alt

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানে অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা নিষেধ যে আইনে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্প্রতি তালেবান প্রণীত নীতি–নৈতিকতাবিষয়ক আইনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে আফগানিস্তানে। এ আইনের আওতায় কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে আফগানদের। সাম্প্রতিক দিনগুলোয় কথিত নীতি পুলিশের সদস্যদের আইনটি কার্যকরে মাঠে নামতেও দেখা গেছে। পাশাপাশি তালেবান সরকারের সদস্যদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে আফগানরা নিজেরাও বিধিনিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়ার মধ্য দিয়ে তিন বছর আগে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ঘটে তালেবানের। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে আফগানদের বিশেষত নারীদের জীবনাচরণ নিয়ে বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়েছে তালেবান। এবার আইনের মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন ঘটল।

এই আইন ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক সমালোচনা জন্ম দিয়েছে। নারীদের ওপর বিধিনিষেধ সহজ করার জন্য যে প্রতিশ্রুতি তালেবান সরকার দিয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

নতুন যেসব আদেশ

আইনের ৩৫ নম্বর ধারা নিয়ে বেশি সমালোচনা তৈরি হয়। ওই ধারায় বলা আছে, নারীরা বাড়ির বাইরে উচ্চ স্বরে কথা বলতে পারবেন না। এমনকি তাঁরা উচ্চ স্বরে গান গাইতে বা কবিতা আবৃত্তি করতে পারবেন না। অনাত্মীয় কোনো ছেলে-মেয়ে কেউ কারও দিকে তাকাতে পারবেন না। পুরুষ ছাড়াও অমুসলিম নারীদের সামনেও আফগান নারীদের বোরকা পরে যেতে হবে।

পুরুষদের মুষ্টির চেয়ে দাড়ি লম্বা রাখা ও ঢিলেঢালা কাপড় পরিধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ কখনো দেখানো যাবে না। স্ত্রীর সঙ্গেও পায়ুপথে যৌন সম্পর্ক করতে পারবেন না পুরুষেরা।

নতুন আইনে সংবাদমাধ্যমের জন্যও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে ইসলাম নিয়ে উপহাস বা অবমাননাকর কোনো কিছু প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না। পরিবহন কোম্পানিগুলোকে নামাজের সময় অনুযায়ী তাদের যাত্রার সময়সূচি পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। মুসলমানদের কোনো অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করতে বা কোনো ধরনের সাহায্য না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এমনকি কিছু ঐতিহ্যবাহী খেলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে জীবন্ত জিনিসের ছবি তোলা বা দেখা যাবে না। মা–বাবার কথার অবাধ্য হওয়াকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।

সমাজে পরিবর্তন

তালেবান গত ২১ আগস্ট এই আইনের ঘোষণা দেয়। এরপর কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আইনটি কার্যকরে তালেবান কর্মকর্তাদের নজরদারি বৃদ্ধির বিষয়টি অনেকেই এএফপিকে জানিয়েছেন।

নতুন এই আইন সঠিকভাবে সবাই মেনে চলছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নীতি-নৈতিকতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নীতি পুলিশকে। রাজধানী কাবুলে নীতি পুলিশের টহল শুরু হয়েছে। কোনো নারীকে মাহরাম (পুরুষ আত্মীয়) ছাড়া এবং হাত বা চুল দেখা যাওয়া অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে সতর্ক করা শুরু হয়েছে।

কাবুলের ২৩ বছরের এক তরুণ বলেন, ‘আমাকে তিনবার থামানো হয়েছে। তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছে, কেন আমি দাড়ি রাখিনি। আমি ভয় পেয়ে যাই এবং দাড়ি রাখব বলে প্রতিশ্রুতি দিই।’

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে মাজার-ই-শরিফের একজন ট্যাক্সিচালক বলেন, তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয় কেন তিনি মাহরাম বা বোরকা ছাড়া নারীদের গাড়িতে তোলেন; এবং মধ্য পারওয়ানে মুখ না ঢাকায় নারীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।

কাবুলের একটি ব্যাংকে নতুন আইন মানতে গিয়ে সব কর্মী পশ্চিমা পোশাক ছেড়ে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধরেছে।

