ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ছক কষছে ইসরায়েল। দেশটির বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্র -এএফপিইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ছক কষছে ইসরায়েল। দেশটির বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্র -এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানতে পেরেছে যে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যখন তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে, তখনই এই তথ্য সামনে এলো। একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এমন হামলা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে ইসরায়েলের বড় ধরনের বিচ্ছেদ ঘটাবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে উত্তেজনা এড়াতে চাইছে। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি নেতারা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। এমনকি, ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত হামলা চালাবে কি-না তা নিয়ে মার্কিন সরকারের মধ্যেও গভীর মতবিরোধ রয়েছে। ইসরায়েল কীভাবে এবং কখন হামলা চালাবে, তা সম্ভবত তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার ওপর নির্ভর করবে।
তবে এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তির ফলে যদি ইরানের সব ইউরেনিয়াম অপসারণ না হয়, তাহলে হামলার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।’ সিএনএন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে আরও বলেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত বার্তা, আড়ি পেতে পাওয়া যোগাযোগ বার্তা এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এই উদ্বেগ বাড়ছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এটি আসন্ন হামলার ইঙ্গিত দিতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল এরই মধ্যে আকাশ যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ মজুত করছে এবং একটি বিমান মহড়াও চালিয়েছে। তবে এই ইঙ্গিতগুলো ইসরায়েলের তরফ থেকে চাপ সৃষ্টির কৌশলও হতে পারে, যাতে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসে। হোয়াইট হাউস যে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, এটি তারই প্রমাণ।
চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এক জ্যেষ্ঠ পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা সফল হওয়ার জন্য মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় দেবে, এরপর সামরিক হামলার আশ্রয় নেবে। তবে আপাতত, হোয়াইট হাউসের নীতি হলো কূটনীতি।
সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন পানিকফ বলেছেন, এটি ইসরায়েলকে ‘এক কঠিন পরিস্থিতিতে’ ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তি যাতে না হয়, সেই চাপের মধ্যে আছেন। অন্যদিকে, তিনি ট্রাম্পকে বিরক্ত করতেও চাইছেন না। কারণ, ট্রাম্প এরই মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
পানিকফ বলেন, ‘দিন শেষে ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত মার্কিন নীতির ওপর নির্ভর করবে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে কী চুক্তি করছেন বা করছেন না, তার ওপর নির্ভর করবে। নেতানিয়াহু সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে পুরোপুরি ভেঙে ফেলার ঝুঁকি নেবেন না, অন্তত মার্কিন অনুমোদন ছাড়া হামলা চালাবেন না।’ একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের পক্ষে আমেরিকার সহায়তা ছাড়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই। তবে একটি ইসরায়েলি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে একটি ‘বাজে চুক্তি’ করে, যা ইসরায়েল মানতে পারবে না, তাহলে ইসরায়েল একতরফা সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকবে।
মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে পরিচিত অপর একটি সূত্র বলেছে, ‘আমার মনে হয়, যদি তারা (ইসরায়েল) মনে করে যে, ট্রাম্প একটি বাজে চুক্তিতে সম্মত হতে চলেছেন, তবে সম্ভবত সেই চুক্তি ভেস্তে দিতেই তারা হামলা চালাবে। ইসরায়েলিরা আমাদের কাছে এই সংকেত দিতে পিছপা হয়নি... তারা প্রকাশ্যে এই সংকেত দিয়েছে।’
এদিকে, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরকালে ট্রাম্প জানিয়ে দেন, তিনি কোনও ধরনের হামলায় সমর্থন করবেন না। হামলার পরিবর্তে তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ঘোষণা দেন তিনি। পশ্চিমা বিশ্ব অভিযোগ করলেও ইরান ধারাবাহিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। তবে ট্রাম্প ২০১৫ সালের চুক্তিটি বাতিল করার পর থেকে ইরান পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ জানিয়ে বলা হয়েছে, ইরানের কাছে প্রায় ২৭৪ কেজি ৪০০ গ্রাম ইউরেনিয়াম রয়েছে। যা ৯০ শতাংশ অস্ত্র গ্রেডের কাছাকাছি পর্যায়ের।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইসরায়েল গত মে মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য ওয়াশিংটনের সহায়তা চেয়েছিল।
