alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন

৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগে ওসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

মো. পলাশ খান, শরীয়তপুর(জাজিরা) : শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে থানায় এনে মারধর করে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।

ঐ অভিযোগের পর গত ৭ জুন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করছেন।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার। তিনি জাজিরা উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।

নির্যাতন করে চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই হয়। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে, এমন অভিযোগ এনে গত ২৩ মে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম। মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ঠান্ডুর চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তাঁর ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তাঁর ছেলে সাদ্দাম চোকদার।

আবু জাফর ঠান্ডু কর্তৃক পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর ঠান্ডু। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাঁকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর ঠান্ডু। চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখা হয়। শহীদুল মামলার বাদীপক্ষ ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর ঠান্ডু।

আবু জাফর ঠান্ডু সংবাদকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধারের জন্য বাদীরা জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীসহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ৭২ লাখ টাকা দাবি করায় আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।’

আবু জাফর আরও বলেন, ‘নাওডোবা বাজারে থাকা আমার চাচা ও চাচাতো ভাইদের দুটি দোকান আমাকে কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। আমাকে নির্যাতন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেন ওসি মোস্তাফিজ। শহীদুল ইসলামের নামে এসব চেক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার কাছ থেকে দুটি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যিনি তদন্ত করছেন, তিনি ওই পাঁচটি চেক উদ্ধার করেছেন।’

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারী সংবাদকে বলেন, ‘যার ডলার এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি আমার ভাগনে হয়। তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে আমি মামলার আসামি ও তাঁদের মুরব্বি ঠান্ডু চোকদারের (আবু জাফর) ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় আসামিদের দোকান লিখে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছিলেন।’

এবিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। অফিশিয়াল প্রসেসের কারণে হয়তো তাঁর দায়িত্ব ছাড়তে এক দিন সময় লেগেছে। নাওডোবার এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কেন একজনকে বদলি করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া সার্কেল তাঁর কর্মস্থলে থাকবেন। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণিত হলে তখন আমরা তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’

অর্থপাচার: সকল আসামিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডিবিতে ডাকা হয়েছে কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে

সখীপুরে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবা গাঁজাসহ গ্রেফতার দুই

রাবিতে শহীদ কামারুজ্জামান হল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

ছবি

ড. ইউনূসকে ২৩ মে পর্যন্ত জামিন

ছবি

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাই ও চুরি হওয়া ফোন সেট উদ্ধার

মতলবে ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুনের রহস্য উন্মোচন,মূল আসামী সহ ৩ জন গ্রেফতার

ছবি

লঞ্চে বোরকা পরে ছিনতাই করতেন তারা

বন্ধুর সহায়তায় প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করে ঘরের মালামাল লুট করে আপন ভাই

গাজীপুরে ৩জন ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক

ছবি

আইন অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দুদকের মামলায় সাবেক এমপি কাদের খানের চার বছরের দন্ড

গাজীপুরে পুত্রকে কুপিয়ে হত্যা, পিতা আটক

ছবি

এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

সিলেটে ‘ধর্ষক’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গ্রপ্তার করেছে র‌্যাব

ছবি

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

ছবি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

মুন্সীগঞ্জে ডালিম হ.ত্যা মামলার ৬ আসামি জেলহাজতে

ছবি

শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

ছবি

গেন্ডারিয়ায় ৯৮৩ পিস ভয়াবহ মাদক বুপ্রেনরফিনসহ গ্রেপ্তার কারবারি

ছবি

সিলেটে তরুণীকে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ অধরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ অভিযুক্তরা

নারায়ণগঞ্জে প্রেমিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের প্রতারণার মামলা

ছবি

মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫ জন

ছবি

দুই বছরের দণ্ড ২৭ বছর পর বাতিল, রায়ের কপি যাচ্ছে সব আদালতে

ছবি

মানিকদির জমি দখল নাজিমের দৌরাত্ম্য থামছেই না, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার পলাতক ২ আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ঢাকায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

রামুর কচ্ছপিয়ায় ছুরিকাঘাতে ছায়া হত্যার ঘটনায় আটক দুই

ছবি

মহেশখালীর সিরিয়াল কিলার আজরাইল গ্রেফতার

ছবি

মুন্সীগঞ্জে পাইপগান-ফেন্সিডিলসহ দু’জন আটক

ছবি

দুদকের মামলায় ২০ কোটি ২২ লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক এমপি মান্নান কারাগারে

ছবি

আইএমইআই নম্বর পাল্টে মোবাইল বিক্রি, চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

চুনারুঘাটে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা, স্বামী আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৫ কোটি টাকা গায়েব, ৩ কর্মকর্তা কারাগারে

শতাধিক শিক্ষা ভবন নির্মাণের নামে বিল ভাগ-বাটোয়ারা

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন

৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগে ওসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

মো. পলাশ খান, শরীয়তপুর(জাজিরা)

শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে থানায় এনে মারধর করে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।

ঐ অভিযোগের পর গত ৭ জুন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করছেন।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার। তিনি জাজিরা উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।

নির্যাতন করে চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই হয়। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে, এমন অভিযোগ এনে গত ২৩ মে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম। মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ঠান্ডুর চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তাঁর ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তাঁর ছেলে সাদ্দাম চোকদার।

আবু জাফর ঠান্ডু কর্তৃক পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর ঠান্ডু। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাঁকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর ঠান্ডু। চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখা হয়। শহীদুল মামলার বাদীপক্ষ ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর ঠান্ডু।

আবু জাফর ঠান্ডু সংবাদকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধারের জন্য বাদীরা জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীসহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ৭২ লাখ টাকা দাবি করায় আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।’

আবু জাফর আরও বলেন, ‘নাওডোবা বাজারে থাকা আমার চাচা ও চাচাতো ভাইদের দুটি দোকান আমাকে কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। আমাকে নির্যাতন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেন ওসি মোস্তাফিজ। শহীদুল ইসলামের নামে এসব চেক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার কাছ থেকে দুটি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যিনি তদন্ত করছেন, তিনি ওই পাঁচটি চেক উদ্ধার করেছেন।’

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারী সংবাদকে বলেন, ‘যার ডলার এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি আমার ভাগনে হয়। তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে আমি মামলার আসামি ও তাঁদের মুরব্বি ঠান্ডু চোকদারের (আবু জাফর) ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় আসামিদের দোকান লিখে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছিলেন।’

এবিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। অফিশিয়াল প্রসেসের কারণে হয়তো তাঁর দায়িত্ব ছাড়তে এক দিন সময় লেগেছে। নাওডোবার এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কেন একজনকে বদলি করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া সার্কেল তাঁর কর্মস্থলে থাকবেন। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণিত হলে তখন আমরা তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’

back to top