আগে থেকেই রয়েছে যেসব বিধিনিষেধ

২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সৈন্যদের বিতাড়িত করার পর থেকে তালেবান সরকার দেশটির নারী–পুরুষদের বিচ্ছিন্ন রাখার ওপর জোর দিয়ে মাঝেমধে৵ সামাজিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর অনেক কিছুই এখন নতুন আইনে রয়েছে এবং ইতিমধ্যেই এগুলো কার্যকরও রয়েছে।

মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তরুণীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকে নিয়ম করা হয়, কোনো নারী ভ্রমণ করলে তাঁর সঙ্গে পরিবারের পুরুষ সদস্য থাকতে হবে; এবং নারীদের প্রকাশ্যে বের হওয়ার সময় মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক বলে গণ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকাশ্যে গান ও জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জনগণের জমায়েত হয় এমন বেশির ভাগ জায়গায় নারী ও পুরুষের আলাদা থাকা প্রয়োজন। ব্যভিচার, সমকামিতা ও মাদক গ্রহণ আগে থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যাহোক, নতুন এই আইনের মধ্য দিয়ে সমাজের প্রতি তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে শাস্তির বিধানের কথাও উল্লেখ আছে। এর মধ্যে মৌখিক সতর্কতা থেকে শুরু করে হুমকি, জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদের আটক করার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

অসংগতিতে ভরা

তালেবান সরকার ঘোষিত আইনটি ব্যাপক অস্বচ্ছ। এতে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি। এতে বলা হয়, নারীরা ‘জরুরি প্রয়োজন’ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হবেন না। তবে কোন পরিস্থিতিকে জরুরি হিসেবে গণ্য করা হবে, সে বিষয়ে বলা নেই।

অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহায়তা নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। তার মানে এর মধ্য দিয়ে আফগানদের আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এটি এমনও হতে পারে যে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক থেকে তালেবান সরকার নিজেদের সরিয়ে নিয়ে তাদের ‘একঘরে’ স্ট্যাটাসকে আরও শক্তিশালী করেছে। এবং ফোন ও টেলিভিশনে গণমাধ্যম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা–ও স্পষ্ট করা হয়নি। তবে সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো নতুন আইনটি সবার জন্য কতটা সমান ও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে তা–ই।

জুলাই মাসে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নতুন আইন হওয়ার আগেই দেশটির নৈতিকতাবিষয়ক পদক্ষেপ এবং এর প্রয়োগ নিয়ে ‘অস্পষ্টতা ও অসংগতি’ ছিল।

লেবানন-সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা

ছবি

ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকিতে চাপ নয়, বরং স্বস্তিতে রাশিয়া

মে মাসে ইরানের তেল রপ্তানিতে সর্বকালের রেকর্ড

ছবি

জোটে ভাঙন, অস্তিত্ব সংকটে নেতানিয়াহুর সরকার

ইসরায়েলিদের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে গাজায় বাড়িঘর ধ্বংস করছে সেনারা

ছবি

বেপরোয়া হুতি, ২০ মাসে ৭০ জাহাজে হামলা

ছবি

দালাই লামার উত্তরাধিকারের ওপর বেইজিংয়ের অধিকার দাবি, নয়াদিল্লিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে : ম্যাখোঁ

ছবি

দুই হাজার বছর আগে ডুবে যাওয়া শহরের খোঁজ

কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করল ভারত

ছবি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, নিহত ৩০

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলছেই, নিহত ৫৮ হাজার ছাড়াল

ছবি

সিরিয়ায় বেদুইন সুন্নি-দ্রুজ সংঘর্ষে নিহত অন্তত ৩০

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট, জরুরি পথে পালিয়ে বাঁচেন

ছবি

নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি আর নেই

ছবি

ইসরায়েলের পদক্ষেপে উদ্বেগ, গাজার পরিস্থিতি ঠেকাতে ব্রিটিশ এমপিদের চিঠি

ছবি

গণহত্যা রুখতে ২০টির বেশি দেশের সম্মেলনে বাংলাদেশেরও অংশগ্রহণ

ছবি

শুল্কহার কমিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে চায় ভারত

ছবি

অভিযানের সময় আহত শ্রমিকের মৃত্যু, আক্রমণাত্মক কৌশল স্থগিতের নির্দেশ আদালতের

যুক্তরাষ্ট্র হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা দিলে আলোচনায় বসবে ইরান

