alt

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন : নেটো-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ

সংবাদ ডেস্ক : বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

দিন যত যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ঘণ্টা ধ্বনি ততই তীব্র হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সব জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস নিয়ে হোয়াইট হাউজের দৌড়ের শেষদিকের কোটায় পা রাখছেন দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস।

এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হন আর তার কী প্রভাব ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মহাদেশের নিরাপত্তায় পড়ে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ। বিশ্লেষণধর্মী এক প্রতিবেদনে এসবই তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার স্টাব রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। কারণ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই নির্বাচনের একটা প্রভাব আছে।’

ইউক্রেন এবং ইউরোপের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে অনেক ইউরোপীয় কর্মকর্তাই বলেন, তারা রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আবার ক্ষমতায় আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির আমলে ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক টালমাটাল ছিল। তিনি পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াই নিয়েও তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল দোদুল্যমান।

ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কোনোরকম অবসান, যাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন জয় হিসেবেই দেখেন.. সেই যুদ্ধের অবসানে তিনি নেটো দেশগুলোকে আক্রমণ করতে উৎসাহী হয়ে উঠতে পারেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এই দশক শেষেই রাশিয়া এমন কিছু করে বসার অবস্থায় চলে যেতে পারে বলে এ মাসে সতর্ক করেছেন জার্মানির এক গোয়েন্দা প্রধান। যদিও পুতিন বরাবরই নেটো দেশগুলোতে হামলা চালানোর ইচ্ছার কথা অস্বীকার করে আসছেন।

সম্প্রতি রয়টার্স ইউক্রেন পরিস্থিতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে ২০ জনেরও বেশি ঊর্ধ্বতন ইউরোপীয় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন মিত্রের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেছেন।

তাদের সবারই মন্তব্যের মূল সুর হচ্ছে : অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে যার সম্পর্কে আগে থেকে কিছু আঁচ করা যায় না সেরকম কেউ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে থাকলে এই অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়, যেমনটি ছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২০২১)।

চলতি মাসে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেই যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেছেন। যদিও ইউক্রেনে যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে।

ট্রাম্প বলেছেন, আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জিতলে একদিনেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। এমনকি তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগেও সেটি হতে পারে। তবে তিনি কীভাবে তা করবেন সেটা বলেননি। আবার ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চান না এমন কথাও ট্রাম্প বলেননি।

তবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস নির্বাচনে জয়ী হলে ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার নীতি অব্যাহত রাখবেন, আবার উত্তেজনা বৃদ্ধিও এড়িয়ে চলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের তীব্র সমালোচক কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে জিতলে যুদ্ধে ইউক্রেনের হাতই শক্তিশালী রাখা এবং ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জন নিশ্চিত করার জন্য তিনি কাজ করবেন। যদিও ইউক্রেন নিয়ে বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা এখনও করেননি তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইউক্রেন ও এর ইউরোপীয় সমর্থকরা একটি কঠিন সময় পার করছে। মস্কোর সেনাবাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে লড়াইয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো তুমুল রুশ হামলায় তছনছ হওয়ার পর সামনে আসছে শীতের এক কঠিন সময়।

ইউরোপের দেশগুলোতেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি মহাদেশজুড়ে সরকারি আর্থিক খাতে টানাপোড়েন অবস্থা। রাশিয়াবান্ধব জনবাদী রাজনৈতিক দলগুলো সম্প্রতি কয়েক মাসে অস্ট্রিয়া, পূর্ব জার্মানি এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভালো ফল করেছে।

নেটো জোটভুক্ত একটি দেশের এক কূটনীতিক বলেছেন, ‘যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে ততই ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। কারণ, অনেকেই তখন বলতে থাকবে আমরা কেন এ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছি? এ যুদ্ধ এক বিশাল পেষণযন্ত্র।’

সেরকম ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে হঠাৎ নীতির পরিবর্তন ঘটে গেলে প্রধান যে পদক্ষেপটি ইউক্রেনের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে ইউরোপ আশা করছে তা হলো- রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের মুনাফা কাজে লাগানো। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার জব্দ করা আর্থিক সম্পদ থেকে যে আয় হচ্ছে তা থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত জুনেই সম্মত হয়েছিল শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭।

ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য জি-৭ এই অর্থ দিতে রাজি হয়। গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বোঝাপড়া হয়েছে। এই চুক্তির ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও এই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনতে পারবে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটি।

এর পাশাপাশি ইউক্রেনকে সমন্বিতভাবে সহায়তা দেয়ার জন্য নেটো জোট একটি কমান্ডও প্রতিষ্ঠা করছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিশেষ কোয়ালিশনের কাছ থেকে বেশিরভাগ কাজের দায়িত্বই নিয়ে নিয়েছে তারা।

যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, নেটো সামরিক কাঠামোর আওতায় তাদের এই প্রচেষ্টা হঠাৎ কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবে। তবে নেটোতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য থাকায় এ চেষ্টা কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

জনসম্মুখে বক্তব্যে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ট্রাম্প ও তার সমর্থকদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধে পুতিন জয় পেলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল প্রতিপন্ন করবে এবং আমেরিকার শক্তিমত্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে উৎসাহী হয়ে উঠবে রাশিয়া এবং চীন।

অন্যদিকে, নেটো মহাসচিব মার্ক রুত্তে এ মাসে ট্রাম্পের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, ‘ট্রাম্প মনে করেন যুদ্ধটা কেবল ইউক্রেনের বিষয় নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সুরক্ষারও বিষয়।’

ট্রাম্প এবং হ্যারিস দু’জনই সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেছিলেন। জেলেনস্কি প্রকাশ্যে এই দুই প্রার্থীর কারও পক্ষেই কথা বলেননি। তবে বৈঠকের পর তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকার সরাসরি ইউক্রেন নিয়ে একটি বোঝাপড়া আছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। আর যুদ্ধ অবশ্যই সুষ্ঠুভাবে বন্ধ হতে হবে, যাতে কোনো আগ্রাসী শক্তি কখনও এমন করতে না পারে, যা আজ রাশিয়া করছে।’

ওদিকে, ইউরোপীয় সব দেশের নেতাই যে ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বিগ্ন তা নয়। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবার্ন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিত্র। ট্রাম্পের মতো তিনিও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরোধী। ট্রাম্প যে তার মতো একই মতো পোষণ করেন সে বিষয়টিও স্পষ্ট করে বলেছেন ওরবার্ন।

এর বিপরীতে কিছু ইউক্রেনীয় ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর কর্মকর্তাদের ধারণা, ট্রাম্পের প্রস্তাব করা কোনো চুক্তি রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করলে বা ফিরিয়ে দিলে তিনি বাইডেনের নির্ধারিত সীমাও ছাড়িয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প ইউক্রেইনকে আরও দূর-পাল্লার অস্ত্র দিতে পারেন এবং রাশিয়ার ভূ-খ-ের অনেক ভেতরে হামলা চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিতে পারেন।

ছবি

প্রথম ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সারা ম্যাকব্রাইড

চমৎকার জয়, অ্যামেরিকাকে আবারও মহান বানানোর সুযোগ: ট্রাম্প

ছবি

না, যুক্তরাষ্ট্র এখনও নারী নেতৃত্বে রাজি না

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন মোদি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প

ছবি

নির্বাচনের রাতে দুঃসংবাদের ভিড়ে কথা বলবেন না কমলা

ছবি

জনতার দুর্দান্ত বিজয়, এটি আমেরিকাকে মহান বানানোর সুযোগ: ট্রাম্প

ছবি

সব অঙ্গরাজ্যে ভোট শেষ, এখন আনুষ্ঠানিক ফলাফলের অপেক্ষা

ছবি

বিজয় ঘোষণা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্প না হ্যারিস, কার জয়ে কার কী লাভ

ছবি

ভোট শেষ, ফলাফল জানতে কত দেরি

ছবি

শেষ ভাষণে তরুণ ভোটারদের কাছে ভোট চাইলেন কমালা হ্যারিস

ছবি

বাংলাদেশিদের নিয়ে ফের তোপ দাগলেন নরেন্দ্র মোদি

ছবি

ঐতিহাসিক এক ভোটের দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

গাধা না হাতি, মার্কিনিরা বেছে নিবেন কাকে

ছবি

বিশ্ব ব্যবস্থা নির্ধারণের ভোটযুদ্ধ আজ

ছবি

ইরানে ছাদবিহীন উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, বিপ্লবী জেনারেলসহ নিহত ২

