“রুপসী বাংলার কবি” জীবনানন্দ দাসের কবিতা ও বাংলার অন্যতম সেরা রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি’র গানে মুখরিত রঙিন এক সন্ধ্যা কাটানোর লক্ষ্যে ভিন্নধর্মী এক আয়োজন “আনন্দ সন্ধ্যালোক” অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ ১৭ই ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজধানী ঢাকার বনানীস্থ বৈঠক রেস্টুরেন্টে। কাব্য ও সঙ্গীতের পাশাপাশি ঘরোয়া আড্ডায় মেতে উঠবেন গানপাগল আর কবিতাপ্রেমি এক ঝাঁক মানুষ।
অনুষ্ঠানটির আয়োজনে থাকছে অনলাইনভিত্তিক ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সংস্থা কপিশপ ও কারুজ কমিউনিকেশন নামে একটি মিডিয়া এজেন্সি।
গ্রাম বাংলার রূপপ্রাচুর্য কিংবা আটপৌরে জীবনের ছোট ছোট গল্পগুলো যার কাব্যে ছন্দ খুঁজে পায় তিনি হলেন তিমির হননের কবি জীবনানন্দ দাস। ১৮৯৯সালে বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালে কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় নিহত হবার আগে সৃষ্টি করে যান বনলতা সেনের (১৯৪২) মত অমর চরিত্র এবং মহাপৃথিবী (১৯৪৪) ও রুপসী বাংলার (১৯৬১) মত কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ। যার অধিকাংশই প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর পর। বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় এই সাহিত্যিক নির্জনতার কবি হিসেবেও পরিচিত।
১৭ই ফেব্রুয়ারী জীবনানন্দ দাসের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কবির জীবন ও কীর্তির স্মরণে তাঁর কালজয়ী পংতিগুলো আবৃতি ও আলোচনার মাধ্যমে দিনটি উদযাপিত হবে। সাথে সুরের মূর্ছনা ছড়াবে মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের বিখ্যাত কিছু গান।
১৯৭৬ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি। ইন্ডি ঘরানার এই ব্যান্ড গড়ে উঠে গৌতম ও প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়সহ মোট ৭জন সংগীতশিল্পীর হাত ধরে যার প্রাথমিক লাইন-আপের সর্বশেষ সদস্য তাপস বাপি মৃত্যবরণ করেন গতবছর জুন মাসে।
এই লাইন আপেই তাঁদের প্রথম তিনটি এ্যালবাম সংবিগ্ন পাখিকূল ও কলকাতা বিষয়ক (১৯৭৭), অজানা উড়ন্ত বস্তু বা অ-উ-ব (১৯৭৮), ও দৃশ্যমান মহীনের ঘোড়াগুলি (১৯৭৯) প্রকাশিত হয়। বাংলা গানের নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা, ৯০ এর দশকে রক সংগীতকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও ল্যাটিন ও জ্যাজ মিউজিকের সাথে দেশীয় লোকসঙ্গীতের মেলবন্ধনে পরীক্ষামূলক ও ভিন্নধর্মী সংগীত সৃষ্টি করার বদৌলতে মহীনের ঘোড়াগুলি বাংলা গানের অন্যতম প্রভাবশালী ও অনুকরণীয় একটি নামে পরিণত হয়েছে।
৭ সদস্যের “সপ্তর্ষি” থেকে একাধিক নাম পরিবর্তনের পর অবশেষে “মহীনের ঘোড়াগুলি” নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে জীবন বোধের কবি জীবনানন্দ দাসের গভীর প্রভাব। কারণ এই নামটি এসেছে আধুনিক বাঙালি এই কবির সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮) কাব্যগ্রন্থের ঘোড়া শিরোনামের কবিতার দ্বিতীয় পঙ্ক্তি থেকে — "মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে।"
