alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন

৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগে ওসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

মো. পলাশ খান, শরীয়তপুর(জাজিরা) : শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে থানায় এনে মারধর করে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।

ঐ অভিযোগের পর গত ৭ জুন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করছেন।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার। তিনি জাজিরা উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।

নির্যাতন করে চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই হয়। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে, এমন অভিযোগ এনে গত ২৩ মে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম। মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ঠান্ডুর চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তাঁর ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তাঁর ছেলে সাদ্দাম চোকদার।

আবু জাফর ঠান্ডু কর্তৃক পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর ঠান্ডু। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাঁকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর ঠান্ডু। চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখা হয়। শহীদুল মামলার বাদীপক্ষ ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর ঠান্ডু।

আবু জাফর ঠান্ডু সংবাদকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধারের জন্য বাদীরা জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীসহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ৭২ লাখ টাকা দাবি করায় আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।’

আবু জাফর আরও বলেন, ‘নাওডোবা বাজারে থাকা আমার চাচা ও চাচাতো ভাইদের দুটি দোকান আমাকে কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। আমাকে নির্যাতন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেন ওসি মোস্তাফিজ। শহীদুল ইসলামের নামে এসব চেক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার কাছ থেকে দুটি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যিনি তদন্ত করছেন, তিনি ওই পাঁচটি চেক উদ্ধার করেছেন।’

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারী সংবাদকে বলেন, ‘যার ডলার এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি আমার ভাগনে হয়। তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে আমি মামলার আসামি ও তাঁদের মুরব্বি ঠান্ডু চোকদারের (আবু জাফর) ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় আসামিদের দোকান লিখে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছিলেন।’

এবিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। অফিশিয়াল প্রসেসের কারণে হয়তো তাঁর দায়িত্ব ছাড়তে এক দিন সময় লেগেছে। নাওডোবার এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কেন একজনকে বদলি করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া সার্কেল তাঁর কর্মস্থলে থাকবেন। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণিত হলে তখন আমরা তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’

মাদারীপুর বণিক সমিতির সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে ২৮১ শতাংশ

ছবি

নাজিরপুরে গাঁজাসহ যুবক গ্রেফতার

চুনারুঘাটে ইয়াবাসহ যুবক গ্রেপ্তার

ছবি

মিরপুরে চার মৃত্যুর জন্য দায়ী বিদ্যুতের ‘চোরাই লাইন’

ছবি

হিলি সীমান্তে ১৬ কোটি টাকার হেরোইন ও ইয়াবা জব্দ

ঘরের মেজেতে পড়ে কান্না করছে শিশু, বিছানায় মায়ের নিথর দেহ

ছবি

২০ লাখ টাকা ছিনতাই: দুই পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন রিমান্ডে

ছবি

ভগ্নিপতিকে হত্যার ১৬ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গুলিবিদ্ধ পথচারী ভুবন

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টায় পুলিশ পরিদর্শকের যাবজ্জীবন

ছবি

পল্টনে ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ গ্রেপ্তার ৫

ছবি

মেয়াদ উত্তীর্ণ দ্রব্য সামগ্রী বিক্রির অভিযোগে ৪ ব্যবসায়ীকেজরিমানা

দাদীকে হত্যা করে টাকা লুট, অবশেষে নাতিসহ ২জন গ্রেফতার,স্বীকারোক্তি

‘ঘুষ নির্ধারণ’ করে দেয়া এসিল্যান্ডকে সাময়িক বরখাস্ত

ছবি

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন এএসপি সোহেল

ছবি

সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রধান আসামি বাবুর হাইকোর্টে জামিন

ছবি

রংপুর মেডিকেলে অস্বাভাবিক দামে রোগীর খাবার, চক্রের হাতে নিয়ন্ত্রণ ঠিকাদারির

খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় সাক্ষ্য দেবেন বিদেশি তিন নাগরিক

