alt

আন্তর্জাতিক

মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে - বিবিসি

ইরানের বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সামরিক সাফল্য। এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে, ইরান ও ইসরায়েল ছায়াযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার ফলে আগামীতে যা-ই ঘটুক না কেন ওয়াশিংটনের খুব ভালো প্রস্তুতি রয়েছে।

কিন্তু বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের ও দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য প্রস্তুত নয় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। সংকট আরও তীব্র হলে পেন্টাগনকে হয়ত অঞ্চলটিতে নিজেদের সামরিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা লাগবে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে দায়িত্ব পালন করা সাবেক মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব মাইকেল মুলরয় বলেছেন, যদি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ হয়, আর আমরা ইসরায়েলিদের সমর্থন দিতে চাই, তাহলে সেটির জন্য প্রয়োজনীয় সব বাহিনী রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। অবশ্য, তেহরান ইঙ্গিত দিয়েছে, শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার জবাব দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা তাদের তাদের নেই। গত কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। যে যুদ্ধ প্রতিহত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সহিংসতা উসকে দিয়েছে। অঞ্চলটিতে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ গত কয়েক বছরে অঞ্চলটিতে ধীরে ধীরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমে আসছিল। কিন্তু যুদ্ধ জাহাজ ও যুদ্ধবিমানে থাকা নতুন এসব মার্কিন সেনারা আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন এবং তাদের এই মোতায়েন সাময়িক। ইরান ও ইসরায়েল ছায়াযুদ্ধের আড়াল থেকে প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে সেনা বাড়ানোর কৌশলের ওপর নির্ভরতার মার্কিন কৌশলটি পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের নেতৃত্ব দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত চার তারকা জেনারেল জোসেফ ভোটেল বলেছেন, আমার মনে হয় মার্কিন সেনাবাহিনীর এই পরিস্থিতির অর্থ হলো, অঞ্চলটিতে আমাদের প্রয়োজনীয় ও দীর্ঘমেয়াদে সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখার ধারণাটি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। ভোটেল ও অপর সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, ১৩ এপ্রিল ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে মার্কিন সেনাবাহিনী সাফল্যে ভূমিকা রেখেছিল গোয়েন্দা তথ্য।

এর ফলে পেন্টাগন আগে থেকেই ইরানি হামলার সময় ও নিশানা সম্পর্কে ধারণা করতে পেরেছিল। ভোটেল বলেছেন, আমি মনে করি বড় উদ্বেগ হলো একটি দীর্ঘ সময় ধরে এমন সাফল্য বজায় রাখার সক্ষমতা। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইরান সম্ভবত ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না। শুক্রবারের হামলা নিয়ে ইসরায়েলকে দায়ী করেনি তেহরান। এরপরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামাস-ইসরায়েল সংঘাত যতদিন চলমান রয়েছে পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে তা ধারণা করা মুশকিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের বর্তমান প্রধান জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিল্লা গত মাসে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের বলেছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে যে সেনা পাঠিয়েছে পেন্টাগন, তা তিনি বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বলেছেন, চীনকে মোকাবিলার তুলনায় তাদের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের অগ্রাধিকার কম।

প্রতিনিধি পরিষদের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির কাছে এক লিখিত বক্তব্যে কুরিল্লা বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা উপাদানের বিপজ্জনক ঘাটতি, নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞের অভাব ও ভাষাগত জটিলতা সহিংস চরমপন্থি সংগঠনগুলোকে শনাক্ত ও তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে আমাদের সক্ষমতার দুর্বল করছে। এর ফলে তারা স্বাধীনভাবে ক্রমশ বিচরণ করছে। যদিও কুরিল্লার মন্তব্য দৃশ্যত অনেক বেশি আফগানিস্তানকেন্দ্রিক। তবে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ইতোমধ্যে মার্কিন কৌশলকে প্রভাবিত করেছে।

এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক নৌযানে হুথিদের হামলা শুরুর আগে ইরানপন্থি ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্রের মজুদ সম্পর্কে তথ্যের ঘাটতি। কর্মকর্তারা বলছেন, এর ফলে কয়েক মাস ধরে চলমান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাব নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরও সেনা পাঠানো ও দীর্ঘ মেয়াদে গোয়েন্দা সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ কঠিন প্রমাণিত হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউরোপজুড়ে সেনারা ছড়িয়ে আছে। যারা সেখানে মোতায়েন নেই তারা রক্ষণাবেক্ষণ চক্রের মধ্যে আছেন। আর এশিয়া আমাদের প্রধান মনোযোগ হওয়ার কথা। আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, উত্তেজনা বৃদ্ধির পরও এশিয়া বা ইউরোপ থেকে সেনা প্রত্যাহারে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রস্তুত কি-না তা স্পষ্ট নয়।