ছবি

‘কেউই আমাদের কথা ভাবেন না’—মার্কিন নির্বাচন নিয়ে পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের অনুভূতি

ছবি

গাজা যুদ্ধের অবসানে সব কিছুই করব : কমালা হ্যারিস

ছবি

উত্তরাখণ্ডে বাস গিরিসঙ্কটে পড়ে ৩৬ জন নিহত, আহত ও নিখোঁজ অনেক

ছবি

শিশুদের মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা নাইজেরিয়ায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৩১

ছবি

ভুয়া ভিডিও: অভিযোগ রাশিয়ার দিকে, সতর্কবার্তা এফবিআইয়ের

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু

ছবি

তেল আবিবে ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে রকেট হামলা হিজবুল্লাহর

ছবি

বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, চতুর্থ অবস্থানে ঢাকা

ছবি

জাপানে ১২৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো অক্টোবরের তাপমাত্রা

ছবি

গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

ছবি

ট্রাম্প না কমলা, কার দিকে ঝুঁকছেন অভিবাসীরা

ছবি

৫ নভেম্বর নয়, দোদুল্যমান ৭ রাজ্যের ভোটের পরই চূড়ান্ত ফল

ছবি

সীমান্তের এক ইঞ্চি জমি নিয়েও আপস করবে না ভারত: মোদী

ছবি

ট্রাম্প-কমলা ছাড়াও প্রার্থী হিসেবে আছেন যারা

ছবি

ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ খামেনির না

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪৬ জন নিহত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা

ছবি

কমলা জয়ী হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে: ট্রাম্প

tab

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন : নেটো-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ

সংবাদ ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

দিন যত যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ঘণ্টা ধ্বনি ততই তীব্র হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সব জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস নিয়ে হোয়াইট হাউজের দৌড়ের শেষদিকের কোটায় পা রাখছেন দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস।

এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হন আর তার কী প্রভাব ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মহাদেশের নিরাপত্তায় পড়ে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ। বিশ্লেষণধর্মী এক প্রতিবেদনে এসবই তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার স্টাব রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। কারণ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই নির্বাচনের একটা প্রভাব আছে।’

ইউক্রেন এবং ইউরোপের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে অনেক ইউরোপীয় কর্মকর্তাই বলেন, তারা রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আবার ক্ষমতায় আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির আমলে ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক টালমাটাল ছিল। তিনি পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াই নিয়েও তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল দোদুল্যমান।

ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কোনোরকম অবসান, যাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন জয় হিসেবেই দেখেন.. সেই যুদ্ধের অবসানে তিনি নেটো দেশগুলোকে আক্রমণ করতে উৎসাহী হয়ে উঠতে পারেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এই দশক শেষেই রাশিয়া এমন কিছু করে বসার অবস্থায় চলে যেতে পারে বলে এ মাসে সতর্ক করেছেন জার্মানির এক গোয়েন্দা প্রধান। যদিও পুতিন বরাবরই নেটো দেশগুলোতে হামলা চালানোর ইচ্ছার কথা অস্বীকার করে আসছেন।

সম্প্রতি রয়টার্স ইউক্রেন পরিস্থিতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে ২০ জনেরও বেশি ঊর্ধ্বতন ইউরোপীয় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন মিত্রের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেছেন।

তাদের সবারই মন্তব্যের মূল সুর হচ্ছে : অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে যার সম্পর্কে আগে থেকে কিছু আঁচ করা যায় না সেরকম কেউ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে থাকলে এই অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়, যেমনটি ছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২০২১)।

চলতি মাসে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেই যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেছেন। যদিও ইউক্রেনে যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে।

ট্রাম্প বলেছেন, আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জিতলে একদিনেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। এমনকি তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগেও সেটি হতে পারে। তবে তিনি কীভাবে তা করবেন সেটা বলেননি। আবার ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চান না এমন কথাও ট্রাম্প বলেননি।

তবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস নির্বাচনে জয়ী হলে ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার নীতি অব্যাহত রাখবেন, আবার উত্তেজনা বৃদ্ধিও এড়িয়ে চলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের তীব্র সমালোচক কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে জিতলে যুদ্ধে ইউক্রেনের হাতই শক্তিশালী রাখা এবং ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জন নিশ্চিত করার জন্য তিনি কাজ করবেন। যদিও ইউক্রেন নিয়ে বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা এখনও করেননি তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইউক্রেন ও এর ইউরোপীয় সমর্থকরা একটি কঠিন সময় পার করছে। মস্কোর সেনাবাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে লড়াইয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো তুমুল রুশ হামলায় তছনছ হওয়ার পর সামনে আসছে শীতের এক কঠিন সময়।

ইউরোপের দেশগুলোতেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি মহাদেশজুড়ে সরকারি আর্থিক খাতে টানাপোড়েন অবস্থা। রাশিয়াবান্ধব জনবাদী রাজনৈতিক দলগুলো সম্প্রতি কয়েক মাসে অস্ট্রিয়া, পূর্ব জার্মানি এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভালো ফল করেছে।

নেটো জোটভুক্ত একটি দেশের এক কূটনীতিক বলেছেন, ‘যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে ততই ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। কারণ, অনেকেই তখন বলতে থাকবে আমরা কেন এ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছি? এ যুদ্ধ এক বিশাল পেষণযন্ত্র।’

সেরকম ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে হঠাৎ নীতির পরিবর্তন ঘটে গেলে প্রধান যে পদক্ষেপটি ইউক্রেনের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে ইউরোপ আশা করছে তা হলো- রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের মুনাফা কাজে লাগানো। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার জব্দ করা আর্থিক সম্পদ থেকে যে আয় হচ্ছে তা থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত জুনেই সম্মত হয়েছিল শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭।

ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য জি-৭ এই অর্থ দিতে রাজি হয়। গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বোঝাপড়া হয়েছে। এই চুক্তির ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও এই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনতে পারবে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটি।

এর পাশাপাশি ইউক্রেনকে সমন্বিতভাবে সহায়তা দেয়ার জন্য নেটো জোট একটি কমান্ডও প্রতিষ্ঠা করছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিশেষ কোয়ালিশনের কাছ থেকে বেশিরভাগ কাজের দায়িত্বই নিয়ে নিয়েছে তারা।

যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, নেটো সামরিক কাঠামোর আওতায় তাদের এই প্রচেষ্টা হঠাৎ কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবে। তবে নেটোতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য থাকায় এ চেষ্টা কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

জনসম্মুখে বক্তব্যে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ট্রাম্প ও তার সমর্থকদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধে পুতিন জয় পেলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল প্রতিপন্ন করবে এবং আমেরিকার শক্তিমত্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে উৎসাহী হয়ে উঠবে রাশিয়া এবং চীন।

অন্যদিকে, নেটো মহাসচিব মার্ক রুত্তে এ মাসে ট্রাম্পের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, ‘ট্রাম্প মনে করেন যুদ্ধটা কেবল ইউক্রেনের বিষয় নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সুরক্ষারও বিষয়।’

ট্রাম্প এবং হ্যারিস দু’জনই সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেছিলেন। জেলেনস্কি প্রকাশ্যে এই দুই প্রার্থীর কারও পক্ষেই কথা বলেননি। তবে বৈঠকের পর তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকার সরাসরি ইউক্রেন নিয়ে একটি বোঝাপড়া আছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। আর যুদ্ধ অবশ্যই সুষ্ঠুভাবে বন্ধ হতে হবে, যাতে কোনো আগ্রাসী শক্তি কখনও এমন করতে না পারে, যা আজ রাশিয়া করছে।’

ওদিকে, ইউরোপীয় সব দেশের নেতাই যে ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বিগ্ন তা নয়। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবার্ন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিত্র। ট্রাম্পের মতো তিনিও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরোধী। ট্রাম্প যে তার মতো একই মতো পোষণ করেন সে বিষয়টিও স্পষ্ট করে বলেছেন ওরবার্ন।

এর বিপরীতে কিছু ইউক্রেনীয় ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর কর্মকর্তাদের ধারণা, ট্রাম্পের প্রস্তাব করা কোনো চুক্তি রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করলে বা ফিরিয়ে দিলে তিনি বাইডেনের নির্ধারিত সীমাও ছাড়িয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প ইউক্রেইনকে আরও দূর-পাল্লার অস্ত্র দিতে পারেন এবং রাশিয়ার ভূ-খ-ের অনেক ভেতরে হামলা চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিতে পারেন।

back to top