ঘোড়াঘাটে রোগীর শরীরে অন্য গ্রুপের রক্ত দেয়ার অভিযোগ

ছবি

হেফাজত কাণ্ড : অধিকার সম্পাদক আদিলুরের ২ বছরের কারাদণ্ড

ছবি

জামিন পেলেন রিজেন্টের সাহেদ

ছবি

৩ বছর দণ্ডের মামলায় রিজেন্ট সাহেদের জামিন আবেদন

প্রশ্নফাঁসের মামলায় গ্রেপ্তার আইডিয়ালের শিক্ষিকা বহিষ্কার

রংপুরে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ধরে এনে মামলা, তারাগজ্ঞ থানার ওসিকে ষ্টান্ড রিলিজ

পূর্ব সুন্দরবনে ট্রলার ও নিষিদ্ধ জালসহ আটক ৬

অপহ্নত মাদ্রাসা ছাত্রী উদ্ধার ২ অপহরণকারি গ্রেফতার

ছবি

অবৈধ অর্থ বৈধ করতে মায়ের নাম ব্যবহার কাম্য নয় : হাইকোর্ট

সাভারে নিখোঁজ সাংবাদিক সীতাকুন্ডে উদ্ধারে

নরসিংদীর শিবপুরে গরু ব্যবসায়ীর মাথা বিচ্ছিন্ন মরদেহ উদ্ধার

ছবি

ঘোড়াঘাটে কঙ্কাল চুরির ঘটনায় পাঁচ আসামী রিমান্ড শেষে জেলে

ছবি

ঢাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৭

ছবি

অনলাইন জুয়ারি চক্রের ৫০ সদস্য গ্রেফতার

কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহীদুল ও সাহেদের পেছনে কারা?

ছবি

ট্রলারে ১০ মরদেহ : আত্মসমর্পণকারী জলদস্যু সুমন গ্রেফতার

সাভারে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে কাউন্সিলর আটক

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন

৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগে ওসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

মো. পলাশ খান, শরীয়তপুর(জাজিরা)

শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে থানায় এনে মারধর করে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।

ঐ অভিযোগের পর গত ৭ জুন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করছেন।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার। তিনি জাজিরা উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।

নির্যাতন করে চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই হয়। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে, এমন অভিযোগ এনে গত ২৩ মে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম। মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ঠান্ডুর চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তাঁর ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তাঁর ছেলে সাদ্দাম চোকদার।

আবু জাফর ঠান্ডু কর্তৃক পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর ঠান্ডু। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাঁকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর ঠান্ডু। চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখা হয়। শহীদুল মামলার বাদীপক্ষ ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর ঠান্ডু।

আবু জাফর ঠান্ডু সংবাদকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধারের জন্য বাদীরা জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীসহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ৭২ লাখ টাকা দাবি করায় আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।’

আবু জাফর আরও বলেন, ‘নাওডোবা বাজারে থাকা আমার চাচা ও চাচাতো ভাইদের দুটি দোকান আমাকে কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। আমাকে নির্যাতন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেন ওসি মোস্তাফিজ। শহীদুল ইসলামের নামে এসব চেক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার কাছ থেকে দুটি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যিনি তদন্ত করছেন, তিনি ওই পাঁচটি চেক উদ্ধার করেছেন।’

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারী সংবাদকে বলেন, ‘যার ডলার এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি আমার ভাগনে হয়। তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে আমি মামলার আসামি ও তাঁদের মুরব্বি ঠান্ডু চোকদারের (আবু জাফর) ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় আসামিদের দোকান লিখে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছিলেন।’

এবিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। অফিশিয়াল প্রসেসের কারণে হয়তো তাঁর দায়িত্ব ছাড়তে এক দিন সময় লেগেছে। নাওডোবার এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কেন একজনকে বদলি করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া সার্কেল তাঁর কর্মস্থলে থাকবেন। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণিত হলে তখন আমরা তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’

back to top