alt

আন্তর্জাতিক

মস্কোর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নমনীয় মনোভাবে দিশাহারা ন্যাটো

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে ১২ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়েছিল। কাগজে-কলমে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা এবং নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাগত জানানোই ছিল ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল এমন একটি দিন, যখন ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় তিন বছর চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ন্যাটোর দৃষ্টিভঙ্গিকে পুরোপুরিভাবে উল্টে দিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এনেছে, যা মস্কোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবির পক্ষে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।

ন্যাটোর জন্য সামনের দিনগুলো যে মসৃণ হবে না, আগে থেকেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। ইউক্রেনের অনুকূল শান্তি চুক্তির প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহের শুরু করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজে বলেছেন, ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড হয়তো কোনো একদিন রাশিয়ার দখলে চলে যেতে পারে। যদিও ট্রাম্পের এই মন্তব্যের ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেননি ইউরোপের নেতারা।

১২ ফেব্রুয়ারি লাটভিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রিস স্প্রুডস বলেছেন, ‘এখন নানা রকম কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খুব স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

সম্মেলন-পূর্ব ব্রিফিংয়ে ফক্স নিউজকে দেওয়া ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের বিষয়ে সিএনএনের করা এক প্রশ্ন পুরোপুরি এড়িয়ে যান ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট। এ সময় তিনি শুধু বলেন, ‘আমরা সব স্তরে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে খুব ভালো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।’

তবে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না–ও হতে পারে। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার ন্যাটো জোটের ঘোষিত একটি নীতিকে রাতারাতি নড়বড়ে পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ন্যাটো একসময় বলেছিল, ইউক্রেনের জন্য জোটটির সদস্যপদ পাওয়ার পথ অপ্রতিরোধ্য।

কিন্তু ন্যাটোর ওই বৈঠকে পিট হেগসেথ স্পষ্টভাবে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের প্রত্যাশাকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছে না যুক্তরাষ্ট্র।

ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দুটি অবস্থান আসলে অসংগতিপূর্ণ নয় বলে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইউরোপের অনেক নেতা।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেছেন, ‘ন্যাটো জোট হিসেবে আমরা সব সময় স্পষ্ট করে বলেছি, ন্যাটোতে ইউক্রেনের ন্যায্য স্থান রয়েছে। তবে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার জন্য কিছুটা সময় লাগবে।’ তবে হেগসেথের ওই মন্তব্য মস্কোর কাছে আত্মসমর্পণের ঝুঁকি তৈরি করে কিনা, সিএনএনের এমন একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান ব্রিটিশ এই কূটনৈতিক।

অন্যদিকে এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হ্যানো পেভকুরও একইভাবে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘হেগসেথের বক্তব্যে কোনো সময়সীমার উল্লেখ ছিল না। তিনি যা বলতে চেয়েছেন...তা হলো, ন্যাটোর সদস্যপদ শান্তি আলোচনার ফলাফল হতে পারে না। তবে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টিও উড়িয়েও দেননি তিনি।’

এটি হোক বা না হোক কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের আগের নীতি থেকে সরে এসে ইউক্রেনের ২০১৪ সালের আগের সীমান্তে ফিরে যাওয়ার উচ্চাভিলাষ বাস্তবসম্মত নয় বলে হেগসেথ যে মন্তব্য করেছেন সেটি হোক, একটি বিষয় স্পষ্ট। লন্ডনের একটি থিঙ্ক ট্যাংক রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সামরিক বিজ্ঞানের পরিচালক ম্যাথিউ স্যাভিল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের কথা না ভেবে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতেই পছন্দ করছে। আর তাদের এসব সিদ্ধান্তের ফল ভোগ করতে হচ্ছে ইউরোপ ও ইউক্রেনকে।’

ম্যাথিউ স্যাভিলের মতে, ইউরোপকে নতুন বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তারা যদি ভেবে থাকে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তাদের রক্ষা করবে, তাহলে তারা ভুল করবে।

ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দিনের শেষ দিকে যখন ন্যাটোর মন্ত্রীরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের উপায় খুঁজছিলেন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন। এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জ্বলন্ত উদাহরণ। আর এ খবরটি ন্যাটোর অনেক নেতাকে হতবাক করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের কাছে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে থেকে সরে যান।

ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া বিবৃতিগুলোর মধ্যে একটি ইউরোপকে কঠিন সত্যের মুখোমুখি করতে পারে। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোয় জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু জোটের এক-তৃতীয়াংশ দেশও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। আর ক্রমেই এই লক্ষ্যমাত্রা অকেজো হয়ে পড়ছে। হেগসেথ ট্রাম্পের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, তিনি বারবার এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়েছেন।

হেগসেথ বলেন, ‘২ শতাংশ যথেষ্ট নয়; ট্রাম্প এটিকে ৫ শতাংশে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়েছেন আর আমিও এতে একমত।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন ভারসাম্যহীন সম্পর্ক আর সহ্য করবে না, যা নির্ভরশীলতাকে আরও বাড়িয়ে করে।’

