alt

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন মুক্তি পাওয়া প্যালেস্টাইনিরা

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

মুক্তি পাওয়া প্যালেস্টাইনিরা

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া প্যালেস্টাইনি বন্দীরা বলছেন ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহে তারা কারাগারে নির্বিচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তারা জানান, এ সময় তাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাদের ওপর কুকুর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের জামাকাপড়, খাবার দেয়া হয়নি। তাদের কাছ কম্বল কেড়ে নেয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে একজন নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন কারাগারে তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়। এছাড়া তারা যে প্রকোষ্ঠে আটক ছিল তার ভিতরে দুবার টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয়।

গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ইসরায়েলি নারী ও শিশুদের বিনিময়ে এই সপ্তাহে এই প্যালেস্টাইনিদের মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। বিবিসি তাদের ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের প্রত্যেকেই বিবিসিকে বলেন, জেল থেকে ছাড়ার আগে তাদের সবাইকে মারধর করা হয়েছে।

প্যালেস্টাইন প্রিজনার্স সোসাইটি বলছে, ইসরায়েলি কিছু রক্ষী হাতকড়া পরা বন্দীদের গায়ে প্রস্রাব করেছে।

গত সাত সপ্তাহে ইসরায়েলি হেফাজতে ছয়জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।

ইসরায়েল দাবি করছে, সব বন্দীকে আইন অনুযায়ী আটক রাখা হয়েছে।

সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত প্যালেস্টাইনিদের একজন আঠারো বছর বয়সী মোহাম্মদ নাজ্জা। তিনি জানান তাকে আগস্ট মাস থেকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই নাফহা কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। তিনি বলছেন কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তিনি জানেন না।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরে জেনিনের কাছে কাবাতিয়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানে বিবিসির সাংবাদিকেরা গিয়ে দেখতে পান তার দুই হাতেই ভারী ব্যান্ডেজ। তিনি জানান, দশ দিন আগে ইসরায়েলি কারারক্ষীরা মাইক্রোফোন ও স্পিকার নিয়ে তার সেলে গিয়ে বন্দীদের নাম বলে চিৎকার করতে থাকে এবং হাততালি দিয়ে তাদের ব্যঙ্গ করতে থাকে। এরপর যখন তারা দেখল বন্দীরা কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না, তখন ওই রক্ষীরা তাদের মারতে শুরু করে।

এ সময় বয়স্ক বন্দীদের পেছনে এবং তরুণদের সামনে রাখা হয়েছিল।

মোহাম্মদ নাজ্জা বিবিসিকে বলেন, তারা আমাকে মারতে শুরু করার পর আমি আমার মাথা রক্ষা করার চেষ্টা করছিলাম। পরে তারা আমার পা ও আমার হাত ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতে থাকে।

সোমবার মুক্তি পাওয়ার পর মোহাম্মদের পরীক্ষা করানো হয়। মেডিকেল রিপোর্ট ও এক্স-রে রিপোর্টে তার উভয় হাতেই ফ্র্যাকচার দেখা যায়।

মোহাম্মদ বিবিসির সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুরুতে অনেক ব্যথা লাগছিল। কিছুক্ষণ পর যখন বুঝলাম যে হাড়গুলো ভেঙে গেছে, সেগুলো নাড়াচাড়া বন্ধ করে দিই।’

তিনি জানান, অন্য বন্দীরা তাকে খেতে এবং বাথরুম ব্যবহার করতে সাহায্য করে। আবার মারধর করা হবে এই ভয়ে তিনি রক্ষীদের কাছে চিকিৎসা সহায়তা চাননি।

মোহাম্মদের দাবি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিস। তাদের দাবি কারাগার থেকে বের হওয়ার আগে একজন চিকিৎসক দিয়ে তার পরীক্ষা করা হয়। সেখানে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি তার।

মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে রেড ক্রসের বাসে ওঠার পর প্রথম চিকিৎসা পান তিনি। এরপর রামাল্লার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্লাস্টারে না সারলে প্লেট লাগাতে হতে পারে।

মোহাম্মদ বলেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি কারাগারের ভেতরে রক্ষীদের আচরণ বদলে যায়। তিনি বলেন, রক্ষীরা তাদের লাথি মেরেছে। আঘাত করার জন্য লাঠি ব্যবহার করেছে। একজন প্রহরী তার মুখের উপর পাও তুলে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ‘তারা তাদের কুকুর নিয়ে আসে। পরে আমাদের দিকে লেলিয়ে দেয়। তারপরে তারা আবার আমাদের মারধর শুরু করে। তারা আমাদের জামাকাপড়, বিছানা, বালিশ বাইরে এবং খাবার মেঝেতে ফেলে দেয়। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।’