ছবি

বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে চলেছে ভারত

ইউক্রেনে রাশিয়ার যে কোন কাজের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের ঘোষণা কিমের

ছবি

পুতিনকে নিয়ে ‘হতাশ’ ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে

মায়ানমারে সংঘাত, থাই সীমান্ত দিয়ে পালাল শতাধিক সেনা

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলছে ‘নীরব বিপ্লব’

ছবি

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ২৪ জন নিহত, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ

ছবি

এয়ার ইন্ডিয়া উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ: সুইচের অপ্রত্যাশিত বন্ধ হওয়া, তদন্তে জানা গেছে

ছবি

মাত্র ১২ দিনেই যুদ্ধবিরতি’, ইরানের পাল্টা হামলায় তেল আবিবে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি

১২ দিনের যুদ্ধে ৫০০ ইসরায়েলি নিহত: ইরান

ছবি

ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেছে ৮০০ ফিলিস্তিনির

মায়ানমারে বৌদ্ধ মঠে বিমান হামলায় নিহত ২৩

ছবি

হুথিদের সাহায্য করে কারা, কীভাবে তারা অস্ত্র পায়?

কুর্দি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণে তুরস্কের জয় হয়েছে : এরদোয়ান

ছবি

‘বিধ্বস্ত হওয়ার আগে জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয় এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনের’

ছবি

‘আমি জ্বালানির সুইচ বন্ধ করিনি’: বিধ্বস্তের আগে পাইলট

tab

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানে অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা নিষেধ যে আইনে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্প্রতি তালেবান প্রণীত নীতি–নৈতিকতাবিষয়ক আইনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে আফগানিস্তানে। এ আইনের আওতায় কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে আফগানদের। সাম্প্রতিক দিনগুলোয় কথিত নীতি পুলিশের সদস্যদের আইনটি কার্যকরে মাঠে নামতেও দেখা গেছে। পাশাপাশি তালেবান সরকারের সদস্যদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে আফগানরা নিজেরাও বিধিনিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়ার মধ্য দিয়ে তিন বছর আগে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ঘটে তালেবানের। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে আফগানদের বিশেষত নারীদের জীবনাচরণ নিয়ে বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়েছে তালেবান। এবার আইনের মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন ঘটল।

এই আইন ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক সমালোচনা জন্ম দিয়েছে। নারীদের ওপর বিধিনিষেধ সহজ করার জন্য যে প্রতিশ্রুতি তালেবান সরকার দিয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

নতুন যেসব আদেশ

আইনের ৩৫ নম্বর ধারা নিয়ে বেশি সমালোচনা তৈরি হয়। ওই ধারায় বলা আছে, নারীরা বাড়ির বাইরে উচ্চ স্বরে কথা বলতে পারবেন না। এমনকি তাঁরা উচ্চ স্বরে গান গাইতে বা কবিতা আবৃত্তি করতে পারবেন না। অনাত্মীয় কোনো ছেলে-মেয়ে কেউ কারও দিকে তাকাতে পারবেন না। পুরুষ ছাড়াও অমুসলিম নারীদের সামনেও আফগান নারীদের বোরকা পরে যেতে হবে।

পুরুষদের মুষ্টির চেয়ে দাড়ি লম্বা রাখা ও ঢিলেঢালা কাপড় পরিধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ কখনো দেখানো যাবে না। স্ত্রীর সঙ্গেও পায়ুপথে যৌন সম্পর্ক করতে পারবেন না পুরুষেরা।

নতুন আইনে সংবাদমাধ্যমের জন্যও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে ইসলাম নিয়ে উপহাস বা অবমাননাকর কোনো কিছু প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না। পরিবহন কোম্পানিগুলোকে নামাজের সময় অনুযায়ী তাদের যাত্রার সময়সূচি পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। মুসলমানদের কোনো অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করতে বা কোনো ধরনের সাহায্য না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এমনকি কিছু ঐতিহ্যবাহী খেলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে জীবন্ত জিনিসের ছবি তোলা বা দেখা যাবে না। মা–বাবার কথার অবাধ্য হওয়াকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।

