alt

আন্তর্জাতিক

নির্বাচনে জয়ী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি সিডিইউ-সিএসইউ

জার্মানির সরকার গঠন কীভাবে

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মেৎর্সের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল জোট সিডিইউ-সিএসইউ জয়ী হয়েছে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর চেয়ে বেশ ভালো ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারেনি জোটটি। তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ৩০ শতাংশ পিছিয়ে আছে। ইতোমধ্যে মেৎর্সের জোটের সমর্থকরা বিজয় উদযাপন করছেন। তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন মেৎর্স। তিনি বলেন, ‘চলুন, আজ রাতে উদযাপন করি এবং সকালে আমরা কাজে নেমে পড়ব।’ তাঁর সামনে যে দায়িত্ব রয়েছে, তা তিনি জানেন বলেও উল্লেখ করেন মেৎর্স।

নির্বাচনে অপর বিজয়ী দল হলো কট্টর ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। দলটি ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে রেকর্ড দ্বিতীয় স্থান অর্জনকে উদ্?যাপন করছে। এএফডির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন অ্যালিস ভায়ডেল। যদিও তাঁর দল আরও ভালো ফলাফলের আশা করেছিল। রোববার মধ্যরাতে প্রাথমিক ফলাফল আসতে শুরু হওয়ার পর এএফডিকে অন্য দলগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম জেডডিএফের একটি জরিপ অনুসারে, দলটি ৩৪ শতাংশ ভোট পাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছিল।

এএফডি নেত্রী অ্যালিস ভায়ডেল বলেন, ‘জার্মানরা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।’ ফ্রিডরিখ মেৎর্সের জোট গঠনের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলে বিশ্বাস তাঁর। এ প্রসঙ্গে ভায়ডেল আরও বলেন, ‘নতুন নির্বাচন হবে—আমার মনে হয় না আমাদের আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে।’ নির্বাচনের ফলাফলসংক্রান্ত মানচিত্রে দেখা গেছে, পূর্বদিকের অংশ হালকা নীল রং হয়ে আছে। আর মানচিত্রের বাকি অংশের প্রায় পুরোটাই কালো হয়ে আছে, যা সিডিইউর রং।

গত বছর ওলাফ শলৎজের নেতৃত্বাধীন তিনদলীয় জোট ভেঙে যাওয়ার পর মেৎর্স ভোটারদের কাছে তাঁর দলের জন্য ভোট চান। ওলাফ শলৎজ বলেন, এর মধ্য দিয়ে তিনি চার বছরের মধ্যে স্থবির অর্থনীতি থেকে শুরু করে অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া পর্যন্ত জার্মানির সমস্যাগুলোর যতটা সম্ভব সমাধান করতে পারবেন।

নির্বাচনে জার্মান ভোটারদের বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। ৮৩ শতাংশ ভোটার উপস্থিত ছিলেন। মেৎর্সের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং তাদের জোটভুক্ত দল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ২৮ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি ভোট আশা করেছিল। তবে এত ভোটার উপস্থিতির পরও তারা তা পায়নি।এএফডির সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন মেৎর্স। জার্মানিতে সাধারণত মূলধারার দলগুলোকে কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে জোট করতে দেখা যায় না।

সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের মেৎর্সের জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও এ দল নির্বাচনে তাদের এ যাবৎকালের সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে। দলটি ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা ও বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, নির্বাচনের ফলাফল তাঁর দলের জন্য একটি তিক্ত পরাজয়। তিনি জোট গঠনের আলোচনায় অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সিডিইউর তুলনামূলক দুর্বল ফলাফলের কারণে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুটি দল জোট গঠনের জন্য যথেষ্ট হবে না।

জার্মানিতে বিদায়ী ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদার ছিল গ্রিনস। আর দলটির নেতা রোবার্ত হাবেক। তবে ভোটের আগে মেৎর্সের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি তাঁকে ‘হিট পাম্পের প্রতিনিধি’ হিসেবে উপহাস করেছিলেন। ৬৯ বছর বয়সী মেৎর্স কখনো মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেননি। তবে প্রচারণাকালে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জার্মান চ্যান্সেলর হলে ইউরোপে নেতৃত্ব দেখাবেন এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোরদার করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেৎর্সের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এতে এটাই প্রমাণ হয় যে জার্মানরাও মার্কিন নাগরিকদের মতো করেই কা-জ্ঞানহীন এজেন্ডা, বিশেষ করে জ্বালানি ও অভিবাসন নিয়ে ক্লান্ত।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় মেৎর্সকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাখোঁ লিখেছেন, ‘আমরা ফ্রান্স ও জার্মানির জন্য একসঙ্গে দুর্দান্ত কিছু অর্জন করতে এবং একটি শক্তিশালী ও সার্বভৌম ইউরোপের জন্য কাজ করতে আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও অভিনন্দন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘আমরা জীবনের সুরক্ষা দিতে, ইউক্রেনের প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং ইউরোপকে শক্তিশালী করতে জার্মানির সঙ্গে আমাদের যৌথ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ।’