মোহাম্মদ তার পিঠ ও কাঁধে আঘাতের চিহ্নগুলি বিবিসিকে দেখিয়ে বলেন, এই হচ্ছে সেই মারধরের চিহ্ন।

তিনি বলেন, আক্রমণকারী কুকুরটি মুখ ও নখ দিয়ে আমার সারা শরীরে চিহ্ন রেখে গেছে।

ইসরায়েলের মেগিদ্দো কারাগারে এই ধরনের মারধরের ঘটনা দুবার ঘটেছে বলে জানান মোহাম্মদ। এরপর নাফহা কারাগারে এ ধরনের ঘটনা আরো বেশি ঘটেছে বলে জানান তিনি।

অন্য আরও কয়েকজন প্যালেস্টাইনি বন্দীর সঙ্গে কথা বলে একই রকম নির্যাতনের কথা শুনেছে বিবিসি। বন্দীরা বলেছে হামাসের কর্মকান্ডের জন্য প্যালেস্টাইনি বন্দীদের বিরুদ্ধে এটাকে ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে নিয়েছিল ইসরায়েলিরা।

প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স সোসাইটির প্রধান, আবদুল্লাহ আল-জাঘরি বিবিসিকে বলেন অনেক বন্দীর মুখ ও শরীরে হিংস্র প্রহারের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি হাতকড়া পরা বন্দীদের ওপর প্রহরীদের প্রস্রাব করার অভিযোগও তিনি শুনেছেন বলে জানান বিবিসিকে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিবিসি যোগাযোগ করলে ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিস বলেছে সমস্ত বন্দীকে আইন অনুযায়ী আটক রাখা হয়েছে এবং আইনানুগভাবে তাদের সমস্ত মৌলিক অধিকার রক্ষা করা হয়েছে।

বিবিসির কাছে পাঠানো বিবৃতিতে ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিবিসি বর্ণিত এসব দাবির বিষয়ে আমরা অবগত নই। তারপরও, বন্দী ও আটক ব্যক্তিদের অভিযোগ দায়ের করার অধিকার রয়েছে। কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখবে।’

এই সপ্তাহের শুরুতে কারাগার থেকে মুক্তি পান প্যালেস্টাইনি নারী লামা খাতের। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, অক্টোবরের শেষের দিকে গ্রেপ্তারের পরপরই ইসরায়েলের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাকে ‘স্পষ্টভাবে ধর্ষণের হুমকি’ দেন।

লামা লিখেছেন, ‘আমাকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। তারা আমাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল। ... এটা স্পষ্ট যে তাদের লক্ষ্য ছিল, আমাকে ভয় দেখানো।’

লামা খাতের টেলিফোনে বিবিসিকে বলেন অন্য নারী বন্দীদেরও ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছিল। এছাড়া ড্যামন কারাগারে বন্দীদের ওপর টিয়ার গ্যাস মারা হয়েছিল।

ইসরায়েলি কারাগারে ছয়জন প্যালেস্টাইনির মৃত্যুর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেছে, গত সপ্তাহে চারটি ভিন্ন তারিখে চারজন বন্দী মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।

ছবি

বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক গোপনীয়তা চুরির চেষ্টা করছে উত্তর কোরিয়া

ছবি

শেখ হাসিনাকে নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন, ক্ষমা চাইল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় নিহত আরও ৩০ ফিলিস্তিনি

ছবি

আমিরাতে ৫৭ বাংলাদেশির দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড

ছবি

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করেছে পুলিশ: অ্যামনেস্টি

ছবি

পরিস্থিতি বুঝে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে : পলক

ছবি

চীনে শপিং সেন্টারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৬

ছবি

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৮১

ছবি

ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন বিবেচনার প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

সারা দেশে আ. লীগ নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ

ছবি

কোটা আন্দোলনে হামলা-সংঘর্ষ-হত্যা : যা বলছে জাতিসংঘ

ছবি

ওমান উপকূলে ট্যাংকারডুবি, ১৩ ভারতীয়সহ সমুদ্রে নিখোঁজ ১৬ ক্রু

ছবি

বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন

ছবি

কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় অ্যামনেস্টির নিন্দা

ছবি

আসন্ন নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম ঘোষণা ট্রাম্পের

ছবি

ইসরায়েলের ৫ নাগরিক, তিন সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ইইউর

ছবি

নুসেইরাত-খান ইউনিসে ইসরায়েলের বর্বর হামলা, ৫ শিশুসহ নিহত ১৫

ছবি

কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

রিপাবলিকান সম্মেলনে যোগ দিতে উইসকন্সিনে পৌঁছেছেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, নিহত আরও ১৪১ ফিলিস্তিনি