গত বছরের অক্টোবরের আগে শেষ বার মধ্যপ্রাচ্যে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে। ওই সময় মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের এক শীর্ষ জেনারেলকে হত্যা এবং পরবর্তীতে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে তেহরানের ধারাবাহিক হামলায় সৃষ্ট উত্তেজনায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১৯ ও ২০২০ সালে মধ্যপ্রাচ্যে সেনা সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল কারণ বর্তমানের মতো ইউরোপে মার্কিন সেনা ও সরঞ্জাম এত বেশি ছিল না। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার পর নতুন বাস্তবতা দেখা দিয়েছে।

সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মুলরয় বলেছেন, চীনকে প্রথম অগ্রাধিকার থেকে বাদ না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, বর্তমান হুমকি পর্যালোচনার ভিত্তিতে আমাদের সেনা মোতায়েন করা প্রয়োজন। বর্তমান প্রবণতা হলো অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্যে দেশের সঙ্গে দেশের একটি সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাত।

ছবি

‘গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি ইসরায়েল’

তৃতীয় দফা ভোটেও জয়, জোহরান এখন নিউইয়র্ক সিটির আনুষ্ঠানিক মেয়র প্রার্থী

ছবি

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের বড় ঘোষণা

মুসলিম দেশ কাজাখস্তানে বোরকা ও নিকাব পরা নিষিদ্ধ

ইরান ভ্রমণে আবারও নাগরিকদের সতর্ক করল চীন

ছবি

হরমুজ প্রণালিতে ইরানের মাইন পাতার প্রস্তুতি, উদ্বেগে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

গাজায় ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতিতে রাজি ইসরায়েল: ট্রাম্প

ছবি

তেলেঙ্গানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪৪, নিখোঁজ ১২ শ্রমিক

ছবি

আরও উত্তপ্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব নিল পাকিস্তান

ফোনালাপ ফাঁসের জেরে বরখাস্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র

ভারতে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ৩৪

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া কতদূর

ছবি

সীমান্ত বিরোধ নিয়ে অডিও ফাঁস: থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

ছবি

ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানের হামলা থেকে বাদ গেল না ক্যাফেও, গাজায় এক দিনে নিহত ৯৫

ছবি

ইসরায়েলকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ: বিনিয়োগ প্রত্যাহার করল নরওয়ের বৃহৎ পেনশন কোম্পানি কেএলপি

ছবি

‘শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, দেখা যায় খালি চোখেও’

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্ত করার দাবিতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ

ইরান শান্তি চাইলে উঠে যেতে পারে নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

হুমকি ও শান্তির বার্তা, গাজা নিয়ে দ্বৈত নীতি

পাকিস্তানের জন্য ৩৪০ কোটি ডলারের ঋণ নবায়ন করলো চীন

ছবি

আলোচনা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৭২

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ফায়ার সার্ভিসের ২ কর্মী নিহত

ছবি

সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, উত্তাল বেলগ্রেড

‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ : ফের ট্রাম্পের সমালোচনায় ইলন মাস্ক

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অভিযোগ ইরানের

ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে

নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিচার বন্ধ করতে চান ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি চুক্তির উদ্যোগের পরও গাজায় থেমে নেই হত্যাযজ্ঞ

ছবি

পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যায় দুই দিনে ৩২ জনের মৃত্যু

ছবি

পুরিতে রথযাত্রায় ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে নিহত ৩, আহত ১০

ছবি

নর্থ ওয়াজিরিস্তানে সামরিক বহরে আত্মঘাতী হামলা, শিশু আহত ছয়

কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছেন ট্রাম্প

tab

আন্তর্জাতিক

মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে - বিবিসি

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ইরানের বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সামরিক সাফল্য। এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে, ইরান ও ইসরায়েল ছায়াযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার ফলে আগামীতে যা-ই ঘটুক না কেন ওয়াশিংটনের খুব ভালো প্রস্তুতি রয়েছে।

