‘মুই তো কখনুই পারবো না’ - জানকবুল বাংলা রঙ্গামঞ্চের সেই সংলাপ এখনও বাঙালি মননে সাহসী তোরাপকে জাগিয়ে রেখেছে। দেড়শ বছর পর ফের সেই তোরাপের সংলাপ শুনবে শহরবাসী।
১৮৭২ সালে সাধারণ রঙ্গালয়ে ‘নীল দর্পণ’ নাটকের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়েই বাংলা থিয়েটার চর্চায় নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছিল। আর ৭ ডিসেম্বর কলকাতার তপন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হতে চলেছে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন। ঢাকার বাংলা থিয়েটার নামে নাট্যদল যেদিন তপন থিয়েটারে নীলদর্পন মঞ্চস্থ করবেন, ওই দিনই পূর্ণ হচ্ছে বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের সার্ধশতবর্ষ। অর্থাৎ দেড়শ বছরে পা দেবে বাংলার সাধারণ রঙ্গালয়।
‘নীল দর্পণ’ নামটি শুনলেই মনে ভেসে ওঠে উপমহাদেশের নীলচাষ আর অসাধু ইংরেজ নীলকরদের অসহনীয় অত্যাচার আর নির্দয় নির্যাতনের কথা। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের (সিপাহী বিদ্রোহ) পর পরই ১৮৬০ সালে লেখা হয়েছিল নীলদর্পন।
বাঙালিরা প্রথম টিকিট কেটে বাংলা নাটক দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর। সেই সময়ের কতিপয় বাঙালি নাট্যোৎসাহী মিলে শুরু করেছিলেন টিকিট বিক্রি করে নিয়মিত নাট্যাভিনয়ের আয়োজন।
জোড়াসাঁকোর চিৎপুর রোডে মধুসূদন সান্যালের ‘ঘড়িওয়ালা বাড়ির উঠোন ভাড়া নিয়েছিলেন তারা, মাসিক ৪০ টাকায়। সেখানে মঞ্চ নির্মিত হয়েছিল। নির্মাণে প্রধান শিল্পী ধর্মদাস সুর, সহায়তায় ক্ষেত্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, ব্যবস্থাদির দায়িত্বে নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
দর্শকাসনের জন্য ছিল তিনটি শ্রেণি— দু’টাকা, এক টাকা, আট আনা। প্রথম শ্রেণির জন্য ভাড়া করা চেয়ার, দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য বাঁশের কাঠামোর উপর পাটাতন বসিয়ে বেঞ্চি, তৃতীয় শ্রেণির জন্য দালানের সিঁড়ি ও রোয়াক।
প্রথম রজনী ছিল ‘হাউসফুল, টিকিট বিক্রি বাবদ আয় হয়েছিল মোট দুশো টাকা। বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের সেই শুরুর দিনেই মঞ্চস্থ হয়েছিল নীলদর্পন। দীনবন্ধু মিত্রের এই নাটকের প্রকাশ ও তা রঙ্গালয়ে মঞ্চায়ন ছিল তখন উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের জন্য একটা বিরাট ধাক্কা।
সেই সাধের সাধারণ রঙ্গালয় আজ সম্পূর্ণ লুপ্ত। শো চলার পরে এক অগ্নিকান্ডে রঙ্গালয় ভস্মিভূত হয়। দেড়’শ বছর পর সেই রঙ্গালয়ের স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলতে সেই নীলদর্পণ নাটক মঞ্চায়ন করবে ঢকা ও কলকাতার নাট্য শিল্পিরা।
সার্ধশত বার্ষিকী উৎসব উপলক্ষে নানা আয়োজন হচ্ছে কলকাতা ও ঢাকায়। ১৫০ বছর পরে বঙ্গ নাট্যসংহতির আয়োজনে বুধবার কলকাতায় এ নাট্যোৎসবের সূচনা হবে বাংলাদেশের নাট্যকার মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে। নাটকটি প্রযোজনা করেছে রেপের্টরি নাট্যদল ‘বাঙলা থিয়েটার’।
সাধারণ রঙ্গালয়ের স্বার্ধশত বার্ষিকী উদযাপনে দুটি উৎসব হবে জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, কলকাতায় উৎসব হবে ৭ ডিসেম্বর, আর ঢাকায় ১৭ ডিসেম্বর। দুই দেশের নাট্যশিল্পীরা এ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। নাট্যোৎসবে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের নাট্যশিল্পীরা ইতোমধ্যে কলকাতায় পৌঁছে গেছে।
