পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রাতঃরাশের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন এই কমিউনিস্ট নেতা। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের ডাকা হয়। কিন্তু ততক্ষণে তিনি শেষ নিঃস্বাসত্যাগ করেছেন। মৃত্যুর কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেনl
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্র। কলকাতায় জন্ম হলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পূর্বপুরুষদের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশে।
স্কুল জীবনে তিনি ছিলেন শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের ছাত্র। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে বিএ পাস করেন তিনি। যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে একটি সরকারি স্কুলে।
১৯৬৬ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি — সিপিএম দলে প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করেন খাদ্য আন্দোলনসহ দলের নানা কর্মসূচিতে। ছিলেন দলের যুব শাখা ডেমোক্রেটিক ইউথ ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক।
কমিউনিস্ট রাজনীতিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন সিপিএম নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত।
তিনি ১৯৭৭ সালে কাশীপুর–বেলগাছিয়া বিধানসভা আসন থেকে প্রথম পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছিলেন ১৯৭২ সালেই। আবার যে বছর তিনি দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন সেই ১৯৮২ সালেই তিনি কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনে হেরে যান।
এরপর তার বিধানসভা কেন্দ্র পরিবর্তন করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুরে। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত যাদবপুর কেন্দ্র থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি।
প্রথমবার বিধানসভায় জিতেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মন্ত্রী হয়েছিলেন। তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ তে আমন্ত্রিত হিসেবে হলেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে তাঁর অন্তর্ভুক্তি হয় ১৯৮৫ সালে। ২০০২ সালে তিনি পলিটব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন।
বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয়বারের জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আসেন ১৯৮৭ সালে। এরপর ১৯৯৩ সালে মতবিরোধের জেরে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেও কয়েকমাস পরে বুদ্ধদেব ভট্টচার্যকে মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হয়।
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বয়সজনিত কারণে ১৯৯৯ সালে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দলের পক্ষ থেকে বুদ্ধদেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাজ্যের সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে শিল্পায়নের বিষয়ে তিনি উদ্যোগী হন। উদ্যোগী হন সিঙ্গুরে টাটাদের ছোট মোটরগাড়ি ন্যানো কারখানা স্থাপনেও। কিন্তু কারখানার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যার জেরে সেই কারখানা শেষ পর্যন্ত আর তৈরি হয়নি। যে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তিনি টানা জিতেছেন, সেই যাদবপুর কেন্দ্রেই ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর ধীরে ধীরে শারীরিক কারণে তিনি নিজেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেন। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুতে একটা যুগের অবসান হল।
জানা গেছে, কদিন ধরেই জ্বর ছিল তার। বাড়িতেই চিকিত্সা চলছিল। কারণ হাসপাতালে থাকতে পছন্দ করতেন না তিনি। আজ সকালে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল খুব দ্রুত কমে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেওয়া হয় পারিবারিক চিকিত্সককে। কিন্তু তিনি এসে পৌঁছানোর আগেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় বলে পারিবারিক সূত্রে খবর।
গত বছর, ২০২৩-এ জুলাই মাসের শেষদিকেই ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেইসময় তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হয়েছিল। ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে সেবারের লড়াইটা জিতে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্রাচার্য্য।
বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০২৪
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রাতঃরাশের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন এই কমিউনিস্ট নেতা। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের ডাকা হয়। কিন্তু ততক্ষণে তিনি শেষ নিঃস্বাসত্যাগ করেছেন। মৃত্যুর কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেনl
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্র। কলকাতায় জন্ম হলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পূর্বপুরুষদের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশে।
স্কুল জীবনে তিনি ছিলেন শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের ছাত্র। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে বিএ পাস করেন তিনি। যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে একটি সরকারি স্কুলে।
১৯৬৬ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি — সিপিএম দলে প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করেন খাদ্য আন্দোলনসহ দলের নানা কর্মসূচিতে। ছিলেন দলের যুব শাখা ডেমোক্রেটিক ইউথ ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক।
কমিউনিস্ট রাজনীতিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন সিপিএম নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত।
তিনি ১৯৭৭ সালে কাশীপুর–বেলগাছিয়া বিধানসভা আসন থেকে প্রথম পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছিলেন ১৯৭২ সালেই। আবার যে বছর তিনি দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন সেই ১৯৮২ সালেই তিনি কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনে হেরে যান।
এরপর তার বিধানসভা কেন্দ্র পরিবর্তন করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুরে। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত যাদবপুর কেন্দ্র থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি।
প্রথমবার বিধানসভায় জিতেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মন্ত্রী হয়েছিলেন। তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ তে আমন্ত্রিত হিসেবে হলেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে তাঁর অন্তর্ভুক্তি হয় ১৯৮৫ সালে। ২০০২ সালে তিনি পলিটব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন।
বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয়বারের জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আসেন ১৯৮৭ সালে। এরপর ১৯৯৩ সালে মতবিরোধের জেরে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেও কয়েকমাস পরে বুদ্ধদেব ভট্টচার্যকে মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হয়।
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বয়সজনিত কারণে ১৯৯৯ সালে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দলের পক্ষ থেকে বুদ্ধদেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাজ্যের সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে শিল্পায়নের বিষয়ে তিনি উদ্যোগী হন। উদ্যোগী হন সিঙ্গুরে টাটাদের ছোট মোটরগাড়ি ন্যানো কারখানা স্থাপনেও। কিন্তু কারখানার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যার জেরে সেই কারখানা শেষ পর্যন্ত আর তৈরি হয়নি। যে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তিনি টানা জিতেছেন, সেই যাদবপুর কেন্দ্রেই ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর ধীরে ধীরে শারীরিক কারণে তিনি নিজেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেন। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুতে একটা যুগের অবসান হল।
জানা গেছে, কদিন ধরেই জ্বর ছিল তার। বাড়িতেই চিকিত্সা চলছিল। কারণ হাসপাতালে থাকতে পছন্দ করতেন না তিনি। আজ সকালে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল খুব দ্রুত কমে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেওয়া হয় পারিবারিক চিকিত্সককে। কিন্তু তিনি এসে পৌঁছানোর আগেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় বলে পারিবারিক সূত্রে খবর।
গত বছর, ২০২৩-এ জুলাই মাসের শেষদিকেই ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেইসময় তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হয়েছিল। ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে সেবারের লড়াইটা জিতে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্রাচার্য্য।