ব্রিটেনের মন্ত্রিসভার সদস্য টিউলিপ সিদ্দিককে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি বিরোধী জোট। লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য টিউলিপ ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, অর্থনৈতিক অপরাধ, অর্থপাচার ও অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার জন্য টিউলিপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজনের কাছ থেকে টিউলিপ লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
টিউলিপ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানানোর পর দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায় ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন (যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি বিরোধী জোট)। অভিযোগ তদন্ত করছেন ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর (স্ট্যান্ডার্ডস ওয়াচডগ) স্যার লাউরি ম্যাগনাস।
*গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব*
যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনগুলোর জোট বলেছে, মন্ত্রীর আচরণবিধি টিউলিপ লঙ্ঘন করেছেন কি না তা স্যার লাউরি খতিয়ে দেখছেন, কিন্তু মন্ত্রীর ‘গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ রয়েছে।
জোটের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক পিটার মুনরো বলেন, ‘মন্ত্রীদের নতুন আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বাসই আমাদের যুগের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা’ এবং ব্রিটিশ রাজনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়েছে তা আচরণবিধির নিরিখে নতুন সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে হাজির হয়েছে। দুর্নীতি দমন বিশেষজ্ঞ হিসেবে এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, তার কার্যভারে এসব স্পর্শকাতর খাতের দায়িত্ব থাকা উচিত নয়।’
টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা গত বছর অগাস্টে ক্ষমতা হারিয়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান। দেশে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। সেখানে টিউলিপের নামও এসেছে।
*রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ*
ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে করা বাংলাদেশের চুক্তিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে টিউলিপের বিরুদ্ধে। ওই প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী জোট বলছে, গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজরের তদন্ত শুরু হওয়া এবং বাংলাদেশে পৃথক তদন্তের আলোকে জোট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, বর্তমানে টিউলিপের ‘গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ রয়েছে। অর্থপাচার বিধিমালার প্রয়োগ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবেলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কাঠামোর দায়িত্বে রয়েছেন আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং এই কাঠামোর অধীনেই বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত শাসকের সঙ্গে তার সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং হাসিনা প্রশাসনের সদস্য ও সংগঠনের সম্পদ জব্দের প্রশ্নে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এই জোট। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সদস্য ও সহযোগীদের সম্পদের সন্দেহজনক গতিবিধির জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করতেও জোট ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
*হাসিনার সহযোগীদের সম্পত্তি*
ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, লন্ডনে খালা শেখ হাসিনার সহযোগীদের সম্পত্তি ব্যবহার নিয়েও টিউলিপ তদন্তের মুখে পড়েছেন।
লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসনের এমপি টিউলিপ তার নির্বাচনি এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করতেন, যেটা তার ছোট বোন আজমিনাকে ‘উপহার’ দিয়েছিলেন মঈন গণি নামের এক আইনজীবী, যিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবিও আছে।
আর টিউলিপ নিজে লন্ডনের ‘কিংস ক্রস’ এলাকায় একটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছেন আবদুল মোতালিফ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে, যার বর্তমান মূল্য ৭ লাখ পাউন্ড। মোতালিফের সঙ্গেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যোগসূত্র থাকার খবর এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে।
*পূর্ণ আস্থা*
ব্রিটিশ মন্ত্রিপরিষদের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি (চ্যান্সেলর অব দ্য ডাচি অব ল্যানকাস্টার) প্যাট ম্যাকফ্যাডেন এর আগে বলেছিলেন, টিউলিপের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে এবং স্যার লরির কাছে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে টিউলিপ সঠিক কাজটিই করেছেন।
তিনি টাইমস রেডিওকে বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমরা যখন নির্বাচনে জয়লাভ করি, তখন আমরা মন্ত্রিদের নতুন আচরণবিধিতে ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিলাম, যাতে এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত শুরু ও তা পরিচালানোর ক্ষমতা তার থাকে। এটাই তিনি করছেন এবং এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার এটাই সঠিক উপায়।
*টিউলিপের চিঠি*
টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মোকাবেলায় চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের চীন সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। স্যার লরির কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেছেন, তিনি যে কোনো ভুল করেননি সে বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।
ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। টিউলিপ সিদ্দিক শেখ রেহানার মেয়ে।
*গণভবনে লেবার পার্টির পোস্টার*
দ্য সানডে টাইমস এক প্রতিবেদনে বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী প্রচারপত্র, ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পোস্টারসহ টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বেশকিছু জিনিস পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদক সরেজমিন গণভবনে গিয়ে, বিদেশি বিশিষ্টজনদের উপহার হিসেবে টিউলিপকে দেওয়া পোশাক-গয়না, দামি কলমের মোড়কসহ নানা জিনিস গণভবনে পড়ে থাকতে দেখেছেন। এসব বিষয় টিউলিপকে নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভরা টিউলিপকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছে
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (সরকারপ্রধান) মুহাম্মদ ইউনূস উঠেন রাষ্ট্রীয় অতিথীভবন যমুনায়।
সম্প্রতি (গত ৯ জানুয়ারি) যমুনায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসকে সাক্ষাৎকার দেন মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে টিউলিপ এসব ‘ডাকাতি’র সুবিধাভোগী, তাহলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
টিউলিপকে ক্ষমা চাওয়ার এবং পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ইউনূস বলেন, ‘আপনি (টিউলিপ) হয়ত তখন উপলব্ধি করতে পারেননি, কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছেন।’
###২১:১৬###
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