মামুনুর রশীদ বলেছেন, “আমাদের নাট্যশিল্পীদের জন্য এটি আনন্দের দিন। কারণ ১৫০ বছর আগে ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়েই সাধারণ রঙ্গালয়ে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত হয়েছিল। তাই দিনটিকে উদযাপন করতে ভারত ও বাংলাদেশে নানা আয়োজন করা হয়েছে। কলকাতায় নাট্যোৎসবের সূচনা হবে আমার নির্দেশনায় ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে। এটি ভালো লাগার মতো ঘটনা।”
দীনবন্ধু মিত্র রচিত ‘নীল দর্পণ নাটকটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন নাট্যদলের যে সব শিল্পীরা অভিনয় করবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- মামুনুর রশীদ, ফয়েজ জহির, শুভাশিস ভৌমিক, আহাম্মেদ গিয়াস, শামীমা শওকত লাভলী, শাহনাজ খুশি, সুষমা সরকার, লায়লা বিলকিস ছবি, সঙ্গীতা চৌধুরী, হাশিম মাসুদ, সাঈদ সুমন, খালিদ হাসান রুমি, সুজাত শিমুল, রিয়া চৌধুরী, তাসমী চৌধুরী, শাহরান, তাজউদ্দীন তাজু, রুহুল আমিন ও উচ্ছ্বাস ঘোষ।
আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠাণ্ডু রায়হান, মঞ্চ পরিকল্পনা করেছে ফয়েজ জহির, সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন পরিমল মজুমদার, মঞ্চ ব্যবস্থাপক সুজাত শিমুল, সহকারী নির্দেশক শামীমা শওকত লাভলী এবং পোশাক পরিকল্পনা করেছেন সামিউন জাহান দোলা।
বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২
‘মুই তো কখনুই পারবো না’ - জানকবুল বাংলা রঙ্গামঞ্চের সেই সংলাপ এখনও বাঙালি মননে সাহসী তোরাপকে জাগিয়ে রেখেছে। দেড়শ বছর পর ফের সেই তোরাপের সংলাপ শুনবে শহরবাসী।
১৮৭২ সালে সাধারণ রঙ্গালয়ে ‘নীল দর্পণ’ নাটকের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়েই বাংলা থিয়েটার চর্চায় নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছিল। আর ৭ ডিসেম্বর কলকাতার তপন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হতে চলেছে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন। ঢাকার বাংলা থিয়েটার নামে নাট্যদল যেদিন তপন থিয়েটারে নীলদর্পন মঞ্চস্থ করবেন, ওই দিনই পূর্ণ হচ্ছে বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের সার্ধশতবর্ষ। অর্থাৎ দেড়শ বছরে পা দেবে বাংলার সাধারণ রঙ্গালয়।
‘নীল দর্পণ’ নামটি শুনলেই মনে ভেসে ওঠে উপমহাদেশের নীলচাষ আর অসাধু ইংরেজ নীলকরদের অসহনীয় অত্যাচার আর নির্দয় নির্যাতনের কথা। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের (সিপাহী বিদ্রোহ) পর পরই ১৮৬০ সালে লেখা হয়েছিল নীলদর্পন।
বাঙালিরা প্রথম টিকিট কেটে বাংলা নাটক দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর। সেই সময়ের কতিপয় বাঙালি নাট্যোৎসাহী মিলে শুরু করেছিলেন টিকিট বিক্রি করে নিয়মিত নাট্যাভিনয়ের আয়োজন।
জোড়াসাঁকোর চিৎপুর রোডে মধুসূদন সান্যালের ‘ঘড়িওয়ালা বাড়ির উঠোন ভাড়া নিয়েছিলেন তারা, মাসিক ৪০ টাকায়। সেখানে মঞ্চ নির্মিত হয়েছিল। নির্মাণে প্রধান শিল্পী ধর্মদাস সুর, সহায়তায় ক্ষেত্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, ব্যবস্থাদির দায়িত্বে নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