ন্যাটোর মহাসচিব ও ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুট বলেন, ‘যদি আমরা ২ শতাংশের মধ্যেই আটকে থাকি, তাহলে চার থেকে পাঁচ বছর পর আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব না। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে রাশিয়া নিজেদের শক্তিশালী করলে আমাদেরও নিজেদের শক্তিশালী করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে এমন একজন ন্যাটো মন্ত্রী খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি এ বিষয়ে একমত নন। কিন্তু তাঁরা আসলে কী করেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিলি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, (হেগসেথ) ইউরোপীয় দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা পারি এবং আমরা করব।’

রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের তুলনায় বেশি অস্ত্র তৈরি করছে। এমন অবস্থায় ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে শুধু একমত না হয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াও প্রয়োজন।

ছবি

বাস বিস্ফোরণ: পশ্চিম তীরে সেনা অভিযানের নির্দেশ নেতানিয়াহুর

ছবি

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ খুব বেশি দূরে নয় : ট্রাম্প

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করলেন ট্রাম্প

ছবি

তুতানখামুনের পর প্রথমবারের মতো মিসরে ফারাওয়ের সমাধি আবিষ্কার

ছবি

দিল্লি সরকারের নেতৃত্বে ফের নারী মুখ্যমন্ত্রী

বার্ড ফ্লু : যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার টন ডিম পাঠাচ্ছে তুরস্ক

গাজায় ১১ শতাধিক মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরায়েল

ছবি

জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বললেন ট্রাম্প, তীব্র দ্বন্দ্বে দুই নেতা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার টন ডিম রপ্তানি করছে তুরস্ক

ছবি

চলতি বছরেই যুদ্ধের অবসান চান জেলেনস্কি

ছবি

ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয় : মাহমুদ আব্বাস

ছবি

সীমান্তের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযান, ৩০ জঙ্গি নিহত

ছবি

মাস শেষের আগেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা: ট্রাম্প

ছবি

ঢাকার বাতাস আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

ছবি

ইউক্রেনে ন্যাটো সেনাদের মেনে নেবে না রাশিয়া : ল্যাভরভ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সরাসরি বৈঠক: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরু

ছবি

কানাডায় ৮০ আরোহী নিয়ে অবতরণের সময় উল্টে গেল বিমান

ইউক্রেনে শান্তি রক্ষায় সেনা পাঠাতে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য

আরও শতাধিক অবৈধ ভারতীয়কে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল বৃষ্টি-বন্যায় নিহত ৯, বিদ্যুৎহীন ৪ লাখ মানুষ

মস্কোর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নমনীয় মনোভাবে দিশাহারা নেটো

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপে প্রতিদিনই মিলছে লাশ, বাড়ছে নিহতের সংখ্যা

ছবি

ইউক্রেনে তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার ড্রোন হামলা, শীতে বিপর্যস্ত মানুষ

ছবি

বিশ্বের প্রথম সমকামী ইমাম মুহসীন হেনড্রিক্সকে দক্ষিণ আফ্রিকায় গুলি করে হত্যা

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপে প্রতিদিনই মিলছে লাশ, বাড়ছে নিহতের সংখ্যা

গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও ২৫ প্যালেস্টাইনির লাশ উদ্ধার

ইউক্রেন নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন ইউরোপীয় নেতারা

যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি, ইরানি উড়োজাহাজ নামতে দিল না লেবানন

ইউক্রেনের দুর্লভ খনিজের ৫০ শতাংশ মালিকানা চান ট্রাম্প

ছবি

ভারতে গত দুই দশকে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর যত ঘটনা

ছবি

অস্ত্র ও সেনা সংকটে ইউক্রেন যুদ্ধে কি পিছিয়ে পড়ছে রাশিয়া

ছবি

বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকসহ কর্মস্থলে কেন সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে যান ইলন মাস্ক

ছবি

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পরানো ‘অপমানজনক’ টি–শার্ট পোড়ালেন মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা

ছবি

দিল্লি রেল স্টেশনে পদদলিত হয়ে নিহত ১৮

ছবি

বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অর্থায়ন বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

যুদ্ধবিরতি চুক্তি : হামাসের তিন জিম্মি মুক্তি, বিনিময়ে ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দি ছাড়া

tab

আন্তর্জাতিক

মস্কোর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নমনীয় মনোভাবে দিশাহারা ন্যাটো

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে ১২ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়েছিল। কাগজে-কলমে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা এবং নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাগত জানানোই ছিল ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল এমন একটি দিন, যখন ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় তিন বছর চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ন্যাটোর দৃষ্টিভঙ্গিকে পুরোপুরিভাবে উল্টে দিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এনেছে, যা মস্কোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবির পক্ষে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।

ন্যাটোর জন্য সামনের দিনগুলো যে মসৃণ হবে না, আগে থেকেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। ইউক্রেনের অনুকূল শান্তি চুক্তির প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহের শুরু করেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজে বলেছেন, ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড হয়তো কোনো একদিন রাশিয়ার দখলে চলে যেতে পারে। যদিও ট্রাম্পের এই মন্তব্যের ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেননি ইউরোপের নেতারা।