কিন্তু বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের ও দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য প্রস্তুত নয় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। সংকট আরও তীব্র হলে পেন্টাগনকে হয়ত অঞ্চলটিতে নিজেদের সামরিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা লাগবে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে দায়িত্ব পালন করা সাবেক মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব মাইকেল মুলরয় বলেছেন, যদি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ হয়, আর আমরা ইসরায়েলিদের সমর্থন দিতে চাই, তাহলে সেটির জন্য প্রয়োজনীয় সব বাহিনী রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। অবশ্য, তেহরান ইঙ্গিত দিয়েছে, শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার জবাব দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা তাদের তাদের নেই। গত কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। যে যুদ্ধ প্রতিহত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সহিংসতা উসকে দিয়েছে। অঞ্চলটিতে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ গত কয়েক বছরে অঞ্চলটিতে ধীরে ধীরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমে আসছিল। কিন্তু যুদ্ধ জাহাজ ও যুদ্ধবিমানে থাকা নতুন এসব মার্কিন সেনারা আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন এবং তাদের এই মোতায়েন সাময়িক। ইরান ও ইসরায়েল ছায়াযুদ্ধের আড়াল থেকে প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে সেনা বাড়ানোর কৌশলের ওপর নির্ভরতার মার্কিন কৌশলটি পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের নেতৃত্ব দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত চার তারকা জেনারেল জোসেফ ভোটেল বলেছেন, আমার মনে হয় মার্কিন সেনাবাহিনীর এই পরিস্থিতির অর্থ হলো, অঞ্চলটিতে আমাদের প্রয়োজনীয় ও দীর্ঘমেয়াদে সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখার ধারণাটি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। ভোটেল ও অপর সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, ১৩ এপ্রিল ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে মার্কিন সেনাবাহিনী সাফল্যে ভূমিকা রেখেছিল গোয়েন্দা তথ্য।

এর ফলে পেন্টাগন আগে থেকেই ইরানি হামলার সময় ও নিশানা সম্পর্কে ধারণা করতে পেরেছিল। ভোটেল বলেছেন, আমি মনে করি বড় উদ্বেগ হলো একটি দীর্ঘ সময় ধরে এমন সাফল্য বজায় রাখার সক্ষমতা। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইরান সম্ভবত ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না। শুক্রবারের হামলা নিয়ে ইসরায়েলকে দায়ী করেনি তেহরান। এরপরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামাস-ইসরায়েল সংঘাত যতদিন চলমান রয়েছে পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে তা ধারণা করা মুশকিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের বর্তমান প্রধান জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিল্লা গত মাসে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের বলেছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে যে সেনা পাঠিয়েছে পেন্টাগন, তা তিনি বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বলেছেন, চীনকে মোকাবিলার তুলনায় তাদের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের অগ্রাধিকার কম।

প্রতিনিধি পরিষদের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির কাছে এক লিখিত বক্তব্যে কুরিল্লা বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা উপাদানের বিপজ্জনক ঘাটতি, নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞের অভাব ও ভাষাগত জটিলতা সহিংস চরমপন্থি সংগঠনগুলোকে শনাক্ত ও তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে আমাদের সক্ষমতার দুর্বল করছে। এর ফলে তারা স্বাধীনভাবে ক্রমশ বিচরণ করছে। যদিও কুরিল্লার মন্তব্য দৃশ্যত অনেক বেশি আফগানিস্তানকেন্দ্রিক। তবে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ইতোমধ্যে মার্কিন কৌশলকে প্রভাবিত করেছে।

এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক নৌযানে হুথিদের হামলা শুরুর আগে ইরানপন্থি ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্রের মজুদ সম্পর্কে তথ্যের ঘাটতি। কর্মকর্তারা বলছেন, এর ফলে কয়েক মাস ধরে চলমান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাব নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরও সেনা পাঠানো ও দীর্ঘ মেয়াদে গোয়েন্দা সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ কঠিন প্রমাণিত হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউরোপজুড়ে সেনারা ছড়িয়ে আছে। যারা সেখানে মোতায়েন নেই তারা রক্ষণাবেক্ষণ চক্রের মধ্যে আছেন। আর এশিয়া আমাদের প্রধান মনোযোগ হওয়ার কথা। আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, উত্তেজনা বৃদ্ধির পরও এশিয়া বা ইউরোপ থেকে সেনা প্রত্যাহারে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রস্তুত কি-না তা স্পষ্ট নয়।

গত বছরের অক্টোবরের আগে শেষ বার মধ্যপ্রাচ্যে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে। ওই সময় মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের এক শীর্ষ জেনারেলকে হত্যা এবং পরবর্তীতে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে তেহরানের ধারাবাহিক হামলায় সৃষ্ট উত্তেজনায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১৯ ও ২০২০ সালে মধ্যপ্রাচ্যে সেনা সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল কারণ বর্তমানের মতো ইউরোপে মার্কিন সেনা ও সরঞ্জাম এত বেশি ছিল না। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার পর নতুন বাস্তবতা দেখা দিয়েছে।

সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মুলরয় বলেছেন, চীনকে প্রথম অগ্রাধিকার থেকে বাদ না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, বর্তমান হুমকি পর্যালোচনার ভিত্তিতে আমাদের সেনা মোতায়েন করা প্রয়োজন। বর্তমান প্রবণতা হলো অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্যে দেশের সঙ্গে দেশের একটি সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাত।

back to top