alt

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকে উত্তেজনা, হয়নি চুক্তি

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫

এতদিন ছিল পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই; কিন্ত এবার মুখোমুখি বাগ্?বিতণ্ডায় জড়ালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েক শ কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন; কিন্তু ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছিলেন তিনি। তাই সবার চোখ ছিল এই বৈঠকে।

সাংবাদিকদের সামনে এই বৈঠকে জেলেনস্কিকে একের পর আক্রমণ করে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। জেলেনস্কি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আপনার দেশের মানুষ খুবই সাহসী; কিন্ত আপনাকে হয় (রাশিয়ার সঙ্গে) একটি চুক্তি করতে হবে নইলে আমরা আর আপনাদের সঙ্গে নেই। আর আমরা যদি না থাকি তাহলে আপনাকে একা লড়তে হবে।’ ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতপার্থক্য একসময় চিৎকার-চ্যাঁচামেচির পর্যায়ে চলে যায়। ‘জেলেনস্কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন’ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মারা পড়ছে। যুদ্ধের জন্য সেনার সংখ্যাও কমছে ক্রমশ। আপনার হাতে কার্ড (বিকল্প) নেই। একবার আমরা চুক্তি সই করলে আপনি ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। কিন্ত আপনাকে আদৌ কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি এটা ভালো কোনো বিষয় নয়।’

ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ছাড় দেওয়া ছাড়া আপনি কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। তাই এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তাকে (জেলেনস্কি) কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু আশা করি, বড় কোনো ছাড় দিতে হবে না যেমনটা লোকে বলে বেড়াচ্ছে।’ ট্রাম্পের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করে বলেন, একজন খুনিকে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়। পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থানের সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। একজন খুনির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা না করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শুধু ট্রাম্প নয়, জেলেনস্কির সঙ্গে বাগ্?বিতণ্ডায় জড়ান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন মন্তব্য করে ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।’ মাথা নেড়ে ভ্যান্সের কথায় সায় দেন ট্রাম্প।এ সময় গলার স্বর উঁচু করে জেলেনস্কি উত্তর দেন, ‘বহুবার বলেছি, আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ।’ হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর তাকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরও হোয়াইট হাউস জানায়, দুই রাষ্ট্রনেতা কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি সংবাদ সম্মেলনে আসবেন। সেখানে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতেও সই করবেন তারা।

কিন্ত এর কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউস এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার কথা জানায়। এরপর জেলেনস্কি ও তার সঙ্গে থাকা ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া একে পোস্টে লিখেছেন, জেলেনস্কি ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে (হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) অসম্মান’ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেদিন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, আবার (হোয়াইট হাউসে) ফিরে আসতে পারেন।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর যুদ্ধ সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের লাখো কোটি ডলারের সহায়তা পাঠানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন ট্রাম্প। তিনি এ নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় লেগে দ্রুত এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। যদিও কীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন তা নিয়ে ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু বলেননি। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন। এসব থেকে আন্দাজ করা যাচ্ছিল ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই তিনি শান্তি আলোচনা শুরু করতে চলেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে কিয়েভ ক্ষুব্ধ হয়। ইউরোপের দেশগুলো হতবাক হয়।

তারপর থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের প্রতি যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার অনুরোধ করতে থাকেন। এমনটাও বলা হয়, উভয় পক্ষের কেউ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে তার পরিণতি কী হতে পারে তা-ও যেন চুক্তিতে নিশ্চিত করা থাকে। ট্রাম্প তাদের এই অনুরোধ উপেক্ষা করে গেছেন এবং বলেছেন, তিনি এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না।

ট্রাম্প বরং জোর দিয়ে বলেছেন, পুতিন তাকে যথেষ্ট ‘সম্মান’ করেন। তাই চুক্তি লঙ্ঘন করবেন না। শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অভিযোগ করেন, (রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়েছে তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ’ করেননি।

ইউক্রেনের রাজনীতি বিশ্লেষক ভলোদিমির ফেসেনকো এএফপিকে বলেন, ‘এ সবই, এই বাগ্?বিতণ্ডায়, এই বিস্ফোরণ, আজ হোক বা কাল, ঘটতই।’ এরপর কী হতে চলেছে তা অস্পষ্ট, তবে এটা ইউক্রেনের জন্য খারাপ কিছু হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন আইসিজির উপদেষ্টা ফিনুকেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন থেকে শোনা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে অস্ত্রের যে চালান যাওয়ার কথা রয়েছে সেটা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বলে বাতিল করা হতে পারে।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা ছাড়ার আগে দিয়ে ইউক্রেনকে ওই অস্ত্র পাঠানোর অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলেন। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে বাইডেন ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত করতে ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বাগ্?বিতণ্ডায় পর ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারের শেষে জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া আক্রমণকারী রুশ বাহিনীকে আটকে রাখা ইউক্রেনের জন্য ‘কঠিন’ হয়ে যাবে।জেলেনস্কি আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে কিয়েভের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার সম্ভব। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি চাই ট্রাম্প সত্যিই আমাদের পক্ষে থাকুন।’ জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের শুক্রবারের ওই বৈঠকের যে পরিণতি হয়েছে তা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই বৈঠকের পরপরই ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ দ্রুত ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন জানান।

