alt

আন্তর্জাতিক

ভারতে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল পাস, কী আছে এতে

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শুক্রবার, ০৪ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের লোকসভার পর রাজ্যসভায়ও পাস হয়ে গেছে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল -এনডিটিভি

ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বলা যায় কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই পাস হয়ে যায় মুসলিমদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল। এরপর, লোকসভায় পাস হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিলটি উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়ও দীর্ঘ বিতর্ক শেষে সহজেই পার হয়ে গেল। ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ১২৮টি এবং বিপক্ষে ৯৫টি ভোট পড়ে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল তাদের ৭ এমপিকে উচ্চকক্ষ ‘নিজের মর্জি অনুসারে ভোটের’ সুযোগ করে দেয়। দল জানায়, তারা নিজেদের ইচ্ছানুসারে ভোট দিতে পারবেন।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতা সস্মিত পাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল’ নিয়ে ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অংশের অনুভূতি’ বিবেচনা করার পরেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ্যসভায় বিলটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে বিজেপি সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজ্জু বিতর্কের শুরুতেই অস্বীকার করেন যে, বিলটি মুসলিম স্বার্থের ক্ষতি করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ওয়াক্ফ বোর্ডের ব্যবস্থাপনায়, সৃষ্টিতে এবং সুবিধাভোগীতে অমুসলিমদের কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। এগুলো সম্পূর্ণরূপে মুসলিমদের জন্যই থাকবে।

বিলটি ধর্ম নিয়ে নয়, বরং সম্পত্তি এবং সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এবং এর লক্ষ্য দুর্নীতি নির্মূল করা উল্লেখ করে রিজ্জু বলেন, এখন থেকে কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফ হিসেবে ঘোষণার আগে মালিকানার প্রমাণ দাখিল করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এর ফলে ওয়াক্ফ বোর্ডের দাবি করা কোনো সম্পত্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়াক্ফ বলে গণ্য হওয়ার যে বিধান ছিল তা বাতিল হয়ে যাবে।

কিরেন রিজ্জু এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৃহস্পতিবার বেশ কিছু সম্পত্তির তালিকা দিয়েছিলেন যেগুলো ওয়াক্ফ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে—দিল্লির ল্যুটিয়েন্স জোনের সম্পত্তি, তামিলনাড়ুর ৪০০ বছরের পুরোনো এক মন্দির, একটি পাঁচতারকা হোটেলের জন্য নির্ধারিত জমি এবং এমনকি পুরোনো সংসদ ভবনও ছিল। নকংগ্রেসের এমপি সৈয়দ নাসির হুসেন কিরেন রিজ্জুর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘তারা ১২৩টি সম্পত্তি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। এগুলো হয় মসজিদ, কবরস্থান অথবা দরগা।’ তিনি বলেন, ‘আমি সেগুলোর একটি তালিকা জমা দিতে চাই। ব্রিটিশরা যখন ল্যুটিয়েন্স দখল করে, তখন এলাকাটি নির্মাণের পর এই সম্পত্তিগুলো তারাই ওয়াকফকে হস্তান্তর করেছিল। এই সম্পত্তিগুলো ওয়াক্ফের কাছেই আছে। ২০১৩ সালের পরিপ্রেক্ষিতে এগুলোর কথাই তারা উল্লেখ করছেন।’

বিলটির পক্ষে বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডা বিরোধীদের বিষয়টি থেকে মনোযোগ সরানোর এবং ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের বঞ্চিত অংশের দিকে মনোযোগ দিলে ভালো হবে। মুসলিম দেশগুলো যখন ওয়াক্ফ সম্পত্তিকে স্বচ্ছ করছে এবং ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজ করছে, তখন ভারত কেন পরিবর্তন করতে পারবে না—প্রশ্ন রাখেন তিনি।

কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, বিলটিকে মর্যাদার প্রশ্নে পরিণত করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) যা করছেন তা ভালো নয়। এতে দেশে বিরোধ সৃষ্টি হবে। আপনারা বিরোধের বীজ বপন করছেন...আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি। ভুল সংশোধন করতে ক্ষতি কী?’ কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ২৮৮টি এবং বিপক্ষে ২৩২টি ভোটের মাধ্যমে বিলটি পাস হয়েছে। তাহলে ‘সবাই কি এটা মেনে নিয়েছে? এর মানে হলো (বিলে) কিছু ত্রুটি আছে। আপনাদের এটা দেখা উচিত...।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাঠি যার, জমি তাঁর’ নীতিতে চললে কারও জন্যই ভালো হবে না।