আয়োজকরা তাদের ফেইসবুক ইভেন্টের পাতায় জানান বিপন্ন বাঙালির কবির সাথে শহুরে জনপদের ব্যান্ডের এই নিবিড় সম্পর্কের পরিপূর্ণ স্বাদ উপহার দেয়াই তাদের উদ্দেশ্য। এই অনুষ্ঠানে জীবনানন্দ দাশের কিছু নন্দিত কবিতা আবৃতি করবেন দ্বিপালী, আমিনসহ কিছু নাগরিক কবি ও সাহিত্যিক। পাশাপাশি মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের জনপ্রিয় কিছু গান পরিবেশন করবেন সন্ধি ও বিপুসহ শহরের উদীয়মান কয়েকজন সঙ্গীতশিল্পী। বন্ধুসুলভ আড্ডার সাথে রাখা হয়েছে চা-সিঙ্গাড়ার ব্যবস্থা। সেইসাথে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ঘরোয়া পরিবেশ নিশ্চিত করতেও বদ্ধপরিকর আয়োজকপক্ষ।
একারণে আসন সংখ্যা সীমিত রাখার কথা জানান আয়োজক কপিশপ ও কারুজ কমিউনিকেশন। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন মাত্র ৫০জন যার সব আসন ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। টিকেটমূল্য ধার্য করা হয়েছে ১০০০টাকা। তবে এই টিকেট সংগ্রহ করতে হবে একটি অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই আনন্দ আয়োজন আলোক ছড়াবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এই আয়োজনটি জীবনানন্দ দাশ এবং মহিনের ঘোড়াগুলির ভক্ত থেকে শুরু করে বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অনুরাগীদের মধ্যে বৈচিত্র্যময় দর্শকদের আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কবিতা ও সঙ্গীতের অনন্য মিশ্রণে সাজানো অনুষ্ঠানটি দুটি সাংস্কৃতিক আইকনের জন্য একটি শ্রদ্ধাঞ্জলী। এটি কেবল অতীতের জন্য নয় বরং এই দুই কিংবদন্তীর সৃজনশীলতা এবং অভিব্যক্তির চিরন্তন চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা যা আজও পাঠক-শ্রোতাদের অনুরণিত ও অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
মহীনের সুরে জীবনানন্দের জন্মবার্ষিকীতে তার অনন্য কীর্তিগুলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই ধরণের আয়োজন নিয়মিত এবং আরও বড় পরিসরে আয়োজিত হওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
“রুপসী বাংলার কবি” জীবনানন্দ দাসের কবিতা ও বাংলার অন্যতম সেরা রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি’র গানে মুখরিত রঙিন এক সন্ধ্যা কাটানোর লক্ষ্যে ভিন্নধর্মী এক আয়োজন “আনন্দ সন্ধ্যালোক” অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ ১৭ই ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজধানী ঢাকার বনানীস্থ বৈঠক রেস্টুরেন্টে। কাব্য ও সঙ্গীতের পাশাপাশি ঘরোয়া আড্ডায় মেতে উঠবেন গানপাগল আর কবিতাপ্রেমি এক ঝাঁক মানুষ।
অনুষ্ঠানটির আয়োজনে থাকছে অনলাইনভিত্তিক ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সংস্থা কপিশপ ও কারুজ কমিউনিকেশন নামে একটি মিডিয়া এজেন্সি।
গ্রাম বাংলার রূপপ্রাচুর্য কিংবা আটপৌরে জীবনের ছোট ছোট গল্পগুলো যার কাব্যে ছন্দ খুঁজে পায় তিনি হলেন তিমির হননের কবি জীবনানন্দ দাস। ১৮৯৯সালে বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালে কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় নিহত হবার আগে সৃষ্টি করে যান বনলতা সেনের (১৯৪২) মত অমর চরিত্র এবং মহাপৃথিবী (১৯৪৪) ও রুপসী বাংলার (১৯৬১) মত কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ। যার অধিকাংশই প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর পর। বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় এই সাহিত্যিক নির্জনতার কবি হিসেবেও পরিচিত।
১৭ই ফেব্রুয়ারী জীবনানন্দ দাসের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কবির জীবন ও কীর্তির স্মরণে তাঁর কালজয়ী পংতিগুলো আবৃতি ও আলোচনার মাধ্যমে দিনটি উদযাপিত হবে। সাথে সুরের মূর্ছনা ছড়াবে মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের বিখ্যাত কিছু গান।
