alt

আন্তর্জাতিক

না, যুক্তরাষ্ট্র এখনও নারী নেতৃত্বে রাজি না

অভূতপূর্ব প্রত্যাবর্তন ট্রাম্পের, শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে ফিরলেন তিনি

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম, ঢাকা : বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে স্ত্রী মেলেনিয়াকে নিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ডনাল্ড ট্রাম্প

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন রিপাবলিক পার্টির ডনাল্ড ট্রাম্প। চার বছর পর তার এই প্রত্যাবর্তনকে অনেকেই ‘অভূতপূর্ব’ বলে মনে করছেন। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জনমত জরিপে আভাস ছিল, ৫ নভেম্বরের ভোটে দুই প্রার্থীর মধ্যে বেশ ‘কঠিন’ লড়াই হবে। এ কারণে ফলাফল জানতেও অনেক সময় লেগে যেতে পারে। তবে স্থানীয় সময়ে ভোর হওয়ার আগেই তা জানা গেছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়নি।

আট বছর আগে, ২০১৬ সালে প্রথম নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ভোটযুদ্ধে নামেন ডেমোক্র্যাটিক হিলারি ক্লিন্টন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সেবারও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। নির্বাচনে ট্রাম্পের চেয়ে বিপুল ভোট পেয়েছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও দেশটির নির্বাচনী ব্যবস্থার মাড়প্যাচের কারণেই হেরে গেছেন দেশটির সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

হিলারি ক্লিনটনের পর নারী নেতৃত্বের অগ্নিশিখা হয়ে হাজির হন কমলা হ্যারিস। জুলাইয়ে নির্বাচনী বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে জো বাইডেনের হেরে যাওয়ার পর আমেরিকান জনগণের ভোট পেতে মাঠে নামেন কমলা। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারলেন না তিনিও। নারী নেতৃত্বে ভরসা রাখতে পারলো না দেশটি।

প্রায় আড়াইশ’ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী প্রেসিডেন্টের মুখ দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র হয়েও কেনো দেশটির নারীরা পিছিয়ে আছে তা অনেককেই বিস্মিত করে। ইউরোপের অনেক দেশেই রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হয়েছেন নারী। তবে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা নিয়ে ব্যাপক সরব যুক্তরাষ্ট্রে এখনও কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি।

মার্কিন নির্বাচনে নারীদের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনও নারীর নেতৃত্ব মেনে নেয়ার অবস্থায় আসেনি আমেরিকার জনগণ। তবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে নারী নেতৃত্বকে মেনে নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তার প্রমাণ, এরই মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড করেছেন কমলা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে সেই প্রবণতা ভুল প্রমাণ করেছে মার্কিনিরা।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর দুই দলের মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন বিল ক্লিন্টন, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হন ডনাল্ড ট্রাম্প। সেবার ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় ক্লিন্টনের। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী দৌড়ে টিকতে পারেননি তিনি। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান ট্রাম্প। তবে ক্লিন্টনের পরাজয়ের পেছনে অনেকেই ‘লিঙ্গ বৈষম্য’কে দায়ী করেছেন। পরের বার ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোটযুদ্ধে লড়াই করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন।

ক্লিন্টনের পরাজয়ের পর পুনরায় একরকম বাধ্য হয়েই নারী প্রার্থী দিতে হয়েছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে। কারণ প্রার্থী হিসেবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সে প্রশ্নœ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেও ছিল। এরপরও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন বাইডেন। তবে বাদ সাধে ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রথম সরাসরি নির্বাচনী বিতর্ক। পরে বাধ্য হয়ে তাকে সরিয়ে প্রার্থী করা হয় তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে।