১২ ফেব্রুয়ারি লাটভিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রিস স্প্রুডস বলেছেন, ‘এখন নানা রকম কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খুব স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

সম্মেলন-পূর্ব ব্রিফিংয়ে ফক্স নিউজকে দেওয়া ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের বিষয়ে সিএনএনের করা এক প্রশ্ন পুরোপুরি এড়িয়ে যান ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট। এ সময় তিনি শুধু বলেন, ‘আমরা সব স্তরে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে খুব ভালো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।’

তবে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না–ও হতে পারে। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার ন্যাটো জোটের ঘোষিত একটি নীতিকে রাতারাতি নড়বড়ে পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ন্যাটো একসময় বলেছিল, ইউক্রেনের জন্য জোটটির সদস্যপদ পাওয়ার পথ অপ্রতিরোধ্য।

কিন্তু ন্যাটোর ওই বৈঠকে পিট হেগসেথ স্পষ্টভাবে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের প্রত্যাশাকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছে না যুক্তরাষ্ট্র।

ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দুটি অবস্থান আসলে অসংগতিপূর্ণ নয় বলে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইউরোপের অনেক নেতা।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেছেন, ‘ন্যাটো জোট হিসেবে আমরা সব সময় স্পষ্ট করে বলেছি, ন্যাটোতে ইউক্রেনের ন্যায্য স্থান রয়েছে। তবে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার জন্য কিছুটা সময় লাগবে।’ তবে হেগসেথের ওই মন্তব্য মস্কোর কাছে আত্মসমর্পণের ঝুঁকি তৈরি করে কিনা, সিএনএনের এমন একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান ব্রিটিশ এই কূটনৈতিক।

অন্যদিকে এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হ্যানো পেভকুরও একইভাবে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘হেগসেথের বক্তব্যে কোনো সময়সীমার উল্লেখ ছিল না। তিনি যা বলতে চেয়েছেন...তা হলো, ন্যাটোর সদস্যপদ শান্তি আলোচনার ফলাফল হতে পারে না। তবে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টিও উড়িয়েও দেননি তিনি।’

এটি হোক বা না হোক কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের আগের নীতি থেকে সরে এসে ইউক্রেনের ২০১৪ সালের আগের সীমান্তে ফিরে যাওয়ার উচ্চাভিলাষ বাস্তবসম্মত নয় বলে হেগসেথ যে মন্তব্য করেছেন সেটি হোক, একটি বিষয় স্পষ্ট। লন্ডনের একটি থিঙ্ক ট্যাংক রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সামরিক বিজ্ঞানের পরিচালক ম্যাথিউ স্যাভিল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের কথা না ভেবে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতেই পছন্দ করছে। আর তাদের এসব সিদ্ধান্তের ফল ভোগ করতে হচ্ছে ইউরোপ ও ইউক্রেনকে।’

ম্যাথিউ স্যাভিলের মতে, ইউরোপকে নতুন বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তারা যদি ভেবে থাকে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তাদের রক্ষা করবে, তাহলে তারা ভুল করবে।

ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দিনের শেষ দিকে যখন ন্যাটোর মন্ত্রীরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের উপায় খুঁজছিলেন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন। এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জ্বলন্ত উদাহরণ। আর এ খবরটি ন্যাটোর অনেক নেতাকে হতবাক করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের কাছে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে থেকে সরে যান।

ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া বিবৃতিগুলোর মধ্যে একটি ইউরোপকে কঠিন সত্যের মুখোমুখি করতে পারে। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোয় জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু জোটের এক-তৃতীয়াংশ দেশও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। আর ক্রমেই এই লক্ষ্যমাত্রা অকেজো হয়ে পড়ছে। হেগসেথ ট্রাম্পের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, তিনি বারবার এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়েছেন।

হেগসেথ বলেন, ‘২ শতাংশ যথেষ্ট নয়; ট্রাম্প এটিকে ৫ শতাংশে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়েছেন আর আমিও এতে একমত।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন ভারসাম্যহীন সম্পর্ক আর সহ্য করবে না, যা নির্ভরশীলতাকে আরও বাড়িয়ে করে।’

ন্যাটোর মহাসচিব ও ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুট বলেন, ‘যদি আমরা ২ শতাংশের মধ্যেই আটকে থাকি, তাহলে চার থেকে পাঁচ বছর পর আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব না। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে রাশিয়া নিজেদের শক্তিশালী করলে আমাদেরও নিজেদের শক্তিশালী করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে এমন একজন ন্যাটো মন্ত্রী খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি এ বিষয়ে একমত নন। কিন্তু তাঁরা আসলে কী করেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিলি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, (হেগসেথ) ইউরোপীয় দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা পারি এবং আমরা করব।’

রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের তুলনায় বেশি অস্ত্র তৈরি করছে। এমন অবস্থায় ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে শুধু একমত না হয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াও প্রয়োজন।

back to top