আইনের বিধান নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ওয়াক্ফ বোর্ডে দুজন অমুসলিম সদস্যের প্রয়োজন কেন? তিরুপতিতে কি আপনারা কোনো মুসলিম রেখেছেন? রাম মন্দির ট্রাস্টে কি কোনো মুসলিম সদস্য আছেন? মুসলিমদের তো বাদই দিন, আমার মতো কোনো দলিত হিন্দুকেও সেখানে রাখবেন না।’

খাড়গের কথা প্রতিধ্বনিত করেন অল ইন্ডিয়া ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের (এআইএমআইএম) নেতা ইমতিয়াজ জলিল। তিনি বলেন, ‘যদি ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিমদের নিয়োগ করা হয়, তাহলে কি শিরডি সাইবাবা (মন্দির) ট্রাস্ট বা তিরুপতি মন্দির ট্রাস্টে ইমতিয়াজ জলিলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে? যদি শিখ সম্প্রদায়ের জন্য এমন কোনো বোর্ড তৈরি হয়, তাহলে কোনো অ-শিখকে নিয়োগ করা যাবে না। তাহলে ওয়াক্ফ বোর্ডের ক্ষেত্রেই কেন এমন নিয়ম?’

দীর্ঘ ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিতর্কের পর বৃহস্পতিবার ভোরে লোকসভায় ২৮৮-২৩২ ভোটে বিলটি পাস হয়। প্রস্তাবিত এই আইনটি এরপর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে।

সংশোধিত বিলের বিতর্কিত বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে—কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল এবং ওয়াক্ফ বোর্ডগুলোতে দুজন অমুসলিম সদস্যের বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি। এ ছাড়া, আরেকটি শর্ত হলো, কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম পালনকারী ব্যক্তিরাই ওয়াক্ফে সম্পত্তি দান করতে পারবেন। তবে সরকার কীভাবে নির্ধারণ করবে কে একজন ‘ইসলাম ধর্ম পালনকারী’ মুসলিম, তা নিয়ে বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে। তারা যুক্তি দিয়েছে, ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের দান করা থেকে বিরত রাখা ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকার এবং আইনের সমতার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ।

প্রস্তাবিত আইন অনুসারে, ওয়াক্ফ হিসেবে চিহ্নিত সরকারি সম্পত্তি সরকারের মালিকানাধীন থাকবে না এবং স্থানীয় কালেক্টর এর মালিকানা নির্ধারণ করবেন। বিলে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, কালেক্টরের পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করা সরকারি সম্পত্তির তদন্ত করবেন। বিরোধের ক্ষেত্রে, একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে যে কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফের নাকি সরকারের। এটি বিদ্যমান ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করবে, যেখানে ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনাল এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিত। বিরোধী দল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশ এটিকে ওয়াক্ফ সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।

ছবি

নাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৫২, গৃহহীন প্রায় ২ হাজার

ছবি

এবার জরুরি খাদ্য সহায়তাও বন্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর ঘোষণা, ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিল চীন

চুক্তি সম্পন্ন করতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে ইউক্রেন

মায়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৩৬০০, নিখোঁজ আরও শতাধিক

নাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের গুলিতে ৫২ জন নিহত

ছবি

‘চোখের সামনে যাকে পেয়েছি, তাকেই মেরেছি’

ছবি

ওমরাহ পালনকারীদের ২৯ এপ্রিলের মধ্যে সৌদি আরব ছাড়ার নির্দেশ

ছবি

বিক্ষোভে উত্তাল ভারত, বিজেপি নেতার বাড়িতে আগুন

ছবি

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক

দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘একগুঁয়ে’ প্রেসিডেন্টের বিদায়

হামে দ্বিতীয় মার্কিন শিশুর মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৫০

ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোয় ভারতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী বরখাস্ত

ছবি

গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ

ছবি

গাজা থেকে ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলা, আহত ৩

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্প–ইলন মাস্কবিরোধী সমাবেশ, অংশ নিল লাখো মানুষ

ছবি

ট্রাম্প-মাস্কের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভ

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় দরপতন ঠেকালো মিউচুয়াল ফান্ড