১৯৭৬ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি। ইন্ডি ঘরানার এই ব্যান্ড গড়ে উঠে গৌতম ও প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়সহ মোট ৭জন সংগীতশিল্পীর হাত ধরে যার প্রাথমিক লাইন-আপের সর্বশেষ সদস্য তাপস বাপি মৃত্যবরণ করেন গতবছর জুন মাসে।
এই লাইন আপেই তাঁদের প্রথম তিনটি এ্যালবাম সংবিগ্ন পাখিকূল ও কলকাতা বিষয়ক (১৯৭৭), অজানা উড়ন্ত বস্তু বা অ-উ-ব (১৯৭৮), ও দৃশ্যমান মহীনের ঘোড়াগুলি (১৯৭৯) প্রকাশিত হয়। বাংলা গানের নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা, ৯০ এর দশকে রক সংগীতকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও ল্যাটিন ও জ্যাজ মিউজিকের সাথে দেশীয় লোকসঙ্গীতের মেলবন্ধনে পরীক্ষামূলক ও ভিন্নধর্মী সংগীত সৃষ্টি করার বদৌলতে মহীনের ঘোড়াগুলি বাংলা গানের অন্যতম প্রভাবশালী ও অনুকরণীয় একটি নামে পরিণত হয়েছে।
৭ সদস্যের “সপ্তর্ষি” থেকে একাধিক নাম পরিবর্তনের পর অবশেষে “মহীনের ঘোড়াগুলি” নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে জীবন বোধের কবি জীবনানন্দ দাসের গভীর প্রভাব। কারণ এই নামটি এসেছে আধুনিক বাঙালি এই কবির সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮) কাব্যগ্রন্থের ঘোড়া শিরোনামের কবিতার দ্বিতীয় পঙ্ক্তি থেকে — "মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে।"
আয়োজকরা তাদের ফেইসবুক ইভেন্টের পাতায় জানান বিপন্ন বাঙালির কবির সাথে শহুরে জনপদের ব্যান্ডের এই নিবিড় সম্পর্কের পরিপূর্ণ স্বাদ উপহার দেয়াই তাদের উদ্দেশ্য। এই অনুষ্ঠানে জীবনানন্দ দাশের কিছু নন্দিত কবিতা আবৃতি করবেন দ্বিপালী, আমিনসহ কিছু নাগরিক কবি ও সাহিত্যিক। পাশাপাশি মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের জনপ্রিয় কিছু গান পরিবেশন করবেন সন্ধি ও বিপুসহ শহরের উদীয়মান কয়েকজন সঙ্গীতশিল্পী। বন্ধুসুলভ আড্ডার সাথে রাখা হয়েছে চা-সিঙ্গাড়ার ব্যবস্থা। সেইসাথে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ঘরোয়া পরিবেশ নিশ্চিত করতেও বদ্ধপরিকর আয়োজকপক্ষ।
একারণে আসন সংখ্যা সীমিত রাখার কথা জানান আয়োজক কপিশপ ও কারুজ কমিউনিকেশন। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন মাত্র ৫০জন যার সব আসন ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। টিকেটমূল্য ধার্য করা হয়েছে ১০০০টাকা। তবে এই টিকেট সংগ্রহ করতে হবে একটি অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই আনন্দ আয়োজন আলোক ছড়াবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এই আয়োজনটি জীবনানন্দ দাশ এবং মহিনের ঘোড়াগুলির ভক্ত থেকে শুরু করে বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অনুরাগীদের মধ্যে বৈচিত্র্যময় দর্শকদের আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কবিতা ও সঙ্গীতের অনন্য মিশ্রণে সাজানো অনুষ্ঠানটি দুটি সাংস্কৃতিক আইকনের জন্য একটি শ্রদ্ধাঞ্জলী। এটি কেবল অতীতের জন্য নয় বরং এই দুই কিংবদন্তীর সৃজনশীলতা এবং অভিব্যক্তির চিরন্তন চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা যা আজও পাঠক-শ্রোতাদের অনুরণিত ও অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
মহীনের সুরে জীবনানন্দের জন্মবার্ষিকীতে তার অনন্য কীর্তিগুলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই ধরণের আয়োজন নিয়মিত এবং আরও বড় পরিসরে আয়োজিত হওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।