দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জয় বাংলা কন্সার্ট বর্জন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন এই কনসার্টে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু ব্যান্ড ও শিল্পী।
নিজেদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান তারা। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ‘হত্যা’, ‘শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের’ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তাদের এই অবস্থান।
বাংলাদেশে নিয়মিত আয়োজিত কনসার্ট গুলোর মধ্যে সব থেকে বড় ও জনপ্রিয় জয় বাংলা কনসার্ট৷ এটি একটি বার্ষিক সংগীত উৎসব যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মূলত তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ৭ ই মার্চ আয়োজন করা হয়।
তবে আগামি ৩ বছর অর্থাৎ ২০২৫, ২০২৬ ও ২০২৭ এর মার্চ মাসে রমজান থাকবে। সেক্ষেত্রে জয় বাংলা কনসার্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাইব এই কনসার্ট কে বয়কট করে তারা ঠিক কতখানি প্রতিবাদ করছেন বা কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন এই প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় অনেককেই।
২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট নয় বার হয়েছে এই কনসার্ট। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই জ্বালাময়ী ভাষণ ও চেতনা হল এই কনসার্টের মূল প্রতিপাদ্য।
জয় বাংলা কন্সার্টের আয়োজক হল আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (CRI) এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইয়ং বাংলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন ও পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট এই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত কন্সার্টটিতে বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যান্ড ও শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।
জয় বাংলা কন্সার্টে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য ব্যান্ডের মধ্যে রয়েছে আর্টসেল, শিরোনামহীন, চিরকুট, নেমেসিস, ওয়ারফেজ, এবং ক্রিপ্টিক ফেইট।
জয় বাংলা কনসার্ট বয়কট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বপ্রথম আওয়াজ তুলতে দেখা যায় বাংলাদেশী কন্ঠ শিল্পী রাফফান ইমামকে। ভক্তদের কাছে তিনি পপাই নামে সুপরিচিত। তার ফেইসবুক ওয়ালে তিনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত একটি বক্তব্য পোস্ট করেন। পোস্টটি ছিল:
‘You will never see me perform at a ‘Joy Bangla Concert’ ever.’ যার অর্থ, ‘আপনি আমাকে আর কখনো জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করতে দেখবেন না।’
বাংলাদেশের অন্যতম হেভি মেটাল ব্যান্ড ক্রিপ্টিক ফেইট। যাদের গানে প্রথম থেকেই ফুটে উঠেছে স্পষ্ট প্রতিবাদের সুর। নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে তারা লিখেন — ‘অনেকেই প্রশ্ন করছেন “আপনারা জয় বাংলা কনসার্ট করবেন”? যেই ব্যান্ড দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, অন্যায়, অবিচার নিয়ে গান করে, সে কীভাবে এখন চিন্তা করে যে সামনের জয় বাংলা কনসার্টে বাজাবে? তাই প্রশ্নের উত্তর “না”।’
প্রায় দুই দশক ধরে ভক্ত-শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেওয়া অল্টারনেটিভ রক ঘরানার ব্যান্ড নেমেসিস তাদের অবস্থান জানানোর পাশাপাশি আন্দোলনকারী তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করে পোস্ট করেন — ‘গত দুই সপ্তাহের প্রেক্ষাপটে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমরা আর কখনই জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করবো না।
কিন্তু কথা এখানেই শেষ হতে পারে না। আমাদের আরও কথা বলার আছে। আগেও বলেছি, এখন আরও জোরে বলতে হবে। আমাদের সবার বলতে হবে।আমাদের প্রজন্ম আমরা ৩০ বছর ধরে একটা ভয়ের সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি। গানে গানে প্রতিবাদ করা ছাড়া মনে হত আর কিছুই করার নেই। বয়সে ছোট ছিলাম, ভাবতাম আমাদের কথা কেই বা শুনবে। কিন্তু আর কত ভয়?
বর্তমান প্রজন্ম আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমরা যদি সাহস জোগাই, আমরা সবাই কথা বলতে পারব, ভুলকে ভুল বলার সাহস রাখতে পারব। কারন আমরা সবাই একটি ন্যায় সমাজ দেখতে চাই ও সত্যের সংস্কৃতি গড়তে চাই।
‘তাই কথা বলা থামানো যাবে না, অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করা থামানো যাবে না। আপনারা করছেন, আমরা করছি, আরো অনেক মানুষ করবে।
সময় লাগতে পারে, কিন্তু সবাই জেগে উঠছে।’
ইন্ডি় ও ফিউশন ধারার ব্যান্ড ‘বাংলা ফাইভ’ এর মুখপাত্র ও প্রধান কন্ঠশিল্পী সিনা হাসান ফেইসবুকে লিখেছেন — ‘একজন শিল্পী হিসেবে আমি “জয় বাংলা” কনসার্ট বয়কট করলাম। এই ঠ্যাং চাটা তোষামোদকারী ‘ছেলেভুলানো’ কনসার্টে আমাকে শিল্পী বা দর্শক কোন হিসেবেই যেনো কখনই ডাকা না হয়। আর আমার ব্যান্ডের অন্য মেম্বাররা যদি এটা না মানে তাইলে বাংলা ফাইভ ত্যাগ করতেও কুন্ঠাবোধ করবো না, যদিও আমার ব্যান্ডমেটদের সেই সম্ভাবনা আদৌ নাই।’
কণ্ঠশিল্পী ও বহু যন্ত্রবিদ রায়েফ আল হাসান রাফা। কন্ঠের পাশাপাশি খ্যাতি অর্জন করেছেন একাধারে ড্রাম, গিটার, ইউকোলেলে, কিবোর্ডসহ বহু বাদ্যযন্ত্রবিদ হিসেবে। রক ব্যান্ড অর্থহীন এর ড্রামার হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ক্রাল, সিভিয়ার ডিমেনশিয়া, ক্রিপটিক ফেইট সহ ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার বহু ব্যান্ডের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকার পর তিনি গঠন করেন নিজের ব্যান্ড “এভোয়েড রাফা”। এই ব্যান্ডের অফিসিয়াল প্রোফাইলে বলা হয় - ‘জয় বাংলা কনসার্ট আমাদের আনন্দের জায়গা, আমাদের মহান স্বাধীনতা এবং বিজয় উদযাপনের জায়গা। কিন্তু আহত হৃদয়, পরাজিত মন কিংবা ভেজা চোখ নিয়ে উদযাপন হয় না। করা যায় না। আমরাও পারছি না।
‘বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান রেখে আমরা এভয়েডরাফা জয় বাংলা কনসার্ট থেকে আমাদের নাম প্রত্যাহার করছি।’
আলোচনায় আরো আছেন জনপ্রিয় এক্সপেরিমেন্টাল রক ব্যান্ড ‘আরবোভাইরাস’। তাদের কথা -
‘আমরা আর কখনো জয় বাংলা কনসার্টে অংশগ্রহণ করব না।’
হার্ড রক ঘরানার ব্যান্ড ‘দৃক’ তাদের ওয়ালে পোস্ট করে — ‘আমরা ‘দৃক’ জয় বাংলা কনসার্ট বয়কট করছি বলে বাহবা পেতে চাইনা। কারণ দৃক কখনও আমন্ত্রণই পায়নি। সম্ভাবণাও নাই পাবার। তাই এনিয়ে আলাদা করে পোস্ট দেবার প্রয়োজনই বোধ করিনাই। তবে বেশ কজন ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী এ বিষয়ে পার্সোনালি জানতে চাওয়ায়, এই আয়োজনের ব্যপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিৎ বলে মনে করলাম।
যারা নিয়মিত এ আয়োজনে পারফর্ম করতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বয়কট করেছেন এবং করছেন। সবার সিদ্ধান্তকেই সাধুবাদ জানাই।
এ আয়োজনে যদি ভবিষ্যতে আমাদের আমন্ত্রণ জানানোও হয়, সেটা আমরা গ্রহণ করবো না। ধন্যবাদ সবাইকে। আর নয় রক্তক্ষরণ। বাংলাদেশ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।’
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আলোচনায় সর্বশেষ সংযোজন জনপ্রিয় রক ব্যান্ড শিরোনামহীন। তারা লিখেন — ‘একটা তথ্য সবাইকে জানাতে চাই,
শিরোনামহীন গত সাত বছর ধরে কোন জয়বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করেনি। আসলে শিরোনামহীনকে আমন্ত্রণ ই জানানো হয়নি
যে কনসার্টে আমাদেরকে আর আমন্ত্রণ ই জানানো হয় না, সেই কনসার্টকে বয়কট করে হাততালি কুড়ানোর সুযোগটা আসলে আমাদের নেই।
যারা নিয়মিত পারফর্ম করতেন তাদের অনেকেই কনসার্টটি বয়কট করেছেন। তাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
আর ভবিষ্যতে আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আমরা সেটা প্রত্যাখ্যান করব এই তথ্যটাও আপনাদেরকে দিয়ে রাখলাম।ভালো থাকবেন সবাই।’
শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৪
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জয় বাংলা কন্সার্ট বর্জন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন এই কনসার্টে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু ব্যান্ড ও শিল্পী।
নিজেদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান তারা। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ‘হত্যা’, ‘শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের’ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তাদের এই অবস্থান।
বাংলাদেশে নিয়মিত আয়োজিত কনসার্ট গুলোর মধ্যে সব থেকে বড় ও জনপ্রিয় জয় বাংলা কনসার্ট৷ এটি একটি বার্ষিক সংগীত উৎসব যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মূলত তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ৭ ই মার্চ আয়োজন করা হয়।
তবে আগামি ৩ বছর অর্থাৎ ২০২৫, ২০২৬ ও ২০২৭ এর মার্চ মাসে রমজান থাকবে। সেক্ষেত্রে জয় বাংলা কনসার্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাইব এই কনসার্ট কে বয়কট করে তারা ঠিক কতখানি প্রতিবাদ করছেন বা কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন এই প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় অনেককেই।
২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট নয় বার হয়েছে এই কনসার্ট। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই জ্বালাময়ী ভাষণ ও চেতনা হল এই কনসার্টের মূল প্রতিপাদ্য।
জয় বাংলা কন্সার্টের আয়োজক হল আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (CRI) এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইয়ং বাংলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বাধীন ও পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট এই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত কন্সার্টটিতে বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যান্ড ও শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।
জয় বাংলা কন্সার্টে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য ব্যান্ডের মধ্যে রয়েছে আর্টসেল, শিরোনামহীন, চিরকুট, নেমেসিস, ওয়ারফেজ, এবং ক্রিপ্টিক ফেইট।
জয় বাংলা কনসার্ট বয়কট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বপ্রথম আওয়াজ তুলতে দেখা যায় বাংলাদেশী কন্ঠ শিল্পী রাফফান ইমামকে। ভক্তদের কাছে তিনি পপাই নামে সুপরিচিত। তার ফেইসবুক ওয়ালে তিনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত একটি বক্তব্য পোস্ট করেন। পোস্টটি ছিল:
‘You will never see me perform at a ‘Joy Bangla Concert’ ever.’ যার অর্থ, ‘আপনি আমাকে আর কখনো জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করতে দেখবেন না।’
বাংলাদেশের অন্যতম হেভি মেটাল ব্যান্ড ক্রিপ্টিক ফেইট। যাদের গানে প্রথম থেকেই ফুটে উঠেছে স্পষ্ট প্রতিবাদের সুর। নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে তারা লিখেন — ‘অনেকেই প্রশ্ন করছেন “আপনারা জয় বাংলা কনসার্ট করবেন”? যেই ব্যান্ড দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, অন্যায়, অবিচার নিয়ে গান করে, সে কীভাবে এখন চিন্তা করে যে সামনের জয় বাংলা কনসার্টে বাজাবে? তাই প্রশ্নের উত্তর “না”।’
প্রায় দুই দশক ধরে ভক্ত-শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেওয়া অল্টারনেটিভ রক ঘরানার ব্যান্ড নেমেসিস তাদের অবস্থান জানানোর পাশাপাশি আন্দোলনকারী তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করে পোস্ট করেন — ‘গত দুই সপ্তাহের প্রেক্ষাপটে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমরা আর কখনই জয় বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করবো না।
কিন্তু কথা এখানেই শেষ হতে পারে না। আমাদের আরও কথা বলার আছে। আগেও বলেছি, এখন আরও জোরে বলতে হবে। আমাদের সবার বলতে হবে।আমাদের প্রজন্ম আমরা ৩০ বছর ধরে একটা ভয়ের সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি। গানে গানে প্রতিবাদ করা ছাড়া মনে হত আর কিছুই করার নেই। বয়সে ছোট ছিলাম, ভাবতাম আমাদের কথা কেই বা শুনবে। কিন্তু আর কত ভয়?
বর্তমান প্রজন্ম আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমরা যদি সাহস জোগাই, আমরা সবাই কথা বলতে পারব, ভুলকে ভুল বলার সাহস রাখতে পারব। কারন আমরা সবাই একটি ন্যায় সমাজ দেখতে চাই ও সত্যের সংস্কৃতি গড়তে চাই।
‘তাই কথা বলা থামানো যাবে না, অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করা থামানো যাবে না। আপনারা করছেন, আমরা করছি, আরো অনেক মানুষ করবে।
সময় লাগতে পারে, কিন্তু সবাই জেগে উঠছে।’
ইন্ডি় ও ফিউশন ধারার ব্যান্ড ‘বাংলা ফাইভ’ এর মুখপাত্র ও প্রধান কন্ঠশিল্পী সিনা হাসান ফেইসবুকে লিখেছেন — ‘একজন শিল্পী হিসেবে আমি “জয় বাংলা” কনসার্ট বয়কট করলাম। এই ঠ্যাং চাটা তোষামোদকারী ‘ছেলেভুলানো’ কনসার্টে আমাকে শিল্পী বা দর্শক কোন হিসেবেই যেনো কখনই ডাকা না হয়। আর আমার ব্যান্ডের অন্য মেম্বাররা যদি এটা না মানে তাইলে বাংলা ফাইভ ত্যাগ করতেও কুন্ঠাবোধ করবো না, যদিও আমার ব্যান্ডমেটদের সেই সম্ভাবনা আদৌ নাই।’
কণ্ঠশিল্পী ও বহু যন্ত্রবিদ রায়েফ আল হাসান রাফা। কন্ঠের পাশাপাশি খ্যাতি অর্জন করেছেন একাধারে ড্রাম, গিটার, ইউকোলেলে, কিবোর্ডসহ বহু বাদ্যযন্ত্রবিদ হিসেবে। রক ব্যান্ড অর্থহীন এর ড্রামার হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ক্রাল, সিভিয়ার ডিমেনশিয়া, ক্রিপটিক ফেইট সহ ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার বহু ব্যান্ডের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকার পর তিনি গঠন করেন নিজের ব্যান্ড “এভোয়েড রাফা”। এই ব্যান্ডের অফিসিয়াল প্রোফাইলে বলা হয় - ‘জয় বাংলা কনসার্ট আমাদের আনন্দের জায়গা, আমাদের মহান স্বাধীনতা এবং বিজয় উদযাপনের জায়গা। কিন্তু আহত হৃদয়, পরাজিত মন কিংবা ভেজা চোখ নিয়ে উদযাপন হয় না। করা যায় না। আমরাও পারছি না।
‘বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান রেখে আমরা এভয়েডরাফা জয় বাংলা কনসার্ট থেকে আমাদের নাম প্রত্যাহার করছি।’
আলোচনায় আরো আছেন জনপ্রিয় এক্সপেরিমেন্টাল রক ব্যান্ড ‘আরবোভাইরাস’। তাদের কথা -
‘আমরা আর কখনো জয় বাংলা কনসার্টে অংশগ্রহণ করব না।’
হার্ড রক ঘরানার ব্যান্ড ‘দৃক’ তাদের ওয়ালে পোস্ট করে — ‘আমরা ‘দৃক’ জয় বাংলা কনসার্ট বয়কট করছি বলে বাহবা পেতে চাইনা। কারণ দৃক কখনও আমন্ত্রণই পায়নি। সম্ভাবণাও নাই পাবার। তাই এনিয়ে আলাদা করে পোস্ট দেবার প্রয়োজনই বোধ করিনাই। তবে বেশ কজন ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী এ বিষয়ে পার্সোনালি জানতে চাওয়ায়, এই আয়োজনের ব্যপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিৎ বলে মনে করলাম।
যারা নিয়মিত এ আয়োজনে পারফর্ম করতেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বয়কট করেছেন এবং করছেন। সবার সিদ্ধান্তকেই সাধুবাদ জানাই।
এ আয়োজনে যদি ভবিষ্যতে আমাদের আমন্ত্রণ জানানোও হয়, সেটা আমরা গ্রহণ করবো না। ধন্যবাদ সবাইকে। আর নয় রক্তক্ষরণ। বাংলাদেশ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।’
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আলোচনায় সর্বশেষ সংযোজন জনপ্রিয় রক ব্যান্ড শিরোনামহীন। তারা লিখেন — ‘একটা তথ্য সবাইকে জানাতে চাই,
শিরোনামহীন গত সাত বছর ধরে কোন জয়বাংলা কনসার্টে পারফর্ম করেনি। আসলে শিরোনামহীনকে আমন্ত্রণ ই জানানো হয়নি
যে কনসার্টে আমাদেরকে আর আমন্ত্রণ ই জানানো হয় না, সেই কনসার্টকে বয়কট করে হাততালি কুড়ানোর সুযোগটা আসলে আমাদের নেই।
যারা নিয়মিত পারফর্ম করতেন তাদের অনেকেই কনসার্টটি বয়কট করেছেন। তাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
আর ভবিষ্যতে আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আমরা সেটা প্রত্যাখ্যান করব এই তথ্যটাও আপনাদেরকে দিয়ে রাখলাম।ভালো থাকবেন সবাই।’