আজ ৫ অক্টোবর; বি শিক্ষক দিবস। ‘শিক্ষকের কন্ঠস্বর : শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার’-এই প্রতিপাদ্যে এবার দিবসটি পালন হচ্ছে।
প্রতিবছর শিক্ষক দিবস পালন হলেও শিক্ষায় ‘সঙ্কট’ কাটছে না। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। সারাদেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় এক লাখের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকরা নানা সমস্যা ও বঞ্চনায় জর্জড়িত। এর মধ্যে মর্যাদা, পদোন্নতি ও পদায়ন সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষকরা।
এবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত শিক্ষক দিবসের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা-উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
আবার সরকার পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও ছাত্রজনতার গণঅভ্যত্থান পরবর্তী সময়ে পঞ্চগড় জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক/সুপার অধ্যক্ষকে বলপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে এবং সে বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পদত্যাগ করায় প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে ডিসি জানান।
শুধু পঞ্চগড় নয়, সারাদেশেই এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
১৯৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদযাপন হচ্ছে। ইউনেস্কোর অনুমোদনে প্রতিবছর পৃথক প্রতিপাদ্যে তা’ হয়ে আসছে। তবে সব দেশে এক দিনে বা একই সময়ে দিবসটি পালিত হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দিবসটি পালন হয় ৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধা কৃষ্ণনের জন্মদিনে।
শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২ হাজারের মতো। এসব প্রতিষ্ঠানে এক লাখের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার চাহিদাপত্র দিয়েও শিক্ষক পাচ্ছে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় এনটিআরসিএ’র (জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয় কর্তৃপক্ষ) মাধ্যমে। এই সংস্থাটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েও এখন শিক্ষক পাচ্ছে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে জাতীয়করণ হওয়া প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে সরকারি মোট ৬০৪টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ থেকে সাত হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সারাদেশের সমসংখ্যাক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও তিন থেকে চার হাজারের মতো শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ‘ব্যাহত’ হচ্ছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এমপিওভুক্তি, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা। প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে বারবার আশ^াস দেয়া হলেও দাবি পূরণ না হওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক নেতারা জানান, দেশের বেশিরভাগ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। অভিন্ন কারিকুলামে পাঠদান এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য বৈষম্য রয়েছে।
শিক্ষক নেতারা জানান, সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বেতন ও মর্যাদায় পার্থক্য অনেক। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।
বেসরকারি শিক্ষকরা ‘নামমাত্র’ বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা পান জানিয়ে শিক্ষক নেতারা বলেন, এমপিও হিসেবে যে বেতন-ভাতা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের দেয়া হয় তা দিয়ে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে শিক্ষকদের এখন টিকে থাকা কঠিন।
প্রাথমিক শিক্ষায়ও অসন্তোষ
আদর্শ মানুষ গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে শিক্ষকরা জানান। তারা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া ‘খুবই দুঃখজনক’।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা জানান, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ শতাংশও পদোন্নতি পান না। একজন শিক্ষক ৩৫/৩৬ বছর চাকরি করে সহকারী শিক্ষক হিসেবেই অবসরে যান।
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দিবস উদযাপনের নির্দেশনা
নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব উপজেলা-জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিব’ উদযাপন করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৩ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪
আজ ৫ অক্টোবর; বি শিক্ষক দিবস। ‘শিক্ষকের কন্ঠস্বর : শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার’-এই প্রতিপাদ্যে এবার দিবসটি পালন হচ্ছে।
প্রতিবছর শিক্ষক দিবস পালন হলেও শিক্ষায় ‘সঙ্কট’ কাটছে না। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। সারাদেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় এক লাখের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকরা নানা সমস্যা ও বঞ্চনায় জর্জড়িত। এর মধ্যে মর্যাদা, পদোন্নতি ও পদায়ন সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষকরা।
এবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত শিক্ষক দিবসের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা-উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
আবার সরকার পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও ছাত্রজনতার গণঅভ্যত্থান পরবর্তী সময়ে পঞ্চগড় জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক/সুপার অধ্যক্ষকে বলপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে এবং সে বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পদত্যাগ করায় প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে ডিসি জানান।
শুধু পঞ্চগড় নয়, সারাদেশেই এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
১৯৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদযাপন হচ্ছে। ইউনেস্কোর অনুমোদনে প্রতিবছর পৃথক প্রতিপাদ্যে তা’ হয়ে আসছে। তবে সব দেশে এক দিনে বা একই সময়ে দিবসটি পালিত হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দিবসটি পালন হয় ৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধা কৃষ্ণনের জন্মদিনে।
শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২ হাজারের মতো। এসব প্রতিষ্ঠানে এক লাখের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার চাহিদাপত্র দিয়েও শিক্ষক পাচ্ছে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় এনটিআরসিএ’র (জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয় কর্তৃপক্ষ) মাধ্যমে। এই সংস্থাটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েও এখন শিক্ষক পাচ্ছে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে জাতীয়করণ হওয়া প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে সরকারি মোট ৬০৪টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ থেকে সাত হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সারাদেশের সমসংখ্যাক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও তিন থেকে চার হাজারের মতো শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ‘ব্যাহত’ হচ্ছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এমপিওভুক্তি, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা। প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে বারবার আশ^াস দেয়া হলেও দাবি পূরণ না হওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক নেতারা জানান, দেশের বেশিরভাগ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। অভিন্ন কারিকুলামে পাঠদান এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য বৈষম্য রয়েছে।
শিক্ষক নেতারা জানান, সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বেতন ও মর্যাদায় পার্থক্য অনেক। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।
বেসরকারি শিক্ষকরা ‘নামমাত্র’ বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা পান জানিয়ে শিক্ষক নেতারা বলেন, এমপিও হিসেবে যে বেতন-ভাতা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের দেয়া হয় তা দিয়ে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে শিক্ষকদের এখন টিকে থাকা কঠিন।
প্রাথমিক শিক্ষায়ও অসন্তোষ
আদর্শ মানুষ গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে শিক্ষকরা জানান। তারা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া ‘খুবই দুঃখজনক’।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা জানান, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ শতাংশও পদোন্নতি পান না। একজন শিক্ষক ৩৫/৩৬ বছর চাকরি করে সহকারী শিক্ষক হিসেবেই অবসরে যান।
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দিবস উদযাপনের নির্দেশনা
নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব উপজেলা-জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিব’ উদযাপন করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৩ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।