মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় এক সপ্তাহ বাকি। এই নির্বাচনের দিকে নজর পুরো বিশ্বের। এবার ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দেশ-বিদেশে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চারদিকে বিস্তর আলোচনা চলছে। এ নিয়ে জল্পনাকল্পনার কমতি নেই।
ফলাফল উল্টো হলে; অর্থাৎ নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে, বিশেষ করে অনেক মার্কিনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। তবে নির্বাচনের শেষ দিকের প্রচারণায় ট্রাম্প কিছুটা লাগামহীন ও বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর ফলে তার অনেক মূলবান ভোট চলে যেতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের ঝুলিতে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
২৭ অক্টোবর রোববার নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে সমাবেশ করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বেশ কিছু ‘অশ্লীল’ এবং ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশটি। এতে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন বন্ধ এবং অভিবাসীদের বিতাড়িত করার পরিকল্পনার কথা বলেন। ট্রাম্প তাদেরকে ‘দুষ্ট ও রক্তপিপাসু’ বলেও অভিহিত করেন।
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘একদিন আমি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাসন কর্মসূচি শুরু করব। আমি প্রতিটি শহর উদ্ধার করব যেগুলো অভিবাসীরা দখল করেছে।’ এ সময় তিনি হ্যারিসকে ‘খুব কম বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেন।
এছাড়া ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী গিউলিয়ানি দাবি করেছিলেন যে, কমলা হ্যারিস ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে ‘সন্ত্রাসীদের পক্ষে’।
গত বৃহস্পতিবার লাস ভেগাসে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা ওবামাকে নোবেল পুরষ্কার দিয়েছে। অথচ ওবামা জানেন না কেন তিনি এটি পেয়েছেন। তিনি হয়তো এখনও জানেন না। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন এবং তারাও ঘোষণা করলেন যে তিনি নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন। আমি অনেক বড় পরিসরে জিতেছি। তারপরও তারা ওবামাকে পুরস্কারটা দিলো।’
এদিকে নর্থ ক্যালোলিনার সমাবেশে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন যে, ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস তার মতো কঠোর পরিশ্রম করছেন না। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তিনি ‘ক্ষিপ্র’ বলে প্রশংসা করেছেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এ রিয়েল জার্ক (নিষ্ঠুর ব্যক্তি) বলে মন্তব্য করেছেন।
আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে তার অনেক ভোট হাতছাড়া হতে পারে। অথচ এই নির্বাচন ইতিহাসে হোয়াইট হাউজের জন্য সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে, এক প্রতিবেদনে বলছে রয়টার্স।
নির্বাচনী জরিপগুলোতেও দেখা গেছে, এই প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র হতে যাচ্ছে যে, এর ফলাফল বেশ কয়েকটি প্রতিযোগী রাজ্যে মাত্র কয়েক হাজার ভোটের উপর নির্ভর করবে।
অ্যারিজোনায় ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘ভেতরের শত্রু’ বলে নিন্দা করেছেন। তরুণীদের হত্যা ও ধর্ষণের গ্রাফিক বিবরণ, ছোট শহর দখল করে নেয়া সহিংস গ্যাংদলগুলোর মিথ্যা গল্প এবং অভিবাসীদের চুরি করে পোষা প্রাণী খাওয়ার মতো মন্তব্যও এসেছে তার মুখ থেকে।
গত শুক্রবার পডকাস্টার জো রোগানের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘মঙ্গলে প্রাণ থাকতে পারে’; যদিও রোগান উল্লেখ করেছেন, তদন্তে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও দাবি করেছেন, উইন্ডমিলগুলো (বায়ুকল) তিমিদের বেঁচে থাকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদিও ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, বিশালাকার তিমির মৃত্যুর সঙ্গে উইন্ডমিলগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। যা এখন পর্যন্ত মেনে নিতে পারেননি ট্রাম্প। পরাজয় মেনে নিতে ট্রাম্পের এই অস্বীকৃতি মার্কিন জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিভক্তি তৈরি করে। তার আহ্বানে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তারই ‘উগ্র সমর্থকরা’ মার্কিন কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) হামলা চালান। এই সহিংস হামলার উদ্দেশ্য ছিল, কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকানো।
মার্কিন গণতন্ত্রে অবিশ্বাসের বীজ বপনের বিষয়ে ট্রাম্পের অব্যাহত চেষ্টা দেশটির ভোটারদের মনে আশঙ্কা জাগাচ্ছে। আর সেই আশঙ্কা হলো, আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলে ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নেইম্যান বলেন, এবার যদি তিনি (ট্রাম্প) হেরে যান, তাহলে আবার যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলবেন, সে বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। আর ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা তিনি করবেন না। এছাড়া কমলা হ্যারিসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেবেন না। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি কখনোই পরাজয় মেনে নেবেন না।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ভয় হলো, উইসকনসিনের ম্যাডিসন, মিশিগানের ল্যান্সিং কিংবা পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গে ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকেরা সহিংসতার ঘটনা ঘটাতে পারেন।’ ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ডের যে ইতিহাস তা বলছে, আসন্ন নির্বাচনে তার প্রতারণার চেষ্টা করা কোনো অমূলক বিষয় নয়।