ইউক্রেনকে অস্ত্রসাহায্য বন্ধ করবে ট্রাম্প প্রশাসন

"ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকে তীব্র বাদানুবাদ, চুক্তি ভেস্তে গেল"

পাকিস্তানে বিরোধী জোটের নতুন নির্বাচন দাবি

চুক্তি ছাড়াই শেষ হলো ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়

ছবি

ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বিবাদে অরক্ষিত হয়েছে ইউক্রেইন

ছবি

ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বৈঠকের পর সম্পর্ক মেরামতের আশা জেলেনস্কির

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘মাদক সম্রাট’ কারো কুইন্টেরোকে হস্তান্তর করল মেক্সিকো

ছবি

মার্চেই মেক্সিকো-কানাডার ওপর ২৫% শুল্ক, চীনা পণ্যে আরও ১০%: ট্রাম্প

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘গণছাঁটাই’ আদেশ স্থগিত

ছবি

বিরোধীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ভারতে ওয়াক্ফ বিল পেশ হচ্ছে

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতি, শান্তি প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা কাটল

ছবি

যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে মিথ্যা বলার পর পদত্যাগ করা উচিত ছিল, মন্তব্য মনিকার

ছবি

চীনের সামরিক মহড়ার জবাবে সেনা পাঠাল তাইওয়ান

ছবি

৫০ লাখ ডলারে ‘গোল্ড কার্ড’, নাগরিকত্বের পথ খুলছে যুক্তরাষ্ট্রে

ছবি

গাজায় বেড়েই চলেছে প্রাণহানি, ধ্বংসস্তূপে মিলছে একের পর এক লাশ

ছবি

ট্রাম্পের মস্কোঘেঁষা নীতি, উদ্বেগে ইউরোপ

ছবি

নির্বাচনে জয়ী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি সিডিইউ-সিএসইউ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইন খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে

ছবি

বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়: জয়শঙ্কর

ছবি

ট্রাম্পের ‘অন্যায়’ প্রস্তাবে না বলতে পারবে ইউক্রেন

ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসান হতে পারে ‘এই সপ্তাহে’: হোয়াইট হাউস

ছবি

ফেডারেল কর্মীদের কাজের হিসাব চাইলেন মাস্ক, নইলে চাকরি নেই

সম্প্রচারে ফিরছে আফগান নারীদের রেডিও স্টেশন

ইসরায়েল স্পষ্টত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে

পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থা ‘গুরুতর’: ভ্যাটিকান

চলতি সপ্তাহেই শেষ হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

ছবি

জার্মানির ভোট: কট্টর ডানপন্থিদের প্রবল উত্থান নিয়ে শঙ্কা

ছবি

ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করেছে ইসরায়েল

ছবি

ইলন মাস্ককে ‘আরও আক্রমণাত্মক’ হতে বললেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপে অনবরত মিলছে লাশ, বেড়েই চলেছে নিহতের সংখ্যা

ছবি

ইউক্রেন শিগগিরই খনিজ চুক্তি মেনে নেবে, আশা ট্রাম্পের

ট্রাম্পের নির্দেশে ৫ হাজার ৪০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা পেন্টাগনের

ছবি

বাদুড়ের শরীরে নতুন করোনার সন্ধান, ফের মহামারির শঙ্কা

ছবি

আমাজন শহরে বিশাল সিংকহোল, জরুরি অবস্থা ঘোষণা

ফের যুদ্ধ বাঁধার শঙ্কা কাটল, ইসরায়েলে গেলো সঠিক মরদেহ

মার্কিন সামরিক নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনলেন ট্রাম্প

tab

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকে উত্তেজনা, হয়নি চুক্তি

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫

এতদিন ছিল পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই; কিন্ত এবার মুখোমুখি বাগ্?বিতণ্ডায় জড়ালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েক শ কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন; কিন্তু ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছিলেন তিনি। তাই সবার চোখ ছিল এই বৈঠকে।