ছবি

ট্রাম্পের ওপর হামলা

ছবি

ট্রাম্পের ওপর হামলাকারী ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির নিবন্ধিত ভোটার

ছবি

ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে: এফবিআই

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা নেই: বাইডেন

ছবি

ট্রাম্পের ওপর হামলা

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৭১ জন নিহত

ছবি

গাজায় হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ৭০ হাজারের বেশি মানুষ

ছবি

নাইজেরিয়ায় ধসে পড়েছে স্কুল, নিহত ২১

ছবি

কুকুর লেলিয়ে প্রতিবন্ধী ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েলি সেনারা

ছবি

নির্বাচনে আমি থাকছি, আর আমিই জিতবো : বাইডেন

ছবি

নাইজেরিয়ায় স্কুলভবনে ধস, ২২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসন পেতে যাচ্ছে ইমরানের পিটিআই দল

ছবি

বাইডেনের পরপর ভুল মন্তব্যে উদ্বেগ, তবুও নির্বাচনী প্রচারণায় অটল

ছবি

নেপালে ভূমিধসে নদীতে ছিটকে পড়ল দুই বাস, নিখোঁজ অন্তত ৬৩

ছবি

অরুণাচলে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের পদক্ষেপ, চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

যুক্তরাজ্যের নতুন সরকারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলীও

tab

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন মুক্তি পাওয়া প্যালেস্টাইনিরা

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

মুক্তি পাওয়া প্যালেস্টাইনিরা

শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া প্যালেস্টাইনি বন্দীরা বলছেন ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহে তারা কারাগারে নির্বিচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তারা জানান, এ সময় তাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাদের ওপর কুকুর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের জামাকাপড়, খাবার দেয়া হয়নি। তাদের কাছ কম্বল কেড়ে নেয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে একজন নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন কারাগারে তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়। এছাড়া তারা যে প্রকোষ্ঠে আটক ছিল তার ভিতরে দুবার টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয়।

গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ইসরায়েলি নারী ও শিশুদের বিনিময়ে এই সপ্তাহে এই প্যালেস্টাইনিদের মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। বিবিসি তাদের ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের প্রত্যেকেই বিবিসিকে বলেন, জেল থেকে ছাড়ার আগে তাদের সবাইকে মারধর করা হয়েছে।

প্যালেস্টাইন প্রিজনার্স সোসাইটি বলছে, ইসরায়েলি কিছু রক্ষী হাতকড়া পরা বন্দীদের গায়ে প্রস্রাব করেছে।

গত সাত সপ্তাহে ইসরায়েলি হেফাজতে ছয়জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।

ইসরায়েল দাবি করছে, সব বন্দীকে আইন অনুযায়ী আটক রাখা হয়েছে।

সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত প্যালেস্টাইনিদের একজন আঠারো বছর বয়সী মোহাম্মদ নাজ্জা। তিনি জানান তাকে আগস্ট মাস থেকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই নাফহা কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। তিনি বলছেন কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তিনি জানেন না।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরে জেনিনের কাছে কাবাতিয়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানে বিবিসির সাংবাদিকেরা গিয়ে দেখতে পান তার দুই হাতেই ভারী ব্যান্ডেজ। তিনি জানান, দশ দিন আগে ইসরায়েলি কারারক্ষীরা মাইক্রোফোন ও স্পিকার নিয়ে তার সেলে গিয়ে বন্দীদের নাম বলে চিৎকার করতে থাকে এবং হাততালি দিয়ে তাদের ব্যঙ্গ করতে থাকে। এরপর যখন তারা দেখল বন্দীরা কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না, তখন ওই রক্ষীরা তাদের মারতে শুরু করে।

এ সময় বয়স্ক বন্দীদের পেছনে এবং তরুণদের সামনে রাখা হয়েছিল।

মোহাম্মদ নাজ্জা বিবিসিকে বলেন, তারা আমাকে মারতে শুরু করার পর আমি আমার মাথা রক্ষা করার চেষ্টা করছিলাম। পরে তারা আমার পা ও আমার হাত ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতে থাকে।

সোমবার মুক্তি পাওয়ার পর মোহাম্মদের পরীক্ষা করানো হয়। মেডিকেল রিপোর্ট ও এক্স-রে রিপোর্টে তার উভয় হাতেই ফ্র্যাকচার দেখা যায়।

মোহাম্মদ বিবিসির সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুরুতে অনেক ব্যথা লাগছিল। কিছুক্ষণ পর যখন বুঝলাম যে হাড়গুলো ভেঙে গেছে, সেগুলো নাড়াচাড়া বন্ধ করে দিই।’

