alt

আন্তর্জাতিক

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

কানাডার নতুন প্রধামন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান মার্ক কার্নি -এএফপি

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন। স্থানীয় সময় রোববার প্রধামন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন লিবারেল পার্টির প্রেসিডেন্ট সচিত মেহরা। মার্ক কার্নি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রোববার সদস্যদের ভোটে লিবারেল পার্টির নতুন নেতা বাছাই হয়। এতে মার্ক কার্নি ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ড পেয়েছেন ১১ হাজার ১৩৪ ভোট।

টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ট্রুডো। এরপর তার উত্তরাধিকার বাছাইয়ের জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছিল। কানাডার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হাউস অব কমন্সের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে যিনি লিবারেল পার্টির প্রধান হবেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি। এ হিসেবে মার্ক কার্নি নির্বাচনের আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচিত হওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের সমালোচনা করেন মার্ক কার্নি। যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি না দিলে, মার্কিন পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপ বহাল রাখার অঙ্গীকার করেন তিনি। কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর কার্নি লিবারেল পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করেন। বিজয়ী ভাষণে কার্নি বেশিরভাগ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার কথা বলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জয়ের পর কার্নি বলেন, আমেরিকানদের কোনো ভুল করা উচিত নয়। হকির মতো বাণিজ্যের খেলায়ও জিতবে কানাডা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার কথা রয়েছে কার্নির। এছাড়া তিনি লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, যা ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। সদ্য নির্বাচিত কার্নি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে কখনো নির্বাচিত হননি। লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচন শুরু হয়েছিল গত জানুয়ারিতে। এর আগে প্রায় এক দশকের মতো ক্ষমতায় ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো।

ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায় ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করেন। তার সময়ে কানাডায় আবাসন সংকট ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। রোববার সন্ধ্যায় প্রথম ভোটেই কার্নি জয়ী হন। যেখানে তিনি ৮৫ দশমিক নয় শতাংশ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে হারান। রাজধানী অটোয়ায় লিবারেল পার্টির প্রায় ১,৬০০ সমর্থকের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তখনই চারিদিকে উল্লাসধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে।

দলের পক্ষ থেকে দেয়া ঘোষণায় জানানো হয়, এই নির্বাচনে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন। জয়লাভের পর সংসদে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করবেন কার্নি। এরপর তার সামনে দুটি সুযোগ থাকছে, হয় তিনি নিজেই একটি দ্রুত সাধারণ নির্বাচন ডাকবেন কিংবা বিরোধী দলগুলোর আস্থা ভোটের মাধ্যমে চলতি মাসেই তাকে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে। জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর থেকে লিবারেল পার্টির রাজনীতিতে বেশ নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য হুমকি এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে তার অবস্থানের কারণে কানাডিয়ানদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ উজ্জীবিত হয়েছে, যা লিবারেলদের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে লিবারেলরা বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি থেকে প্রায় ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল। তবে সম্প্রতি সেই ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে। কিছু জরিপে দেখা গেছে যে লিবারেল ও কনজারভেটিভরা এখন প্রায় সমান অবস্থানে রয়েছে। কার্নির বিজয়ী ভাষণের একটা বড় অংশজুড়েই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কানাডার ওপর করা ‘অযৌক্তিক শুল্ক’ নিয়ে সমালোচনা। যদিও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবেই পরিচিত।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র কানাডিয়ান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা নিজেদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করে এবং বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তির শর্ত মেনে চলা কিছু পণ্যকে শুল্কমুক্ত করার ঘোষণা দেয়।এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার পর জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করে বলেছিলেন যে, ট্রাম্প কানাডার অর্থনীতি ধ্বংস করতে চাচ্ছেন।

কার্নি তার বিজয়ী ভাষণে ওই বক্তব্যই পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ট্রাম্প কানাডার শ্রমিক, পরিবার ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে আক্রমণ করছেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাকে সফল হতে দিবো না’। তার এই ঘোষণার পরই ভিড় থেকে তীব্র দুয়োধ্বনি ওঠে। কার্নি এ সময় ঘোষণা করেন, তার সরকার মার্কিন আমদানির ওপর শুল্ক অব্যাহত রাখবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্ত না বদলায়। কার্নি বলেন, আমি জানি, এটি এক অন্ধকার সময়। একটি দেশের কারণে যাকে আমরা আর বিশ্বাস করতে পারি না, এই অন্ধকার নেমে এসেছে। কার্নি মঞ্চে ওঠার কিছু আগে, জাস্টিন ট্রুডো আবেগঘন বিদায়ী ভাষণ দেন। তিনি তার ১২ বছরের লিবারেল নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং সতর্ক করে বলেন, কানাডা এখন ট্রাম্প শাসিত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি।

