যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ -এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দেশটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া তাদেও বিরুদ্ধে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ঘোষণার পর অর্থনৈতিক খাতে শোচনীয় অবস্থার পর বিক্ষোভে নেমেছেন এসব মানুষ। শনিবার জার্মানির বার্লিন ও ফ্রাঙ্কফর্ত, ফ্রান্সের প্যারিস এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একত্র হন বিক্ষোভকারীরা।
ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই এবং প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের অভিযোগসহ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিক্ষোভ হয়।শনিবার দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ বিক্ষোভ-সমাবেশ আয়োজন করার কথা ছিল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এক দিনে এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
ওয়াশিংটনের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। হালকা বৃষ্টিও ছিল। এরই মধ্যে শহরটিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হতে শুরু করেন। ওয়াশিংটনের কানেটিকাট অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভকারীদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। শহরের ন্যাশনাল মল এলাকায় যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। এই বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল ‘যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রাজা নেই’, ‘মাস্ককে বিতাড়িত করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড। শনিবার ন্যাশনাল মল এলাকায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ একত্র হবেন বলে আশা করছিলেন বিক্ষোভের আয়োজকেরা।
বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। এর একটি অর্থ হতে পারে,‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’। শনিবার বিক্ষোভে দেড় শটির মতো গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। সেগুলোর একটি ‘ইনডিভিজিবল’। গোষ্ঠীটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, বিশাল এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও তাদের মিত্রদের পরিষ্কার বার্তা পাঠাতে চান যে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে এর সঙ্গে মিল রেখে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ‘হ্যান্ডস অফ’ নামে বিক্ষোভে হয়। বিদেশে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা এ বিক্ষোভের ডাক দেন। জার্মানির বার্লিনে টেসলার বিক্রয়ক্রেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভকারী জড়ো হন। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ছিলো। প্ল্যাকার্ডে জার্মানিতে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ফ্রাঙ্কফর্ন শহরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। তাদের হাতে ধরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র রক্ষা করুন’, ‘হ্যান্ডস অফ’ বা ‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’, ‘ট্রাম্প তোমার কর্মকান্ডে বিশ্ববাসী বিরক্ত, তুমি চলে যাও’। বার্লিনে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন বিক্ষোভকারী। তারা বলেছেন, ‘ইলন তোমাকে কেউ ভোট দেয়নি’। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্যালেস দে লা রিপাবলিকেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। এতে দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী অংশ নেন। যাদের বেশিরভাগই মার্কিন নাগরিক।
এ সময় কয়েকজন বিক্ষোভকারী ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। অনেকের হাতে ‘অত্যাচারীকে প্রতিহত করুন’, ‘আইনের শাসন’ ও ‘গণতন্ত্র রক্ষা করুন’ লেখা ব্যানার দেখা যায়। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন ও পর্তুগালের রাজধানী লিসবনসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প ও মাস্কবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর নতুন গঠন করা সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দেন ইলন মাস্ককে। এরপর থেকে তার দল কেন্দ্রীয় সরকারের ২৩ লাখ কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখের বেশি পদ শূন্য করেছে। শনিবার মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর শহরের কাছে সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন শত শত মানুষ। সংস্থাটি ডিওজিইর বড় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটির সাত হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিদের হাতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের দেশ কোন দিকে যাচ্ছে’, ‘ডিওজিইকে চাকরিচ্যুত করুন’, ‘মাস্ককে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিন’।
লিন্ডা ফ্যালকাও নামের একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি আতঙ্কিত, আমি ক্ষুব্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের কী হতে পারে, তা ভেবে আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ছি। ’ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শনিবার ডেলাওয়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিনেসোটা, মিশিগান ও নিউইয়র্কেও ট্রাম্পবিরোধী জমায়েত করেন বিক্ষোভকারীরা।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ সমালোচিত হয়েছে। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিন থেকেই একরাশ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ অভিবাসন, বিদেশি সহায়তা, ট্রান্সজেন্ডার অধিকারসংক্রান্ত আদেশগুলো। ট্রাম্পের কোনো কোনো আদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মামলা হয়েছে। কোনো কোনো আদেশ স্থগিত করেছেন আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ -এএফপি
