alt

আন্তর্জাতিক

সামরিক অভিযানের মাত্রা বৃদ্ধি করবে ইসরায়েল

কোথায় আশ্রয় নেবে ফিলিস্তিনিরা?

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : সোমবার, ০৫ মে ২০২৫

গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় ইসরায়েলের হামলার পর ধ্বংসস্তূপে হতাহত ব্যক্তিদের খুঁজছেন ফিলিস্তিনিরা -এএফপি

গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়নি। পুরো গাজাকে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদার বাহিনী। ফিলিস্তিনিরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পার করছেন। তাদের আশ্রয় নেয়ার মতো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে না বা এমন কোনো মানবিক অঞ্চল নেই যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে। ভয়াবহ দুর্বিষহ জীবন পার করছে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ এবং শিশুরা।

গাজার বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীই মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ দখল করার পর গাজার বিভিন্ন এলাকায় লোকজন আটকা পড়েছে। তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানেও যেতে পারছেন না। উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ গাজায় যাওয়ার স্বাধীনতাও পাচ্ছেন না তারা। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার ও বিস্তারের লক্ষ্যে হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্য ডাকতে শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য।

ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। প্রায় ৪৭০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা বাড়িঘর, প্রিয়জন সবকিছু হারিয়েছেন। তাদের মাথার ওপর আশ্রয় নেয়ার মতো শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। বোমা হামলায় চোখের সামনে বাবা-ভাই বা সন্তানের মৃত্যু দেখছেন তারা। এরই মধ্যে নতুন পরিকল্পনার আওতায়, গাজায় ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের সব ধরনের অবকাঠামো ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

তবে সমালোচকরা বলছেন, দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও শুরু হওয়া এই অভিযান বন্দিমুক্তির নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় অভিযান ফের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। তবে ডনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান শুরু হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জনের জীবিত বলে বিশ্বাস করা হয়। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পায়নি। এই সময়ের মধ্যে গাজার বিশাল এলাকা দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আবারও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে গাজায় প্রায় দুই মাস ধরে চলছে মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর অবরোধ।

এদিকে, ইসরায়েল নতুন উদ্যমে গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে। এটা অনুমোদন করতে আজ রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০) নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। গাজায় অভিযান বাড়ানোর অংশ হিসেবে কয়েক হাজার সংরক্ষিত সেনা তলব করা হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরের এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইয়েমেনের হুতিরা।

সংরক্ষিত সেনা তলব (যারা নিয়মিত বাহিনীতে কর্মরত নন) প্রসঙ্গে ইসরায়েলের একাধিক সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, সেনাবাহিনী সংরক্ষিত সেনাদের তলব করতে শুরু করেছে। তারা ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনকারী কনসক্রিপ্ট (বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানকারী) ও নিয়মিত সেনাদের স্থলাভিষিক্ত হবে। আর এসব কনসক্রিপ্ট ও নিয়মিত সেনাকে গাজায় মোতায়েন করা হবে।

সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলো স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি। তবে বার্তা সংস্থা এএফপির ইসরায়েলি সাংবাদিকদের কিছু আত্মীয় বলেছেন, তাদেরও তলব করা হয়েছে। এমন এক সময়ে এই সব ঘটনা ঘটছে, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কাতারকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। তিনি কাতারকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ‘উভয় পক্ষের সঙ্গে খেলা বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছেন। কাতার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলার ১৪ মাস পর গত জানুয়ারিতে হামাসের সঙ্গে দেশটি যুদ্ধবিরতিতে যায়। কিন্তু ২ মাস পর গত ১৮ মার্চ তা লঙ্ঘন করে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চেষ্টা করছে।

নতুন যুদ্ধবিরতি চেষ্টাকে কেন্দ্র করে কাতারকে আক্রমণ করে নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, কাতার ‘দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়ে দুই পক্ষকেই খুশি রাখার চেষ্টা করছে’। কাতারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ‘তারা কি সভ্যতার পক্ষে, নাকি হামাসের বর্বরতার পাশে?’ ‘ইসরায়েল এই ন্যায্য যুদ্ধ ন্যায়সংগত উপায়েই জিতবে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্স পোস্টে নেতানিয়াহুর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি লেখেন, ‘কাতার উসকানিমূলক বক্তব্যকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে... এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্বের ন্যূনতম মানদ- পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ’।

