ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০১৯ সালে মুখোমুখি সংঘাতের পর পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি উল্লেখযোগ্যভাবে সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) সীমিত সংঘাত হয়েছে। তবে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতি যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে চলে যেতে পারে।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। নয়াদিল্লির দাবি, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ইসলামাবাদ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। এর পর থেকে উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। উত্তেজনা বাড়ছে। সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কোনো পক্ষই দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববে না। তবে সীমিত সংঘাত অতর্কিতে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার সঙ্গে জড়িতদের ‘কল্পনাতীত’ শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মোদি এরই মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীকে ‘অভিযান পরিচালনার পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, যেন তারা পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে পারে। পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত তাঁদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারত শিগগিরই পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে বলে তাঁদের হাতে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে। দেশটি নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর এলাকায় সামরিক মহড়া চালিয়েছে। গত শনিবারের পর গতকাল সোমবারও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশিক্ষণমূলক উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরসহ দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ভারত হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে শক্ত জবাব দেওয়া হবে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। হামলার পর ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়ে কথিত জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করে। পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। দুই দিন ধরে টান টান উত্তেজনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। এরপর ১৯৪৮, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে দুই দেশের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়। পূর্ণমাত্রার এই তিনটি যুদ্ধের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে দুটি যুদ্ধ হয়। কাশ্মীর ইস্যুতে সীমান্তে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। ১৯৯০-এর দশকে দুই দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে। তখন থেকে কাশ্মীরকে বিশ্বে অন্যতম ‘বিপজ্জনক সংঘাতময় অঞ্চল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কোনো পক্ষই দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববে না। তবে সীমিত সংঘাত অতর্কিতে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-পাকিস্তান এবার বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ব্যবহার বাড়বে। এসব ক্ষেত্রে উভয় দেশ প্রায় সমান অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদের কথা ভাবলে ভারত এগিয়ে রয়েছে। কারণ, দেশটির সার্বিক সামর্থ্য বেশি।
ওয়াশিংটনের থিঙ্কট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামের অনাবাসিক ফেলো ফ্রাঙ্ক ও’ডনেল বলেন, ‘২০১৯ সালের আগের তুলনায় এখন দুই দেশের নীতিনির্ধারকেরা সংঘাত শুরু ও তা বাড়িয়ে তোলার বিষয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। কারণ, তখন (২০১৯) তারা পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই সংঘর্ষ সামাল দিতে পেরেছিল।’
তবে ফ্রাঙ্ক সতর্ক করে বলেন, ‘যতক্ষণ না দুই পক্ষের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বোঝাপড়া তৈরি হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অনিচ্ছাকৃতভাবে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবেই।’ ‘এটি (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) পশ্চিমা ও চীনা প্রযুক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখা দিতে পারে।’
উভয় দেশ ২০১৯ সালের পর থেকে নিজেদের সামরিক সরঞ্জামে বড় ধরনের আধুনিকায়ন ঘটিয়েছে, যা তাদের প্রচলিত ধারায় হামলার (কনভেনশনাল স্ট্রাইক) নতুন পথ খুলে দিয়েছে। পারমাণবিক নয়, এমন অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সুনিপুণভাবে হামলা চালানোকে ‘প্রচলিত ধারায় হামলা’ বলা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে কর্মরত দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষক মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘উভয় দেশই মনে করছে (সামরিক শক্তির দিক থেকে) তারা আগের তুলনায় এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে সত্যিকারের লড়াই শুরু হলেই কেবল বোঝা যাবে কার অবস্থান কেমন।’
সুনির্দিষ্ট করে বললে ভারত মনে করে, ২০১৯ সালে তাদের পিছিয়ে থাকতে হয়েছিল। কারণ, তখন তাদের মূলত পুরোনো রুশ যুদ্ধবিমানের ওপরই নির্ভর করতে হয়েছিল। এরপর দেশটি ফ্রান্স থেকে ৩৬টি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান কিনেছে। রাফাল পশ্চিমা যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সম্প্রতি ভারত নিজেদের নৌবাহিনীর জন্য আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে।