রোববার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দেশটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া তাদেও বিরুদ্ধে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ঘোষণার পর অর্থনৈতিক খাতে শোচনীয় অবস্থার পর বিক্ষোভে নেমেছেন এসব মানুষ। শনিবার জার্মানির বার্লিন ও ফ্রাঙ্কফর্ত, ফ্রান্সের প্যারিস এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একত্র হন বিক্ষোভকারীরা।
ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই এবং প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের অভিযোগসহ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিক্ষোভ হয়।শনিবার দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ বিক্ষোভ-সমাবেশ আয়োজন করার কথা ছিল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এক দিনে এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
ওয়াশিংটনের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। হালকা বৃষ্টিও ছিল। এরই মধ্যে শহরটিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হতে শুরু করেন। ওয়াশিংটনের কানেটিকাট অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভকারীদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। শহরের ন্যাশনাল মল এলাকায় যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। এই বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল ‘যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রাজা নেই’, ‘মাস্ককে বিতাড়িত করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড। শনিবার ন্যাশনাল মল এলাকায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ একত্র হবেন বলে আশা করছিলেন বিক্ষোভের আয়োজকেরা।
বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। এর একটি অর্থ হতে পারে,‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’। শনিবার বিক্ষোভে দেড় শটির মতো গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। সেগুলোর একটি ‘ইনডিভিজিবল’। গোষ্ঠীটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, বিশাল এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও তাদের মিত্রদের পরিষ্কার বার্তা পাঠাতে চান যে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে এর সঙ্গে মিল রেখে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ‘হ্যান্ডস অফ’ নামে বিক্ষোভে হয়। বিদেশে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা এ বিক্ষোভের ডাক দেন। জার্মানির বার্লিনে টেসলার বিক্রয়ক্রেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভকারী জড়ো হন। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ছিলো। প্ল্যাকার্ডে জার্মানিতে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ফ্রাঙ্কফর্ন শহরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। তাদের হাতে ধরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র রক্ষা করুন’, ‘হ্যান্ডস অফ’ বা ‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’, ‘ট্রাম্প তোমার কর্মকান্ডে বিশ্ববাসী বিরক্ত, তুমি চলে যাও’। বার্লিনে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন বিক্ষোভকারী। তারা বলেছেন, ‘ইলন তোমাকে কেউ ভোট দেয়নি’। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্যালেস দে লা রিপাবলিকেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। এতে দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী অংশ নেন। যাদের বেশিরভাগই মার্কিন নাগরিক।
এ সময় কয়েকজন বিক্ষোভকারী ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। অনেকের হাতে ‘অত্যাচারীকে প্রতিহত করুন’, ‘আইনের শাসন’ ও ‘গণতন্ত্র রক্ষা করুন’ লেখা ব্যানার দেখা যায়। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন ও পর্তুগালের রাজধানী লিসবনসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প ও মাস্কবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর নতুন গঠন করা সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দেন ইলন মাস্ককে। এরপর থেকে তার দল কেন্দ্রীয় সরকারের ২৩ লাখ কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখের বেশি পদ শূন্য করেছে। শনিবার মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর শহরের কাছে সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন শত শত মানুষ। সংস্থাটি ডিওজিইর বড় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটির সাত হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিদের হাতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের দেশ কোন দিকে যাচ্ছে’, ‘ডিওজিইকে চাকরিচ্যুত করুন’, ‘মাস্ককে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিন’।
লিন্ডা ফ্যালকাও নামের একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি আতঙ্কিত, আমি ক্ষুব্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের কী হতে পারে, তা ভেবে আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ছি। ’ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শনিবার ডেলাওয়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিনেসোটা, মিশিগান ও নিউইয়র্কেও ট্রাম্পবিরোধী জমায়েত করেন বিক্ষোভকারীরা।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ সমালোচিত হয়েছে। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিন থেকেই একরাশ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ অভিবাসন, বিদেশি সহায়তা, ট্রান্সজেন্ডার অধিকারসংক্রান্ত আদেশগুলো। ট্রাম্পের কোনো কোনো আদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মামলা হয়েছে। কোনো কোনো আদেশ স্থগিত করেছেন আদালত।