ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে জর্ডানের আম্মানে বিক্ষোভ -এএফপি
ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে না সরিয়েই ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয়ে ভূখ-টি পুনর্গঠনের যে পরিকল্পনা আরব দেশগুলো করেছে তাতে সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপের চার প্রভাবশালী দেশ। মিশর প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনা আরব নেতাদের সমর্থন কুড়ালেও ইসরায়েল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। মাসখানেক আগে ট্রাম্প গাজা নিয়ে তার নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে শহরটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’য় পরিণত করতে।
অন্যদিকে মিশরের প্রস্তাবে ৫ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে; যাকে ‘বাস্তবসম্মত’ অ্যাখ্যা দিয়ে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শনিবার পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি। এক বিবৃতিতে চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিশরের প্রস্তাবে গাজার জনগণের ‘বিপর্যস্ত জীবনমানের দ্রুত ও টেকসই উন্নতির’ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আরব নেতাদের সমর্থিত এ পরিকল্পনায় সাময়িক সময়ের জন্য গাজা পরিচালনার ভার স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ও ভূখ-টিতে মোতায়েন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের একটি কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই কমিটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) তত্ত্বাবধানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখভাল করবে এবং সাময়িকভাবে গাজার দৈনন্দিন বিষয়াদির ব্যবস্থাপনায় থাকবে। এমন এক সময়ে মিশরের এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে যখন গাজার নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।এই চুক্তির প্রথম ধাপ গত ১ মার্চ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল এখন চাইছে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে, যেখানে আরও জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের কারাগার থেকে ছাড়া হবে। এ লক্ষ্যে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে গাজায় ত্রাণ ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস চাইছে, চুক্তির সময়ের সমঝোতা অনুযায়ী প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে। এই পর্বে গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কথা বলতে সোমবার কাতারে একটি মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাচ্ছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কখন থেকে শুরু হতে পারে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানুয়া চলতি সপ্তাহের বৈঠকে ‘ইতিবাচক কিছু মিলতে পারে’ বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে মিশরের বানানো, আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি করা হয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখ-টি নিয়ে ট্রাম্পের অদ্ভূত এক প্রস্তাবের পর। তার প্রস্তাবে ছিল, যুক্তরাষ্ট্র গাজার দখল নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যপ্রাচ্যের অন্যত্র সরিয়ে নেবে এবং সমুদ্রলাগোয়া ভূখ-টির এমন চোখধাঁধানো উন্নয়ন করবে যে সেটি দ্রুতই ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’য় পরিণত হবে।
সব ফিলিস্তিনি সংগঠন ও আরব নেতারা তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে মিশর গত মঙ্গলবার এক জরুরি আরব সম্মেলনে গাজা নিয়ে তাদের পরিকল্পনা উত্থাপন করে। আরব নেতাদের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ও হামাসও পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানায়। তবে হোয়াইট হাউজ ও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মিশরের পরিকল্পনা গাজার বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে।
“ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া, অবিস্ফোরিত অস্ত্রে ভরা কোনো এলাকায় বাসিন্দারা স্বাভাবিক মানুষের মতো বসবাস করতে পারে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামাসমুক্ত গাজা পুনর্গঠনে তার যে লক্ষ্য তাতে অবিচল আছেন,” মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস। এদিকে শনিবার চার ইউরোপীয় দেশ যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, তারা ‘আরব উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ এবং এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে আরব রাষ্ট্রগুলো যে ‘গুরুত্বপূর্ণ সংকেত’ পাঠিয়েছে তাকে তারা স্বাগত জানাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাস গাজা শাসন করতে পারবে না, এবং ইসরায়েলের জন্য আর হুমকি হয়েও থাকতে পারবে না। “চার দেশ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীয় ভূমিকা এবং এর সংস্কার এজেন্ডার বাস্তবায়নকে সমর্থন করে,” বলেছে তারা।
এদিকে, ট্রাম্পের গাজা দখল এবং এখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরব লিগের বিকল্প প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)।
সৌদি আরবের জেদ্দায় শনিবার ওআইসির এক জরুরি বৈঠক শেষে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ সময় ওআইসির পক্ষ থেকে আঞ্চলিক উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। মিসরের কায়রোতে গত মঙ্গলবার আরব লিগের এক সম্মেলনে গাজা পুনর্গঠনে মিসরের দেওয়া প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর তিন দিন পর জেদ্দায় ৫৭ সদস্যের ওআইসির বৈঠকে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে জর্ডানের আম্মানে বিক্ষোভ -এএফপি
