ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে ন।’
ভারতের কাশ্মীরে ঝিলম নদীর ওপর নির্মিত উরি-২ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের দৃশ্য -এনডিটিভি
দিল্লি ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ ‘স্থগিত’ রেখেছে। চুক্তিটি সিন্ধু নদের পানিবণ্টন ব্যবস্থাকে নির্ধারণ করে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পরপরই এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে নয়াদিল্লি। ভারত এটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যা দিয়েছে। যদিও পাকিস্তান হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘাতের পর গত সপ্তাহে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে সিন্ধু পানি চুক্তিটি এখনো কার্যকর হয়নি।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চেনাব, ঝিলম ও সিন্ধু নদে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী এই তিনটি নদী পাকিস্তানের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য ঠিক করা আছে। এসব নদী থেকে ভারত সীমিত পরিমাণে পানি ব্যবহারের অনুমতি পায়। রয়টার্সের সঙ্গে আলোচনায় ছয়টি সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
রয়টার্সের দুই সূত্রের বরাতে জানা যায়, আলোচনায় থাকা মূল পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে একটি হলো চেনাব নদীর ওপর নির্মিত রণবীর খালের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ (১২০ কিলোমিটার) করা। এই খাল ভারত থেকে পাকিস্তানের কৃষিপ্রধান পাঞ্জাব প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরের বহু আগে ১৯ শতকে খালটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
চেনাব নদী থেকে সেচের জন্য সীমিত পরিমাণ পানি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে ভারতের। তবে খালটি সম্প্রসারণ করা হলে ভারত বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪০ ঘনমিটার পানি ব্যবহারের পরিবর্তে ১৫০ ঘনমিটার পর্যন্ত সরাতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে কয়েক বছর লাগতে পারে। সরকারি আলোচনা ও প্রাপ্ত নথির ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র।
রণবীর খাল সম্প্রসারণে ভারত সরকারের আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ এত দিন প্রকাশিত হয়নি। একটি সূত্রমতে, গত মাস থেকে এ আলোচনা শুরু হয়েছে এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পরও তা অব্যাহত রয়েছে।
ভারতের পানিসম্পদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি। সিন্ধু নদ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ভারতের পানিবিদ্যুৎ সংস্থা এনএইচপিসিও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।’ যদিও তিনি সরাসরি এ চুক্তির কথা উল্লেখ করেননি। পানিসম্পদমন্ত্রী সি আর পাতিল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি যা বলবেন, তা বাস্তবায়ন করা হবে’ এবং ‘এক ফোঁটা পানিও যেন পাকিস্তানে না যায়, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।’
পাকিস্তানের পানিসম্পদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার পার্লামেন্টে বলেন, ভারতকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, চুক্তি স্থগিত করা অবৈধ এবং ইসলামাবাদ এখনো এটিকে কার্যকর বলেই গণ্য করে। ভারত গত এপ্রিলে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিলে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, ‘পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ করা কিংবা তা অন্যত্র সরানোর যেকোনো চেষ্টা যুদ্ধের শামিল হিসেবে বিবেচিত হবে।’
পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমি ও ২৫ কোটি মানুষের ব্যবহার্য প্রায় সব পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প সিন্ধু নদ পানিব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পানি নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ ডেভিড মিশেল বলেন, ‘সিন্ধু নদের পানি আটকে রাখতে বাঁধ বা খাল নির্মাণে ভারতের কয়েক বছর সময় লেগে যাবে।’ তবে পাকিস্তান ইতোমধ্যেই ভারতের দিক থেকে চাপের আভাস পেয়েছে। গত মে মাসের শুরুতে ভারত সিন্ধু নদের কিছু প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করার পর পাকিস্তানে একটি প্রধান পানির উৎসে প্রবাহ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে উত্তপ্ত ভূরাজনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্য দিয়ে সিন্ধু নদী প্রবাহিত হয়। তিব্বতের মানসরোবর হ্রদের কাছে এর উৎপত্তি, যা ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে মিশে গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে ন।’