গাজায় পূর্ণ মাত্রায় নতুন করে হামলা শুরু আগে ২ মার্চ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে সর্বাত্মক অবরোধ জারি করে ইসরায়েল। ফলে দেশটির ত্রাণসহায়তা আরও সংকুচিত হয়েছে। দেশটিতে বিভিন্ন মাত্রায় দুর্ভিক্ষ চলছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল দিবাগত রাতে ইসরায়েলের হামলায় গাজার বিভিন্ন স্থানে ৩ শিশুসহ আরও ১১ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। মধ্যমার্চে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় অন্তত ২ হাজার ৩৯৬ জন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণ হারালেন ৫২ হাজার ৪৯৫ জন। তবে নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা।

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, মালয়েশিয়া সফর বাতিল করলেন শেহবাজ

ছবি

দুর্গম দ্বীপে সেই কুখ্যাত কারাগার চালুর নির্দেশ ট্রাম্পের

ছবি

ভারত-পাকিস্তান সংকটের সমাধানে সহায়তার প্রস্তাব রাশিয়ার

রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতি : জেলেনস্কি

এবার চেনাব নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করল ভারত

ছবি

বিদেশি সিনেমায় ১০০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

ছবি

চীনে পর্যটকবাহী চার নৌকা ডুবে ৯ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ১

ছবি

সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পর চেনাব ও ঝিলম নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ভারতের পদক্ষেপ

ছবি

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই জাতিসংঘে যাওয়ার ঘোষণা পাকিস্তানের

ছবি

ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কা, আগাম যে প্রস্তুতি নিচ্ছে আজাদ কাশ্মীর

পোপ সেজে ছবি পোস্ট করে সমালোচনার মুখে ট্রাম্প

ছবি

টানা ১৫ ঘণ্টা বক্তব্য দিয়ে জেলেনস্কির রেকর্ড ভাঙলেন মুইজ্জু!

পাকিস্তানি সেনা আটক করেছে বিএসএফ, সীমান্তে গোলাগুলি

ইসরায়েলের বিমানবন্দরে আঘাত হানল ব্যালিস্টিক মিসাইল

ছবি

অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে গাজার শিশুরা

ছবি

সিঙ্গাপুরে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ জয়, একচেটিয়া শাসনের মেয়াদ বাড়ল

ছবি

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: এবার নিষিদ্ধ হলো জাহাজ

ছবি

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পাকিস্তানের, বাড়ছে উদ্বেগ

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির জয়

ছবি

‘হামলার তথ্য আগেই ছিল, তবে পেহেলগামে নয় শ্রীনগরে,’ বলছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা

ছবি

স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘আবদালি’ পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করল পাকিস্তান

ছবি

সৌদির কাছে ৩৫০ কোটি ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচন, আলোচনায় যেসব ইস্যু

পাকিস্তান থেকে সব ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত

নেতানিয়াহুর অনুমোদন নিয়ে সিরিয়ার হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে

সিন্ধু নদে বাঁধ দিলে হামলা করবে পাকিস্তান

ছবি

যুদ্ধ এড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমন, ঐতিহাসিক নজির কেমন

ছবি

দ্রুজদের সুরক্ষায় সিরিয়ায় ইসরায়েলের বোমা হামলা, শাসকগোষ্ঠীকে ‘বার্তা’

ছবি

উগ্রবাদীদের তালিকায় জার্মানির প্রধান বিরোধী দল এএফডি

ছবি

পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করলো ভারত

ছবি

ইউক্রেইন-রাশিয়া শান্তি আলোচনায় ‘আর মধ্যস্থতা নয়’: যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

ভারতে ধর্মীয় উৎসবে পদদলিত হয়ে ৬ জনের মৃত্যু, আহত অন্তত ৬০

ছবি

মাল্টা উপকূলে গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজে ড্রোন হামলা

১২০০ মাইল পথ পাড়ি দিল চালকবিহীন ট্রাক

ওয়াল্টজকে নতুন পদে বসাতে চান ট্রাম্প

পেহেলগামে হামলায় ‘লস্কর-আইএসআই চক্র’, ছক ‘পাকিস্তানে লস্কর সদরদপ্তরে’: এনআইএ

tab

আন্তর্জাতিক

সামরিক অভিযানের মাত্রা বৃদ্ধি করবে ইসরায়েল

কোথায় আশ্রয় নেবে ফিলিস্তিনিরা?

