গাজার ছোট্ট শিশু ফাদি আল-জান্তের অপুষ্টিতে ভোগার আগের ও পরের ছবি -এএফপি
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও গাজায় পুরোদমে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রশাসন। গতকাল শনিবার রাতভর গাজাজুড়ে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭২ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশুও। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের বেশির ভাগই গাজা সিটির বাসিন্দা। এদের মধ্যে ১১ জন নিহত হয়েছেন গাজা সিটির কাছে একটি স্টেডিয়ামে চালানো বিমান হামলায়। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ওই স্টেডিয়ামটি বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। আল শিফা হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ২০টিরও বেশি মরদেহ এসেছে তাদের কাছে। এদিকে, গাজা সিটির আরেক হাসপাতাল আল-আহলি জানিয়েছে, শনিবার দুপুরেই তাদের কাছে এসেছে ১১টি মরদেহ।
এছাড়া, গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি বসতিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮ জন, যাদের মধ্যে পাঁচজনই শিশু। হামলা হয়েছে বুরেজি শরণার্থী শিবিরেও। সেখানে নিহত হয়েছে আরও দুইজন। জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে ইসরায়েল গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার পর পাঁচ মাসে নিহত হয়েছে ৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ৬ হাজার ৪৯। তবে, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১ মাসে উপত্যকায় নিহত হয়েছে অন্তত ৫৬ হাজার মানুষ, যাদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।
নিহতদের মধ্যে অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিতর্কিত সংগঠন গাজা হিউম্যানিরিটিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলছেন যুদ্ধবিরতির খুব কাছাকাছি আছেন তারা। তার দাবি—আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানান, গাজা যুদ্ধবিরতি, ইরান এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন ইসরায়েলের কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় তিনি নাম প্রকাশ করছেন না।
এদিকে, উত্তর গাজা উপত্যকার এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরে যেতে রোববার (২৯ জুন) সতর্কতা জারি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এরমধ্যে গাজা শহরের কিছু অংশ এবং আশেপাশের এলাকার কিছু অংশও রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদরাই উত্তর গাজার মানচিত্রের সঙ্গে এক্স-এ একটি পোস্ট করে এক বিবৃতি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে দক্ষিণে আল-মাওয়াসির দিকে নাগরিকদের সরে যেতে হবে। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সক্ষমতা ধ্বংস এবং তাদের প্রতিহত করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী এই এলাকাগুলোতে তীব্র শক্তি প্রয়োগ করবে এবং সামরিক অভিযানগুলো তীব্র এবং প্রসারিত হবে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে। এতে গাজায় ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে লক্ষাধিক। সেই সঙ্গে ঘর ছাড়া হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় গত শুক্রবার জানিয়েছে, মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রগুলো থেকে বিতরণ করা আটার ব্যাগে অক্সিকোডোন নামের মাদক বড়ি পাওয়া গেছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে ওই কার্যালয় বলেছে, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য পেয়েছি। তারা আটার ব্যাগের ভেতরে এই বড়িগুলো পেয়েছেন।’ কার্যালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘কিছু মাদক ইচ্ছাকৃতভাবে গুঁড়া বা দ্রবীভূত করে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
অক্সিকোডোন একটি শক্তিশালী মাদক, যা মূলত ক্যানসার রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ও তীব্র ব্যথা উপশমে ব্যবহার করা হয়। এ মাদক অত্যন্ত আসক্তিকর এবং এর জীবননাশক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, বিভ্রম ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে গাজায় বিতরণ করা আটার ব্যাগে বড়ি পাওয়া যাওয়ার ছবি প্রকাশ হয়েছে। পরে গাজা কর্তৃপক্ষ ওই বিবৃতি দেয়।
গাজার একজন ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এ ঘটনাকে ‘গণহত্যার সবচেয়ে জঘন্য রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ফেসবুকে গাজার চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা লিখেছেন, ‘এই মাদক আমাদের সামাজিক চেতনা ধ্বংস করার একটি অস্ত্র।’ ১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা গত বুধবার জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, এ সংস্থা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করছে এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘জবরদস্তিমূলক বাস্তুচ্যুতি’ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিংবা গণহত্যার মতো অপরাধে সহায়তা করে থাকতে পারে।