জার্মানির ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষের দেশ জার্মানিতে ভোটার প্রায় ৫ কোটি ৯২ লাখ। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬ লাখ। আর পুরুষ ভোটার ২ কোটি ৮৬ লাখ। এবারের নির্বাচনে জার্মান পার্লামেন্টের ৬৩০টি আসনের জন্য ২৯টি দল ৪ হাজার ৫০৬ প্রার্থী দিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বার্লিনের অনতিদূরে পটসডামে ভোট দেন। ভবিতব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ভোট দিয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকা হোকসাউরল্যান্ড জেলার আর্নসবার্গে।

চার বছর আগে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন দলের নেতা আঙ্গেলা ম্যার্কেল (সাবেক চ্যান্সেলর) ক্ষমতা থেকে সরে যান। পরে নির্বাচনে জয়লাভ করেন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ওলাফ শলৎজ। তিনি গঠন করেন তিনদলীয় জোট সরকার। এবার নির্বাচনের আগের জরিপগুলোয় দেখা যায়, সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন। এরপর কট্টরবাদী জার্মানির জন্য বিকল্প দল। এরপর রয়েছে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বড় দল সামাজিক গণতান্ত্রিক দল। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে পরিবেশবাদী সবুজ দল। নির্বাচনী জরিপের হিসাবে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎসকে সম্ভাব্য চ্যান্সেলর হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এবারের নির্বাচনে বড় চমক জার্মানির কট্টর রক্ষণশীল ও অভিবাসীবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত অলটারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ড (জার্মানির জন্য বিকল্প) দলটির জরিপে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা।

নির্বাচনকে ঘিরে সারা বিশ্বের দৃষ্টি: জার্মানির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলো আলাদা দৃষ্টিতে দেখছে। এর অন্যতম কারণ হলো এবারের নির্বাচনের আগে থেকেই সদ্য ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রশাসনের একাধিক রাজনীতিক কর্তৃক জার্মান রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। ইউরোপীয় ঐক্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আগামীতে ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক। নির্বাচনের আগের দিন প্রযুক্তি ধনকুবের ও ট্রাম্পের অনুগত পরামর্শদাতা ইলন মাস্ক জার্মানির কট্টরবাদী অল্টানেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটির পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দলটির নেত্রী অ্যালিস ভায়ডেলের সঙ্গে কথোপকথনের অডিওটি শেয়ার করে বলেন, শুধু অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটিই জার্মানিকে বাঁচাতে পারে। জার্মানির অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদেরা এটিকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

মার্কিন গণমাধ্যম জার্মানির এ নির্বাচনকে বৃহত্তম ইউরোপীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে। ফ্রান্সের লে ফিগারো পত্রিকাটি জার্মান-ফরাসি সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেছে। তাদের চোখে সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস জার্মান-ফরাসি জোটের পুনরুজ্জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

ছবি

গাজায় বেড়েই চলেছে প্রাণহানি, ধ্বংসস্তূপে মিলছে একের পর এক লাশ

ছবি

ট্রাম্পের মস্কোঘেঁষা নীতি, উদ্বেগে ইউরোপ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইন খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে

ছবি

বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর

ছবি

ট্রাম্পের ‘অন্যায়’ প্রস্তাবে না বলতে পারবে ইউক্রেন

ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসান হতে পারে ‘এই সপ্তাহে’: হোয়াইট হাউস

ছবি

ফেডারেল কর্মীদের কাজের হিসাব চাইলেন মাস্ক, নইলে চাকরি নেই

সম্প্রচারে ফিরছে আফগান নারীদের রেডিও স্টেশন

ইসরায়েল স্পষ্টত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে

পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থা ‘গুরুতর’: ভ্যাটিকান

চলতি সপ্তাহেই শেষ হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

ছবি

জার্মানির ভোট: কট্টর ডানপন্থিদের প্রবল উত্থান নিয়ে শঙ্কা

ছবি

ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করেছে ইসরায়েল

ছবি

ইলন মাস্ককে ‘আরও আক্রমণাত্মক’ হতে বললেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপে অনবরত মিলছে লাশ, বেড়েই চলেছে নিহতের সংখ্যা

ছবি

ইউক্রেন শিগগিরই খনিজ চুক্তি মেনে নেবে, আশা ট্রাম্পের

ট্রাম্পের নির্দেশে ৫ হাজার ৪০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা পেন্টাগনের