পফের ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু

ছবি

বিতর্কিত ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে ভারতীয় মুসলিমরা

ছবি

গাজায় নিহত ১৭ হাজার শিশু, অনাথ ৩৯ হাজার

আবাসন সংকটে ভুগছে স্পেন, দেশজুড়ে বিক্ষোভ

দুই ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাকে আটক করেছে ইসরায়েল

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ

ছবি

মায়ানমারে ভূমিকম্পে প্রাণহানি বেড়ে ৩৪৭১

ছবি

গাজায় ১৫ স্বাস্থ্যকর্মী হত্যায় ইসরায়েলের ভুল স্বীকার

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক, অংশ নিচ্ছে দেড় শতাধিক সংগঠন

ছবি

ট্রাম্প-মাস্কের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১২০০ বিক্ষোভের প্রস্তুতি

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৯ শিশুসহ নিহত ১৮

ছবি

গাজায় প্রতিদিন হতাহত হচ্ছে ১০০ শিশু

ছবি

চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ, সতর্ক করলেন ট্রাম্প

টিকটককে যুক্তরাষ্ট্রে আরও ৭৫ দিন সময় দিলেন ট্রাম্প

৭ দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাপুয়া নিউগিনি

ছবি

সাগাইংয়ের বাতাসে লাশের গন্ধ, বাইরে বাঁচার লড়াই

ছবি

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ: কোন পণ্যে মার্কিনীদের খরচ বাড়বে

ছবি

চীনের পাল্টা শুল্কে ‘ভুল করেছে তারা, আতঙ্কে পড়েছে’: ট্রাম্প

tab

আন্তর্জাতিক

ভারতে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল পাস, কী আছে এতে

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

ভারতের লোকসভার পর রাজ্যসভায়ও পাস হয়ে গেছে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল -এনডিটিভি

শুক্রবার, ০৪ এপ্রিল ২০২৫

ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বলা যায় কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই পাস হয়ে যায় মুসলিমদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল। এরপর, লোকসভায় পাস হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিলটি উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়ও দীর্ঘ বিতর্ক শেষে সহজেই পার হয়ে গেল। ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ১২৮টি এবং বিপক্ষে ৯৫টি ভোট পড়ে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল তাদের ৭ এমপিকে উচ্চকক্ষ ‘নিজের মর্জি অনুসারে ভোটের’ সুযোগ করে দেয়। দল জানায়, তারা নিজেদের ইচ্ছানুসারে ভোট দিতে পারবেন।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতা সস্মিত পাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল’ নিয়ে ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অংশের অনুভূতি’ বিবেচনা করার পরেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ্যসভায় বিলটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে বিজেপি সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজ্জু বিতর্কের শুরুতেই অস্বীকার করেন যে, বিলটি মুসলিম স্বার্থের ক্ষতি করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ওয়াক্ফ বোর্ডের ব্যবস্থাপনায়, সৃষ্টিতে এবং সুবিধাভোগীতে অমুসলিমদের কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। এগুলো সম্পূর্ণরূপে মুসলিমদের জন্যই থাকবে।

বিলটি ধর্ম নিয়ে নয়, বরং সম্পত্তি এবং সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এবং এর লক্ষ্য দুর্নীতি নির্মূল করা উল্লেখ করে রিজ্জু বলেন, এখন থেকে কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফ হিসেবে ঘোষণার আগে মালিকানার প্রমাণ দাখিল করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এর ফলে ওয়াক্ফ বোর্ডের দাবি করা কোনো সম্পত্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়াক্ফ বলে গণ্য হওয়ার যে বিধান ছিল তা বাতিল হয়ে যাবে।

কিরেন রিজ্জু এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৃহস্পতিবার বেশ কিছু সম্পত্তির তালিকা দিয়েছিলেন যেগুলো ওয়াক্ফ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে—দিল্লির ল্যুটিয়েন্স জোনের সম্পত্তি, তামিলনাড়ুর ৪০০ বছরের পুরোনো এক মন্দির, একটি পাঁচতারকা হোটেলের জন্য নির্ধারিত জমি এবং এমনকি পুরোনো সংসদ ভবনও ছিল। নকংগ্রেসের এমপি সৈয়দ নাসির হুসেন কিরেন রিজ্জুর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘তারা ১২৩টি সম্পত্তি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। এগুলো হয় মসজিদ, কবরস্থান অথবা দরগা।’ তিনি বলেন, ‘আমি সেগুলোর একটি তালিকা জমা দিতে চাই। ব্রিটিশরা যখন ল্যুটিয়েন্স দখল করে, তখন এলাকাটি নির্মাণের পর এই সম্পত্তিগুলো তারাই ওয়াকফকে হস্তান্তর করেছিল। এই সম্পত্তিগুলো ওয়াক্ফের কাছেই আছে। ২০১৩ সালের পরিপ্রেক্ষিতে এগুলোর কথাই তারা উল্লেখ করছেন।’