সাংবাদিকদের সামনে এই বৈঠকে জেলেনস্কিকে একের পর আক্রমণ করে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। জেলেনস্কি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আপনার দেশের মানুষ খুবই সাহসী; কিন্ত আপনাকে হয় (রাশিয়ার সঙ্গে) একটি চুক্তি করতে হবে নইলে আমরা আর আপনাদের সঙ্গে নেই। আর আমরা যদি না থাকি তাহলে আপনাকে একা লড়তে হবে।’ ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতপার্থক্য একসময় চিৎকার-চ্যাঁচামেচির পর্যায়ে চলে যায়। ‘জেলেনস্কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন’ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মারা পড়ছে। যুদ্ধের জন্য সেনার সংখ্যাও কমছে ক্রমশ। আপনার হাতে কার্ড (বিকল্প) নেই। একবার আমরা চুক্তি সই করলে আপনি ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। কিন্ত আপনাকে আদৌ কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি এটা ভালো কোনো বিষয় নয়।’

ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ছাড় দেওয়া ছাড়া আপনি কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। তাই এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তাকে (জেলেনস্কি) কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু আশা করি, বড় কোনো ছাড় দিতে হবে না যেমনটা লোকে বলে বেড়াচ্ছে।’ ট্রাম্পের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করে বলেন, একজন খুনিকে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়। পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থানের সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। একজন খুনির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা না করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শুধু ট্রাম্প নয়, জেলেনস্কির সঙ্গে বাগ্?বিতণ্ডায় জড়ান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন মন্তব্য করে ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।’ মাথা নেড়ে ভ্যান্সের কথায় সায় দেন ট্রাম্প।এ সময় গলার স্বর উঁচু করে জেলেনস্কি উত্তর দেন, ‘বহুবার বলেছি, আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ।’ হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর তাকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরও হোয়াইট হাউস জানায়, দুই রাষ্ট্রনেতা কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি সংবাদ সম্মেলনে আসবেন। সেখানে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতেও সই করবেন তারা।

কিন্ত এর কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউস এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার কথা জানায়। এরপর জেলেনস্কি ও তার সঙ্গে থাকা ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া একে পোস্টে লিখেছেন, জেলেনস্কি ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে (হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) অসম্মান’ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেদিন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, আবার (হোয়াইট হাউসে) ফিরে আসতে পারেন।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর যুদ্ধ সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের লাখো কোটি ডলারের সহায়তা পাঠানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন ট্রাম্প। তিনি এ নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় লেগে দ্রুত এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। যদিও কীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন তা নিয়ে ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু বলেননি। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন। এসব থেকে আন্দাজ করা যাচ্ছিল ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই তিনি শান্তি আলোচনা শুরু করতে চলেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে কিয়েভ ক্ষুব্ধ হয়। ইউরোপের দেশগুলো হতবাক হয়।

তারপর থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের প্রতি যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার অনুরোধ করতে থাকেন। এমনটাও বলা হয়, উভয় পক্ষের কেউ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে তার পরিণতি কী হতে পারে তা-ও যেন চুক্তিতে নিশ্চিত করা থাকে। ট্রাম্প তাদের এই অনুরোধ উপেক্ষা করে গেছেন এবং বলেছেন, তিনি এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না।

ট্রাম্প বরং জোর দিয়ে বলেছেন, পুতিন তাকে যথেষ্ট ‘সম্মান’ করেন। তাই চুক্তি লঙ্ঘন করবেন না। শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অভিযোগ করেন, (রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়েছে তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ’ করেননি।

ইউক্রেনের রাজনীতি বিশ্লেষক ভলোদিমির ফেসেনকো এএফপিকে বলেন, ‘এ সবই, এই বাগ্?বিতণ্ডায়, এই বিস্ফোরণ, আজ হোক বা কাল, ঘটতই।’ এরপর কী হতে চলেছে তা অস্পষ্ট, তবে এটা ইউক্রেনের জন্য খারাপ কিছু হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন আইসিজির উপদেষ্টা ফিনুকেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন থেকে শোনা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে অস্ত্রের যে চালান যাওয়ার কথা রয়েছে সেটা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বলে বাতিল করা হতে পারে।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা ছাড়ার আগে দিয়ে ইউক্রেনকে ওই অস্ত্র পাঠানোর অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলেন। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে বাইডেন ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত করতে ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বাগ্?বিতণ্ডায় পর ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারের শেষে জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া আক্রমণকারী রুশ বাহিনীকে আটকে রাখা ইউক্রেনের জন্য ‘কঠিন’ হয়ে যাবে।জেলেনস্কি আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে কিয়েভের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার সম্ভব। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি চাই ট্রাম্প সত্যিই আমাদের পক্ষে থাকুন।’ জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের শুক্রবারের ওই বৈঠকের যে পরিণতি হয়েছে তা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই বৈঠকের পরপরই ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ দ্রুত ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন জানান।

back to top