দেশে আটক থাকাকালে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন- এমন অভিযোগ এনে দক্ষিণ কোরিয়ায় কিম জং উনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন পক্ষত্যাগী উত্তর কোরীয় নারী চোই মিন কিউং।
চোইকে সহায়তা করা দক্ষিণ কোরীয়ভিত্তিক এক মানবাধিকার গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে বিবিসি।
২০২৩ সালে সিউলের একটি আদালত উত্তর কোরিয়াকে তিন দক্ষিণ কোরীয় পুরুষের প্রত্যেককে ৫ কোটি ওন করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। গত বছরও ৫ কোরীয়-জাপানি পক্ষত্যাগীর প্রত্যেককে ১০ কোটি ওন করে ক্ষতিপূরণ দিতে উত্তর কোরিয়ার সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল
তিনি ১৯৯৭ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে চীন চলে গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তাকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
চোই মিন কিউং দাবি করেছেন, দেশে ফেরত যাওয়ার পর তাকে শারীরিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। এর বিচার চেয়ে শুক্রবার সিউলে মামলা করার কথা তার। মামলা হলে সেটি হবে উত্তর কোরীয় শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ায় জন্ম নেওয়া প্রথম কোনো পক্ষত্যাগীর মামলা।
দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতগুলো আগেও দক্ষিণ কোরীয়দের করা একই ধরনের মামলায় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। যদিও সেগুলোর প্রতীকী গুরুত্ব ছাড়া আর কোনো মূল্য ছিল না।
চোইয়ের মামলায় কিমের পাশাপাশি পিয়ংইয়ংয়ের আরও চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে।
পক্ষত্যাগী এই উত্তর কোরীয়কে সহায়তা করা গোষ্ঠী ডাটাবেজ সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়ান হিউম্যান রাইটস (এনকেডিবি) জানিয়েছে, তারা এ মামলা জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বুধবার এনকেডিবির দেওয়া বিবৃতিতে চোই মিন কিউং বলেছেন, “আমি আন্তরিকভাবে কামনা করছি যেন এই ছোট্ট পদক্ষেপটি স্বাধীনতা ও মানব মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে, যাতে আর কোনো নিরীহ উত্তর কোরীয় নাগরিককে এই নির্মম শাসনের অধীনে নির্যাতন ভোগ করতে না হয়।”
তিনি আরো বলেন, “উত্তর কোরীয় শাসনব্যবস্থার অধীনে নির্যাতিত ও জীবিত সাক্ষী হিসেবে আমার কাঁধে একটি গভীর ও জরুরি দায়িত্ব রয়েছে, সেটি হল—কিম পরিবারকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা।”
চোই ২০১২ সালে ফের উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে যান এবং দক্ষিণে থিতু হন। তিনি বলছেন, নির্যাতনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মানসিক ক্ষত এখনও রয়ে গেছে এবং তাকে এখনও ওষুধের ওপর চলতে হচ্ছে।
বিবিসি লিখেছে, বছরের পর বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানান অভিযোগ নথিভুক্ত করে আসছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে জেন্ডার ও শ্রেণিভিত্তিক পদ্ধতিগত বৈষম্য।
এনকেডিবির নির্বাহী পরিচালক হান্না সং বলেছেন, চোইয়ের মামলা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এখানে দেওয়ানি অভিযোগের পাশাপাশি ফৌজদারি অভিযোগও আনা হচ্ছে।
আগে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো কেবল ‘দেওয়ানি ক্ষতিপূরণ’ চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, বলেছেন তিনি।
২০২৩ সালে সিউলের একটি আদালত উত্তর কোরিয়াকে তিন দক্ষিণ কোরীয় পুরুষের প্রত্যেককে ৫ কোটি ওন করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কোরীয় যুদ্ধের সময় যুদ্ধবন্দি হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পর এ তিনজন শোষণের শিকার হয়েছিলেন বলে পরে অভিযোগ করেন তারা।
গত বছরও ৫ কোরীয়-জাপানি পক্ষত্যাগীর প্রত্যেককে ১০ কোটি ওন করে ক্ষতিপূরণ দিতে উত্তর কোরিয়ার সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬০ ও ১৯৮০-র দশকে একটি প্রত্যাবাসন প্রকল্পের আওতায় জাপান থেকে যে হাজার হাজার লোক উত্তর কোরিয়ায় ফেরেন, তাদের মধ্যে এ পাঁচজনও ছিলেন।
কয়েক দশক আগে ‘স্বর্গের মতো জীবনের’ প্রলোভন দেখিয়ে উত্তর কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে আটকে রাখা হয় ও জোর করে কাজ করানো হয় বলে অভিযোগ ছিল তাদের।
কোনো মামলা বা তার রায়ের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি উত্তর কোরিয়া।
তবে এসব রায় বাদীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় মানসিক শান্তি এনে দিয়েছিল বলে মত হান্না সংয়ের।
“জবাবদিহিতা নিয়ে এত বছরের কাজ থেকে আমরা এটা অনুধাবন করতে পারছি যে, নির্যাতনের শিকাররা কেবল আর্থিক ক্ষতিপূরণই চায় না, তারা স্বীকৃতিও চান।
“নিজেদের পক্ষে আদালতের রায় আসার অর্থ বিশাল। এটা তাদেরকে এই আশ্বাস দেয় যে, তাদের কাহিনী সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।”