গত ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, মার্কিনিরা এবারই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেয়ে ইতিহাস করতে যাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে বেশ জনপ্রিয়তাও ছিল কমলা হ্যারিসের। তবে চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। ২০২০ সালের নির্বাচনী ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট, আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেট এমনকি হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভস ডেমোক্র্যাটদের দখলে ছিল। তবে এবার ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটসহ সেনেট ও হাউজ বেহাত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অন্যান্য দেশের তুলনায় জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা বেশি, যা নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। মূলত দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভোট গণনা নারীদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো সংসদীয় ব্যবস্থা থাকলে যুক্তরাষ্ট্রেও নারী নেতৃত্ব এগিয়ে যেতো।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে অন্যন্য রেকর্ড করলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে এই রেকর্ড করেছিলেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। তিনিও মেয়াদ শেষে নির্বাচনে হেরে ফের চার বছর পর জয়ী হন। পরপর নয় বরং দুটি ভিন্ন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ক্লিভল্যান্ড ১৮৯৩ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর এর ১৩১ বছর আগেকার সেই অনবদ্য রেকর্ড ভাঙলেন রিপাবলিকান এই প্রার্থী। তার এই বিজয়কে হোয়াইট হাউসে ‘অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন’ বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

দ্য গার্ডিয়ানের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত ট্রাম্প পেয়েছেন মোট ৭ কোটি ১২ লাখ ৬৮ হাজার ১৪ ভোট (৫১%)। আর হ্যারিস পেয়েছেন ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩৬৯ ভাট (৪৭%)। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো দলের সমর্থক নন, এমন ভোটারের সংখ্যা ডেমোক্র্যাটদেরও ছাড়িয়ে গেছে বলে এডিসন রিসার্চের বুথ ফেরত তথ্য দেখাচ্ছে। এসব ভোটারের সংখ্যা রিপাবলিকানদের সমান ছিল।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে রিপাবলিকান প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান তাদের জয় নিশ্চিত করে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন সিনেট এবার রিপাবলিকানদের দখলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৫২টি আসন নিশ্চিত করেছে রিপাবলিকানরা, আর ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ৪২টি আসন। একই তথ্য দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

তবে শুধু কংগ্রেসেরে উচ্চকক্ষ সিনেটই নয়, নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভসের নিয়ন্ত্রণ পেতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রিপাবলিকানরা এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ২০৩টিতে এগিয়ে থাকার আভাস মিলেছে দলটির। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এগিয়ে আছে ১৮১টিতে।

ছবি

ম্যানহাটনে ইউনাইটেড হেলথকেয়ারের সিইওকে গুলি করে হত্যা

ছবি

বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা: সিরিয়ার হামা শহরে তীব্র লড়াই

ছবি

বাংলাদেশ বিরোধী বিক্ষোভ করায় ভারতের চেন্নাইয়ে আটক ৫০০

ছবি

ভিয়েতনামে বিস্ফোরণে ১২ সেনা নিহত

ছবি

ভারতের পতাকা মাড়ানোর ‘ভাইরাল’ ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি: রিউমার স্ক্যানার

ছবি

বাংলাদেশি রোগী বয়কটের বিরোধিতা করলো ভারতীয় চিকিৎসক সংগঠন

ছবি

গাজাজুড়ে ইসরায়েলের বিমান হামলা, নিহত আরও ৫০

ট্রাম্পের ইউক্রেইন পরিকল্পনা : ছাড়তে হবে ভূখণ্ড, নেটো সদস্যপদও পাওয়া যাবেনা

ছবি

স্বর্ণমন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রীর ওপর হামলা

ছবি

পাকিস্তানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টন চিনি কিনল বাংলাদেশ

ছবি

কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হয়ে যেতে বললেন ট্রাম্প

ছবি

দ. কোরিয়ায় নাটকীয়তা, সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টা পর প্রত্যাহার

ছবি

গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩৬ ফিলিস্তিনি

ছবি

দক্ষিন কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি

ছবি

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় বাংলাদেশি রিক্তা বানু

ছবি

বাংলাদেশি পর্যটকদের থাকতে দেবে না ত্রিপুরার হোটেলগুলো, দেওয়া হবে না কোনো পরিষেবা

ছবি

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলায় ৩ পুলিশ বরখাস্ত, গ্রেপ্তার ৭