ভারতের কাশ্মীরে ঝিলম নদীর ওপর নির্মিত উরি-২ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের দৃশ্য -এনডিটিভি
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
দিল্লি ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ ‘স্থগিত’ রেখেছে। চুক্তিটি সিন্ধু নদের পানিবণ্টন ব্যবস্থাকে নির্ধারণ করে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পরপরই এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে নয়াদিল্লি। ভারত এটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যা দিয়েছে। যদিও পাকিস্তান হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘাতের পর গত সপ্তাহে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে সিন্ধু পানি চুক্তিটি এখনো কার্যকর হয়নি।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চেনাব, ঝিলম ও সিন্ধু নদে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী এই তিনটি নদী পাকিস্তানের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য ঠিক করা আছে। এসব নদী থেকে ভারত সীমিত পরিমাণে পানি ব্যবহারের অনুমতি পায়। রয়টার্সের সঙ্গে আলোচনায় ছয়টি সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
রয়টার্সের দুই সূত্রের বরাতে জানা যায়, আলোচনায় থাকা মূল পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে একটি হলো চেনাব নদীর ওপর নির্মিত রণবীর খালের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ (১২০ কিলোমিটার) করা। এই খাল ভারত থেকে পাকিস্তানের কৃষিপ্রধান পাঞ্জাব প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরের বহু আগে ১৯ শতকে খালটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
চেনাব নদী থেকে সেচের জন্য সীমিত পরিমাণ পানি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে ভারতের। তবে খালটি সম্প্রসারণ করা হলে ভারত বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪০ ঘনমিটার পানি ব্যবহারের পরিবর্তে ১৫০ ঘনমিটার পর্যন্ত সরাতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে কয়েক বছর লাগতে পারে। সরকারি আলোচনা ও প্রাপ্ত নথির ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র।
রণবীর খাল সম্প্রসারণে ভারত সরকারের আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ এত দিন প্রকাশিত হয়নি। একটি সূত্রমতে, গত মাস থেকে এ আলোচনা শুরু হয়েছে এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পরও তা অব্যাহত রয়েছে।
ভারতের পানিসম্পদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি। সিন্ধু নদ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ভারতের পানিবিদ্যুৎ সংস্থা এনএইচপিসিও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।’ যদিও তিনি সরাসরি এ চুক্তির কথা উল্লেখ করেননি। পানিসম্পদমন্ত্রী সি আর পাতিল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি যা বলবেন, তা বাস্তবায়ন করা হবে’ এবং ‘এক ফোঁটা পানিও যেন পাকিস্তানে না যায়, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।’
পাকিস্তানের পানিসম্পদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার পার্লামেন্টে বলেন, ভারতকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, চুক্তি স্থগিত করা অবৈধ এবং ইসলামাবাদ এখনো এটিকে কার্যকর বলেই গণ্য করে। ভারত গত এপ্রিলে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিলে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, ‘পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ করা কিংবা তা অন্যত্র সরানোর যেকোনো চেষ্টা যুদ্ধের শামিল হিসেবে বিবেচিত হবে।’
পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমি ও ২৫ কোটি মানুষের ব্যবহার্য প্রায় সব পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প সিন্ধু নদ পানিব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পানি নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ ডেভিড মিশেল বলেন, ‘সিন্ধু নদের পানি আটকে রাখতে বাঁধ বা খাল নির্মাণে ভারতের কয়েক বছর সময় লেগে যাবে।’ তবে পাকিস্তান ইতোমধ্যেই ভারতের দিক থেকে চাপের আভাস পেয়েছে। গত মে মাসের শুরুতে ভারত সিন্ধু নদের কিছু প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করার পর পাকিস্তানে একটি প্রধান পানির উৎসে প্রবাহ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে উত্তপ্ত ভূরাজনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্য দিয়ে সিন্ধু নদী প্রবাহিত হয়। তিব্বতের মানসরোবর হ্রদের কাছে এর উৎপত্তি, যা ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে মিশে গেছে।