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
দেশে আটক থাকাকালে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন- এমন অভিযোগ এনে দক্ষিণ কোরিয়ায় কিম জং উনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন পক্ষত্যাগী উত্তর কোরীয় নারী চোই মিন কিউং।
চোইকে সহায়তা করা দক্ষিণ কোরীয়ভিত্তিক এক মানবাধিকার গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে বিবিসি।
২০২৩ সালে সিউলের একটি আদালত উত্তর কোরিয়াকে তিন দক্ষিণ কোরীয় পুরুষের প্রত্যেককে ৫ কোটি ওন করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। গত বছরও ৫ কোরীয়-জাপানি পক্ষত্যাগীর প্রত্যেককে ১০ কোটি ওন করে ক্ষতিপূরণ দিতে উত্তর কোরিয়ার সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল
তিনি ১৯৯৭ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে চীন চলে গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তাকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
চোই মিন কিউং দাবি করেছেন, দেশে ফেরত যাওয়ার পর তাকে শারীরিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। এর বিচার চেয়ে শুক্রবার সিউলে মামলা করার কথা তার। মামলা হলে সেটি হবে উত্তর কোরীয় শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ায় জন্ম নেওয়া প্রথম কোনো পক্ষত্যাগীর মামলা।
দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতগুলো আগেও দক্ষিণ কোরীয়দের করা একই ধরনের মামলায় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। যদিও সেগুলোর প্রতীকী গুরুত্ব ছাড়া আর কোনো মূল্য ছিল না।
চোইয়ের মামলায় কিমের পাশাপাশি পিয়ংইয়ংয়ের আরও চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে।
পক্ষত্যাগী এই উত্তর কোরীয়কে সহায়তা করা গোষ্ঠী ডাটাবেজ সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়ান হিউম্যান রাইটস (এনকেডিবি) জানিয়েছে, তারা এ মামলা জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বুধবার এনকেডিবির দেওয়া বিবৃতিতে চোই মিন কিউং বলেছেন, “আমি আন্তরিকভাবে কামনা করছি যেন এই ছোট্ট পদক্ষেপটি স্বাধীনতা ও মানব মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে, যাতে আর কোনো নিরীহ উত্তর কোরীয় নাগরিককে এই নির্মম শাসনের অধীনে নির্যাতন ভোগ করতে না হয়।”
তিনি আরো বলেন, “উত্তর কোরীয় শাসনব্যবস্থার অধীনে নির্যাতিত ও জীবিত সাক্ষী হিসেবে আমার কাঁধে একটি গভীর ও জরুরি দায়িত্ব রয়েছে, সেটি হল—কিম পরিবারকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা।”
চোই ২০১২ সালে ফের উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে যান এবং দক্ষিণে থিতু হন। তিনি বলছেন, নির্যাতনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মানসিক ক্ষত এখনও রয়ে গেছে এবং তাকে এখনও ওষুধের ওপর চলতে হচ্ছে।
বিবিসি লিখেছে, বছরের পর বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানান অভিযোগ নথিভুক্ত করে আসছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে জেন্ডার ও শ্রেণিভিত্তিক পদ্ধতিগত বৈষম্য।
এনকেডিবির নির্বাহী পরিচালক হান্না সং বলেছেন, চোইয়ের মামলা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এখানে দেওয়ানি অভিযোগের পাশাপাশি ফৌজদারি অভিযোগও আনা হচ্ছে।
আগে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো কেবল ‘দেওয়ানি ক্ষতিপূরণ’ চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, বলেছেন তিনি।
২০২৩ সালে সিউলের একটি আদালত উত্তর কোরিয়াকে তিন দক্ষিণ কোরীয় পুরুষের প্রত্যেককে ৫ কোটি ওন করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কোরীয় যুদ্ধের সময় যুদ্ধবন্দি হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পর এ তিনজন শোষণের শিকার হয়েছিলেন বলে পরে অভিযোগ করেন তারা।
গত বছরও ৫ কোরীয়-জাপানি পক্ষত্যাগীর প্রত্যেককে ১০ কোটি ওন করে ক্ষতিপূরণ দিতে উত্তর কোরিয়ার সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬০ ও ১৯৮০-র দশকে একটি প্রত্যাবাসন প্রকল্পের আওতায় জাপান থেকে যে হাজার হাজার লোক উত্তর কোরিয়ায় ফেরেন, তাদের মধ্যে এ পাঁচজনও ছিলেন।
কয়েক দশক আগে ‘স্বর্গের মতো জীবনের’ প্রলোভন দেখিয়ে উত্তর কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে আটকে রাখা হয় ও জোর করে কাজ করানো হয় বলে অভিযোগ ছিল তাদের।
কোনো মামলা বা তার রায়ের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি উত্তর কোরিয়া।
তবে এসব রায় বাদীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় মানসিক শান্তি এনে দিয়েছিল বলে মত হান্না সংয়ের।
“জবাবদিহিতা নিয়ে এত বছরের কাজ থেকে আমরা এটা অনুধাবন করতে পারছি যে, নির্যাতনের শিকাররা কেবল আর্থিক ক্ষতিপূরণই চায় না, তারা স্বীকৃতিও চান।
“নিজেদের পক্ষে আদালতের রায় আসার অর্থ বিশাল। এটা তাদেরকে এই আশ্বাস দেয় যে, তাদের কাহিনী সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।”