্য প্রদানে নোটিশ দেয়। অর্থপাচারের সেই অভিযোগ নাম মাত্র অনুসন্ধান করে ঘটনাটি নথিভুক্ত করে কমিশন। আতিকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা চলতি বছরের ৩ আগস্ট জানিয়েছিলেন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আতিকুর রহমানের ১৭টি ভবন আছে। অনুসন্ধান টিমের আরেক সদস্য দুদকের পরিচালক সফিকুর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছিলেন আইডিয়ালের এই কর্মকর্তার বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আতিকের বাড়ি এবং অনুসন্ধান কর্মকর্তার বাড়ি একই জেলার একই গ্রামে। এছাড়া কমিশনের একজন পদস্ত কর্মকর্তা ও ওই এলাকার হওয়ায় নানাভাবে অনুসন্ধানে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে আতিক। জনশ্রুতি রয়েছে অনুসন্ধান প্রতিবেদন পক্ষে দেয়ার জন্য আতিক কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে। যদিও এর কোন তথ্য প্রমাণ কারো পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ যাতে না হয় সে জন্য বেশ টাকা ছড়িয়েছে আতিক দম্পতি।

দুদকের তথ্য বলছে, আতিকুর রহমান খান ২০০৪ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপ- টেকনিশিয়ান (তৃতীয় শ্রেণীর পদে) যোগদান করেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সর্বসাকুল্যে ৩০ হাজার টাকা বেতন পান। অতিরিক্ত কাজের জন্য পান আরও কিছু ভাতা। অথচ তার ৯৭টি ব্যাংক হিসাবে ১০০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। অভিযোগ আছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর অবৈধভাবে ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ তশরুপ করে সম্পদ গড়তে শুরু করেন আতিক। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সিন্ডিকেট গড়ে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন। এক সময় কলেজ অধ্যক্ষ সাহানা বেগমের সঙ্গে আতিকের বৈরিতার সর্ম্পক্য তৈরি হলেও এখন তারা মিলেমিশে কাজ করছেন।

জানা গেছে, কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের আজমতপুর এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমানের বাবা একজন কৃষক। আইডিয়াল স্কুলে যোগ দেয়ার আগে তিনি কনকর্ড নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আয়কৃত অর্থ দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। আতিকের বড় ভাই আবদুস সালাম মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের বাংলা মাধ্যম দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিল। কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের আজমতপুর এলাকার প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন বাগানবাড়ি ও পিকনিক স্পট। দুদকের তথ্য মতে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শাখা ছাড়াও মুগদা ও রামপুরায় পৃথক দুটি শাখা রয়েছে। এই স্কুলে বাংলা মাধ্যমে প্রভাতি ও দিবা এবং ইংলিশ ভার্সনে প্রভাতি ও দিবা শাখায় প্রতিবছর অন্তত তিন থেকে চার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ভর্তি বাণিজ্যে আতিক ছাত্র ছাত্রী প্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নিতেন বলে অভিযোগ ছিল।

মাদকের তথ্য দেয়ায় হাতের রগ কর্তন, আসামীর পরিবর্তে ভুক্তভোগীকেই আটক, পরে ৫০ হাজার টাকায় মুক্তি

সাবেক এসপি সুব্রত কুমার হালদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

ছবি

‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন : ডিবি প্রধান

ছবি

এবার মানবপাচার মামলায় মিল্টন সমাদ্দারের ৪ দিনের রিমান্ড

ছবি

ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ

রাবির ক্যান্টিন পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ

ছবি

মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

তিন দিন রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার

ছবি

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : ছাত্রলীগ নেতাকে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ

ছবি

নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট, আমেরিকায় নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা

আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফসহ ৩৩ আসামি অভিযুক্ত

ছবি

ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতরা অচিরেই গ্রেফতার

ফরিদগঞ্জে মাকে জবাই করে হত্যা করলো ছেলে

সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলেসহ কারাগারে ৩

প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

মেয়েকে ধর্ষণের অপরাধে জন্মদাতা পিতার মৃত্যুদণ্ড

ছবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এক সদস্য গ্রেপ্তার

অর্থপাচার: সকল আসামিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডিবিতে ডাকা হয়েছে কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে

সখীপুরে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবা গাঁজাসহ গ্রেফতার দুই

রাবিতে শহীদ কামারুজ্জামান হল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

ছবি

ড. ইউনূসকে ২৩ মে পর্যন্ত জামিন

ছবি

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাই ও চুরি হওয়া ফোন সেট উদ্ধার

মতলবে ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুনের রহস্য উন্মোচন,মূল আসামী সহ ৩ জন গ্রেফতার

ছবি

লঞ্চে বোরকা পরে ছিনতাই করতেন তারা

বন্ধুর সহায়তায় প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করে ঘরের মালামাল লুট করে আপন ভাই

গাজীপুরে ৩জন ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক

ছবি

আইন অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দুদকের মামলায় সাবেক এমপি কাদের খানের চার বছরের দন্ড

গাজীপুরে পুত্রকে কুপিয়ে হত্যা, পিতা আটক

ছবি

এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

সিলেটে ‘ধর্ষক’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গ্রপ্তার করেছে র‌্যাব

ছবি

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

ছবি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

মুন্সীগঞ্জে ডালিম হ.ত্যা মামলার ৬ আসামি জেলহাজতে

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

আইডিয়ালের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আতিক দম্পতির অবৈধ সম্পদ

সাইফ বাবলু

সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২

# শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ

সম্পদ অর্জনের উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন

# নতুন করে অনুসন্ধান কমিটি পুনঃগঠন

# দায়মুক্তি পেতে বিভিন্ন মহলে তৎবির

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান খান ও তার স্ত্রী ভিশন-৭১ ডেভলেপমেন্টের পরিচালক নাহিদা আক্তারের (নিপা) অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান নতুন করে করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে এ দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মাহাবুবুল আলম যে প্রতিবেদন দাখিল করছে তাতে সন্তুষ্ঠ নয় দুদক। তবে পুনঃতদন্ত ঠেকাতে আতিক বিপুল পরিমান অর্থ দিয়েছে বিভিন্ন মহলে এমন অভিযোগ উঠেছে।

জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন শিবলি তার কার্যালয়ে জানিয়েছেন, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আতিক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি নানা কারণে অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করে কমিশন নতুন করে অনুসন্ধানের জন্য একটি টিম গঠন করে দিয়েছেন।

দুদকের পদস্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, আতিকুর রহমান দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে পক্ষপাত করা অথবা তাকে বাঁচিয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেয়ার একটি চেষ্ঠার কথা কমিশনের কানে এসেছে। তাই কমিশন আগের অনুসন্ধান প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে নতুন করে টিম গঠন করেছে। এবং টিমের প্রধান ও তদারকিতে দুজন পরিচালককে যুক্ত করা হয়েছে যাতে তদন্ত কর্মকর্তা কোনভাবেই অসংলগ্ন অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে না পারে।

কমিশনের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত ২ এর পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কথিত প্রকৌশলী আতিক-দম্পতির সম্পদের হিসেব চেয়ে দেয়া নোটিশে নির্ধারিত সময়েই তারা তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। অনুসন্ধান কর্মকর্তা সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তবে কমিশন মনে করছে যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তা নতুন করে তদন্ত করা প্রয়োজন। এজন্য নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

গত ১৪ আগস্ট দুদক পরিচালক মুহাম্মদ মনরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে আতিক-দম্পতির সম্পদের হিসেব চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়। আতিক-দম্পতিকে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়, প্রাপ্ততথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বস জন্মেছে, আপনি-আপনারা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। চিঠিতে আরও বলা হয়, আপনার এবং আপনার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে-বেনামে অর্জিত অস্থাবর সম্পত্তি দায়-দেনা, আয়ের উৎস এবং তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী এই আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে প্রেরিত সংযুক্ত ছকে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে বা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৮-এর উপধারা (২) মোতাবেক এ দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চলতি বছরের ২৫ মে প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল দুদক। তখন দুদক দেশের ১৫টি ব্যাংকে আতিকুর রহমানের ৯৭টি একাউন্ট থাকার তথ্য পেয়েছে। এসব ব্যাংকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১১০ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে কমিশনের কাছে তথ্য রয়েছে। আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি বাণিজ্যের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। রামপুরার বনশ্রী মসজিদে মার্কেটে বিশ্বাস লাইব্রেরী রয়েছে। আফতাবনগরে বি-ব্লকে বিম্বাস বাজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান, একই এলাকার ৫ নম্বর সড়কে ১২ নম্বর প্লটে ভিশন-৭১ নামে একটি রিয়েল এস্টটে অফিস, আফতাবনগরে চারটি বাড়ি এবং বনশশ্রীতে আরও ১টি বাড়ি সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বনশ্রী এলাকায় খান ফিলিং অ্যান্ড এলপিজি, আফতাবনগরে ন্যাশনাল ফ্রায়ডে কিচেন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে আতিকুর রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, স্ত্রী নাহিদা আক্তার নীপা, বড় ভাই আবদুস সালাম খান, ফজলুর রহমান খান ও শ্বশুর নুরুল ইসলামের নামেও লেনদেন হয়েছে।

এর আগে আইডিয়ালের উপসহকারি প্রকৌশলী আতিকের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা তাকে অবৈধভাবে ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ অর্জনের বিষয়ে তার বক্তব্য প্রদানে নোটিশ দেয়। অর্থপাচারের সেই অভিযোগ নাম মাত্র অনুসন্ধান করে ঘটনাটি নথিভুক্ত করে কমিশন। আতিকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা চলতি বছরের ৩ আগস্ট জানিয়েছিলেন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আতিকুর রহমানের ১৭টি ভবন আছে। অনুসন্ধান টিমের আরেক সদস্য দুদকের পরিচালক সফিকুর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছিলেন আইডিয়ালের এই কর্মকর্তার বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আতিকের বাড়ি এবং অনুসন্ধান কর্মকর্তার বাড়ি একই জেলার একই গ্রামে। এছাড়া কমিশনের একজন পদস্ত কর্মকর্তা ও ওই এলাকার হওয়ায় নানাভাবে অনুসন্ধানে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে আতিক। জনশ্রুতি রয়েছে অনুসন্ধান প্রতিবেদন পক্ষে দেয়ার জন্য আতিক কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে। যদিও এর কোন তথ্য প্রমাণ কারো পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ যাতে না হয় সে জন্য বেশ টাকা ছড়িয়েছে আতিক দম্পতি।

দুদকের তথ্য বলছে, আতিকুর রহমান খান ২০০৪ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপ- টেকনিশিয়ান (তৃতীয় শ্রেণীর পদে) যোগদান করেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সর্বসাকুল্যে ৩০ হাজার টাকা বেতন পান। অতিরিক্ত কাজের জন্য পান আরও কিছু ভাতা। অথচ তার ৯৭টি ব্যাংক হিসাবে ১০০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। অভিযোগ আছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর অবৈধভাবে ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ তশরুপ করে সম্পদ গড়তে শুরু করেন আতিক। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সিন্ডিকেট গড়ে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন। এক সময় কলেজ অধ্যক্ষ সাহানা বেগমের সঙ্গে আতিকের বৈরিতার সর্ম্পক্য তৈরি হলেও এখন তারা মিলেমিশে কাজ করছেন।

জানা গেছে, কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের আজমতপুর এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমানের বাবা একজন কৃষক। আইডিয়াল স্কুলে যোগ দেয়ার আগে তিনি কনকর্ড নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আয়কৃত অর্থ দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। আতিকের বড় ভাই আবদুস সালাম মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের বাংলা মাধ্যম দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিল। কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের আজমতপুর এলাকার প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন বাগানবাড়ি ও পিকনিক স্পট। দুদকের তথ্য মতে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শাখা ছাড়াও মুগদা ও রামপুরায় পৃথক দুটি শাখা রয়েছে। এই স্কুলে বাংলা মাধ্যমে প্রভাতি ও দিবা এবং ইংলিশ ভার্সনে প্রভাতি ও দিবা শাখায় প্রতিবছর অন্তত তিন থেকে চার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ভর্তি বাণিজ্যে আতিক ছাত্র ছাত্রী প্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নিতেন বলে অভিযোগ ছিল।

back to top