সমাজে পরিবর্তন

তালেবান গত ২১ আগস্ট এই আইনের ঘোষণা দেয়। এরপর কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আইনটি কার্যকরে তালেবান কর্মকর্তাদের নজরদারি বৃদ্ধির বিষয়টি অনেকেই এএফপিকে জানিয়েছেন।

নতুন এই আইন সঠিকভাবে সবাই মেনে চলছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নীতি-নৈতিকতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নীতি পুলিশকে। রাজধানী কাবুলে নীতি পুলিশের টহল শুরু হয়েছে। কোনো নারীকে মাহরাম (পুরুষ আত্মীয়) ছাড়া এবং হাত বা চুল দেখা যাওয়া অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে সতর্ক করা শুরু হয়েছে।

কাবুলের ২৩ বছরের এক তরুণ বলেন, ‘আমাকে তিনবার থামানো হয়েছে। তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছে, কেন আমি দাড়ি রাখিনি। আমি ভয় পেয়ে যাই এবং দাড়ি রাখব বলে প্রতিশ্রুতি দিই।’

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে মাজার-ই-শরিফের একজন ট্যাক্সিচালক বলেন, তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয় কেন তিনি মাহরাম বা বোরকা ছাড়া নারীদের গাড়িতে তোলেন; এবং মধ্য পারওয়ানে মুখ না ঢাকায় নারীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।

কাবুলের একটি ব্যাংকে নতুন আইন মানতে গিয়ে সব কর্মী পশ্চিমা পোশাক ছেড়ে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধরেছে।

আগে থেকেই রয়েছে যেসব বিধিনিষেধ

২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সৈন্যদের বিতাড়িত করার পর থেকে তালেবান সরকার দেশটির নারী–পুরুষদের বিচ্ছিন্ন রাখার ওপর জোর দিয়ে মাঝেমধে৵ সামাজিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর অনেক কিছুই এখন নতুন আইনে রয়েছে এবং ইতিমধ্যেই এগুলো কার্যকরও রয়েছে।

মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তরুণীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকে নিয়ম করা হয়, কোনো নারী ভ্রমণ করলে তাঁর সঙ্গে পরিবারের পুরুষ সদস্য থাকতে হবে; এবং নারীদের প্রকাশ্যে বের হওয়ার সময় মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক বলে গণ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকাশ্যে গান ও জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জনগণের জমায়েত হয় এমন বেশির ভাগ জায়গায় নারী ও পুরুষের আলাদা থাকা প্রয়োজন। ব্যভিচার, সমকামিতা ও মাদক গ্রহণ আগে থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যাহোক, নতুন এই আইনের মধ্য দিয়ে সমাজের প্রতি তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে শাস্তির বিধানের কথাও উল্লেখ আছে। এর মধ্যে মৌখিক সতর্কতা থেকে শুরু করে হুমকি, জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদের আটক করার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

অসংগতিতে ভরা

তালেবান সরকার ঘোষিত আইনটি ব্যাপক অস্বচ্ছ। এতে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি। এতে বলা হয়, নারীরা ‘জরুরি প্রয়োজন’ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হবেন না। তবে কোন পরিস্থিতিকে জরুরি হিসেবে গণ্য করা হবে, সে বিষয়ে বলা নেই।

অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহায়তা নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। তার মানে এর মধ্য দিয়ে আফগানদের আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এটি এমনও হতে পারে যে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক থেকে তালেবান সরকার নিজেদের সরিয়ে নিয়ে তাদের ‘একঘরে’ স্ট্যাটাসকে আরও শক্তিশালী করেছে। এবং ফোন ও টেলিভিশনে গণমাধ্যম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা–ও স্পষ্ট করা হয়নি। তবে সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো নতুন আইনটি সবার জন্য কতটা সমান ও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে তা–ই।

জুলাই মাসে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নতুন আইন হওয়ার আগেই দেশটির নৈতিকতাবিষয়ক পদক্ষেপ এবং এর প্রয়োগ নিয়ে ‘অস্পষ্টতা ও অসংগতি’ ছিল।

back to top