ছবি

বাংলাদেশকে ছোট করে বিতর্কিত মন্তব্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের আঘাতে শ্রীলঙ্কা-ভারতে নিহত ২০

ছবি

গাজায় হত্যাযজ্ঞ চলছেই, নিহত আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি

ছবি

বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব মমতার

ছবি

বিদায় বেলায় ছেলেকে ক্ষমা করে বিতর্কে জড়ালেন বাইডেন

ছবি

বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে নতুন করে আদানির সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ

ছবি

গাজায় নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েল, আরও ৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত

ছবি

তামিলনাড়ুতে রাতভর ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের তাণ্ডব, প্রাণহানি-জলাবদ্ধতা

ছবি

এফবিআই প্রধান হিসেবে কাশ প্যাটেলকে বেছে নিলেন ট্রাম্প

ছবি

গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১০০ ফিলিস্তিনি

ছবি

সংখ্যালঘু সহিংসতার ঘটনাগুলোকে ‘মিডিয়ার অতিরঞ্জন’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না : জয়শঙ্কর

ছবি

এই প্রথম যুদ্ধবিরতির পক্ষে বললেন জেলেনস্কি

ছবি

বাংলাদেশিদের চিকিৎসা দেবে না কলকাতার হাসপাতাল

ছবি

হ্যাকারের কবলে ব্যাংক অব উগান্ডা, ১৭ মিলিয়ন ডলার চুরি

ছবি

বাংলাদেশে চ্যানেল বন্ধের ভুয়া খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে

ছবি

ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ভারতের জম্মু-কাশ্মির

ছবি

২৪ ঘণ্টায় ৪৮ প্রাণহানি, গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩০০ পেরোলো

ছবি

পিটিআইয়ের বিক্ষোভের পর ইমরান-বুশরার বিরুদ্ধে ৮ মামলা

ছবি

ট্রাম্প প্রশাসনে মনোনীত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বোমা হামলার হুমকি

tab

আন্তর্জাতিক

না, যুক্তরাষ্ট্র এখনও নারী নেতৃত্বে রাজি না

অভূতপূর্ব প্রত্যাবর্তন ট্রাম্পের, শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে ফিরলেন তিনি

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম, ঢাকা

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে স্ত্রী মেলেনিয়াকে নিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ডনাল্ড ট্রাম্প

বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন রিপাবলিক পার্টির ডনাল্ড ট্রাম্প। চার বছর পর তার এই প্রত্যাবর্তনকে অনেকেই ‘অভূতপূর্ব’ বলে মনে করছেন। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জনমত জরিপে আভাস ছিল, ৫ নভেম্বরের ভোটে দুই প্রার্থীর মধ্যে বেশ ‘কঠিন’ লড়াই হবে। এ কারণে ফলাফল জানতেও অনেক সময় লেগে যেতে পারে। তবে স্থানীয় সময়ে ভোর হওয়ার আগেই তা জানা গেছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়নি।

আট বছর আগে, ২০১৬ সালে প্রথম নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ভোটযুদ্ধে নামেন ডেমোক্র্যাটিক হিলারি ক্লিন্টন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সেবারও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। নির্বাচনে ট্রাম্পের চেয়ে বিপুল ভোট পেয়েছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও দেশটির নির্বাচনী ব্যবস্থার মাড়প্যাচের কারণেই হেরে গেছেন দেশটির সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

হিলারি ক্লিনটনের পর নারী নেতৃত্বের অগ্নিশিখা হয়ে হাজির হন কমলা হ্যারিস। জুলাইয়ে নির্বাচনী বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে জো বাইডেনের হেরে যাওয়ার পর আমেরিকান জনগণের ভোট পেতে মাঠে নামেন কমলা। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারলেন না তিনিও। নারী নেতৃত্বে ভরসা রাখতে পারলো না দেশটি।

প্রায় আড়াইশ’ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী প্রেসিডেন্টের মুখ দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র হয়েও কেনো দেশটির নারীরা পিছিয়ে আছে তা অনেককেই বিস্মিত করে। ইউরোপের অনেক দেশেই রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হয়েছেন নারী। তবে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা নিয়ে ব্যাপক সরব যুক্তরাষ্ট্রে এখনও কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি।