রোববার, ০৯ মার্চ ২০২৫
ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে না সরিয়েই ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয়ে ভূখ-টি পুনর্গঠনের যে পরিকল্পনা আরব দেশগুলো করেছে তাতে সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপের চার প্রভাবশালী দেশ। মিশর প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনা আরব নেতাদের সমর্থন কুড়ালেও ইসরায়েল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। মাসখানেক আগে ট্রাম্প গাজা নিয়ে তার নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে শহরটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’য় পরিণত করতে।
অন্যদিকে মিশরের প্রস্তাবে ৫ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে; যাকে ‘বাস্তবসম্মত’ অ্যাখ্যা দিয়ে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শনিবার পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি। এক বিবৃতিতে চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিশরের প্রস্তাবে গাজার জনগণের ‘বিপর্যস্ত জীবনমানের দ্রুত ও টেকসই উন্নতির’ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আরব নেতাদের সমর্থিত এ পরিকল্পনায় সাময়িক সময়ের জন্য গাজা পরিচালনার ভার স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ও ভূখ-টিতে মোতায়েন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের একটি কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই কমিটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) তত্ত্বাবধানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখভাল করবে এবং সাময়িকভাবে গাজার দৈনন্দিন বিষয়াদির ব্যবস্থাপনায় থাকবে। এমন এক সময়ে মিশরের এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে যখন গাজার নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।এই চুক্তির প্রথম ধাপ গত ১ মার্চ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল এখন চাইছে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে, যেখানে আরও জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের কারাগার থেকে ছাড়া হবে। এ লক্ষ্যে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে গাজায় ত্রাণ ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস চাইছে, চুক্তির সময়ের সমঝোতা অনুযায়ী প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে। এই পর্বে গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কথা বলতে সোমবার কাতারে একটি মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাচ্ছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কখন থেকে শুরু হতে পারে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানুয়া চলতি সপ্তাহের বৈঠকে ‘ইতিবাচক কিছু মিলতে পারে’ বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে মিশরের বানানো, আরব-সমর্থিত পরিকল্পনাটি করা হয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখ-টি নিয়ে ট্রাম্পের অদ্ভূত এক প্রস্তাবের পর। তার প্রস্তাবে ছিল, যুক্তরাষ্ট্র গাজার দখল নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যপ্রাচ্যের অন্যত্র সরিয়ে নেবে এবং সমুদ্রলাগোয়া ভূখ-টির এমন চোখধাঁধানো উন্নয়ন করবে যে সেটি দ্রুতই ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’য় পরিণত হবে।
সব ফিলিস্তিনি সংগঠন ও আরব নেতারা তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে মিশর গত মঙ্গলবার এক জরুরি আরব সম্মেলনে গাজা নিয়ে তাদের পরিকল্পনা উত্থাপন করে। আরব নেতাদের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ও হামাসও পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানায়। তবে হোয়াইট হাউজ ও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মিশরের পরিকল্পনা গাজার বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে।
“ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া, অবিস্ফোরিত অস্ত্রে ভরা কোনো এলাকায় বাসিন্দারা স্বাভাবিক মানুষের মতো বসবাস করতে পারে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামাসমুক্ত গাজা পুনর্গঠনে তার যে লক্ষ্য তাতে অবিচল আছেন,” মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস। এদিকে শনিবার চার ইউরোপীয় দেশ যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, তারা ‘আরব উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ এবং এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে আরব রাষ্ট্রগুলো যে ‘গুরুত্বপূর্ণ সংকেত’ পাঠিয়েছে তাকে তারা স্বাগত জানাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাস গাজা শাসন করতে পারবে না, এবং ইসরায়েলের জন্য আর হুমকি হয়েও থাকতে পারবে না। “চার দেশ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীয় ভূমিকা এবং এর সংস্কার এজেন্ডার বাস্তবায়নকে সমর্থন করে,” বলেছে তারা।
এদিকে, ট্রাম্পের গাজা দখল এবং এখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরব লিগের বিকল্প প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)।
সৌদি আরবের জেদ্দায় শনিবার ওআইসির এক জরুরি বৈঠক শেষে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ সময় ওআইসির পক্ষ থেকে আঞ্চলিক উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। মিসরের কায়রোতে গত মঙ্গলবার আরব লিগের এক সম্মেলনে গাজা পুনর্গঠনে মিসরের দেওয়া প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর তিন দিন পর জেদ্দায় ৫৭ সদস্যের ওআইসির বৈঠকে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।