ট্রুডোর পদত্যাগের পর কনজারভেটিভ পার্টিকে রাজনৈতিকভাবে নতুন কৌশল নিয়েছে হয়েছে। তারা এখন আক্রমণ করছে কার্নিকেও। কনজারভেটিভ পার্টি অভিযোগ করে বলছে যে, কার্নিও ঠিক জাস্টিন ট্রুডোর মতোই। লিবারেলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে প্রতিপক্ষরা বলছে যে, লিবারেলরা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা ধরে রাখার ‘গোপন কৌশল’ করছে এবং তারা সেটি করছে শুধু নেতা পরিবর্তন করে। কার্নির সমর্থক ফেডারেল জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডেভিড ম্যাকগিন্টি বিবিসিকে বলেন, ‘কার্নি চুপচাপ থাকেন কিন্তু দৃঢ় সংকল্পের দক্ষ মানুষ তিনি। যে কোন বড় সংকট মোকাবিলা করার সক্ষমতা তার আছে।

ছবি

গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করল ইসরায়েল

ছবি

সিরিয়ায় ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা, মরদেহ পড়ে আছে খোলা মাঠে

পারমাণবিক সাবমেরিন উন্মোচন করল উত্তর কোরিয়া

হুমকির মুখে ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে না : খামেনি

পবিত্র রমজানে ভারতশাসিত কাশ্মিরে ফ্যাশন শো, বিতর্কের ঝড়

ছবি

পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক আবিষ্কার, মিশে যাবে মাটি-পানিতে

ছবি

রাশিয়ার সঙ্গে ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি’ নিচ্ছে পোল্যান্ড

যুদ্ধবিরতি তৎপরতার মধ্যে রাশিয়ার হামলা, নিহত ২৫

সিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হাজারেরও বেশি বেসামরিক নিহত

ইরানের বিদ্যুৎ ক্রয়ে ইরাকের জন্য ভর্তুকি সুবিধা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

গাজা নিয়ে আরব পরিকল্পনা সমর্থন ইউরোপীয় নেতাদের

ছবি

ট্রাম্পের সামনেই মাস্ক-রুবিও‘র দ্বন্দ্ব

সৌদিতে বৈঠকে বসছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন

ছবি

স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রবেশ করছে মণিপুর

ইসরায়েলকে আল্টিমেটাম ইয়েমেনি গোষ্ঠীর

কাঁদলেন জাস্টিন ট্রুডো

ছবি

ফের উত্তাল সিরিয়া, নিহত ১৮০

ছবি

সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী ও আসাদপন্থিদের সংঘর্ষে রক্তপাত, নিহত অন্তত ৭০

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংস করছে: ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত

ছবি

পাকিস্তানের বান্নু সেনানিবাসে হামলায় ৫ সেনা সদস্যসহ নিহত ৩৪

ছবি

হামাসকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ‘জিম্মি মুক্তি দাও, নইলে ভয়ংকর পরিণতি’

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত, অসম্মানজনক আচরণ না করার অনুরোধ

ছবি

শ্রম আইনের আধুনিকায়নে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

ছবি

ফিলিপিন্সে সামরিক বিমান বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত

ছবি

৬ হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মায়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

ছবি

সার্বিয়ার পার্লামেন্টে ছোড়া হলো স্মোক গ্রেনেড, স্ট্রোকে আক্রান্ত আইনপ্রণেতা

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানীতে বন্যা, ঘরছাড়া হাজারো মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় ফের হুতিরা

ট্রাম্পের মন পেল না ভারত, ২ এপ্রিল থেকে পাল্টা শুল্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ, কানাডার বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু

ছবি

গাজা পুনর্গঠনে ৫৩০০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা

পাকিস্তানে সেনানিবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা, নিহত ৯

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের থমকে যাওয়া ‘খনিজ চুক্তি’ স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা

ছবি

গাজা পুনর্গঠনে আরব দেশগুলোর পরিকল্পনা, ট্রাম্প প্রস্তাবের বিকল্প

ছবি

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রথম ভাষণ

ছবি

‘অনুতাপ’ জেলেনস্কির, ট্রাম্পের নেতৃত্বে কাজ করতে প্রস্তুত

tab

আন্তর্জাতিক

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

কানাডার নতুন প্রধামন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান মার্ক কার্নি -এএফপি

সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন। স্থানীয় সময় রোববার প্রধামন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন লিবারেল পার্টির প্রেসিডেন্ট সচিত মেহরা। মার্ক কার্নি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রোববার সদস্যদের ভোটে লিবারেল পার্টির নতুন নেতা বাছাই হয়। এতে মার্ক কার্নি ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ড পেয়েছেন ১১ হাজার ১৩৪ ভোট।

টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ট্রুডো। এরপর তার উত্তরাধিকার বাছাইয়ের জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছিল। কানাডার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হাউস অব কমন্সের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে যিনি লিবারেল পার্টির প্রধান হবেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি। এ হিসেবে মার্ক কার্নি নির্বাচনের আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচিত হওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের সমালোচনা করেন মার্ক কার্নি। যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি না দিলে, মার্কিন পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপ বহাল রাখার অঙ্গীকার করেন তিনি। কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর কার্নি লিবারেল পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করেন। বিজয়ী ভাষণে কার্নি বেশিরভাগ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার কথা বলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জয়ের পর কার্নি বলেন, আমেরিকানদের কোনো ভুল করা উচিত নয়। হকির মতো বাণিজ্যের খেলায়ও জিতবে কানাডা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার কথা রয়েছে কার্নির। এছাড়া তিনি লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, যা ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। সদ্য নির্বাচিত কার্নি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে কখনো নির্বাচিত হননি। লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচন শুরু হয়েছিল গত জানুয়ারিতে। এর আগে প্রায় এক দশকের মতো ক্ষমতায় ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো।

ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায় ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করেন। তার সময়ে কানাডায় আবাসন সংকট ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। রোববার সন্ধ্যায় প্রথম ভোটেই কার্নি জয়ী হন। যেখানে তিনি ৮৫ দশমিক নয় শতাংশ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে হারান। রাজধানী অটোয়ায় লিবারেল পার্টির প্রায় ১,৬০০ সমর্থকের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তখনই চারিদিকে উল্লাসধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে।

দলের পক্ষ থেকে দেয়া ঘোষণায় জানানো হয়, এই নির্বাচনে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন। জয়লাভের পর সংসদে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করবেন কার্নি। এরপর তার সামনে দুটি সুযোগ থাকছে, হয় তিনি নিজেই একটি দ্রুত সাধারণ নির্বাচন ডাকবেন কিংবা বিরোধী দলগুলোর আস্থা ভোটের মাধ্যমে চলতি মাসেই তাকে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে। জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর থেকে লিবারেল পার্টির রাজনীতিতে বেশ নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য হুমকি এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে তার অবস্থানের কারণে কানাডিয়ানদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ উজ্জীবিত হয়েছে, যা লিবারেলদের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে লিবারেলরা বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি থেকে প্রায় ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল। তবে সম্প্রতি সেই ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে। কিছু জরিপে দেখা গেছে যে লিবারেল ও কনজারভেটিভরা এখন প্রায় সমান অবস্থানে রয়েছে। কার্নির বিজয়ী ভাষণের একটা বড় অংশজুড়েই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কানাডার ওপর করা ‘অযৌক্তিক শুল্ক’ নিয়ে সমালোচনা। যদিও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবেই পরিচিত।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র কানাডিয়ান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা নিজেদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করে এবং বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তির শর্ত মেনে চলা কিছু পণ্যকে শুল্কমুক্ত করার ঘোষণা দেয়।এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার পর জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করে বলেছিলেন যে, ট্রাম্প কানাডার অর্থনীতি ধ্বংস করতে চাচ্ছেন।

কার্নি তার বিজয়ী ভাষণে ওই বক্তব্যই পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ট্রাম্প কানাডার শ্রমিক, পরিবার ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে আক্রমণ করছেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাকে সফল হতে দিবো না’। তার এই ঘোষণার পরই ভিড় থেকে তীব্র দুয়োধ্বনি ওঠে। কার্নি এ সময় ঘোষণা করেন, তার সরকার মার্কিন আমদানির ওপর শুল্ক অব্যাহত রাখবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্ত না বদলায়। কার্নি বলেন, আমি জানি, এটি এক অন্ধকার সময়। একটি দেশের কারণে যাকে আমরা আর বিশ্বাস করতে পারি না, এই অন্ধকার নেমে এসেছে। কার্নি মঞ্চে ওঠার কিছু আগে, জাস্টিন ট্রুডো আবেগঘন বিদায়ী ভাষণ দেন। তিনি তার ১২ বছরের লিবারেল নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং সতর্ক করে বলেন, কানাডা এখন ট্রাম্প শাসিত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি।

ট্রুডোর পদত্যাগের পর কনজারভেটিভ পার্টিকে রাজনৈতিকভাবে নতুন কৌশল নিয়েছে হয়েছে। তারা এখন আক্রমণ করছে কার্নিকেও। কনজারভেটিভ পার্টি অভিযোগ করে বলছে যে, কার্নিও ঠিক জাস্টিন ট্রুডোর মতোই। লিবারেলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে প্রতিপক্ষরা বলছে যে, লিবারেলরা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা ধরে রাখার ‘গোপন কৌশল’ করছে এবং তারা সেটি করছে শুধু নেতা পরিবর্তন করে। কার্নির সমর্থক ফেডারেল জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডেভিড ম্যাকগিন্টি বিবিসিকে বলেন, ‘কার্নি চুপচাপ থাকেন কিন্তু দৃঢ় সংকল্পের দক্ষ মানুষ তিনি। যে কোন বড় সংকট মোকাবিলা করার সক্ষমতা তার আছে।

back to top