গাজার আল-আহলি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ মুড়িয়ে রাখা হয়েছে কম্বলে -এএফপি
দ্বিতীয় দিনের মতো গাজায় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ। বোমা হামলায় বুধবার সকালে উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসেই প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১০ জন। উপত্যকাজুড়ে প্রাণহানি আরও অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আলজাজিরা জানিয়েছে, পুরো উপত্যকার আকাশ ছেয়ে রেখেছে ইসরায়েলের ড্রোন। স্থানীয়রা বলছেন, অসংখ্য ড্রোনের কারণে গাজার আকাশ মেঘলা দেখাচ্ছে, ড্রোনের পাখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে পুরো উপত্যকা থেকেই। উপত্যকার কোনো স্থানই নিরাপদ নয় জেনেও জীবন বাঁচাতে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে বাসিন্দারা।
আলজাজিরা অ্যারাবিকের তথ্যমতে, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাজার দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্য গাজার দিকে ছুটে যাচ্ছে বাসিন্দারা। আবার মধ্য গাজায় বোমা হামলার তীব্রতায় সেখান থেকে বাসিন্দারা সরে যাচ্ছে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে। এ যেন বেদুইনদের মরীচিকার পেছনে ছোটা! মঙ্গলবার ভোর থেকে যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গাজায় হামলা শুরু করেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। নির্বিচারে উপত্যকাজুড়ে চালানো হয়েছে হত্যাযজ্ঞ। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আবাসিক ভবন ও শরণার্থীশিবিরগুলো। এক দিনেই প্রাণ গেছে চার শতাধিক ফিলিস্তিনির।
এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকের মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা। বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলার পর হতাহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে ছিন্নভিন্ন মাংস পেয়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে হতাহতদের ভিড় সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তারা বলছেন, এত বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থানসংকুলান সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু, আহতদের অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই হাসপাতালগুলোতে। তার ওপর উপত্যকাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এছাড়া, টানা কাজ করতে করতে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত তারাও।
এদিকে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে আসা ত্রাণের ট্রাক উপত্যকায় ঢুকতে দিচ্ছে না আইডিএফ সেনারা। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ বলছে, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) জন্য ২০টি ভেন্টিলেটর আর নবজাতকদের জন্য ৯টি ইনকিউবেটর নিয়ে সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ট্রাক। বর্তমানে গাজায় কোনো হাসপাতালই পুরোপুরি কার্যকর নয়। এর মধ্যে ১৩টি হাসপাতাল আর চারটি ফিল্ড হাসপাতাল পুরোপুরিই অকার্যকর। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণসহায়তা ঢুকতে না দিলে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণশক্তিতে যুদ্ধ আবার শুরু করেছে তার দেশ। এক ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরুর প্রসঙ্গে সতর্ক করে বলেন, ‘এটা কেবল শুরু।’ আর হামাসের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলার মধ্যেই তা চলবে। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো থেকে ব্যাপক পরিসরে হামলা শুরুর পর নেতানিয়াহু এমন মন্তব্য করলেন। যদিও ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা শুধু হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে।
এই হামলার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি হামলার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
গুতেরেস সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এক পোস্টে বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার এবং মানবিক সহায়তা পুনঃস্থাপনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তার পাশাপাশি, তিনি গাজায় আটক থাকা সব বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্যও জোর দাবি জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোও গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা গাজার জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করার এবং মানবিক সাহায্য সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের এই বক্তব্যের পর, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, এবং শান্তির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইসরায়েল এবং অন্যান্য প্রভাবশালী শক্তির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে গাজায় হামলার পর ইসরায়েল নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করেছে তারা। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন ইউরোপের ২৭টি দেশের এই জোটের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় হামলা বন্ধ ও ত্রাণসহায়তা প্রবেশ করতে দিতে হবে।
গাজার আল-আহলি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ মুড়িয়ে রাখা হয়েছে কম্বলে -এএফপি
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
দ্বিতীয় দিনের মতো গাজায় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ। বোমা হামলায় বুধবার সকালে উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসেই প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১০ জন। উপত্যকাজুড়ে প্রাণহানি আরও অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আলজাজিরা জানিয়েছে, পুরো উপত্যকার আকাশ ছেয়ে রেখেছে ইসরায়েলের ড্রোন। স্থানীয়রা বলছেন, অসংখ্য ড্রোনের কারণে গাজার আকাশ মেঘলা দেখাচ্ছে, ড্রোনের পাখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে পুরো উপত্যকা থেকেই। উপত্যকার কোনো স্থানই নিরাপদ নয় জেনেও জীবন বাঁচাতে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে বাসিন্দারা।
আলজাজিরা অ্যারাবিকের তথ্যমতে, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাজার দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্য গাজার দিকে ছুটে যাচ্ছে বাসিন্দারা। আবার মধ্য গাজায় বোমা হামলার তীব্রতায় সেখান থেকে বাসিন্দারা সরে যাচ্ছে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে। এ যেন বেদুইনদের মরীচিকার পেছনে ছোটা! মঙ্গলবার ভোর থেকে যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গাজায় হামলা শুরু করেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। নির্বিচারে উপত্যকাজুড়ে চালানো হয়েছে হত্যাযজ্ঞ। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আবাসিক ভবন ও শরণার্থীশিবিরগুলো। এক দিনেই প্রাণ গেছে চার শতাধিক ফিলিস্তিনির।
এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকের মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা। বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলার পর হতাহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে ছিন্নভিন্ন মাংস পেয়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে হতাহতদের ভিড় সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তারা বলছেন, এত বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থানসংকুলান সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু, আহতদের অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই হাসপাতালগুলোতে। তার ওপর উপত্যকাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এছাড়া, টানা কাজ করতে করতে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত তারাও।
এদিকে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে আসা ত্রাণের ট্রাক উপত্যকায় ঢুকতে দিচ্ছে না আইডিএফ সেনারা। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ বলছে, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) জন্য ২০টি ভেন্টিলেটর আর নবজাতকদের জন্য ৯টি ইনকিউবেটর নিয়ে সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ট্রাক। বর্তমানে গাজায় কোনো হাসপাতালই পুরোপুরি কার্যকর নয়। এর মধ্যে ১৩টি হাসপাতাল আর চারটি ফিল্ড হাসপাতাল পুরোপুরিই অকার্যকর। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণসহায়তা ঢুকতে না দিলে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণশক্তিতে যুদ্ধ আবার শুরু করেছে তার দেশ। এক ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরুর প্রসঙ্গে সতর্ক করে বলেন, ‘এটা কেবল শুরু।’ আর হামাসের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলার মধ্যেই তা চলবে। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো থেকে ব্যাপক পরিসরে হামলা শুরুর পর নেতানিয়াহু এমন মন্তব্য করলেন। যদিও ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা শুধু হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে।
এই হামলার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি হামলার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
গুতেরেস সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এক পোস্টে বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার এবং মানবিক সহায়তা পুনঃস্থাপনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তার পাশাপাশি, তিনি গাজায় আটক থাকা সব বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্যও জোর দাবি জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোও গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা গাজার জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করার এবং মানবিক সাহায্য সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের এই বক্তব্যের পর, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, এবং শান্তির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইসরায়েল এবং অন্যান্য প্রভাবশালী শক্তির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে গাজায় হামলার পর ইসরায়েল নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করেছে তারা। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন ইউরোপের ২৭টি দেশের এই জোটের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় হামলা বন্ধ ও ত্রাণসহায়তা প্রবেশ করতে দিতে হবে।