ইরানে হামলার এই পরিকল্পনা এবং এর সম্ভাব্য সব কৌশল কয়েক মাস ধরে বিবেচনাধীন ছিল।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ছক কষছে ইসরায়েল। দেশটির বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্র -এএফপিইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ছক কষছে ইসরায়েল। দেশটির বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্র -এএফপি
বুধবার, ২১ মে ২০২৫
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানতে পেরেছে যে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যখন তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে, তখনই এই তথ্য সামনে এলো। একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এমন হামলা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে ইসরায়েলের বড় ধরনের বিচ্ছেদ ঘটাবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে উত্তেজনা এড়াতে চাইছে। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি নেতারা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। এমনকি, ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত হামলা চালাবে কি-না তা নিয়ে মার্কিন সরকারের মধ্যেও গভীর মতবিরোধ রয়েছে। ইসরায়েল কীভাবে এবং কখন হামলা চালাবে, তা সম্ভবত তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার ওপর নির্ভর করবে।
তবে এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তির ফলে যদি ইরানের সব ইউরেনিয়াম অপসারণ না হয়, তাহলে হামলার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।’ সিএনএন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে আরও বলেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত বার্তা, আড়ি পেতে পাওয়া যোগাযোগ বার্তা এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এই উদ্বেগ বাড়ছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এটি আসন্ন হামলার ইঙ্গিত দিতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল এরই মধ্যে আকাশ যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ মজুত করছে এবং একটি বিমান মহড়াও চালিয়েছে। তবে এই ইঙ্গিতগুলো ইসরায়েলের তরফ থেকে চাপ সৃষ্টির কৌশলও হতে পারে, যাতে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসে। হোয়াইট হাউস যে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, এটি তারই প্রমাণ।
চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এক জ্যেষ্ঠ পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা সফল হওয়ার জন্য মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় দেবে, এরপর সামরিক হামলার আশ্রয় নেবে। তবে আপাতত, হোয়াইট হাউসের নীতি হলো কূটনীতি।
সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন পানিকফ বলেছেন, এটি ইসরায়েলকে ‘এক কঠিন পরিস্থিতিতে’ ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তি যাতে না হয়, সেই চাপের মধ্যে আছেন। অন্যদিকে, তিনি ট্রাম্পকে বিরক্ত করতেও চাইছেন না। কারণ, ট্রাম্প এরই মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
পানিকফ বলেন, ‘দিন শেষে ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত মার্কিন নীতির ওপর নির্ভর করবে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে কী চুক্তি করছেন বা করছেন না, তার ওপর নির্ভর করবে। নেতানিয়াহু সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে পুরোপুরি ভেঙে ফেলার ঝুঁকি নেবেন না, অন্তত মার্কিন অনুমোদন ছাড়া হামলা চালাবেন না।’ একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের পক্ষে আমেরিকার সহায়তা ছাড়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই। তবে একটি ইসরায়েলি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে একটি ‘বাজে চুক্তি’ করে, যা ইসরায়েল মানতে পারবে না, তাহলে ইসরায়েল একতরফা সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকবে।
মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে পরিচিত অপর একটি সূত্র বলেছে, ‘আমার মনে হয়, যদি তারা (ইসরায়েল) মনে করে যে, ট্রাম্প একটি বাজে চুক্তিতে সম্মত হতে চলেছেন, তবে সম্ভবত সেই চুক্তি ভেস্তে দিতেই তারা হামলা চালাবে। ইসরায়েলিরা আমাদের কাছে এই সংকেত দিতে পিছপা হয়নি... তারা প্রকাশ্যে এই সংকেত দিয়েছে।’
এদিকে, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরকালে ট্রাম্প জানিয়ে দেন, তিনি কোনও ধরনের হামলায় সমর্থন করবেন না। হামলার পরিবর্তে তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ঘোষণা দেন তিনি। পশ্চিমা বিশ্ব অভিযোগ করলেও ইরান ধারাবাহিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। তবে ট্রাম্প ২০১৫ সালের চুক্তিটি বাতিল করার পর থেকে ইরান পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ জানিয়ে বলা হয়েছে, ইরানের কাছে প্রায় ২৭৪ কেজি ৪০০ গ্রাম ইউরেনিয়াম রয়েছে। যা ৯০ শতাংশ অস্ত্র গ্রেডের কাছাকাছি পর্যায়ের।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইসরায়েল গত মে মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য ওয়াশিংটনের সহায়তা চেয়েছিল।
ইরানে হামলার এই পরিকল্পনা এবং এর সম্ভাব্য সব কৌশল কয়েক মাস ধরে বিবেচনাধীন ছিল।