বাংলাদেশের জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্প
জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের কারণে বাংলাদেশের পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি এবং এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
নিউইয়র্কভিত্তিক এইচআরডব্লিউ এবং বেলজিয়ামভিত্তিক এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফরমের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের কারণে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি ও শ্রমিকদের ঝুঁকি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে সেটি।
বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের দেশ। এই শিল্পের কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড। সীতাকুণ্ডের সমুদ্র তীরবর্তী যেসব ইয়ার্ডে জাহাজ ভাঙ্গা হয়, সেগুলো এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম ইয়ার্ড।
প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলের অন্যতম সদস্য এবং এইচআরডব্লিউ’র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর আইন অমান্য করে পুরোনো ও বাতিল জাহাজ বাংলাদেশে বিক্রি করছে। এতে কোম্পানির পকেটে মুনাফার অর্থ ঢুকছে ঠিকই কিন্তু তাদের মুনাফার জন্য গুরুতর হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশিদের জীবন ও পরিবেশ।’
‘আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই আইন ফাঁকি দিয়ে নিজেদের বাতিল মালামাল বাংলাদেশে পাঠানো বন্ধ করতে হবে,’ এএফপিকে বলেন জুলিয়া।
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫২০টি পুরোনো-বাতিল জাহাজ ভাঙা হয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক কোনো প্রকার সুরক্ষা উপকরণ ছাড়াই ভেঙেছেন জাহাজগুলো।
প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের জন্য সীতাকুণ্ডের জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এইচআরডব্লিউ’র কর্মীরা। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কারখানা মালিকরা কাজ করার সময় তাদেরকে গ্লাভস, মাস্ক, জুতা, জাহাজ-ভাঙ্গার জন্য বিশেষ সুরক্ষা পোশাক দিতে চান না।
এ কারণে জাহাজ কাটার সময় আগুনের তাপ থেকে হাত বাঁচাতে গ্লাভসের পরিবর্তে পুরোনো মোজা ও বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে সুরক্ষা পেতে মাস্কের পরিবর্তে কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে বাধ্য হন তারা।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ইয়ার্ডগুলোতে কাজ চলার সময় অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা প্রায় নিয়মিত ব্যাপার। সীতাকুণ্ডের ইয়ার্ডগুলোতে ২০১৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬২ জন এবং আহত হয়েছেন আরও শত শত শ্রমিক।’
পুলিশের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, গত সপ্তাহেও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা গেছে ২ জন শ্রমিক।
এ ছাড়াও রয়েছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। ইয়ার্ডগুলো সাগরের তীরবর্তী হওয়ায় জাহাজ ভাঙ্গার কারণে বিভিন্ন রাসায়নিক ও বিষাক্ত উপাদান সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে, যা বঙ্গপোসাগরের ওই এলাকার সমুদ্রের জীববৈচিত্রকে রীতিমতো হুমকির মুখে ফেলছে।
পুরনো বাতিল জাহাজগুলোতে অ্যাসবেস্টোস থাকে। এই অ্যাসবেস্টোস ফুসফুসের ক্যানসারসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী ঘটাতে সক্ষম।
বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রিপন চৌধুরি এএফপিকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি তারা সীতাকুণ্ডের ১১০ শ্রমিকের মেডিকেল পরীক্ষা করেছিলেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জনের দেহে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পমালিকদের সংস্থা বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবু তাহের এসব অভিযোগের জবাবে এএফপিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের ইয়ার্ডগুলোকে পরিবেশবান্ধব ও ঝুঁকিমুক্ত করে তোলার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা বেশ ব্যয়বহুল ব্যাপার, কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
সূত্র : এএফপি
বাংলাদেশের জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্প
বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের কারণে বাংলাদেশের পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি এবং এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
নিউইয়র্কভিত্তিক এইচআরডব্লিউ এবং বেলজিয়ামভিত্তিক এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফরমের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের কারণে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি ও শ্রমিকদের ঝুঁকি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে সেটি।
বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের দেশ। এই শিল্পের কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড। সীতাকুণ্ডের সমুদ্র তীরবর্তী যেসব ইয়ার্ডে জাহাজ ভাঙ্গা হয়, সেগুলো এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম ইয়ার্ড।
প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলের অন্যতম সদস্য এবং এইচআরডব্লিউ’র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর আইন অমান্য করে পুরোনো ও বাতিল জাহাজ বাংলাদেশে বিক্রি করছে। এতে কোম্পানির পকেটে মুনাফার অর্থ ঢুকছে ঠিকই কিন্তু তাদের মুনাফার জন্য গুরুতর হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশিদের জীবন ও পরিবেশ।’
‘আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই আইন ফাঁকি দিয়ে নিজেদের বাতিল মালামাল বাংলাদেশে পাঠানো বন্ধ করতে হবে,’ এএফপিকে বলেন জুলিয়া।
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫২০টি পুরোনো-বাতিল জাহাজ ভাঙা হয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক কোনো প্রকার সুরক্ষা উপকরণ ছাড়াই ভেঙেছেন জাহাজগুলো।
প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের জন্য সীতাকুণ্ডের জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এইচআরডব্লিউ’র কর্মীরা। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কারখানা মালিকরা কাজ করার সময় তাদেরকে গ্লাভস, মাস্ক, জুতা, জাহাজ-ভাঙ্গার জন্য বিশেষ সুরক্ষা পোশাক দিতে চান না।
এ কারণে জাহাজ কাটার সময় আগুনের তাপ থেকে হাত বাঁচাতে গ্লাভসের পরিবর্তে পুরোনো মোজা ও বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে সুরক্ষা পেতে মাস্কের পরিবর্তে কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে বাধ্য হন তারা।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ইয়ার্ডগুলোতে কাজ চলার সময় অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা প্রায় নিয়মিত ব্যাপার। সীতাকুণ্ডের ইয়ার্ডগুলোতে ২০১৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬২ জন এবং আহত হয়েছেন আরও শত শত শ্রমিক।’
পুলিশের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, গত সপ্তাহেও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা গেছে ২ জন শ্রমিক।
এ ছাড়াও রয়েছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। ইয়ার্ডগুলো সাগরের তীরবর্তী হওয়ায় জাহাজ ভাঙ্গার কারণে বিভিন্ন রাসায়নিক ও বিষাক্ত উপাদান সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে, যা বঙ্গপোসাগরের ওই এলাকার সমুদ্রের জীববৈচিত্রকে রীতিমতো হুমকির মুখে ফেলছে।
পুরনো বাতিল জাহাজগুলোতে অ্যাসবেস্টোস থাকে। এই অ্যাসবেস্টোস ফুসফুসের ক্যানসারসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী ঘটাতে সক্ষম।
বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রিপন চৌধুরি এএফপিকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি তারা সীতাকুণ্ডের ১১০ শ্রমিকের মেডিকেল পরীক্ষা করেছিলেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জনের দেহে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পমালিকদের সংস্থা বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবু তাহের এসব অভিযোগের জবাবে এএফপিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের ইয়ার্ডগুলোকে পরিবেশবান্ধব ও ঝুঁকিমুক্ত করে তোলার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা বেশ ব্যয়বহুল ব্যাপার, কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
সূত্র : এএফপি