মার্কিন নির্বাচনে নারীদের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনও নারীর নেতৃত্ব মেনে নেয়ার অবস্থায় আসেনি আমেরিকার জনগণ। তবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে নারী নেতৃত্বকে মেনে নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তার প্রমাণ, এরই মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড করেছেন কমলা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে সেই প্রবণতা ভুল প্রমাণ করেছে মার্কিনিরা।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর দুই দলের মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন বিল ক্লিন্টন, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হন ডনাল্ড ট্রাম্প। সেবার ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় ক্লিন্টনের। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী দৌড়ে টিকতে পারেননি তিনি। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান ট্রাম্প। তবে ক্লিন্টনের পরাজয়ের পেছনে অনেকেই ‘লিঙ্গ বৈষম্য’কে দায়ী করেছেন। পরের বার ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোটযুদ্ধে লড়াই করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন।

ক্লিন্টনের পরাজয়ের পর পুনরায় একরকম বাধ্য হয়েই নারী প্রার্থী দিতে হয়েছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে। কারণ প্রার্থী হিসেবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সে প্রশ্নœ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেও ছিল। এরপরও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন বাইডেন। তবে বাদ সাধে ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রথম সরাসরি নির্বাচনী বিতর্ক। পরে বাধ্য হয়ে তাকে সরিয়ে প্রার্থী করা হয় তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে।

গত ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, মার্কিনিরা এবারই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেয়ে ইতিহাস করতে যাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে বেশ জনপ্রিয়তাও ছিল কমলা হ্যারিসের। তবে চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। ২০২০ সালের নির্বাচনী ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট, আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেট এমনকি হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভস ডেমোক্র্যাটদের দখলে ছিল। তবে এবার ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটসহ সেনেট ও হাউজ বেহাত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অন্যান্য দেশের তুলনায় জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা বেশি, যা নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। মূলত দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভোট গণনা নারীদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো সংসদীয় ব্যবস্থা থাকলে যুক্তরাষ্ট্রেও নারী নেতৃত্ব এগিয়ে যেতো।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে অন্যন্য রেকর্ড করলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে এই রেকর্ড করেছিলেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। তিনিও মেয়াদ শেষে নির্বাচনে হেরে ফের চার বছর পর জয়ী হন। পরপর নয় বরং দুটি ভিন্ন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ক্লিভল্যান্ড ১৮৯৩ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর এর ১৩১ বছর আগেকার সেই অনবদ্য রেকর্ড ভাঙলেন রিপাবলিকান এই প্রার্থী। তার এই বিজয়কে হোয়াইট হাউসে ‘অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন’ বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

দ্য গার্ডিয়ানের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত ট্রাম্প পেয়েছেন মোট ৭ কোটি ১২ লাখ ৬৮ হাজার ১৪ ভোট (৫১%)। আর হ্যারিস পেয়েছেন ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩৬৯ ভাট (৪৭%)। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো দলের সমর্থক নন, এমন ভোটারের সংখ্যা ডেমোক্র্যাটদেরও ছাড়িয়ে গেছে বলে এডিসন রিসার্চের বুথ ফেরত তথ্য দেখাচ্ছে। এসব ভোটারের সংখ্যা রিপাবলিকানদের সমান ছিল।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে রিপাবলিকান প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান তাদের জয় নিশ্চিত করে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন সিনেট এবার রিপাবলিকানদের দখলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৫২টি আসন নিশ্চিত করেছে রিপাবলিকানরা, আর ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ৪২টি আসন। একই তথ্য দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

তবে শুধু কংগ্রেসেরে উচ্চকক্ষ সিনেটই নয়, নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিটিভসের নিয়ন্ত্রণ পেতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রিপাবলিকানরা এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ২০৩টিতে এগিয়ে থাকার আভাস মিলেছে দলটির। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এগিয়ে আছে ১৮১টিতে।

back to top