ছবি

বাদুড়ের শরীরে নতুন করোনার সন্ধান, ফের মহামারির শঙ্কা

ছবি

আমাজন শহরে বিশাল সিংকহোল, জরুরি অবস্থা ঘোষণা

ফের যুদ্ধ বাঁধার শঙ্কা কাটল, ইসরায়েলে গেলো সঠিক মরদেহ

মার্কিন সামরিক নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনলেন ট্রাম্প

ছবি

জার্মানিতে নির্বাচন আজ, জোট ছাড়া বিকল্প থাকছে না

ছবি

পেন্টাগনে ট্রাম্পের ঝাঁকুনি, শীর্ষ এক জেনারেল ও নৌপ্রধান বরখাস্ত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী প্রধানকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

ছবি

জেলেনস্কি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নয়, বললেন ট্রাম্প

৫০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা সিআইএর

ছবি

সাগরের তলদেশে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ক্যাবল স্থাপন করছে মেটা

ছবি

মায়ানমারে আরেকটি জান্তা ঘাঁটির পতন, অন্যটি দখলে তীব্র লড়াই

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত ৫০ শিশুকে আশ্রয় দেবে কোস্টারিকা

ছবি

ইউরোপের ক্ষুব্ধ নেতারা কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন

ছবি

বাস বিস্ফোরণ: পশ্চিম তীরে সেনা অভিযানের নির্দেশ নেতানিয়াহুর

ছবি

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ খুব বেশি দূরে নয় : ট্রাম্প

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করলেন ট্রাম্প

ছবি

তুতানখামুনের পর প্রথমবারের মতো মিসরে ফারাওয়ের সমাধি আবিষ্কার

ছবি

দিল্লি সরকারের নেতৃত্বে ফের নারী মুখ্যমন্ত্রী

বার্ড ফ্লু : যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার টন ডিম পাঠাচ্ছে তুরস্ক

tab

আন্তর্জাতিক

নির্বাচনে জয়ী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি সিডিইউ-সিএসইউ

জার্মানির সরকার গঠন কীভাবে

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মেৎর্সের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল জোট সিডিইউ-সিএসইউ জয়ী হয়েছে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর চেয়ে বেশ ভালো ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারেনি জোটটি। তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ৩০ শতাংশ পিছিয়ে আছে। ইতোমধ্যে মেৎর্সের জোটের সমর্থকরা বিজয় উদযাপন করছেন। তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন মেৎর্স। তিনি বলেন, ‘চলুন, আজ রাতে উদযাপন করি এবং সকালে আমরা কাজে নেমে পড়ব।’ তাঁর সামনে যে দায়িত্ব রয়েছে, তা তিনি জানেন বলেও উল্লেখ করেন মেৎর্স।

নির্বাচনে অপর বিজয়ী দল হলো কট্টর ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। দলটি ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে রেকর্ড দ্বিতীয় স্থান অর্জনকে উদ্?যাপন করছে। এএফডির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন অ্যালিস ভায়ডেল। যদিও তাঁর দল আরও ভালো ফলাফলের আশা করেছিল। রোববার মধ্যরাতে প্রাথমিক ফলাফল আসতে শুরু হওয়ার পর এএফডিকে অন্য দলগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম জেডডিএফের একটি জরিপ অনুসারে, দলটি ৩৪ শতাংশ ভোট পাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছিল।

এএফডি নেত্রী অ্যালিস ভায়ডেল বলেন, ‘জার্মানরা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।’ ফ্রিডরিখ মেৎর্সের জোট গঠনের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে বলে বিশ্বাস তাঁর। এ প্রসঙ্গে ভায়ডেল আরও বলেন, ‘নতুন নির্বাচন হবে—আমার মনে হয় না আমাদের আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে।’ নির্বাচনের ফলাফলসংক্রান্ত মানচিত্রে দেখা গেছে, পূর্বদিকের অংশ হালকা নীল রং হয়ে আছে। আর মানচিত্রের বাকি অংশের প্রায় পুরোটাই কালো হয়ে আছে, যা সিডিইউর রং।

গত বছর ওলাফ শলৎজের নেতৃত্বাধীন তিনদলীয় জোট ভেঙে যাওয়ার পর মেৎর্স ভোটারদের কাছে তাঁর দলের জন্য ভোট চান। ওলাফ শলৎজ বলেন, এর মধ্য দিয়ে তিনি চার বছরের মধ্যে স্থবির অর্থনীতি থেকে শুরু করে অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া পর্যন্ত জার্মানির সমস্যাগুলোর যতটা সম্ভব সমাধান করতে পারবেন।

নির্বাচনে জার্মান ভোটারদের বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। ৮৩ শতাংশ ভোটার উপস্থিত ছিলেন। মেৎর্সের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং তাদের জোটভুক্ত দল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ২৮ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি ভোট আশা করেছিল। তবে এত ভোটার উপস্থিতির পরও তারা তা পায়নি।এএফডির সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন মেৎর্স। জার্মানিতে সাধারণত মূলধারার দলগুলোকে কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে জোট করতে দেখা যায় না।

সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের মেৎর্সের জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও এ দল নির্বাচনে তাদের এ যাবৎকালের সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে। দলটি ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা ও বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, নির্বাচনের ফলাফল তাঁর দলের জন্য একটি তিক্ত পরাজয়। তিনি জোট গঠনের আলোচনায় অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সিডিইউর তুলনামূলক দুর্বল ফলাফলের কারণে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুটি দল জোট গঠনের জন্য যথেষ্ট হবে না।

জার্মানিতে বিদায়ী ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদার ছিল গ্রিনস। আর দলটির নেতা রোবার্ত হাবেক। তবে ভোটের আগে মেৎর্সের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি তাঁকে ‘হিট পাম্পের প্রতিনিধি’ হিসেবে উপহাস করেছিলেন। ৬৯ বছর বয়সী মেৎর্স কখনো মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেননি। তবে প্রচারণাকালে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জার্মান চ্যান্সেলর হলে ইউরোপে নেতৃত্ব দেখাবেন এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোরদার করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেৎর্সের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এতে এটাই প্রমাণ হয় যে জার্মানরাও মার্কিন নাগরিকদের মতো করেই কা-জ্ঞানহীন এজেন্ডা, বিশেষ করে জ্বালানি ও অভিবাসন নিয়ে ক্লান্ত।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় মেৎর্সকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাখোঁ লিখেছেন, ‘আমরা ফ্রান্স ও জার্মানির জন্য একসঙ্গে দুর্দান্ত কিছু অর্জন করতে এবং একটি শক্তিশালী ও সার্বভৌম ইউরোপের জন্য কাজ করতে আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও অভিনন্দন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘আমরা জীবনের সুরক্ষা দিতে, ইউক্রেনের প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং ইউরোপকে শক্তিশালী করতে জার্মানির সঙ্গে আমাদের যৌথ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ।’

জার্মানির ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষের দেশ জার্মানিতে ভোটার প্রায় ৫ কোটি ৯২ লাখ। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬ লাখ। আর পুরুষ ভোটার ২ কোটি ৮৬ লাখ। এবারের নির্বাচনে জার্মান পার্লামেন্টের ৬৩০টি আসনের জন্য ২৯টি দল ৪ হাজার ৫০৬ প্রার্থী দিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বার্লিনের অনতিদূরে পটসডামে ভোট দেন। ভবিতব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ভোট দিয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকা হোকসাউরল্যান্ড জেলার আর্নসবার্গে।

চার বছর আগে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন দলের নেতা আঙ্গেলা ম্যার্কেল (সাবেক চ্যান্সেলর) ক্ষমতা থেকে সরে যান। পরে নির্বাচনে জয়লাভ করেন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ওলাফ শলৎজ। তিনি গঠন করেন তিনদলীয় জোট সরকার। এবার নির্বাচনের আগের জরিপগুলোয় দেখা যায়, সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন। এরপর কট্টরবাদী জার্মানির জন্য বিকল্প দল। এরপর রয়েছে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বড় দল সামাজিক গণতান্ত্রিক দল। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে পরিবেশবাদী সবুজ দল। নির্বাচনী জরিপের হিসাবে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎসকে সম্ভাব্য চ্যান্সেলর হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এবারের নির্বাচনে বড় চমক জার্মানির কট্টর রক্ষণশীল ও অভিবাসীবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত অলটারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ড (জার্মানির জন্য বিকল্প) দলটির জরিপে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা।

নির্বাচনকে ঘিরে সারা বিশ্বের দৃষ্টি: জার্মানির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলো আলাদা দৃষ্টিতে দেখছে। এর অন্যতম কারণ হলো এবারের নির্বাচনের আগে থেকেই সদ্য ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রশাসনের একাধিক রাজনীতিক কর্তৃক জার্মান রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। ইউরোপীয় ঐক্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আগামীতে ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক। নির্বাচনের আগের দিন প্রযুক্তি ধনকুবের ও ট্রাম্পের অনুগত পরামর্শদাতা ইলন মাস্ক জার্মানির কট্টরবাদী অল্টানেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটির পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দলটির নেত্রী অ্যালিস ভায়ডেলের সঙ্গে কথোপকথনের অডিওটি শেয়ার করে বলেন, শুধু অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটিই জার্মানিকে বাঁচাতে পারে। জার্মানির অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদেরা এটিকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

মার্কিন গণমাধ্যম জার্মানির এ নির্বাচনকে বৃহত্তম ইউরোপীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে। ফ্রান্সের লে ফিগারো পত্রিকাটি জার্মান-ফরাসি সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেছে। তাদের চোখে সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস জার্মান-ফরাসি জোটের পুনরুজ্জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

back to top