alt

আন্তর্জাতিক

ভারতজুড়ে ছড়াচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষ, কাশ্মীরিদের জীবন বিপন্ন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কাশ্মীরে বিক্ষোভ -এপি

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রতি কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং হেনস্তার ঘটনা বেড়ে গেছে। ভারতের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর কাশ্মীরি ছাত্রদের প্রতি এমন হুমকি এবং মারধরের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতের সমাজে মুসলমান ও কাশ্মীরি-বিরোধী ঘৃণার পরিস্থিতি আরও জোরদার হয়েছে, যা দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যেখানে একদিকে পহেলগাম হামলার পর কাশ্মীরিদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে চলমান ঘৃণা-প্রচার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাচ্ছে।

পহেলগামের হামলার পর কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি এবং হেনস্তার বেশ কয়েকটি ঘটনা ভারতজুড়ে ঘটেছে। পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পরে, ভারতে অন্যান্য অঞ্চলে কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শত্রুতা স্পষ্টভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম সূত্রে জানানো হয়েছে যে কাশ্মীরি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে রাস্তায় মারধর করা, হত্যার হুমকি দেয়া, এমনকি শহর ছাড়তে বলা হয়েছে। পহেলগামের হামলার পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ানোর পাশাপাশি কাশ্মীরি মুসলমানদেরও লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। বিশেষ করে কাশ্মীরি ছাত্রদের, যারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পড়াশোনা করছেন, তারা এ পরিস্থিতিতে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে উত্তরাখ-ের দেরাদুনে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে একটি হিন্দু সংগঠনের নেতা দাবি করছেন, তিনি কাশ্মীরিদের ভয়াবহ হুমকি দিচ্ছেন। ওই ব্যক্তি বলছেন যে, যেখানেই কাশ্মীরি দেখবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একাধিক কাশ্মীরি ছাত্রকে শহর ছাড়ার জন্যও বলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে ঘটছে। কাশ্মীরি ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন জানায় যে, তারা সারা দেশ থেকে মারধর ও হুমকির ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ পেয়েছে। দেরাদুন, চ-ীগড়, প্রয়াগরাজসহ অন্তত আটটি শহরে মারধর এবং হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে।

কাশ্মীরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে হেনস্তার ব্যাপারে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি থাকলেও, সেগুলো সেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না। কাশ্মীরি ছাত্রদের একটি সংগঠন জানায়, সরকার এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। কারণ, পহেলগামের হামলার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, এবং কাশ্মীরি ছাত্রদের ওপর সহিংসতার খবর আরও ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনও স্থানীয়ভাবে এই ঘটনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সচেষ্ট হলেও, তাদের কার্যকরী পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ।

পহেলগামের হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন কাশ্মীরি ছিলেন, যিনি মুসলমান ছিলেন এবং পর্যটকদের জন্য ঘোড়া চালিয়ে রুটি-রুজি কামাতেন। তিনি হামলাকারীদের একজনের বন্দুক কেড়ে নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। হামলার পর ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে কাশ্মীরি ড্রাইভাররা তাদের গাড়িতে করে আহতদের সরিয়ে নিয়েছেন। এর পরই জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ মিছিল এবং হরতাল পালিত হয়। যদিও এই হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, তবুও কাশ্মীরি সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতা ও ঘৃণার মাত্রা বাড়ছে। বিশেষ করে কাশ্মীরি ছাত্রদের মারধর এবং অপমানের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

কাশ্মীরি ছাত্রনেতা নাসির খুয়েমি বলেন, “নিরীহ কাশ্মীরি ছাত্রদের হেনস্তা হতে হবে, মার খেতে হবে, কাশ্মীরের পর্যটন ভেঙে পড়বে, ভারতের সমাজ ভাগ হয়ে যাবে আসলে এটাই তো চেয়েছিল পড়শী দেশ।” কাশ্মীরি সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষের এই পরিস্থিতি, বিশেষত তাদের নিপীড়ন, ভারতের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। পহেলগামের হামলার পর এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা দেশের ধর্মীয় এবং জাতিগত বিভাজনকে আরও তীব্র করেছে। বিশেষ করে কাশ্মীরিদের হেনস্তা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি করার মধ্য দিয়ে সমাজে গভীর বিভাজন তৈরি করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি দাবি করেছিলেন যে কলকাতার একটি এলাকায় দুজন কাশ্মীরি লোক ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে উঠেছেন, তারা বাড়ির ছাদে ‘উন্নতমানের যন্ত্র’ বসিয়েছেন। তবে তদন্তের পরে পুলিশ জানায় যে তারা কাশ্মীরি নয়, বরং তারা মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা এবং ব্যবসার জন্য সেখানে এসেছেন। এসব ভুয়া তথ্য ও গুজবকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত করা হয়েছে কাশ্মীরি জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য।

পহেলগামের হামলার পর মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার প্রসার আরও বৃদ্ধি পায়। এই হামলার পর জানানো হয় যে হামলাকারীরা নিহতদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চেয়েছিল। এতে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ভারতীয় সমাজের কিছু অংশ মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে, তবে তাও সীমাবদ্ধ নয়। ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদেরও আক্রমণ করা হচ্ছে।

