বাংলা সিনেমার ইতিহাসের সঙ্গে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে আছেন যে তাকে ছাড়া বাংলা সিনেমা কল্পনাই করা যায় না। নিজের অভিনয়সত্তা দিয়ে তিনি সফল নায়কে নিজেকে পরিণত করতে পেরেছেন। তিনি আর কেউ আর কেউ নন তিনি বাংলা সিনেমার নায়ক রাজ রাজ্জাক।
‘১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুর করা রাজ্জাক পরিশ্রম ও অভিনয় সত্তা দিয়ে পৌছে গিয়েছিলেন জনপ্রিয়তার চাঁদে। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতার ৮০ তম জন্মদিন আজ। ১৯৪২ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
ছোটবেলা থেকে নায়ক হওয়ার স্বপ্নটা ছিল। অভিনয় জীবনের সূচনা করতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। নায়ক হওয়ার স্বপ্নেই রাজ্জাক ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে সিনেমার ওপর ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। তবে নায়ক রাজ হওয়ার ওঠার পথ মোটেও মসৃণ ছিলনা রাজ্জাকের। ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করার পর কলকাতায় ফিরে এসে শিলালিপি ও আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কবলে পড়ে রাজ্জাক ও তার পরিবার। তখন এক সুহৃদ রাজ্জাককে পরামর্শ দিলেন ঢাকায় চলে আসতে। বললেন ঢাকার চলচ্চিত্র নতুন করে যাত্রা শুরু করেছেন। সেই ভদ্রলোক ছিলেন ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা আবদুল জব্বার খানের পরিচিত।
তিনি রাজ্জাককে পাঠালেন তাঁর কাছে একটা চিঠি দিয়ে। ঢাকায় এসে কমলাপুরের ছোট্ট একটি বাসায় মাসিক ৮০ টাকা ভাড়ায় থাকা শুরু করেন। এরপর চিঠি নিয়ে জব্বার খানের কাছে যান। আব্দুল জব্বার তাঁকে অভিনয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং তার সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেন। সহকারি পরিচালক হিসেবেই চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন রাজ্জাক। সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুবাদে পরবর্তীতে সুভাষ দত্ত ও এহতেশামের মতো পরিচালকদের সঙ্গে রাজ্জাকের পরিচয়।
অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে রাজ্জাকের অভিষেক হয় সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমায়। এই সিনেমাতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ‘ডাকবাবু’, উর্দু ছবি ‘আখেরি স্টেশন’সহ কয়েকটি সিনেমায় ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এক সময় প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও পরিচালক জহির রায়হানের নজরে পড়েন রাজ্জাক। তিনি ‘বেহুলা’য় লখিন্দরের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ দেন রাজ্জাককে। নায়িকা জনপ্রিয় নায়িকা সুচন্দা। ‘বেহুলা’ ব্যবসাসফল হওয়ায় আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি রাজ্জাককে।
এরপর যার সঙ্গেই জুটি গড়েছেন, সেটাই হিট। রাজ্জাকের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অভিনেত্রী সুচন্দা, কবরী, ববিতা ও শাবানাকে। তবে কলকাতার উত্তম-সুচিত্রা জুটির মতোই ঢাকায় রাজ্জাক-কবরী জুটি ছিল ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়ক রাজ রাজ্জাক খেতাব। রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘মধু মিলন’, ‘পিচ ঢালা পথ’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কী যে করি’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘বেঈমান’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বাদী থেকে বেগম’ ইত্যাদি। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার সম্মাননা পেয়েছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি এক সময় পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি বদনাম, সৎ ভাই, চাপা ডাঙ্গার বউসহ ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনাতেও বেশ সফল ছিলেন রাজ্জাক।
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডে এই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এই অতি উজ্জ্বল নক্ষত্রের প্রয়াণ ঘটে। দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করলেও আজও তাকে আমরা তার কর্মের মধ্যে খুঁজে পাই। তাকে স্মরন রাখার মতো অসংখ্য চলচ্চিত্র তিনি রেখে গেছেন। তার চলচ্চিত্রের গানগুলো এখনও মানুষদের গুনগুন করতে শোনা যায়।
নায়ক রাজ রাজ্জাকের জন্মদিনের দিন ফজরের নামাজ পড়ে ছোট ছেলে সম্রাট চলে যান বনানী’তে কবরস্থানে। সেখানে বাবার কবরের পাশে বসে কিছুটা সময় কোরআন তেলওয়াত করেন এবং এরপর দোয়া করেন আল্লাহ যেন তার বাবাকে বেহেস্ত নসীব করেন। সম্রাট বলেন,‘ বাবার জন্মদিনে পারিবারিকভাবেই অসহায় এতিমদের খাওয়ানো হয়ে থাকে। মসজিদে দোয়া করানো হয়ে থাকে। এটা আসলে বলা যায় নিয়মিতই হয়ে থাকে। আব্বার মৃত্যুর পর থেকে একটি মাদ্রাসায় প্রতি মাসেই আব্বার নামে অর্থ দেয়া হয় এবং বিশেষ বিশেষ দিনে খাবারও দেয়া হয়, পোশাকও দেয়া হয়। চলচ্চিত্রের বর্তমান ক্রান্তিকালে আব্বাকে খুউব মিসকরি। দোয়া করবেন সবাই যেন আল্লাহ আব্বাকে বেহেস্ত নসীব করেন।’