তিনি জানান, অন্য বন্দীরা তাকে খেতে এবং বাথরুম ব্যবহার করতে সাহায্য করে। আবার মারধর করা হবে এই ভয়ে তিনি রক্ষীদের কাছে চিকিৎসা সহায়তা চাননি।

মোহাম্মদের দাবি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিস। তাদের দাবি কারাগার থেকে বের হওয়ার আগে একজন চিকিৎসক দিয়ে তার পরীক্ষা করা হয়। সেখানে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি তার।

মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে রেড ক্রসের বাসে ওঠার পর প্রথম চিকিৎসা পান তিনি। এরপর রামাল্লার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্লাস্টারে না সারলে প্লেট লাগাতে হতে পারে।

মোহাম্মদ বলেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি কারাগারের ভেতরে রক্ষীদের আচরণ বদলে যায়। তিনি বলেন, রক্ষীরা তাদের লাথি মেরেছে। আঘাত করার জন্য লাঠি ব্যবহার করেছে। একজন প্রহরী তার মুখের উপর পাও তুলে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ‘তারা তাদের কুকুর নিয়ে আসে। পরে আমাদের দিকে লেলিয়ে দেয়। তারপরে তারা আবার আমাদের মারধর শুরু করে। তারা আমাদের জামাকাপড়, বিছানা, বালিশ বাইরে এবং খাবার মেঝেতে ফেলে দেয়। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।’

মোহাম্মদ তার পিঠ ও কাঁধে আঘাতের চিহ্নগুলি বিবিসিকে দেখিয়ে বলেন, এই হচ্ছে সেই মারধরের চিহ্ন।

তিনি বলেন, আক্রমণকারী কুকুরটি মুখ ও নখ দিয়ে আমার সারা শরীরে চিহ্ন রেখে গেছে।

ইসরায়েলের মেগিদ্দো কারাগারে এই ধরনের মারধরের ঘটনা দুবার ঘটেছে বলে জানান মোহাম্মদ। এরপর নাফহা কারাগারে এ ধরনের ঘটনা আরো বেশি ঘটেছে বলে জানান তিনি।

অন্য আরও কয়েকজন প্যালেস্টাইনি বন্দীর সঙ্গে কথা বলে একই রকম নির্যাতনের কথা শুনেছে বিবিসি। বন্দীরা বলেছে হামাসের কর্মকান্ডের জন্য প্যালেস্টাইনি বন্দীদের বিরুদ্ধে এটাকে ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে নিয়েছিল ইসরায়েলিরা।

প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স সোসাইটির প্রধান, আবদুল্লাহ আল-জাঘরি বিবিসিকে বলেন অনেক বন্দীর মুখ ও শরীরে হিংস্র প্রহারের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি হাতকড়া পরা বন্দীদের ওপর প্রহরীদের প্রস্রাব করার অভিযোগও তিনি শুনেছেন বলে জানান বিবিসিকে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিবিসি যোগাযোগ করলে ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিস বলেছে সমস্ত বন্দীকে আইন অনুযায়ী আটক রাখা হয়েছে এবং আইনানুগভাবে তাদের সমস্ত মৌলিক অধিকার রক্ষা করা হয়েছে।

বিবিসির কাছে পাঠানো বিবৃতিতে ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিবিসি বর্ণিত এসব দাবির বিষয়ে আমরা অবগত নই। তারপরও, বন্দী ও আটক ব্যক্তিদের অভিযোগ দায়ের করার অধিকার রয়েছে। কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখবে।’

এই সপ্তাহের শুরুতে কারাগার থেকে মুক্তি পান প্যালেস্টাইনি নারী লামা খাতের। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, অক্টোবরের শেষের দিকে গ্রেপ্তারের পরপরই ইসরায়েলের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাকে ‘স্পষ্টভাবে ধর্ষণের হুমকি’ দেন।

লামা লিখেছেন, ‘আমাকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। তারা আমাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল। ... এটা স্পষ্ট যে তাদের লক্ষ্য ছিল, আমাকে ভয় দেখানো।’

লামা খাতের টেলিফোনে বিবিসিকে বলেন অন্য নারী বন্দীদেরও ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছিল। এছাড়া ড্যামন কারাগারে বন্দীদের ওপর টিয়ার গ্যাস মারা হয়েছিল।

ইসরায়েলি কারাগারে ছয়জন প্যালেস্টাইনির মৃত্যুর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেছে, গত সপ্তাহে চারটি ভিন্ন তারিখে চারজন বন্দী মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।

back to top