বিলটির পক্ষে বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডা বিরোধীদের বিষয়টি থেকে মনোযোগ সরানোর এবং ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের বঞ্চিত অংশের দিকে মনোযোগ দিলে ভালো হবে। মুসলিম দেশগুলো যখন ওয়াক্ফ সম্পত্তিকে স্বচ্ছ করছে এবং ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজ করছে, তখন ভারত কেন পরিবর্তন করতে পারবে না—প্রশ্ন রাখেন তিনি।

কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, বিলটিকে মর্যাদার প্রশ্নে পরিণত করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) যা করছেন তা ভালো নয়। এতে দেশে বিরোধ সৃষ্টি হবে। আপনারা বিরোধের বীজ বপন করছেন...আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি। ভুল সংশোধন করতে ক্ষতি কী?’ কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ২৮৮টি এবং বিপক্ষে ২৩২টি ভোটের মাধ্যমে বিলটি পাস হয়েছে। তাহলে ‘সবাই কি এটা মেনে নিয়েছে? এর মানে হলো (বিলে) কিছু ত্রুটি আছে। আপনাদের এটা দেখা উচিত...।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাঠি যার, জমি তাঁর’ নীতিতে চললে কারও জন্যই ভালো হবে না।

আইনের বিধান নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ওয়াক্ফ বোর্ডে দুজন অমুসলিম সদস্যের প্রয়োজন কেন? তিরুপতিতে কি আপনারা কোনো মুসলিম রেখেছেন? রাম মন্দির ট্রাস্টে কি কোনো মুসলিম সদস্য আছেন? মুসলিমদের তো বাদই দিন, আমার মতো কোনো দলিত হিন্দুকেও সেখানে রাখবেন না।’

খাড়গের কথা প্রতিধ্বনিত করেন অল ইন্ডিয়া ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের (এআইএমআইএম) নেতা ইমতিয়াজ জলিল। তিনি বলেন, ‘যদি ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিমদের নিয়োগ করা হয়, তাহলে কি শিরডি সাইবাবা (মন্দির) ট্রাস্ট বা তিরুপতি মন্দির ট্রাস্টে ইমতিয়াজ জলিলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে? যদি শিখ সম্প্রদায়ের জন্য এমন কোনো বোর্ড তৈরি হয়, তাহলে কোনো অ-শিখকে নিয়োগ করা যাবে না। তাহলে ওয়াক্ফ বোর্ডের ক্ষেত্রেই কেন এমন নিয়ম?’

দীর্ঘ ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিতর্কের পর বৃহস্পতিবার ভোরে লোকসভায় ২৮৮-২৩২ ভোটে বিলটি পাস হয়। প্রস্তাবিত এই আইনটি এরপর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে।

সংশোধিত বিলের বিতর্কিত বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে—কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল এবং ওয়াক্ফ বোর্ডগুলোতে দুজন অমুসলিম সদস্যের বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি। এ ছাড়া, আরেকটি শর্ত হলো, কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম পালনকারী ব্যক্তিরাই ওয়াক্ফে সম্পত্তি দান করতে পারবেন। তবে সরকার কীভাবে নির্ধারণ করবে কে একজন ‘ইসলাম ধর্ম পালনকারী’ মুসলিম, তা নিয়ে বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে। তারা যুক্তি দিয়েছে, ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের দান করা থেকে বিরত রাখা ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকার এবং আইনের সমতার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ।

প্রস্তাবিত আইন অনুসারে, ওয়াক্ফ হিসেবে চিহ্নিত সরকারি সম্পত্তি সরকারের মালিকানাধীন থাকবে না এবং স্থানীয় কালেক্টর এর মালিকানা নির্ধারণ করবেন। বিলে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, কালেক্টরের পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করা সরকারি সম্পত্তির তদন্ত করবেন। বিরোধের ক্ষেত্রে, একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে যে কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফের নাকি সরকারের। এটি বিদ্যমান ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করবে, যেখানে ওয়াক্ফ ট্রাইব্যুনাল এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিত। বিরোধী দল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশ এটিকে ওয়াক্ফ সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।

back to top