ইসরায়েলের একঘেয়েমি আচরণের কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তা কেটে গেছে। ইসরায়েল ও হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিসরের কায়রোতে দু’পক্ষের বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। ফিলিস্তিনি ৬২০ বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে তেল আবিব। বিনিময়ে চার জিম্মিকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মুক্তি দেবে হামাস।
এদিকে আগামী শনিবার শেষ হতে যাচ্ছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় পর্যায় কার্যকরের জন্য হামাসকে চারটি শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল। শর্তগুলো হলো– সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, হামাসকে গাজা থেকে বিদায় নিতে হবে, গাজা উপত্যকাকে সম্পূর্ণ অস্ত্রমুক্ত করতে হবে এবং গাজার নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে দিতে হবে। আলজাজিরা বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি কারাগারে কমপক্ষে ৫৯ ফিলিস্তিনি বন্দি মারা গেছেন। কারাগারে আটকে রেখে ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে। ইসরায়েলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া মোহাম্মদ আবু তাবিলা বলেন, তাঁর শরীরে এসিড মারা হতো। চোখে শক্ত বস্তু দিয়ে আঘাত করা হতো। ইসরায়েলি সেনাদের নির্যাতনে তাঁর সারা শরীর ঝলসে যায়। নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা। গাজার চিকিৎসক ডা. খালেদ আলসের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
রয়টার্স জানায়, গাজায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলি সাবেক নারী জিম্মি নোয়া আরগামানি। মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর দুর্দশার কথা বর্ণনা করেন এবং যুদ্ধ বন্ধের আবেদন জানান। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৩৪৮ ফিলিস্তিনি ও ১ লাখ ১১ হাজার ৭৬১ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মৃত ধরা হচ্ছে। সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ও দামেস্কের বাইরের অংশে বেশ কয়েকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় অন্তত দু’জন নিহত হয়েছেন। ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটির নতুন সরকার এখন সেনাবাহিনী গঠন ও অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে।
এদিকে,চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে হস্তান্তর করেছে হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে ইসরায়েল মুক্তি দেওয়ার কিছু পরেই এই চার জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীনেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, চারজন জিম্মির মরদেহবাহী কফিন তারা পেয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের মরদেহ শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রামাল্লা থেকে এএফপির সাংবাদিকেরা জানান, তাঁরা ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি কারাবন্দীর দলকে বাস থেকে নেমে যেতে দেখেছেন। সম্ভবত তাঁদের গত সপ্তাহে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক আচরণের’ অভিযোগে ইসরায়েল তাঁদের মুক্তি স্থগিত করেছিল। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। তাঁদের অনেকে বন্ধু বা স্বজনেরা কাঁধে চড়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। অনেক নারীকে আনন্দে কাঁদতে দেখা যায়। ইসরায়েলের কাছে হামাস যে চারজন জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে, তাঁরা হলেন ওহাদ ইয়াহালোমি, সাচি ইদান, ইতজিক এলগারাত ও সোলোমো মনসুর। ইসরায়েলি গণমাধ্যম তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গত শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। তাঁদের সঙ্গে চার জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করে। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। কিন্তু মুক্তি দেওয়ার সময় হামাস জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসম্মানজনক আচরণ’ করছে অভিযোগ তুলে বন্দীদের মুক্তি স্থগিত করে ইসরায়েল। হামাসের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে সেদিন জানানো হয়, আগে ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই কেবল গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করবে হামাস।
জিম্মি ও বন্দিবিনিময়ের মধ্য দিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হতে যাচ্ছে। এখন দুই পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। গাজা যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর একটি যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল রওনা দিয়েছে। স্টিভ উইটকফ এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘(দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে) আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এ জন্য ইসরায়েল একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। এই প্রতিনিধিদল কাতারের রাজধানী দোহা নয়তো মিসরের রাজধানী কায়রোয় যাবে, যেখানে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আবার আলোচনা শুরু হবে।’
এদিকে,গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে সেনা অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ অভিযানে ইতোমধ্যে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহর-গ্রামে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডুজারিক বলেন, “আনরোয়া (ইউ এন রিলিফ এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইনিয়ান রেফিউজিস) মহাপরিচালক ফিলিপ ল্যাজারিনি’র একটি বক্তব্য আজ আমি আপনাদের জানাচ্ছি। সম্প্রতি তিনি আমাদের জানিয়েছেন, গত ৫ সপ্তাহ ধরে পশ্চিম তীরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং এ অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি।
এছাড়া পশ্চিমতীরের অনেক সরকারি স্থাপনা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসও করা হয়েছে।”
“যে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের একটি বড় অংশই থাকতেন শরণার্থী শিবিরে। গত ৫ সপ্তাহে কয়েকটি শরণার্থী শিবির ধ্বংস করেছে আইডিএফ। মঙ্গলবার নাবালুস শহরে টানা ১৪ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। আমরা এখনও জানি না সেখানে কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন। কারণ, এখনও নাবালুসের সমস্ত চেকপয়েন্ট বন্ধ রেখেছে আইডিএফ।”
ইসরায়েলের সরকার এবং আইডিএফের উদ্দেশে ডুজারিক বলেন, “আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি— মানুষের জীবন রক্ষা করা সবচেয়ে জরুরি এবং নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কখনও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা ন্যায্য নয়।” ২০২৩ সালে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখ-ে অতর্কিত হামলা চালানোর পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। একই সময় পশ্চিম তীরেও শুরু হয় অভিযান, তবে তা গাজার মতো ব্যাপক আকারের ছিল না।
বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ইসরায়েলের একঘেয়েমি আচরণের কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তা কেটে গেছে। ইসরায়েল ও হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিসরের কায়রোতে দু’পক্ষের বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। ফিলিস্তিনি ৬২০ বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে তেল আবিব। বিনিময়ে চার জিম্মিকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মুক্তি দেবে হামাস।
এদিকে আগামী শনিবার শেষ হতে যাচ্ছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় পর্যায় কার্যকরের জন্য হামাসকে চারটি শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল। শর্তগুলো হলো– সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, হামাসকে গাজা থেকে বিদায় নিতে হবে, গাজা উপত্যকাকে সম্পূর্ণ অস্ত্রমুক্ত করতে হবে এবং গাজার নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে দিতে হবে। আলজাজিরা বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি কারাগারে কমপক্ষে ৫৯ ফিলিস্তিনি বন্দি মারা গেছেন। কারাগারে আটকে রেখে ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে। ইসরায়েলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া মোহাম্মদ আবু তাবিলা বলেন, তাঁর শরীরে এসিড মারা হতো। চোখে শক্ত বস্তু দিয়ে আঘাত করা হতো। ইসরায়েলি সেনাদের নির্যাতনে তাঁর সারা শরীর ঝলসে যায়। নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা। গাজার চিকিৎসক ডা. খালেদ আলসের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
রয়টার্স জানায়, গাজায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলি সাবেক নারী জিম্মি নোয়া আরগামানি। মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর দুর্দশার কথা বর্ণনা করেন এবং যুদ্ধ বন্ধের আবেদন জানান। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৩৪৮ ফিলিস্তিনি ও ১ লাখ ১১ হাজার ৭৬১ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মৃত ধরা হচ্ছে। সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ও দামেস্কের বাইরের অংশে বেশ কয়েকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় অন্তত দু’জন নিহত হয়েছেন। ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটির নতুন সরকার এখন সেনাবাহিনী গঠন ও অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে।
এদিকে,চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে হস্তান্তর করেছে হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে ইসরায়েল মুক্তি দেওয়ার কিছু পরেই এই চার জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীনেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, চারজন জিম্মির মরদেহবাহী কফিন তারা পেয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের মরদেহ শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রামাল্লা থেকে এএফপির সাংবাদিকেরা জানান, তাঁরা ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি কারাবন্দীর দলকে বাস থেকে নেমে যেতে দেখেছেন। সম্ভবত তাঁদের গত সপ্তাহে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক আচরণের’ অভিযোগে ইসরায়েল তাঁদের মুক্তি স্থগিত করেছিল। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। তাঁদের অনেকে বন্ধু বা স্বজনেরা কাঁধে চড়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। অনেক নারীকে আনন্দে কাঁদতে দেখা যায়। ইসরায়েলের কাছে হামাস যে চারজন জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে, তাঁরা হলেন ওহাদ ইয়াহালোমি, সাচি ইদান, ইতজিক এলগারাত ও সোলোমো মনসুর। ইসরায়েলি গণমাধ্যম তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গত শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। তাঁদের সঙ্গে চার জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করে। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। কিন্তু মুক্তি দেওয়ার সময় হামাস জিম্মিদের সঙ্গে ‘অসম্মানজনক আচরণ’ করছে অভিযোগ তুলে বন্দীদের মুক্তি স্থগিত করে ইসরায়েল। হামাসের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে সেদিন জানানো হয়, আগে ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই কেবল গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করবে হামাস।
জিম্মি ও বন্দিবিনিময়ের মধ্য দিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হতে যাচ্ছে। এখন দুই পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। গাজা যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর একটি যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল রওনা দিয়েছে। স্টিভ উইটকফ এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘(দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে) আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এ জন্য ইসরায়েল একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। এই প্রতিনিধিদল কাতারের রাজধানী দোহা নয়তো মিসরের রাজধানী কায়রোয় যাবে, যেখানে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আবার আলোচনা শুরু হবে।’
এদিকে,গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে সেনা অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ অভিযানে ইতোমধ্যে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহর-গ্রামে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডুজারিক বলেন, “আনরোয়া (ইউ এন রিলিফ এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইনিয়ান রেফিউজিস) মহাপরিচালক ফিলিপ ল্যাজারিনি’র একটি বক্তব্য আজ আমি আপনাদের জানাচ্ছি। সম্প্রতি তিনি আমাদের জানিয়েছেন, গত ৫ সপ্তাহ ধরে পশ্চিম তীরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং এ অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি।
এছাড়া পশ্চিমতীরের অনেক সরকারি স্থাপনা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসও করা হয়েছে।”
“যে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের একটি বড় অংশই থাকতেন শরণার্থী শিবিরে। গত ৫ সপ্তাহে কয়েকটি শরণার্থী শিবির ধ্বংস করেছে আইডিএফ। মঙ্গলবার নাবালুস শহরে টানা ১৪ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। আমরা এখনও জানি না সেখানে কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন। কারণ, এখনও নাবালুসের সমস্ত চেকপয়েন্ট বন্ধ রেখেছে আইডিএফ।”
ইসরায়েলের সরকার এবং আইডিএফের উদ্দেশে ডুজারিক বলেন, “আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি— মানুষের জীবন রক্ষা করা সবচেয়ে জরুরি এবং নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কখনও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা ন্যায্য নয়।” ২০২৩ সালে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখ-ে অতর্কিত হামলা চালানোর পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। একই সময় পশ্চিম তীরেও শুরু হয় অভিযান, তবে তা গাজার মতো ব্যাপক আকারের ছিল না।