চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গত ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে নাটনন্দন নাট্যোৎসব ২০২২। চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। নাট্যোৎসবের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন উৎসব আহ্বায়ক এবং নাট্যকার-অভিনেতা-নির্দেশক আছমা আক্তার লিজা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিথর মাহবুব।
উৎসব আয়োজন চট্টগ্রামে কেন?
আমার সব সময়ের ইচ্ছা দূরত্বকে নিকট করা, দর্শককে মঞ্চের সামনে নিয়ে যাওয়া, দলীয় নাটককে নাট্যোৎসবে পৌঁছে দেওয়া, গ্রাম্য জীবনকে নাগরিক জীবনে আবার নাগরিক জীবনকে গ্রাম্য জীবনে অঙ্গীভূত করা, জীবনকে উদযাপনে মিলিয়ে নেওয়া। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক শক্তির বলিষ্ঠতা প্রমাণিত সত্য। পাহাড়-সমুদ্র-সমতলে ঘেরা নান্দনিক চট্টগ্রামে অধিক সংখ্যক নাট্যদলের উপস্থিতি, নাট্যকর্মীদের মিলন মেলা এবং জ্ঞানের মধ্য দিয়ে বিনোদিত করবার জন্যে নাট্যোৎসব আয়োজনে সৌন্দর্যের নগরী চট্টগ্রামকে বেছে নেওয়া।
নাট্যোৎসব আয়োজনে কি কি থাকছে?
সাতদিন ব্যাপী নাট্যোৎসবে ছয়টি দল সাতটি নাটক মঞ্চায়ন করছে। নাট্য দল গুলো হল নাটনন্দন, উত্তরাধিকার, চন্দ্রকলা থিয়েটার, নান্দীকার, সংলাপ গ্রুপ থিয়েটার, শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র। ঢাকার দলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাট্য দল গুলি নিয়ে এই উৎসব। উৎসবে উদ্বোধন, স্মরণিকা প্রকাশ, চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের হাত থেকে উৎসব ক্রেস্ট প্রদানের মধ্য দিয়ে নাট্যদলকে মূল্যায়ন, নাট্য আড্ডা প্রভৃতির আয়োজন নিয়েই আমাদের উৎসব। আমাদের উৎসব স্লোগান “সম্প্রীতির জাগরণ, নাটকে অন্বেষণ”। থিয়েটার আড্ডার বিষয়, “থিয়েটার বিশ্বে আমরা বিশ্ব নাগরিক”
নাট্য চর্চায় এই উৎসবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মূল্যায়ন করুন!
ঢাকার দল নাটনন্দনের ‘নারী ও রাক্ষসী’ নারীর ঘুরে দাড়ানোর কথা বলছে, ‘অকশন’ নাটকে সবুজ বনায়ন পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, চন্দ্রকলা থিয়েটার ‘শেখ সাদী’ নাটকের মধ্য দিয়ে পারস্য সভ্যতাকে তুলে ধরেছে, সংলাপ থিয়েটার ‘বোধ’ নাটকে অভাব কিভাবে মানুষের মনুষ্যত্বকে পদদলিত করে তা দেখাচ্ছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের নাট্যদল উত্তরাধিকার ‘মৃত্যুপাখি’ নাটকের মধ্যে দিয়ে জীবন্ত করে তুলেছে ১৯৭১ এর বাস্তবতা, নান্দীকার ‘অন্তর্জলী’ নাটকে দেখাবে মানুষের স্মৃতির অন্তর্যাত্রা। অপরদিকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সমন্বয়ের নাট্যদল শব্দ নাট্যচর্চা করছে নাটক ‘রাইফেল’ যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহমান। পাশাপাশি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের থিয়েটার কর্মীদের সিম্পোজিয়াম পর্বে যে আলোচনা -পর্যালোচনা তা এক অর্থে আমাদের নাট্য ভাবনাকেই সপম্প্রসারণ করছে । ফলে ঢাকা ওঁ চট্টগ্রাম এখানে পরস্পরের পরিপূরক।
আপনার শিল্পজীবন নিয়ে বলেন!
আমার রচনা নির্দেশনা এবং অভিনয় নির্ভর নাটকে যেমন ‘চন্দ্রাবতী’,‘ বিশ্বনাথ টু ব্রিকলেন’, ‘ওয়ার ইজ মাই ফ্রিডম’, ‘নারী ওঁ রাক্ষসী’, ‘জননী ওঁ জন্মভূমি’ প্রভৃতি নিয়ে ভাবতে বসলে দেখি, মনুষ্যত্বের অবমাননা আমায় কাদায়। বৈরী শক্তিকে মোকাবেলা করতে মন চায়। সুন্দর এই পৃথিবীকে আরেকটু সুন্দর ভাবে সাজাতে আমার মন ব্যকুল হয়। এই সব চাওয়াকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে আমার শিল্প মন। বেদনা আমার রঙ, অশ্র আমার তুলি, মঞ্চ আমার ক্যানভাস, সেখানেই আমি ছবি আঁকি। আমার অসুস্থতা, আমার বেদনা, আমার শোক,আমার অসহায়তা সব আমি ভুলে যাই; যখন আমি আলো আধারির ঐ মঞ্চ মায়ায় দর্শকদের সামনে যেয়ে অভিনীত চরিত্রের মানস যাত্রায় এই আমাকে আমি খুঁজে পাই। যে জ্যোতি আমায় রাঙ্গিয়ে দেয়, যে প্রশংসা আমায় সাহস যোগায়, যে দাবী আমাকে দায়িত্ববান করে তোলে সেসব নিয়েই আমি শিল্প সমুদ্রে সাতরে যাই। সবার আশির্বাদে, নাটকের মাধ্যমে মানুষের কথা মানুষকে শোনাই।
বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২২
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গত ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে নাটনন্দন নাট্যোৎসব ২০২২। চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। নাট্যোৎসবের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন উৎসব আহ্বায়ক এবং নাট্যকার-অভিনেতা-নির্দেশক আছমা আক্তার লিজা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিথর মাহবুব।
উৎসব আয়োজন চট্টগ্রামে কেন?