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় ইসরায়েলের হামলার পর ধ্বংসস্তূপে হতাহত ব্যক্তিদের খুঁজছেন ফিলিস্তিনিরা -এএফপি

সোমবার, ০৫ মে ২০২৫

গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়নি। পুরো গাজাকে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদার বাহিনী। ফিলিস্তিনিরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পার করছেন। তাদের আশ্রয় নেয়ার মতো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে না বা এমন কোনো মানবিক অঞ্চল নেই যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে। ভয়াবহ দুর্বিষহ জীবন পার করছে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ এবং শিশুরা।

গাজার বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীই মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ দখল করার পর গাজার বিভিন্ন এলাকায় লোকজন আটকা পড়েছে। তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানেও যেতে পারছেন না। উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ গাজায় যাওয়ার স্বাধীনতাও পাচ্ছেন না তারা। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার ও বিস্তারের লক্ষ্যে হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্য ডাকতে শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য।

ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। প্রায় ৪৭০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা বাড়িঘর, প্রিয়জন সবকিছু হারিয়েছেন। তাদের মাথার ওপর আশ্রয় নেয়ার মতো শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। বোমা হামলায় চোখের সামনে বাবা-ভাই বা সন্তানের মৃত্যু দেখছেন তারা। এরই মধ্যে নতুন পরিকল্পনার আওতায়, গাজায় ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের সব ধরনের অবকাঠামো ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

তবে সমালোচকরা বলছেন, দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও শুরু হওয়া এই অভিযান বন্দিমুক্তির নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় অভিযান ফের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। তবে ডনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান শুরু হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জনের জীবিত বলে বিশ্বাস করা হয়। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পায়নি। এই সময়ের মধ্যে গাজার বিশাল এলাকা দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আবারও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে গাজায় প্রায় দুই মাস ধরে চলছে মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর অবরোধ।

এদিকে, ইসরায়েল নতুন উদ্যমে গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে। এটা অনুমোদন করতে আজ রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০) নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। গাজায় অভিযান বাড়ানোর অংশ হিসেবে কয়েক হাজার সংরক্ষিত সেনা তলব করা হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরের এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইয়েমেনের হুতিরা।

সংরক্ষিত সেনা তলব (যারা নিয়মিত বাহিনীতে কর্মরত নন) প্রসঙ্গে ইসরায়েলের একাধিক সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, সেনাবাহিনী সংরক্ষিত সেনাদের তলব করতে শুরু করেছে। তারা ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনকারী কনসক্রিপ্ট (বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানকারী) ও নিয়মিত সেনাদের স্থলাভিষিক্ত হবে। আর এসব কনসক্রিপ্ট ও নিয়মিত সেনাকে গাজায় মোতায়েন করা হবে।

সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলো স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি। তবে বার্তা সংস্থা এএফপির ইসরায়েলি সাংবাদিকদের কিছু আত্মীয় বলেছেন, তাদেরও তলব করা হয়েছে। এমন এক সময়ে এই সব ঘটনা ঘটছে, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কাতারকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। তিনি কাতারকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ‘উভয় পক্ষের সঙ্গে খেলা বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছেন। কাতার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলার ১৪ মাস পর গত জানুয়ারিতে হামাসের সঙ্গে দেশটি যুদ্ধবিরতিতে যায়। কিন্তু ২ মাস পর গত ১৮ মার্চ তা লঙ্ঘন করে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চেষ্টা করছে।

নতুন যুদ্ধবিরতি চেষ্টাকে কেন্দ্র করে কাতারকে আক্রমণ করে নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, কাতার ‘দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়ে দুই পক্ষকেই খুশি রাখার চেষ্টা করছে’। কাতারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ‘তারা কি সভ্যতার পক্ষে, নাকি হামাসের বর্বরতার পাশে?’ ‘ইসরায়েল এই ন্যায্য যুদ্ধ ন্যায়সংগত উপায়েই জিতবে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্স পোস্টে নেতানিয়াহুর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি লেখেন, ‘কাতার উসকানিমূলক বক্তব্যকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে... এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্বের ন্যূনতম মানদ- পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ’।

গাজায় পূর্ণ মাত্রায় নতুন করে হামলা শুরু আগে ২ মার্চ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে সর্বাত্মক অবরোধ জারি করে ইসরায়েল। ফলে দেশটির ত্রাণসহায়তা আরও সংকুচিত হয়েছে। দেশটিতে বিভিন্ন মাত্রায় দুর্ভিক্ষ চলছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল দিবাগত রাতে ইসরায়েলের হামলায় গাজার বিভিন্ন স্থানে ৩ শিশুসহ আরও ১১ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। মধ্যমার্চে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় অন্তত ২ হাজার ৩৯৬ জন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণ হারালেন ৫২ হাজার ৪৯৫ জন। তবে নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা।

back to top