যুক্তরাষ্ট্র থেকে আধুনিক এমকিউ-৯ প্রিডেটর ড্রোন ক্রয় করবে ভারত
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক এমকিউ-৯বি প্রিডেটর, বা শিকারি ড্রোন কেনার জন্য ৩২ হাজার কোটি রুপির বিশাল এক চুক্তি সম্পন্ন করেছে ভারত। এই চুক্তির অধীনে শিগগিরই এই ড্রোনগুলো ভারতীয় সামরিক বাহিনীর হাতে আসবে, যা ভারতের সামরিক কৌশলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
নৌ, স্থল ও বিমান বাহিনীর জন্য শক্তিশালী ড্রোন
ভারতীয় নৌবাহিনী এই চুক্তির অধীনে ১৫টি ‘সিগার্ডিয়ান’ শিকারি ড্রোন পাবে। অন্যদিকে, ভারতীয় বিমান বাহিনী ও স্থলবাহিনী পাবে ৮টি করে ‘স্কাইগার্ডিয়ান’ শিকারি ড্রোন। এনডিটিভি সূত্রে জানা যায়, এই ড্রোনগুলো ভারতের সামরিক বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করবে, যা তাদের বিভিন্ন সুরক্ষা ও নজরদারি মিশনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষতা নিশ্চিত করবে।
মোদী-বাইডেনের বৈঠকের ফলাফল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই বৈঠকটি ডেলাওয়ারে কোয়াড বৈঠকের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হয়, এবং তখনই দুই দেশের মধ্যে এই ঐতিহাসিক ড্রোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে এই উন্নয়ন এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের কাছে এই ড্রোন পাওয়ার মাধ্যমে তাদের সামরিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে এবং চীনের সঙ্গে চলমান সীমান্ত বিরোধের প্রেক্ষাপটে এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এমকিউ-৯ প্রিডেটর: এক নজরে
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই ড্রোন ‘এমকিউ-৯ রিপার’ নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক ড্রোন, যা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইতালি, ফ্রান্স এবং স্পেনের বিমান বাহিনী ব্যবহার করে আসছে। এখন ভারতও এই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে।
এমকিউ-৯ ড্রোনের বৈশিষ্ট্যগুলো অত্যন্ত উন্নত। এটি ২৭ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আকাশে উড়তে সক্ষম এবং ৫০ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে। এই ড্রোনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৪৪২ কিলোমিটার এবং এটি বিভিন্ন আবহাওয়াতেও কার্যকর।
শিকারি ড্রোনের সামরিক সক্ষমতা
এই ড্রোনের বিশেষ ক্ষমতা হলো নিঃশব্দে শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালানো। ড্রোনটি বায়ু থেকে মাটিতে এবং বায়ু থেকে বায়ুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এটি ১৭ হাজার কেজি পর্যন্ত কার্গো বহন করতে পারে এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ কেজি ওজনের বোমা বহনে সক্ষম।
এই ড্রোনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা হলো এটি শত্রু শিবিরে হানা দিতে পারে এবং তার উপস্থিতি প্রায় অদৃশ্য রাখতে পারে। তালেবান, আল-কায়েদার নেতারা এবং ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যার জন্য এই ড্রোনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে শোনা যায়। এর মাধ্যমে ভারত আরও আধুনিক সামরিক শক্তির অধিকারী হয়ে উঠবে।
৭,৫০০ কিলোমিটার উপকূল রেখায় নজরদারি
ভারত এই ড্রোন ব্যবহার করে ৭,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রেখা বরাবর নজরদারি করতে পারবে। ভারতের বিশাল উপকূলীয় অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এই ড্রোনগুলো অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ভারতে ৪টি বিশেষ জায়গায় এই ড্রোনগুলো মোতায়েন করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো চেন্নাইয়ের কাছে অবস্থিত আইএনএস রাজালি, যা ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি। এছাড়া গুজরাটের পোরবন্দর, সারসাওয়া, ও উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরেও ড্রোনগুলো মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত উন্নয়ন
চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে এই ড্রোনগুলোর ক্রয় ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এই ড্রোন ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। চীনের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমাগত নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছে, এবং এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নৌবাহিনী ও সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। এই চুক্তি তারই উদাহরণ। দুই দেশের মধ্যে এমন কৌশলগত অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে, যা ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও উন্নত করবে। কোয়াড বৈঠকের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও গভীর হতে শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমকিউ-৯বি শিকারি ড্রোনের ক্রয় একটি বিশাল অগ্রগতি। এটি শুধু ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কৌশলগত অবস্থানকেও আরও উন্নত করবে।
বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আধুনিক এমকিউ-৯ প্রিডেটর ড্রোন ক্রয় করবে ভারত
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক এমকিউ-৯বি প্রিডেটর, বা শিকারি ড্রোন কেনার জন্য ৩২ হাজার কোটি রুপির বিশাল এক চুক্তি সম্পন্ন করেছে ভারত। এই চুক্তির অধীনে শিগগিরই এই ড্রোনগুলো ভারতীয় সামরিক বাহিনীর হাতে আসবে, যা ভারতের সামরিক কৌশলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
নৌ, স্থল ও বিমান বাহিনীর জন্য শক্তিশালী ড্রোন
ভারতীয় নৌবাহিনী এই চুক্তির অধীনে ১৫টি ‘সিগার্ডিয়ান’ শিকারি ড্রোন পাবে। অন্যদিকে, ভারতীয় বিমান বাহিনী ও স্থলবাহিনী পাবে ৮টি করে ‘স্কাইগার্ডিয়ান’ শিকারি ড্রোন। এনডিটিভি সূত্রে জানা যায়, এই ড্রোনগুলো ভারতের সামরিক বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করবে, যা তাদের বিভিন্ন সুরক্ষা ও নজরদারি মিশনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষতা নিশ্চিত করবে।
মোদী-বাইডেনের বৈঠকের ফলাফল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই বৈঠকটি ডেলাওয়ারে কোয়াড বৈঠকের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হয়, এবং তখনই দুই দেশের মধ্যে এই ঐতিহাসিক ড্রোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে এই উন্নয়ন এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের কাছে এই ড্রোন পাওয়ার মাধ্যমে তাদের সামরিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে এবং চীনের সঙ্গে চলমান সীমান্ত বিরোধের প্রেক্ষাপটে এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এমকিউ-৯ প্রিডেটর: এক নজরে
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই ড্রোন ‘এমকিউ-৯ রিপার’ নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক ড্রোন, যা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইতালি, ফ্রান্স এবং স্পেনের বিমান বাহিনী ব্যবহার করে আসছে। এখন ভারতও এই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে।
এমকিউ-৯ ড্রোনের বৈশিষ্ট্যগুলো অত্যন্ত উন্নত। এটি ২৭ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আকাশে উড়তে সক্ষম এবং ৫০ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে। এই ড্রোনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৪৪২ কিলোমিটার এবং এটি বিভিন্ন আবহাওয়াতেও কার্যকর।
শিকারি ড্রোনের সামরিক সক্ষমতা
এই ড্রোনের বিশেষ ক্ষমতা হলো নিঃশব্দে শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালানো। ড্রোনটি বায়ু থেকে মাটিতে এবং বায়ু থেকে বায়ুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এটি ১৭ হাজার কেজি পর্যন্ত কার্গো বহন করতে পারে এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ কেজি ওজনের বোমা বহনে সক্ষম।
এই ড্রোনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা হলো এটি শত্রু শিবিরে হানা দিতে পারে এবং তার উপস্থিতি প্রায় অদৃশ্য রাখতে পারে। তালেবান, আল-কায়েদার নেতারা এবং ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যার জন্য এই ড্রোনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে শোনা যায়। এর মাধ্যমে ভারত আরও আধুনিক সামরিক শক্তির অধিকারী হয়ে উঠবে।
৭,৫০০ কিলোমিটার উপকূল রেখায় নজরদারি
ভারত এই ড্রোন ব্যবহার করে ৭,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রেখা বরাবর নজরদারি করতে পারবে। ভারতের বিশাল উপকূলীয় অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এই ড্রোনগুলো অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ভারতে ৪টি বিশেষ জায়গায় এই ড্রোনগুলো মোতায়েন করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো চেন্নাইয়ের কাছে অবস্থিত আইএনএস রাজালি, যা ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি। এছাড়া গুজরাটের পোরবন্দর, সারসাওয়া, ও উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরেও ড্রোনগুলো মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত উন্নয়ন
চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে এই ড্রোনগুলোর ক্রয় ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এই ড্রোন ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। চীনের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমাগত নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছে, এবং এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নৌবাহিনী ও সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। এই চুক্তি তারই উদাহরণ। দুই দেশের মধ্যে এমন কৌশলগত অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে, যা ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও উন্নত করবে। কোয়াড বৈঠকের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও গভীর হতে শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমকিউ-৯বি শিকারি ড্রোনের ক্রয় একটি বিশাল অগ্রগতি। এটি শুধু ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কৌশলগত অবস্থানকেও আরও উন্নত করবে।