আমার সব সময়ের ইচ্ছা দূরত্বকে নিকট করা, দর্শককে মঞ্চের সামনে নিয়ে যাওয়া, দলীয় নাটককে নাট্যোৎসবে পৌঁছে দেওয়া, গ্রাম্য জীবনকে নাগরিক জীবনে আবার নাগরিক জীবনকে গ্রাম্য জীবনে অঙ্গীভূত করা, জীবনকে উদযাপনে মিলিয়ে নেওয়া। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক শক্তির বলিষ্ঠতা প্রমাণিত সত্য। পাহাড়-সমুদ্র-সমতলে ঘেরা নান্দনিক চট্টগ্রামে অধিক সংখ্যক নাট্যদলের উপস্থিতি, নাট্যকর্মীদের মিলন মেলা এবং জ্ঞানের মধ্য দিয়ে বিনোদিত করবার জন্যে নাট্যোৎসব আয়োজনে সৌন্দর্যের নগরী চট্টগ্রামকে বেছে নেওয়া।
নাট্যোৎসব আয়োজনে কি কি থাকছে?
সাতদিন ব্যাপী নাট্যোৎসবে ছয়টি দল সাতটি নাটক মঞ্চায়ন করছে। নাট্য দল গুলো হল নাটনন্দন, উত্তরাধিকার, চন্দ্রকলা থিয়েটার, নান্দীকার, সংলাপ গ্রুপ থিয়েটার, শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র। ঢাকার দলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাট্য দল গুলি নিয়ে এই উৎসব। উৎসবে উদ্বোধন, স্মরণিকা প্রকাশ, চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের হাত থেকে উৎসব ক্রেস্ট প্রদানের মধ্য দিয়ে নাট্যদলকে মূল্যায়ন, নাট্য আড্ডা প্রভৃতির আয়োজন নিয়েই আমাদের উৎসব। আমাদের উৎসব স্লোগান “সম্প্রীতির জাগরণ, নাটকে অন্বেষণ”। থিয়েটার আড্ডার বিষয়, “থিয়েটার বিশ্বে আমরা বিশ্ব নাগরিক”
নাট্য চর্চায় এই উৎসবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মূল্যায়ন করুন!
ঢাকার দল নাটনন্দনের ‘নারী ও রাক্ষসী’ নারীর ঘুরে দাড়ানোর কথা বলছে, ‘অকশন’ নাটকে সবুজ বনায়ন পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, চন্দ্রকলা থিয়েটার ‘শেখ সাদী’ নাটকের মধ্য দিয়ে পারস্য সভ্যতাকে তুলে ধরেছে, সংলাপ থিয়েটার ‘বোধ’ নাটকে অভাব কিভাবে মানুষের মনুষ্যত্বকে পদদলিত করে তা দেখাচ্ছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের নাট্যদল উত্তরাধিকার ‘মৃত্যুপাখি’ নাটকের মধ্যে দিয়ে জীবন্ত করে তুলেছে ১৯৭১ এর বাস্তবতা, নান্দীকার ‘অন্তর্জলী’ নাটকে দেখাবে মানুষের স্মৃতির অন্তর্যাত্রা। অপরদিকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সমন্বয়ের নাট্যদল শব্দ নাট্যচর্চা করছে নাটক ‘রাইফেল’ যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহমান। পাশাপাশি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের থিয়েটার কর্মীদের সিম্পোজিয়াম পর্বে যে আলোচনা -পর্যালোচনা তা এক অর্থে আমাদের নাট্য ভাবনাকেই সপম্প্রসারণ করছে । ফলে ঢাকা ওঁ চট্টগ্রাম এখানে পরস্পরের পরিপূরক।
আপনার শিল্পজীবন নিয়ে বলেন!
আমার রচনা নির্দেশনা এবং অভিনয় নির্ভর নাটকে যেমন ‘চন্দ্রাবতী’,‘ বিশ্বনাথ টু ব্রিকলেন’, ‘ওয়ার ইজ মাই ফ্রিডম’, ‘নারী ওঁ রাক্ষসী’, ‘জননী ওঁ জন্মভূমি’ প্রভৃতি নিয়ে ভাবতে বসলে দেখি, মনুষ্যত্বের অবমাননা আমায় কাদায়। বৈরী শক্তিকে মোকাবেলা করতে মন চায়। সুন্দর এই পৃথিবীকে আরেকটু সুন্দর ভাবে সাজাতে আমার মন ব্যকুল হয়। এই সব চাওয়াকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে আমার শিল্প মন। বেদনা আমার রঙ, অশ্র আমার তুলি, মঞ্চ আমার ক্যানভাস, সেখানেই আমি ছবি আঁকি। আমার অসুস্থতা, আমার বেদনা, আমার শোক,আমার অসহায়তা সব আমি ভুলে যাই; যখন আমি আলো আধারির ঐ মঞ্চ মায়ায় দর্শকদের সামনে যেয়ে অভিনীত চরিত্রের মানস যাত্রায় এই আমাকে আমি খুঁজে পাই। যে জ্যোতি আমায় রাঙ্গিয়ে দেয়, যে প্রশংসা আমায় সাহস যোগায়, যে দাবী আমাকে দায়িত্ববান করে তোলে সেসব নিয়েই আমি শিল্প সমুদ্রে সাতরে যাই। সবার আশির্বাদে, নাটকের মাধ্যমে মানুষের কথা মানুষকে শোনাই।