ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে অপুষ্টির শিকার এক শিশু -এএফপি
গাজায় নতুন করে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায়, সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ থাকায় এবং খাদ্যের তীব্র অভাবে সেখানকার জনগণ ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের সাহায্য প্রবেশে বাধা দেয়ায় ক্ষুধা ও অপুষ্টি মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এর ফলে চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতির সময় মানবিক সহায়তায় যে সুস্পষ্ট অগ্রগতি হয়েছিল, তা বদলে গেছে।
গত ১২ মে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ প্রকাশিত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন’ বা আইপিসি প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বিপর্যয়কর ক্ষুধার সম্মুখীন। এ ছাড়া, পুরো জনগোষ্ঠী তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৭১ হাজার শিশু এবং ১৭ হাজারেরও বেশি মা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। ২০২৫ সালের শুরুতে সংস্থাগুলো অনুমান করেছিল যে, ৬০ হাজার শিশুর চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।
এই বিষয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন বলেছেন, ‘গাজার পরিবারগুলো না খেয়ে আছে, অথচ তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সীমান্তে পড়ে আছে। নতুন করে সংঘাত এবং মার্চের শুরুতে মানবিক সহায়তার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা তাদের কাছে খাবার পৌঁছাতে পারছি না।’ ম্যাককেইন আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যক, যাতে গাজায় আবার সাহায্য প্রবাহিত হয়। যদি দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা অপেক্ষা করি, তবে অনেক মানুষের জন্য তা ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
গাজার জন্য আইপিসি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, নতুন সামরিক অভিযান, চলমান সম্পূর্ণ অবরোধ এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের তীব্র অভাব আগামী মাসগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, তীব্র অপুষ্টি এবং মৃত্যুর হারকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে। আইপিসি প্রতিবেদনে ১৭টি জাতিসংঘ সংস্থা ও এনজিওর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, গাজার বেশির ভাগ শিশু চরম খাদ্য বঞ্চনার শিকার। স্বাস্থ্য পরিষেবায় সীমিত প্রবেশাধিকার এবং বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের তীব্র ঘাটতির সঙ্গে উত্তর গাজা, গাজা এবং রাফা গভর্নরেটে তীব্র অপুষ্টির দ্রুত বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, ‘দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি হঠাৎ করে আসে না। এটি এমন জায়গায় দেখা যায় যেখানে খাদ্যে প্রবেশাধিকার অবরুদ্ধ থাকে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং শিশুরা বেঁচে থাকার ন্যূনতম সামগ্রী থেকেও বঞ্চিত হয়। গাজাজুড়ে শিশুদের জন্য ক্ষুধা ও তীব্র অপুষ্টি একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার এই পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছি এবং আবারও সমস্ত পক্ষকে একটি বিপর্যয় রোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গাজায় সীমান্ত ক্রসিংগুলো দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে, যা সেখানকার জনসংখ্যাকে এযাবৎকালের দীর্ঘতম অচলাবস্থার মুখোমুখি করেছে। এর ফলে বাজারে খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে, যা বেশির ভাগ পরিবারের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। একই সময়ে, ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা, যা প্রায় ১০ লাখ মানুষের জন্য চার মাস ধরে খাবার সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট ইতিমধ্যেই সাহায্য করিডরগুলোতে প্রস্তুত রয়েছে। শত শত প্যালেট জীবন রক্ষাকারী পুষ্টি চিকিৎসাও প্রবেশের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সব অংশীদার এবং খাদ্য নিরাপত্তা অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে এই খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহগুলো সীমান্তগুলো নীতিগত সাহায্য বিতরণের জন্য পুনরায় খোলা হলেই আনা এবং বিতরণ করা যায়।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং ইউনিসেফ মানবিক নীতি অনুযায়ী জীবন রক্ষাকারী সাহায্য সরবরাহের জন্য গাজায় প্রস্তুত রয়েছে। ডব্লিউএফপি গত ২৫ এপ্রিল পরিবারের জন্য গরম খাবারের রান্নাঘরের সহায়তায় তাদের শেষ খাদ্য মজুতও শেষ করে দিয়েছে। প্রায় এক মাস আগে, সমস্ত ২৫টি ডব্লিউএফপি-সমর্থিত বেকারি বন্ধ হয়ে যায়, কারণ গমের আটা ও রান্নার জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছিল।
একই সপ্তাহে, পরিবারের জন্য ডব্লিউএফপি-এর খাদ্য পার্সেলÑদুই সপ্তাহের খাদ্য রেশনসহ শেষ হয়ে যায়। ইউনিসেফ পানি এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি পরিষেবা সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু অপুষ্টি প্রতিরোধের জন্য তাদের মজুত শেষ হয়ে গেছে এবং তীব্র অপুষ্টির থেরাপিউটিক চিকিৎসার জন্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে কম।
ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএফপি সমস্ত পক্ষকে বেসামরিক নাগরিকদের চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে এবং অবিলম্বে গাজায় সাহায্য প্রবেশ করতে দিতে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতাগুলি মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে অপুষ্টির শিকার এক শিশু -এএফপি
রোববার, ২৫ মে ২০২৫
গাজায় নতুন করে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায়, সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ থাকায় এবং খাদ্যের তীব্র অভাবে সেখানকার জনগণ ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের সাহায্য প্রবেশে বাধা দেয়ায় ক্ষুধা ও অপুষ্টি মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এর ফলে চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতির সময় মানবিক সহায়তায় যে সুস্পষ্ট অগ্রগতি হয়েছিল, তা বদলে গেছে।
গত ১২ মে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ প্রকাশিত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন’ বা আইপিসি প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বিপর্যয়কর ক্ষুধার সম্মুখীন। এ ছাড়া, পুরো জনগোষ্ঠী তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৭১ হাজার শিশু এবং ১৭ হাজারেরও বেশি মা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। ২০২৫ সালের শুরুতে সংস্থাগুলো অনুমান করেছিল যে, ৬০ হাজার শিশুর চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।
এই বিষয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন বলেছেন, ‘গাজার পরিবারগুলো না খেয়ে আছে, অথচ তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সীমান্তে পড়ে আছে। নতুন করে সংঘাত এবং মার্চের শুরুতে মানবিক সহায়তার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা তাদের কাছে খাবার পৌঁছাতে পারছি না।’ ম্যাককেইন আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যক, যাতে গাজায় আবার সাহায্য প্রবাহিত হয়। যদি দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা অপেক্ষা করি, তবে অনেক মানুষের জন্য তা ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
গাজার জন্য আইপিসি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, নতুন সামরিক অভিযান, চলমান সম্পূর্ণ অবরোধ এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের তীব্র অভাব আগামী মাসগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, তীব্র অপুষ্টি এবং মৃত্যুর হারকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে। আইপিসি প্রতিবেদনে ১৭টি জাতিসংঘ সংস্থা ও এনজিওর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, গাজার বেশির ভাগ শিশু চরম খাদ্য বঞ্চনার শিকার। স্বাস্থ্য পরিষেবায় সীমিত প্রবেশাধিকার এবং বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের তীব্র ঘাটতির সঙ্গে উত্তর গাজা, গাজা এবং রাফা গভর্নরেটে তীব্র অপুষ্টির দ্রুত বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, ‘দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি হঠাৎ করে আসে না। এটি এমন জায়গায় দেখা যায় যেখানে খাদ্যে প্রবেশাধিকার অবরুদ্ধ থাকে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং শিশুরা বেঁচে থাকার ন্যূনতম সামগ্রী থেকেও বঞ্চিত হয়। গাজাজুড়ে শিশুদের জন্য ক্ষুধা ও তীব্র অপুষ্টি একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার এই পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছি এবং আবারও সমস্ত পক্ষকে একটি বিপর্যয় রোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গাজায় সীমান্ত ক্রসিংগুলো দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে, যা সেখানকার জনসংখ্যাকে এযাবৎকালের দীর্ঘতম অচলাবস্থার মুখোমুখি করেছে। এর ফলে বাজারে খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে, যা বেশির ভাগ পরিবারের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। একই সময়ে, ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা, যা প্রায় ১০ লাখ মানুষের জন্য চার মাস ধরে খাবার সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট ইতিমধ্যেই সাহায্য করিডরগুলোতে প্রস্তুত রয়েছে। শত শত প্যালেট জীবন রক্ষাকারী পুষ্টি চিকিৎসাও প্রবেশের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সব অংশীদার এবং খাদ্য নিরাপত্তা অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে এই খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহগুলো সীমান্তগুলো নীতিগত সাহায্য বিতরণের জন্য পুনরায় খোলা হলেই আনা এবং বিতরণ করা যায়।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং ইউনিসেফ মানবিক নীতি অনুযায়ী জীবন রক্ষাকারী সাহায্য সরবরাহের জন্য গাজায় প্রস্তুত রয়েছে। ডব্লিউএফপি গত ২৫ এপ্রিল পরিবারের জন্য গরম খাবারের রান্নাঘরের সহায়তায় তাদের শেষ খাদ্য মজুতও শেষ করে দিয়েছে। প্রায় এক মাস আগে, সমস্ত ২৫টি ডব্লিউএফপি-সমর্থিত বেকারি বন্ধ হয়ে যায়, কারণ গমের আটা ও রান্নার জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছিল।
একই সপ্তাহে, পরিবারের জন্য ডব্লিউএফপি-এর খাদ্য পার্সেলÑদুই সপ্তাহের খাদ্য রেশনসহ শেষ হয়ে যায়। ইউনিসেফ পানি এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি পরিষেবা সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু অপুষ্টি প্রতিরোধের জন্য তাদের মজুত শেষ হয়ে গেছে এবং তীব্র অপুষ্টির থেরাপিউটিক চিকিৎসার জন্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে কম।
ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএফপি সমস্ত পক্ষকে বেসামরিক নাগরিকদের চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে এবং অবিলম্বে গাজায় সাহায্য প্রবেশ করতে দিতে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতাগুলি মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।