বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কাশ্মীরে হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তান সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে -এএফপি
সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যু হয়। ওই হামলার জন্য নয়াদিল্লি শুরু থেকেই ইসলামাবাদকে দোষারোপ করে আসছে, যদিও এ বিষয়ে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
অপরদিকে পাকিস্তানও শুরু থেকেই ভারতের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ভারত থেমে নেই। কোনো ধরনের প্রমাণ না থাকলেও তারা ইসলামাবাদকেই পহেলগামে হামলার জন্য দোষী করে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারত সরকার সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত, প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে সীমান্তের একদিকে যেমন ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের’ দাবি জোরালো হয়েছে তেমনই অন্যপ্রান্তে ‘সমুচিত জবাব’ দেয়ার দৃঢ় সংকল্পও নেয়া হয়েছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের অনন্তনাগ পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারীদের স্কেচ প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে প্রমাণের অভাবে প্রথাগত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য সেগুলোকে আরও উসকে দিচ্ছে। এরই মধ্যে কাশ্মীরে ওই ভয়াবহ হামলার প্রতিশোধ নিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন। সেখানে তিনি পহেলগাম হামলার জবাবের ধরন, লক্ষ্যবস্তু ও সময় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন।
মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা আমাদের জাতীয় সংকল্প এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর তার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ওই বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও চিফ অব স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানও অংশ নেন। ভারতের সামরিক বাহিনীকে মোদির পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের ঘোষণার পর বুধবার (৩০ এপ্রিল) পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, পাকিস্তানের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, ভারত পহেলগামে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট অভিযোগের অজুহাতে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান এই অঞ্চলে ভারতের এমন আগ্রাসী ভূমিকা এবং বেপরোয়া আচরণকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং এই অভিশাপের যন্ত্রণা সত্যিই তারা জানে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বের যে কোনো স্থানে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছি। তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান এই হামলার সত্যতা নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি নিরপেক্ষ কমিশন দ্বারা বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ এবং স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, যুক্তির পথ অনুসরণ করার পরিবর্তে ভারত স্পষ্টতই অযৌক্তিক এবং সংঘাতের বিপজ্জনক পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিণতি এই অঞ্চল এবং তার বাইরেও বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারতের এ ধরনের সামরিক অভিযানের জবাব নিশ্চিতভাবে এবং চূড়ান্ত আকারে দেয়া হবে।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ খান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবারও নির্বাচন সামনে রেখে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাবকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। পুলওয়ামা থেকে বর্তমান পর্ব পর্যন্ত তিনি (মোদি) জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এবং নির্বাচনী সুবিধা অর্জনের জন্য বারবার নাটক মঞ্চস্থ করছেন বলেও অভিযোগ করেন রানা সানাউল্লাহ খান।
তবে শাহবাজ শরিফের এই উপদেষ্টা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, মোদি ছোটখাটো উসকানি বা কৌশল অবলম্বন করতে পারলেও তিনি পারমাণবিক অস্ত্রধারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার অবস্থানে নেই। কোনো সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর, চূড়ান্ত ও উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে বলেও জানান। রানা সানাউল্লাহ খান আরও বলেন, যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে এ ব্যাপারে সমগ্র জাতি একমত।
পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই ফ্রান্সের কাছ থেকে ২৬টি রাফায়েল-মেরিন যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। এই চুক্তির বিষয়ে সে দেশের সঙ্গে কথাবার্তা আগেই চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে এমন একটা সময় যখন পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা তুঙ্গে। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ৭৪০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে ফ্রান্স থেকে যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। এই যুদ্ধবিমান আইএনএস বিক্রান্ত থেকে পরিচালিত হবে। পুরোনো যুদ্ধবিমানগুলোকে ধীরে ধীরে সরিয়ে এই আধুনিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করার কথা ভাবছে ভারত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কাশ্মীরে হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তান সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে -এএফপি
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যু হয়। ওই হামলার জন্য নয়াদিল্লি শুরু থেকেই ইসলামাবাদকে দোষারোপ করে আসছে, যদিও এ বিষয়ে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
অপরদিকে পাকিস্তানও শুরু থেকেই ভারতের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ভারত থেমে নেই। কোনো ধরনের প্রমাণ না থাকলেও তারা ইসলামাবাদকেই পহেলগামে হামলার জন্য দোষী করে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারত সরকার সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত, প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে সীমান্তের একদিকে যেমন ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের’ দাবি জোরালো হয়েছে তেমনই অন্যপ্রান্তে ‘সমুচিত জবাব’ দেয়ার দৃঢ় সংকল্পও নেয়া হয়েছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের অনন্তনাগ পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হামলাকারীদের স্কেচ প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে প্রমাণের অভাবে প্রথাগত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য সেগুলোকে আরও উসকে দিচ্ছে। এরই মধ্যে কাশ্মীরে ওই ভয়াবহ হামলার প্রতিশোধ নিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন। সেখানে তিনি পহেলগাম হামলার জবাবের ধরন, লক্ষ্যবস্তু ও সময় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন।
মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা আমাদের জাতীয় সংকল্প এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর তার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ওই বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও চিফ অব স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানও অংশ নেন। ভারতের সামরিক বাহিনীকে মোদির পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের ঘোষণার পর বুধবার (৩০ এপ্রিল) পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, পাকিস্তানের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, ভারত পহেলগামে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট অভিযোগের অজুহাতে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান এই অঞ্চলে ভারতের এমন আগ্রাসী ভূমিকা এবং বেপরোয়া আচরণকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং এই অভিশাপের যন্ত্রণা সত্যিই তারা জানে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বের যে কোনো স্থানে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছি। তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান এই হামলার সত্যতা নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি নিরপেক্ষ কমিশন দ্বারা বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ এবং স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, যুক্তির পথ অনুসরণ করার পরিবর্তে ভারত স্পষ্টতই অযৌক্তিক এবং সংঘাতের বিপজ্জনক পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিণতি এই অঞ্চল এবং তার বাইরেও বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারতের এ ধরনের সামরিক অভিযানের জবাব নিশ্চিতভাবে এবং চূড়ান্ত আকারে দেয়া হবে।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ খান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবারও নির্বাচন সামনে রেখে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাবকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। পুলওয়ামা থেকে বর্তমান পর্ব পর্যন্ত তিনি (মোদি) জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এবং নির্বাচনী সুবিধা অর্জনের জন্য বারবার নাটক মঞ্চস্থ করছেন বলেও অভিযোগ করেন রানা সানাউল্লাহ খান।
তবে শাহবাজ শরিফের এই উপদেষ্টা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, মোদি ছোটখাটো উসকানি বা কৌশল অবলম্বন করতে পারলেও তিনি পারমাণবিক অস্ত্রধারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার অবস্থানে নেই। কোনো সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর, চূড়ান্ত ও উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে বলেও জানান। রানা সানাউল্লাহ খান আরও বলেন, যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে এ ব্যাপারে সমগ্র জাতি একমত।
পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই ফ্রান্সের কাছ থেকে ২৬টি রাফায়েল-মেরিন যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। এই চুক্তির বিষয়ে সে দেশের সঙ্গে কথাবার্তা আগেই চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে এমন একটা সময় যখন পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা তুঙ্গে। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ৭৪০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে ফ্রান্স থেকে যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। এই যুদ্ধবিমান আইএনএস বিক্রান্ত থেকে পরিচালিত হবে। পুরোনো যুদ্ধবিমানগুলোকে ধীরে ধীরে সরিয়ে এই আধুনিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করার কথা ভাবছে ভারত।