ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় সব স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে -এএফপি
অবরুদ্ধে গাজা উপত্যকাজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর মধ্যেই আরো তিনদেশে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল বাহিনী। মঙ্গলবার আলজাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা ও ইয়েমেন ছাড়াও সিরিয়া ও লেবাননেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় কমপক্ষে ৫৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
গাজা উপত্যকা দখলে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘গাজার ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে নতুন স্থল অভিযানের মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হবে।’
চারদেশে হামলার মধ্যে ইয়েমেনে ৩০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। এক্স পোস্টে সোমবার (৫ মে) এ হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে হামলা চালানোর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে হুতি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দর এলাকায় ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ এবং হোদেইদার পূর্বে একটি কংক্রিট কারখানায় হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে আগামী সপ্তাহে সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন দিনের সফর করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ১৩ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এই সফরে ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং বিনিয়োগের ওপর মনোনিবেশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযানের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখ- ‘দখলের’ বিষয়টিও। আজ সোমবার দেশটির একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। এরই মধ্যে গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাসদস্যকে তলব করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন। তাঁরা সর্বসম্মতভাবে এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেন। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অনুমোদন পাওয়া পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, গাজা উপত্যকা দখল, সেখান দখল করা এলাকাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া।
ইসরায়েলের কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, পরিকল্পনায় ‘হামাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হামলার’ বিষয়টিও রয়েছে। তবে হামলার প্রকৃতি কেমন হবে, তা বলা হয়নি। এ ছাড়া গাজায় নতুন কাঠামোর আওতায় ত্রাণ সরবরাহ চালু করার বিষয়টি নিয়েও মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে। ওই কাঠামো আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল। তবে তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১৯ জানুয়ারি উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ১৮ মার্চ ওই যুদ্ধবিরতি ভেঙে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। আজ গাজার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এদিন উত্তর গাজায় আকাশপথে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজারে। এর আগে রোববার ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির বলেন, গাজায় তাঁদের অভিযানের পরিসর বাড়ানোর জন্য হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাকে তলব করা হয়েছে। তবে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল সফরের কথা রয়েছে। এর আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে না।
গাজায় ত্রাণসহায়তা চালু নিয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় আলোচনার আগে শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যম এক্সিওস নিউজের খবরে বলা হয়েছিল, গাজায় ত্রাণসহায়তা চালুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও নতুন একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণসহায়তা সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য হামাসের কোনো ‘নিয়ন্ত্রণ’ ছাড়াই যেন এ ত্রাণ গাজাবাসীর কাছে সরবরাহ করা যায়।
যুদ্ধবিরতি চলাকালে ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এতে উপত্যকাটিতে খাবার, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের এ অবরোধের ভয়াবহ পরিণতি গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দাকে ভোগ করতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তবে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার ভাষ্য, গাজায় ‘এখনো যথেষ্ট খাবার আছে’।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরায়েল যে কাঠামো তৈরি করেছে, তা ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের’ মতো। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তারা।
গাজায় খাবারের এ সংকটের মধ্যে লুটেরাদের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই উপত্যকাটির বিভিন্ন খাদ্যের দোকান ও দাতব্য রান্নাঘরে লুটপাট চালিয়েছে সশস্ত্র কয়েকটি চক্র।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে হামাস। সংগঠনটির ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
হামাসের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এই লুটেরাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল–তাওয়াবতা বলেন, কিছু লুটেরা এক গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ কর্মকা- চালাচ্ছে। অন্যরা সংঘবদ্ধ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েল সরকার।
ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় সব স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে -এএফপি
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
অবরুদ্ধে গাজা উপত্যকাজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর মধ্যেই আরো তিনদেশে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল বাহিনী। মঙ্গলবার আলজাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা ও ইয়েমেন ছাড়াও সিরিয়া ও লেবাননেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় কমপক্ষে ৫৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
গাজা উপত্যকা দখলে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘গাজার ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে নতুন স্থল অভিযানের মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হবে।’
চারদেশে হামলার মধ্যে ইয়েমেনে ৩০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। এক্স পোস্টে সোমবার (৫ মে) এ হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে হামলা চালানোর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে হুতি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দর এলাকায় ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ এবং হোদেইদার পূর্বে একটি কংক্রিট কারখানায় হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে আগামী সপ্তাহে সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন দিনের সফর করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ১৩ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এই সফরে ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং বিনিয়োগের ওপর মনোনিবেশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযানের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখ- ‘দখলের’ বিষয়টিও। আজ সোমবার দেশটির একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। এরই মধ্যে গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাসদস্যকে তলব করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন। তাঁরা সর্বসম্মতভাবে এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেন। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অনুমোদন পাওয়া পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, গাজা উপত্যকা দখল, সেখান দখল করা এলাকাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া।
ইসরায়েলের কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, পরিকল্পনায় ‘হামাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হামলার’ বিষয়টিও রয়েছে। তবে হামলার প্রকৃতি কেমন হবে, তা বলা হয়নি। এ ছাড়া গাজায় নতুন কাঠামোর আওতায় ত্রাণ সরবরাহ চালু করার বিষয়টি নিয়েও মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে। ওই কাঠামো আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল। তবে তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১৯ জানুয়ারি উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ১৮ মার্চ ওই যুদ্ধবিরতি ভেঙে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। আজ গাজার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এদিন উত্তর গাজায় আকাশপথে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজারে। এর আগে রোববার ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির বলেন, গাজায় তাঁদের অভিযানের পরিসর বাড়ানোর জন্য হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাকে তলব করা হয়েছে। তবে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল সফরের কথা রয়েছে। এর আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে না।
গাজায় ত্রাণসহায়তা চালু নিয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় আলোচনার আগে শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যম এক্সিওস নিউজের খবরে বলা হয়েছিল, গাজায় ত্রাণসহায়তা চালুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও নতুন একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণসহায়তা সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য হামাসের কোনো ‘নিয়ন্ত্রণ’ ছাড়াই যেন এ ত্রাণ গাজাবাসীর কাছে সরবরাহ করা যায়।
যুদ্ধবিরতি চলাকালে ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এতে উপত্যকাটিতে খাবার, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের এ অবরোধের ভয়াবহ পরিণতি গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দাকে ভোগ করতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তবে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার ভাষ্য, গাজায় ‘এখনো যথেষ্ট খাবার আছে’।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরায়েল যে কাঠামো তৈরি করেছে, তা ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের’ মতো। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তারা।
গাজায় খাবারের এ সংকটের মধ্যে লুটেরাদের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই উপত্যকাটির বিভিন্ন খাদ্যের দোকান ও দাতব্য রান্নাঘরে লুটপাট চালিয়েছে সশস্ত্র কয়েকটি চক্র।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে হামাস। সংগঠনটির ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
হামাসের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এই লুটেরাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল–তাওয়াবতা বলেন, কিছু লুটেরা এক গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ কর্মকা- চালাচ্ছে। অন্যরা সংঘবদ্ধ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েল সরকার।