গাজার ছোট্ট শিশু ফাদি আল-জান্তের অপুষ্টিতে ভোগার আগের ও পরের ছবি -এএফপি
রোববার, ২৯ জুন ২০২৫
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও গাজায় পুরোদমে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রশাসন। গতকাল শনিবার রাতভর গাজাজুড়ে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭২ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশুও। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের বেশির ভাগই গাজা সিটির বাসিন্দা। এদের মধ্যে ১১ জন নিহত হয়েছেন গাজা সিটির কাছে একটি স্টেডিয়ামে চালানো বিমান হামলায়। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ওই স্টেডিয়ামটি বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। আল শিফা হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ২০টিরও বেশি মরদেহ এসেছে তাদের কাছে। এদিকে, গাজা সিটির আরেক হাসপাতাল আল-আহলি জানিয়েছে, শনিবার দুপুরেই তাদের কাছে এসেছে ১১টি মরদেহ।
এছাড়া, গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি বসতিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮ জন, যাদের মধ্যে পাঁচজনই শিশু। হামলা হয়েছে বুরেজি শরণার্থী শিবিরেও। সেখানে নিহত হয়েছে আরও দুইজন। জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে ইসরায়েল গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার পর পাঁচ মাসে নিহত হয়েছে ৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ৬ হাজার ৪৯। তবে, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১ মাসে উপত্যকায় নিহত হয়েছে অন্তত ৫৬ হাজার মানুষ, যাদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।
নিহতদের মধ্যে অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিতর্কিত সংগঠন গাজা হিউম্যানিরিটিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলছেন যুদ্ধবিরতির খুব কাছাকাছি আছেন তারা। তার দাবি—আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানান, গাজা যুদ্ধবিরতি, ইরান এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন ইসরায়েলের কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় তিনি নাম প্রকাশ করছেন না।
এদিকে, উত্তর গাজা উপত্যকার এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরে যেতে রোববার (২৯ জুন) সতর্কতা জারি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এরমধ্যে গাজা শহরের কিছু অংশ এবং আশেপাশের এলাকার কিছু অংশও রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদরাই উত্তর গাজার মানচিত্রের সঙ্গে এক্স-এ একটি পোস্ট করে এক বিবৃতি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে দক্ষিণে আল-মাওয়াসির দিকে নাগরিকদের সরে যেতে হবে। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সক্ষমতা ধ্বংস এবং তাদের প্রতিহত করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী এই এলাকাগুলোতে তীব্র শক্তি প্রয়োগ করবে এবং সামরিক অভিযানগুলো তীব্র এবং প্রসারিত হবে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে। এতে গাজায় ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে লক্ষাধিক। সেই সঙ্গে ঘর ছাড়া হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় গত শুক্রবার জানিয়েছে, মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রগুলো থেকে বিতরণ করা আটার ব্যাগে অক্সিকোডোন নামের মাদক বড়ি পাওয়া গেছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে ওই কার্যালয় বলেছে, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য পেয়েছি। তারা আটার ব্যাগের ভেতরে এই বড়িগুলো পেয়েছেন।’ কার্যালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘কিছু মাদক ইচ্ছাকৃতভাবে গুঁড়া বা দ্রবীভূত করে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
অক্সিকোডোন একটি শক্তিশালী মাদক, যা মূলত ক্যানসার রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ও তীব্র ব্যথা উপশমে ব্যবহার করা হয়। এ মাদক অত্যন্ত আসক্তিকর এবং এর জীবননাশক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, বিভ্রম ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে গাজায় বিতরণ করা আটার ব্যাগে বড়ি পাওয়া যাওয়ার ছবি প্রকাশ হয়েছে। পরে গাজা কর্তৃপক্ষ ওই বিবৃতি দেয়।
গাজার একজন ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এ ঘটনাকে ‘গণহত্যার সবচেয়ে জঘন্য রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ফেসবুকে গাজার চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা লিখেছেন, ‘এই মাদক আমাদের সামাজিক চেতনা ধ্বংস করার একটি অস্ত্র।’ ১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা গত বুধবার জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, এ সংস্থা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করছে এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘জবরদস্তিমূলক বাস্তুচ্যুতি’ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিংবা গণহত্যার মতো অপরাধে সহায়তা করে থাকতে পারে।