কাশ্মীরি ছাত্রদের ওপর চলমান সহিংসতা এবং ঘৃণার বিপক্ষে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রতিরোধ গড়েছেন। তিনি বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক যে কিছু লোক আমাদের কাশ্মীরি ভাই-বোনদের আক্রমণ করছেন। এই জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে একজোট হয়ে থাকাটা খুবই জরুরি।” তিনি এটাও বলেন, সমাজকে বিভক্ত করার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং তাই প্রতিটি ভারতীয়কে একজোট হয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

পহেলগামের হামলার পর ভারতের সমাজে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু কাশ্মীরি জনগণের জন্য নয়, বরং দেশটির সামগ্রিক সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। কাশ্মীরি জনগণের ওপর ঘৃণার প্রসার এবং মুসলমান-বিরোধী মনোভাব দেশটির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সমাজের সবাইকে একত্রিত হয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে, যাতে দেশের শান্তি বজায় থাকে এবং জাতিগত, ধর্মীয় বিভাজন কেটে গিয়ে একটি সমন্বিত সমাজ তৈরি করা সম্ভব হয়।

ছবি

‘গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি ইসরায়েল’

তৃতীয় দফা ভোটেও জয়, জোহরান এখন নিউইয়র্ক সিটির আনুষ্ঠানিক মেয়র প্রার্থী

ছবি

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের বড় ঘোষণা

মুসলিম দেশ কাজাখস্তানে বোরকা ও নিকাব পরা নিষিদ্ধ

ইরান ভ্রমণে আবারও নাগরিকদের সতর্ক করল চীন

ছবি

হরমুজ প্রণালিতে ইরানের মাইন পাতার প্রস্তুতি, উদ্বেগে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

গাজায় ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতিতে রাজি ইসরায়েল: ট্রাম্প

ছবি

তেলেঙ্গানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪৪, নিখোঁজ ১২ শ্রমিক

ছবি

আরও উত্তপ্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব নিল পাকিস্তান

ফোনালাপ ফাঁসের জেরে বরখাস্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র

ভারতে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ৩৪

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া কতদূর

ছবি

সীমান্ত বিরোধ নিয়ে অডিও ফাঁস: থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

ছবি

ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানের হামলা থেকে বাদ গেল না ক্যাফেও, গাজায় এক দিনে নিহত ৯৫

ছবি

ইসরায়েলকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ: বিনিয়োগ প্রত্যাহার করল নরওয়ের বৃহৎ পেনশন কোম্পানি কেএলপি

ছবি

‘শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, দেখা যায় খালি চোখেও’

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্ত করার দাবিতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ

ইরান শান্তি চাইলে উঠে যেতে পারে নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

হুমকি ও শান্তির বার্তা, গাজা নিয়ে দ্বৈত নীতি

পাকিস্তানের জন্য ৩৪০ কোটি ডলারের ঋণ নবায়ন করলো চীন

ছবি

আলোচনা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৭২

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ফায়ার সার্ভিসের ২ কর্মী নিহত

ছবি

সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, উত্তাল বেলগ্রেড

‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ : ফের ট্রাম্পের সমালোচনায় ইলন মাস্ক

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অভিযোগ ইরানের

ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে

নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিচার বন্ধ করতে চান ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি চুক্তির উদ্যোগের পরও গাজায় থেমে নেই হত্যাযজ্ঞ

ছবি

পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যায় দুই দিনে ৩২ জনের মৃত্যু

ছবি

পুরিতে রথযাত্রায় ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে নিহত ৩, আহত ১০

ছবি

নর্থ ওয়াজিরিস্তানে সামরিক বহরে আত্মঘাতী হামলা, শিশু আহত ছয়

কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছেন ট্রাম্প

tab

আন্তর্জাতিক

ভারতজুড়ে ছড়াচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষ, কাশ্মীরিদের জীবন বিপন্ন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কাশ্মীরে বিক্ষোভ -এপি

রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রতি কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং হেনস্তার ঘটনা বেড়ে গেছে। ভারতের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর কাশ্মীরি ছাত্রদের প্রতি এমন হুমকি এবং মারধরের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতের সমাজে মুসলমান ও কাশ্মীরি-বিরোধী ঘৃণার পরিস্থিতি আরও জোরদার হয়েছে, যা দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যেখানে একদিকে পহেলগাম হামলার পর কাশ্মীরিদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে চলমান ঘৃণা-প্রচার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাচ্ছে।