রোববার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২
বাংলা সিনেমার ইতিহাসের সঙ্গে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে আছেন যে তাকে ছাড়া বাংলা সিনেমা কল্পনাই করা যায় না। নিজের অভিনয়সত্তা দিয়ে তিনি সফল নায়কে নিজেকে পরিণত করতে পেরেছেন। তিনি আর কেউ আর কেউ নন তিনি বাংলা সিনেমার নায়ক রাজ রাজ্জাক।
‘১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুর করা রাজ্জাক পরিশ্রম ও অভিনয় সত্তা দিয়ে পৌছে গিয়েছিলেন জনপ্রিয়তার চাঁদে। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতার ৮০ তম জন্মদিন আজ। ১৯৪২ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
ছোটবেলা থেকে নায়ক হওয়ার স্বপ্নটা ছিল। অভিনয় জীবনের সূচনা করতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। নায়ক হওয়ার স্বপ্নেই রাজ্জাক ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে সিনেমার ওপর ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। তবে নায়ক রাজ হওয়ার ওঠার পথ মোটেও মসৃণ ছিলনা রাজ্জাকের। ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করার পর কলকাতায় ফিরে এসে শিলালিপি ও আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কবলে পড়ে রাজ্জাক ও তার পরিবার। তখন এক সুহৃদ রাজ্জাককে পরামর্শ দিলেন ঢাকায় চলে আসতে। বললেন ঢাকার চলচ্চিত্র নতুন করে যাত্রা শুরু করেছেন। সেই ভদ্রলোক ছিলেন ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা আবদুল জব্বার খানের পরিচিত।
তিনি রাজ্জাককে পাঠালেন তাঁর কাছে একটা চিঠি দিয়ে। ঢাকায় এসে কমলাপুরের ছোট্ট একটি বাসায় মাসিক ৮০ টাকা ভাড়ায় থাকা শুরু করেন। এরপর চিঠি নিয়ে জব্বার খানের কাছে যান। আব্দুল জব্বার তাঁকে অভিনয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং তার সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেন। সহকারি পরিচালক হিসেবেই চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন রাজ্জাক। সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুবাদে পরবর্তীতে সুভাষ দত্ত ও এহতেশামের মতো পরিচালকদের সঙ্গে রাজ্জাকের পরিচয়।
অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে রাজ্জাকের অভিষেক হয় সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমায়। এই সিনেমাতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ‘ডাকবাবু’, উর্দু ছবি ‘আখেরি স্টেশন’সহ কয়েকটি সিনেমায় ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এক সময় প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও পরিচালক জহির রায়হানের নজরে পড়েন রাজ্জাক। তিনি ‘বেহুলা’য় লখিন্দরের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ দেন রাজ্জাককে। নায়িকা জনপ্রিয় নায়িকা সুচন্দা। ‘বেহুলা’ ব্যবসাসফল হওয়ায় আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি রাজ্জাককে।
এরপর যার সঙ্গেই জুটি গড়েছেন, সেটাই হিট। রাজ্জাকের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অভিনেত্রী সুচন্দা, কবরী, ববিতা ও শাবানাকে। তবে কলকাতার উত্তম-সুচিত্রা জুটির মতোই ঢাকায় রাজ্জাক-কবরী জুটি ছিল ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়ক রাজ রাজ্জাক খেতাব। রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘মধু মিলন’, ‘পিচ ঢালা পথ’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কী যে করি’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘বেঈমান’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বাদী থেকে বেগম’ ইত্যাদি। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার সম্মাননা পেয়েছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি এক সময় পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি বদনাম, সৎ ভাই, চাপা ডাঙ্গার বউসহ ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনাতেও বেশ সফল ছিলেন রাজ্জাক।
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডে এই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এই অতি উজ্জ্বল নক্ষত্রের প্রয়াণ ঘটে। দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করলেও আজও তাকে আমরা তার কর্মের মধ্যে খুঁজে পাই। তাকে স্মরন রাখার মতো অসংখ্য চলচ্চিত্র তিনি রেখে গেছেন। তার চলচ্চিত্রের গানগুলো এখনও মানুষদের গুনগুন করতে শোনা যায়।
নায়ক রাজ রাজ্জাকের জন্মদিনের দিন ফজরের নামাজ পড়ে ছোট ছেলে সম্রাট চলে যান বনানী’তে কবরস্থানে। সেখানে বাবার কবরের পাশে বসে কিছুটা সময় কোরআন তেলওয়াত করেন এবং এরপর দোয়া করেন আল্লাহ যেন তার বাবাকে বেহেস্ত নসীব করেন। সম্রাট বলেন,‘ বাবার জন্মদিনে পারিবারিকভাবেই অসহায় এতিমদের খাওয়ানো হয়ে থাকে। মসজিদে দোয়া করানো হয়ে থাকে। এটা আসলে বলা যায় নিয়মিতই হয়ে থাকে। আব্বার মৃত্যুর পর থেকে একটি মাদ্রাসায় প্রতি মাসেই আব্বার নামে অর্থ দেয়া হয় এবং বিশেষ বিশেষ দিনে খাবারও দেয়া হয়, পোশাকও দেয়া হয়। চলচ্চিত্রের বর্তমান ক্রান্তিকালে আব্বাকে খুউব মিসকরি। দোয়া করবেন সবাই যেন আল্লাহ আব্বাকে বেহেস্ত নসীব করেন।’