দর্শকাসনের জন্য ছিল তিনটি শ্রেণি— দু’টাকা, এক টাকা, আট আনা। প্রথম শ্রেণির জন্য ভাড়া করা চেয়ার, দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য বাঁশের কাঠামোর উপর পাটাতন বসিয়ে বেঞ্চি, তৃতীয় শ্রেণির জন্য দালানের সিঁড়ি ও রোয়াক।
প্রথম রজনী ছিল ‘হাউসফুল, টিকিট বিক্রি বাবদ আয় হয়েছিল মোট দুশো টাকা। বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের সেই শুরুর দিনেই মঞ্চস্থ হয়েছিল নীলদর্পন। দীনবন্ধু মিত্রের এই নাটকের প্রকাশ ও তা রঙ্গালয়ে মঞ্চায়ন ছিল তখন উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের জন্য একটা বিরাট ধাক্কা।
সেই সাধের সাধারণ রঙ্গালয় আজ সম্পূর্ণ লুপ্ত। শো চলার পরে এক অগ্নিকান্ডে রঙ্গালয় ভস্মিভূত হয়। দেড়’শ বছর পর সেই রঙ্গালয়ের স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলতে সেই নীলদর্পণ নাটক মঞ্চায়ন করবে ঢকা ও কলকাতার নাট্য শিল্পিরা।
সার্ধশত বার্ষিকী উৎসব উপলক্ষে নানা আয়োজন হচ্ছে কলকাতা ও ঢাকায়। ১৫০ বছর পরে বঙ্গ নাট্যসংহতির আয়োজনে বুধবার কলকাতায় এ নাট্যোৎসবের সূচনা হবে বাংলাদেশের নাট্যকার মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে। নাটকটি প্রযোজনা করেছে রেপের্টরি নাট্যদল ‘বাঙলা থিয়েটার’।
সাধারণ রঙ্গালয়ের স্বার্ধশত বার্ষিকী উদযাপনে দুটি উৎসব হবে জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, কলকাতায় উৎসব হবে ৭ ডিসেম্বর, আর ঢাকায় ১৭ ডিসেম্বর। দুই দেশের নাট্যশিল্পীরা এ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। নাট্যোৎসবে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের নাট্যশিল্পীরা ইতোমধ্যে কলকাতায় পৌঁছে গেছে।
মামুনুর রশীদ বলেছেন, “আমাদের নাট্যশিল্পীদের জন্য এটি আনন্দের দিন। কারণ ১৫০ বছর আগে ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়েই সাধারণ রঙ্গালয়ে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত হয়েছিল। তাই দিনটিকে উদযাপন করতে ভারত ও বাংলাদেশে নানা আয়োজন করা হয়েছে। কলকাতায় নাট্যোৎসবের সূচনা হবে আমার নির্দেশনায় ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে। এটি ভালো লাগার মতো ঘটনা।”
দীনবন্ধু মিত্র রচিত ‘নীল দর্পণ নাটকটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন নাট্যদলের যে সব শিল্পীরা অভিনয় করবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- মামুনুর রশীদ, ফয়েজ জহির, শুভাশিস ভৌমিক, আহাম্মেদ গিয়াস, শামীমা শওকত লাভলী, শাহনাজ খুশি, সুষমা সরকার, লায়লা বিলকিস ছবি, সঙ্গীতা চৌধুরী, হাশিম মাসুদ, সাঈদ সুমন, খালিদ হাসান রুমি, সুজাত শিমুল, রিয়া চৌধুরী, তাসমী চৌধুরী, শাহরান, তাজউদ্দীন তাজু, রুহুল আমিন ও উচ্ছ্বাস ঘোষ।
আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠাণ্ডু রায়হান, মঞ্চ পরিকল্পনা করেছে ফয়েজ জহির, সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন পরিমল মজুমদার, মঞ্চ ব্যবস্থাপক সুজাত শিমুল, সহকারী নির্দেশক শামীমা শওকত লাভলী এবং পোশাক পরিকল্পনা করেছেন সামিউন জাহান দোলা।