ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরের শ্রীনগরের ক্লক টাওয়ারের কাছে পর্যটকদের সামনে ভারতীয় সৈন্যরা-এনডিটিভি ভারতের দাওকে গ্রামটি তিন দিক থেকে পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। এখানে বাস করা ৬৫ বছরের হারদেব সিং জানেন, যুদ্ধের সময় কী করতে হয় কারণ তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিক যুদ্ধের সাক্ষী। হারদেব স্মৃতিচারণ করেন, “১৯৯৯ আর ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় আমরা নারীদের, শিশুদের, গবাদি পশু এবং বেশিরভাগ তরুণদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিলাম। আমরা তখন নিজের জমিতেও যেতে পারিনি। গ্রামের বৃদ্ধরাই শুধু থাকতেন বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য যাতে লুটপাট না হয়।”
ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এখনো কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি, তবে যুদ্ধের আশঙ্কায় গ্রামের মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। হারদেব বলছেন, “কাশ্মিরে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে দুই দেশই বহু বছর পিছিয়ে যাবে এবং মানবিক ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হবে।” দাওকে গ্রামে প্রায় ১৫০০ মানুষ বাস করে। গ্রামের পাশ দিয়ে কাঁটাতার ঘেরা সীমান্ত চলে গেছে, আর সেটি পাহারায় থাকে সেনারা।
৩৮ বছর বয়সী গুরুবিন্দর সিং স্মরণ করেন ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময়কার স্মৃতি। যদিও ওই সংঘর্ষ হিমালয়ের দুর্গম এলাকায় হয়েছিল, তবে পাঞ্জাবের সূর্যতপ্ত মাঠও বিপদ থেকে মুক্ত ছিল না। গুরুবিন্দর বলেন, “আমাদের জমিতে মাইন পুঁতে দেওয়া হয়েছিল, ফলে আমরা মাঠে কাজ করতে পারিনি।” তিনি আশা করছেন, যুদ্ধ নিয়ে নেতাদের উন্মাদ বিবৃতি যদি বাস্তব সংঘাতে পরিণত হয়, তবুও তাদের গ্রাম যেন শান্তিতে থাকে। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, আসল যুদ্ধ হিমালয় অঞ্চলেই হবে। আমাদের গ্রামে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।”
কাছাকাছি রাজতাল নামে আরেক সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাস করেন সরদার লাখা সিং। তার স্মৃতিতে এখনও ভেসে ওঠে সেই সময়, যখন কাঁটাতারের বেড়া ছিল না এবং কৃষকরা অবাধে ওপারের জমিতে গবাদি পশু চরাতেন। ৭৭ বছর বয়সী লাখা বলেন, “আমরা তখন ওপারের মাঠেও গবাদি পশু চরাতে যেতাম”। তবে এখন বিশেষ অনুমতি ছাড়া সীমান্তবর্তী জমিতে প্রবেশ করা যায় না এবং গেলেও সেনাদের সাথে নিয়ে যেতে হয়।
৬৫ বছরের কৃষক গুরুভিল সিং বলেন, “যখন-তখন জমিতে যেতে পারি না, ফলে চাষাবাদের সময় কমে গেছে।” গত সপ্তাহে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যাতে বলা হয় সীমান্তের কাছে কৃষকদের মাঠে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামের সর্বজ্যেষ্ঠদের একজন সরদার লাখা সিং। তিনি তরুণদের আশ্বস্ত করে বলেন, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যা হওয়ার তা হবেই। ১৯৬৫ আর ১৯৭১ সালের যুদ্ধও কোনও সতর্কতা ছাড়া হঠাৎ শুরু হয়েছিল।” ৩৫ বছর বয়সী গুরুবিন্দর সিং বলেন, তিনি এই কথা মনে রাখার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “এখনকার যুদ্ধ হবে উচ্চপ্রযুক্তির, অতীতের মতো সরাসরি দখল বা তরবারির লড়াই হবে না। যদি যুদ্ধ হয়, তা পুরো দেশের জন্যই হবে, শুধু সীমান্তের জন্য নয়।”
এদিকে, অভিযানের সুবিধার্থে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাশ্মিরে অর্ধেকেরও বেশি পর্যটন কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে মোট ৮৭টি পর্যটন স্পট রয়েছে। সেসবের মধ্যে ইউসমার্গ, তাওসি ময়দান, দুধপাথরি, আহরবাল, কাউসারনাগ, বাঙ্গুস, চান্দিগাম, উলার, রামপোরাসহ মোট ৪৮টি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গুলমার্গ, সোনমার্গ, ডাল লেকসহ অন্যান্য যে ৪০টি পর্যটনকেন্দ্র এখনও খোলা রয়েছে, সেগুলোতেও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি পর্যটক। কাশ্মিরভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ভয়াবহ এই হামলার পর ফুঁসে ওঠে ভারত, জম্মু ও কাশ্মিরজুড়ে শুরু হয়েছে সেনা অভিযান। এখন পর্যন্ত হামলায় সংশ্লিষ্ট কোনো সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, তবে একাধিক জঙ্গির ঘরবাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এর প্রত্যাঘাত হিসেবে ফের হামলার ছক কষছে সন্ত্রাসীরা। জম্মু ও কাশ্মিরের নানা প্রান্তে একাধিক ‘স্লিপার সেল’ সক্রিয় হয়ে উঠছে বলেও জানানো হয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। ফলে যে কোনো সময় কাশ্মিরে ফের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আবার যেসব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে পুরোদমে চলছে অভিযান। তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আপাতত কাশ্মিরের ৪৮টি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরের শ্রীনগরের ক্লক টাওয়ারের কাছে পর্যটকদের সামনে ভারতীয় সৈন্যরা-এনডিটিভি ভারতের দাওকে গ্রামটি তিন দিক থেকে পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। এখানে বাস করা ৬৫ বছরের হারদেব সিং জানেন, যুদ্ধের সময় কী করতে হয় কারণ তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিক যুদ্ধের সাক্ষী। হারদেব স্মৃতিচারণ করেন, “১৯৯৯ আর ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় আমরা নারীদের, শিশুদের, গবাদি পশু এবং বেশিরভাগ তরুণদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিলাম। আমরা তখন নিজের জমিতেও যেতে পারিনি। গ্রামের বৃদ্ধরাই শুধু থাকতেন বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য যাতে লুটপাট না হয়।”
ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এখনো কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি, তবে যুদ্ধের আশঙ্কায় গ্রামের মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। হারদেব বলছেন, “কাশ্মিরে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে দুই দেশই বহু বছর পিছিয়ে যাবে এবং মানবিক ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হবে।” দাওকে গ্রামে প্রায় ১৫০০ মানুষ বাস করে। গ্রামের পাশ দিয়ে কাঁটাতার ঘেরা সীমান্ত চলে গেছে, আর সেটি পাহারায় থাকে সেনারা।
৩৮ বছর বয়সী গুরুবিন্দর সিং স্মরণ করেন ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময়কার স্মৃতি। যদিও ওই সংঘর্ষ হিমালয়ের দুর্গম এলাকায় হয়েছিল, তবে পাঞ্জাবের সূর্যতপ্ত মাঠও বিপদ থেকে মুক্ত ছিল না। গুরুবিন্দর বলেন, “আমাদের জমিতে মাইন পুঁতে দেওয়া হয়েছিল, ফলে আমরা মাঠে কাজ করতে পারিনি।” তিনি আশা করছেন, যুদ্ধ নিয়ে নেতাদের উন্মাদ বিবৃতি যদি বাস্তব সংঘাতে পরিণত হয়, তবুও তাদের গ্রাম যেন শান্তিতে থাকে। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, আসল যুদ্ধ হিমালয় অঞ্চলেই হবে। আমাদের গ্রামে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।”
কাছাকাছি রাজতাল নামে আরেক সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাস করেন সরদার লাখা সিং। তার স্মৃতিতে এখনও ভেসে ওঠে সেই সময়, যখন কাঁটাতারের বেড়া ছিল না এবং কৃষকরা অবাধে ওপারের জমিতে গবাদি পশু চরাতেন। ৭৭ বছর বয়সী লাখা বলেন, “আমরা তখন ওপারের মাঠেও গবাদি পশু চরাতে যেতাম”। তবে এখন বিশেষ অনুমতি ছাড়া সীমান্তবর্তী জমিতে প্রবেশ করা যায় না এবং গেলেও সেনাদের সাথে নিয়ে যেতে হয়।
৬৫ বছরের কৃষক গুরুভিল সিং বলেন, “যখন-তখন জমিতে যেতে পারি না, ফলে চাষাবাদের সময় কমে গেছে।” গত সপ্তাহে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যাতে বলা হয় সীমান্তের কাছে কৃষকদের মাঠে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামের সর্বজ্যেষ্ঠদের একজন সরদার লাখা সিং। তিনি তরুণদের আশ্বস্ত করে বলেন, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যা হওয়ার তা হবেই। ১৯৬৫ আর ১৯৭১ সালের যুদ্ধও কোনও সতর্কতা ছাড়া হঠাৎ শুরু হয়েছিল।” ৩৫ বছর বয়সী গুরুবিন্দর সিং বলেন, তিনি এই কথা মনে রাখার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “এখনকার যুদ্ধ হবে উচ্চপ্রযুক্তির, অতীতের মতো সরাসরি দখল বা তরবারির লড়াই হবে না। যদি যুদ্ধ হয়, তা পুরো দেশের জন্যই হবে, শুধু সীমান্তের জন্য নয়।”
এদিকে, অভিযানের সুবিধার্থে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাশ্মিরে অর্ধেকেরও বেশি পর্যটন কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে মোট ৮৭টি পর্যটন স্পট রয়েছে। সেসবের মধ্যে ইউসমার্গ, তাওসি ময়দান, দুধপাথরি, আহরবাল, কাউসারনাগ, বাঙ্গুস, চান্দিগাম, উলার, রামপোরাসহ মোট ৪৮টি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গুলমার্গ, সোনমার্গ, ডাল লেকসহ অন্যান্য যে ৪০টি পর্যটনকেন্দ্র এখনও খোলা রয়েছে, সেগুলোতেও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি পর্যটক। কাশ্মিরভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ভয়াবহ এই হামলার পর ফুঁসে ওঠে ভারত, জম্মু ও কাশ্মিরজুড়ে শুরু হয়েছে সেনা অভিযান। এখন পর্যন্ত হামলায় সংশ্লিষ্ট কোনো সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, তবে একাধিক জঙ্গির ঘরবাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এর প্রত্যাঘাত হিসেবে ফের হামলার ছক কষছে সন্ত্রাসীরা। জম্মু ও কাশ্মিরের নানা প্রান্তে একাধিক ‘স্লিপার সেল’ সক্রিয় হয়ে উঠছে বলেও জানানো হয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। ফলে যে কোনো সময় কাশ্মিরে ফের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আবার যেসব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে পুরোদমে চলছে অভিযান। তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আপাতত কাশ্মিরের ৪৮টি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।