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় এক সপ্তাহ বাকি। এই নির্বাচনের দিকে নজর পুরো বিশ্বের। এবার ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দেশ-বিদেশে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চারদিকে বিস্তর আলোচনা চলছে। এ নিয়ে জল্পনাকল্পনার কমতি নেই।
ফলাফল উল্টো হলে; অর্থাৎ নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে, বিশেষ করে অনেক মার্কিনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। তবে নির্বাচনের শেষ দিকের প্রচারণায় ট্রাম্প কিছুটা লাগামহীন ও বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর ফলে তার অনেক মূলবান ভোট চলে যেতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের ঝুলিতে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
২৭ অক্টোবর রোববার নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে সমাবেশ করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বেশ কিছু ‘অশ্লীল’ এবং ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশটি। এতে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন বন্ধ এবং অভিবাসীদের বিতাড়িত করার পরিকল্পনার কথা বলেন। ট্রাম্প তাদেরকে ‘দুষ্ট ও রক্তপিপাসু’ বলেও অভিহিত করেন।
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘একদিন আমি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাসন কর্মসূচি শুরু করব। আমি প্রতিটি শহর উদ্ধার করব যেগুলো অভিবাসীরা দখল করেছে।’ এ সময় তিনি হ্যারিসকে ‘খুব কম বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেন।
এছাড়া ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী গিউলিয়ানি দাবি করেছিলেন যে, কমলা হ্যারিস ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে ‘সন্ত্রাসীদের পক্ষে’।
গত বৃহস্পতিবার লাস ভেগাসে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা ওবামাকে নোবেল পুরষ্কার দিয়েছে। অথচ ওবামা জানেন না কেন তিনি এটি পেয়েছেন। তিনি হয়তো এখনও জানেন না। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন এবং তারাও ঘোষণা করলেন যে তিনি নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন। আমি অনেক বড় পরিসরে জিতেছি। তারপরও তারা ওবামাকে পুরস্কারটা দিলো।’
এদিকে নর্থ ক্যালোলিনার সমাবেশে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন যে, ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস তার মতো কঠোর পরিশ্রম করছেন না। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তিনি ‘ক্ষিপ্র’ বলে প্রশংসা করেছেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এ রিয়েল জার্ক (নিষ্ঠুর ব্যক্তি) বলে মন্তব্য করেছেন।
আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে তার অনেক ভোট হাতছাড়া হতে পারে। অথচ এই নির্বাচন ইতিহাসে হোয়াইট হাউজের জন্য সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে, এক প্রতিবেদনে বলছে রয়টার্স।
নির্বাচনী জরিপগুলোতেও দেখা গেছে, এই প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র হতে যাচ্ছে যে, এর ফলাফল বেশ কয়েকটি প্রতিযোগী রাজ্যে মাত্র কয়েক হাজার ভোটের উপর নির্ভর করবে।
অ্যারিজোনায় ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ‘ভেতরের শত্রু’ বলে নিন্দা করেছেন। তরুণীদের হত্যা ও ধর্ষণের গ্রাফিক বিবরণ, ছোট শহর দখল করে নেয়া সহিংস গ্যাংদলগুলোর মিথ্যা গল্প এবং অভিবাসীদের চুরি করে পোষা প্রাণী খাওয়ার মতো মন্তব্যও এসেছে তার মুখ থেকে।
গত শুক্রবার পডকাস্টার জো রোগানের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘মঙ্গলে প্রাণ থাকতে পারে’; যদিও রোগান উল্লেখ করেছেন, তদন্তে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও দাবি করেছেন, উইন্ডমিলগুলো (বায়ুকল) তিমিদের বেঁচে থাকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদিও ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, বিশালাকার তিমির মৃত্যুর সঙ্গে উইন্ডমিলগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। যা এখন পর্যন্ত মেনে নিতে পারেননি ট্রাম্প। পরাজয় মেনে নিতে ট্রাম্পের এই অস্বীকৃতি মার্কিন জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিভক্তি তৈরি করে। তার আহ্বানে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তারই ‘উগ্র সমর্থকরা’ মার্কিন কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) হামলা চালান। এই সহিংস হামলার উদ্দেশ্য ছিল, কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকানো।
মার্কিন গণতন্ত্রে অবিশ্বাসের বীজ বপনের বিষয়ে ট্রাম্পের অব্যাহত চেষ্টা দেশটির ভোটারদের মনে আশঙ্কা জাগাচ্ছে। আর সেই আশঙ্কা হলো, আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলে ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নেইম্যান বলেন, এবার যদি তিনি (ট্রাম্প) হেরে যান, তাহলে আবার যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলবেন, সে বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। আর ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা তিনি করবেন না। এছাড়া কমলা হ্যারিসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেবেন না। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি কখনোই পরাজয় মেনে নেবেন না।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ভয় হলো, উইসকনসিনের ম্যাডিসন, মিশিগানের ল্যান্সিং কিংবা পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গে ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকেরা সহিংসতার ঘটনা ঘটাতে পারেন।’ ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ডের যে ইতিহাস তা বলছে, আসন্ন নির্বাচনে তার প্রতারণার চেষ্টা করা কোনো অমূলক বিষয় নয়।