ব্রিটেনের মন্ত্রিসভার সদস্য টিউলিপ সিদ্দিককে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি বিরোধী জোট। লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য টিউলিপ ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, অর্থনৈতিক অপরাধ, অর্থপাচার ও অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার জন্য টিউলিপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একজনের কাছ থেকে টিউলিপ লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
টিউলিপ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানানোর পর দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায় ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন (যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি বিরোধী জোট)। অভিযোগ তদন্ত করছেন ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর (স্ট্যান্ডার্ডস ওয়াচডগ) স্যার লাউরি ম্যাগনাস।
*গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব*
যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনগুলোর জোট বলেছে, মন্ত্রীর আচরণবিধি টিউলিপ লঙ্ঘন করেছেন কি না তা স্যার লাউরি খতিয়ে দেখছেন, কিন্তু মন্ত্রীর ‘গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ রয়েছে।
জোটের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক পিটার মুনরো বলেন, ‘মন্ত্রীদের নতুন আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বাসই আমাদের যুগের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা’ এবং ব্রিটিশ রাজনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়েছে তা আচরণবিধির নিরিখে নতুন সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে হাজির হয়েছে। দুর্নীতি দমন বিশেষজ্ঞ হিসেবে এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, তার কার্যভারে এসব স্পর্শকাতর খাতের দায়িত্ব থাকা উচিত নয়।’
টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা গত বছর অগাস্টে ক্ষমতা হারিয়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান। দেশে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। সেখানে টিউলিপের নামও এসেছে।
*রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ*
ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে করা বাংলাদেশের চুক্তিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে টিউলিপের বিরুদ্ধে। ওই প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী জোট বলছে, গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজরের তদন্ত শুরু হওয়া এবং বাংলাদেশে পৃথক তদন্তের আলোকে জোট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, বর্তমানে টিউলিপের ‘গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ রয়েছে। অর্থপাচার বিধিমালার প্রয়োগ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবেলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কাঠামোর দায়িত্বে রয়েছেন আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং এই কাঠামোর অধীনেই বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত শাসকের সঙ্গে তার সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং হাসিনা প্রশাসনের সদস্য ও সংগঠনের সম্পদ জব্দের প্রশ্নে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এই জোট। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সদস্য ও সহযোগীদের সম্পদের সন্দেহজনক গতিবিধির জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করতেও জোট ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
*হাসিনার সহযোগীদের সম্পত্তি*
ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, লন্ডনে খালা শেখ হাসিনার সহযোগীদের সম্পত্তি ব্যবহার নিয়েও টিউলিপ তদন্তের মুখে পড়েছেন।
লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসনের এমপি টিউলিপ তার নির্বাচনি এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করতেন, যেটা তার ছোট বোন আজমিনাকে ‘উপহার’ দিয়েছিলেন মঈন গণি নামের এক আইনজীবী, যিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবিও আছে।
আর টিউলিপ নিজে লন্ডনের ‘কিংস ক্রস’ এলাকায় একটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছেন আবদুল মোতালিফ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে, যার বর্তমান মূল্য ৭ লাখ পাউন্ড। মোতালিফের সঙ্গেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যোগসূত্র থাকার খবর এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে।
*পূর্ণ আস্থা*
ব্রিটিশ মন্ত্রিপরিষদের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি (চ্যান্সেলর অব দ্য ডাচি অব ল্যানকাস্টার) প্যাট ম্যাকফ্যাডেন এর আগে বলেছিলেন, টিউলিপের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে এবং স্যার লরির কাছে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে টিউলিপ সঠিক কাজটিই করেছেন।
তিনি টাইমস রেডিওকে বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমরা যখন নির্বাচনে জয়লাভ করি, তখন আমরা মন্ত্রিদের নতুন আচরণবিধিতে ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিলাম, যাতে এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত শুরু ও তা পরিচালানোর ক্ষমতা তার থাকে। এটাই তিনি করছেন এবং এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার এটাই সঠিক উপায়।
*টিউলিপের চিঠি*
টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মোকাবেলায় চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের চীন সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। স্যার লরির কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেছেন, তিনি যে কোনো ভুল করেননি সে বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।
ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। টিউলিপ সিদ্দিক শেখ রেহানার মেয়ে।
*গণভবনে লেবার পার্টির পোস্টার*
দ্য সানডে টাইমস এক প্রতিবেদনে বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী প্রচারপত্র, ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পোস্টারসহ টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বেশকিছু জিনিস পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদক সরেজমিন গণভবনে গিয়ে, বিদেশি বিশিষ্টজনদের উপহার হিসেবে টিউলিপকে দেওয়া পোশাক-গয়না, দামি কলমের মোড়কসহ নানা জিনিস গণভবনে পড়ে থাকতে দেখেছেন। এসব বিষয় টিউলিপকে নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভরা টিউলিপকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছে
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (সরকারপ্রধান) মুহাম্মদ ইউনূস উঠেন রাষ্ট্রীয় অতিথীভবন যমুনায়।
সম্প্রতি (গত ৯ জানুয়ারি) যমুনায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসকে সাক্ষাৎকার দেন মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে টিউলিপ এসব ‘ডাকাতি’র সুবিধাভোগী, তাহলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
টিউলিপকে ক্ষমা চাওয়ার এবং পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ইউনূস বলেন, ‘আপনি (টিউলিপ) হয়ত তখন উপলব্ধি করতে পারেননি, কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছেন।’
###২১:১৬###