পহেলগামের হামলার পর কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি এবং হেনস্তার বেশ কয়েকটি ঘটনা ভারতজুড়ে ঘটেছে। পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পরে, ভারতে অন্যান্য অঞ্চলে কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শত্রুতা স্পষ্টভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম সূত্রে জানানো হয়েছে যে কাশ্মীরি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে রাস্তায় মারধর করা, হত্যার হুমকি দেয়া, এমনকি শহর ছাড়তে বলা হয়েছে। পহেলগামের হামলার পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ানোর পাশাপাশি কাশ্মীরি মুসলমানদেরও লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। বিশেষ করে কাশ্মীরি ছাত্রদের, যারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পড়াশোনা করছেন, তারা এ পরিস্থিতিতে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে উত্তরাখ-ের দেরাদুনে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে একটি হিন্দু সংগঠনের নেতা দাবি করছেন, তিনি কাশ্মীরিদের ভয়াবহ হুমকি দিচ্ছেন। ওই ব্যক্তি বলছেন যে, যেখানেই কাশ্মীরি দেখবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একাধিক কাশ্মীরি ছাত্রকে শহর ছাড়ার জন্যও বলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে ঘটছে। কাশ্মীরি ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন জানায় যে, তারা সারা দেশ থেকে মারধর ও হুমকির ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ পেয়েছে। দেরাদুন, চ-ীগড়, প্রয়াগরাজসহ অন্তত আটটি শহরে মারধর এবং হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে।

কাশ্মীরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে হেনস্তার ব্যাপারে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি থাকলেও, সেগুলো সেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না। কাশ্মীরি ছাত্রদের একটি সংগঠন জানায়, সরকার এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। কারণ, পহেলগামের হামলার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, এবং কাশ্মীরি ছাত্রদের ওপর সহিংসতার খবর আরও ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনও স্থানীয়ভাবে এই ঘটনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সচেষ্ট হলেও, তাদের কার্যকরী পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ।

পহেলগামের হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন কাশ্মীরি ছিলেন, যিনি মুসলমান ছিলেন এবং পর্যটকদের জন্য ঘোড়া চালিয়ে রুটি-রুজি কামাতেন। তিনি হামলাকারীদের একজনের বন্দুক কেড়ে নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। হামলার পর ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে কাশ্মীরি ড্রাইভাররা তাদের গাড়িতে করে আহতদের সরিয়ে নিয়েছেন। এর পরই জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ মিছিল এবং হরতাল পালিত হয়। যদিও এই হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, তবুও কাশ্মীরি সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতা ও ঘৃণার মাত্রা বাড়ছে। বিশেষ করে কাশ্মীরি ছাত্রদের মারধর এবং অপমানের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

কাশ্মীরি ছাত্রনেতা নাসির খুয়েমি বলেন, “নিরীহ কাশ্মীরি ছাত্রদের হেনস্তা হতে হবে, মার খেতে হবে, কাশ্মীরের পর্যটন ভেঙে পড়বে, ভারতের সমাজ ভাগ হয়ে যাবে আসলে এটাই তো চেয়েছিল পড়শী দেশ।” কাশ্মীরি সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষের এই পরিস্থিতি, বিশেষত তাদের নিপীড়ন, ভারতের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। পহেলগামের হামলার পর এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা দেশের ধর্মীয় এবং জাতিগত বিভাজনকে আরও তীব্র করেছে। বিশেষ করে কাশ্মীরিদের হেনস্তা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি করার মধ্য দিয়ে সমাজে গভীর বিভাজন তৈরি করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি দাবি করেছিলেন যে কলকাতার একটি এলাকায় দুজন কাশ্মীরি লোক ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে উঠেছেন, তারা বাড়ির ছাদে ‘উন্নতমানের যন্ত্র’ বসিয়েছেন। তবে তদন্তের পরে পুলিশ জানায় যে তারা কাশ্মীরি নয়, বরং তারা মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা এবং ব্যবসার জন্য সেখানে এসেছেন। এসব ভুয়া তথ্য ও গুজবকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত করা হয়েছে কাশ্মীরি জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য।

পহেলগামের হামলার পর মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার প্রসার আরও বৃদ্ধি পায়। এই হামলার পর জানানো হয় যে হামলাকারীরা নিহতদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চেয়েছিল। এতে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ভারতীয় সমাজের কিছু অংশ মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে, তবে তাও সীমাবদ্ধ নয়। ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদেরও আক্রমণ করা হচ্ছে।

কাশ্মীরি ছাত্রদের ওপর চলমান সহিংসতা এবং ঘৃণার বিপক্ষে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রতিরোধ গড়েছেন। তিনি বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক যে কিছু লোক আমাদের কাশ্মীরি ভাই-বোনদের আক্রমণ করছেন। এই জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে একজোট হয়ে থাকাটা খুবই জরুরি।” তিনি এটাও বলেন, সমাজকে বিভক্ত করার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং তাই প্রতিটি ভারতীয়কে একজোট হয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

পহেলগামের হামলার পর ভারতের সমাজে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু কাশ্মীরি জনগণের জন্য নয়, বরং দেশটির সামগ্রিক সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। কাশ্মীরি জনগণের ওপর ঘৃণার প্রসার এবং মুসলমান-বিরোধী মনোভাব দেশটির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সমাজের সবাইকে একত্রিত হয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে, যাতে দেশের শান্তি বজায় থাকে এবং জাতিগত, ধর্মীয় বিভাজন কেটে গিয়ে একটি সমন্বিত সমাজ তৈরি করা সম্ভব হয়।

back to top