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০১৯ সালে মুখোমুখি সংঘাতের পর পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি উল্লেখযোগ্যভাবে সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) সীমিত সংঘাত হয়েছে। তবে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতি যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে চলে যেতে পারে।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। নয়াদিল্লির দাবি, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ইসলামাবাদ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। এর পর থেকে উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। উত্তেজনা বাড়ছে। সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কোনো পক্ষই দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববে না। তবে সীমিত সংঘাত অতর্কিতে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার সঙ্গে জড়িতদের ‘কল্পনাতীত’ শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মোদি এরই মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীকে ‘অভিযান পরিচালনার পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, যেন তারা পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে পারে। পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত তাঁদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারত শিগগিরই পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে বলে তাঁদের হাতে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে। দেশটি নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর এলাকায় সামরিক মহড়া চালিয়েছে। গত শনিবারের পর গতকাল সোমবারও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশিক্ষণমূলক উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরসহ দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ভারত হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে শক্ত জবাব দেওয়া হবে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। হামলার পর ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়ে কথিত জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করে। পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। দুই দিন ধরে টান টান উত্তেজনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। এরপর ১৯৪৮, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে দুই দেশের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়। পূর্ণমাত্রার এই তিনটি যুদ্ধের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে দুটি যুদ্ধ হয়। কাশ্মীর ইস্যুতে সীমান্তে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। ১৯৯০-এর দশকে দুই দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে। তখন থেকে কাশ্মীরকে বিশ্বে অন্যতম ‘বিপজ্জনক সংঘাতময় অঞ্চল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কোনো পক্ষই দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববে না। তবে সীমিত সংঘাত অতর্কিতে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-পাকিস্তান এবার বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ব্যবহার বাড়বে। এসব ক্ষেত্রে উভয় দেশ প্রায় সমান অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদের কথা ভাবলে ভারত এগিয়ে রয়েছে। কারণ, দেশটির সার্বিক সামর্থ্য বেশি।
ওয়াশিংটনের থিঙ্কট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামের অনাবাসিক ফেলো ফ্রাঙ্ক ও’ডনেল বলেন, ‘২০১৯ সালের আগের তুলনায় এখন দুই দেশের নীতিনির্ধারকেরা সংঘাত শুরু ও তা বাড়িয়ে তোলার বিষয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। কারণ, তখন (২০১৯) তারা পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই সংঘর্ষ সামাল দিতে পেরেছিল।’
তবে ফ্রাঙ্ক সতর্ক করে বলেন, ‘যতক্ষণ না দুই পক্ষের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বোঝাপড়া তৈরি হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অনিচ্ছাকৃতভাবে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবেই।’ ‘এটি (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) পশ্চিমা ও চীনা প্রযুক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখা দিতে পারে।’
উভয় দেশ ২০১৯ সালের পর থেকে নিজেদের সামরিক সরঞ্জামে বড় ধরনের আধুনিকায়ন ঘটিয়েছে, যা তাদের প্রচলিত ধারায় হামলার (কনভেনশনাল স্ট্রাইক) নতুন পথ খুলে দিয়েছে। পারমাণবিক নয়, এমন অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সুনিপুণভাবে হামলা চালানোকে ‘প্রচলিত ধারায় হামলা’ বলা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে কর্মরত দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষক মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘উভয় দেশই মনে করছে (সামরিক শক্তির দিক থেকে) তারা আগের তুলনায় এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে সত্যিকারের লড়াই শুরু হলেই কেবল বোঝা যাবে কার অবস্থান কেমন।’
সুনির্দিষ্ট করে বললে ভারত মনে করে, ২০১৯ সালে তাদের পিছিয়ে থাকতে হয়েছিল। কারণ, তখন তাদের মূলত পুরোনো রুশ যুদ্ধবিমানের ওপরই নির্ভর করতে হয়েছিল। এরপর দেশটি ফ্রান্স থেকে ৩৬টি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান কিনেছে। রাফাল পশ্চিমা যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সম্প্রতি ভারত নিজেদের নৌবাহিনীর জন্য আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে।