সিন্ধু নদ শুধু একটি জলধারা নয়, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এক অদৃশ্য স্নায়ু। এই নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে চুক্তি দীর্ঘ ছয় দশক ধরে উপমহাদেশে টিকে ছিল, তা এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার পর ভারতের একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ সম্পর্ক।
পাকিস্তান এটিকে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বিবেচনা করছে। প্রশ্ন উঠছে নদী কি শুধু পানি বয়ে আনে, না কি রাজনীতির বিস্ফোরকও হয়ে উঠতে পারে? পানি নিয়ে সংঘাত কি দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীকে নতুন এক যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে?
সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য : পানি একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, অথচ উপমহাদেশে এর রাজনীতি চিরকালই অশান্তির উৎস। ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি ছয় দশকের বেশি সময় ধরে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি ভারসাম্য রক্ষাকারী চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তে এই চুক্তি স্থগিত করা ও পাকিস্তানের কড়া প্রতিক্রিয়ায় নতুন করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত, পেহেলগাম হামলা ও ভারতের প্রতিক্রিয়া : ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। এই হামলার দায় পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর চাপায় ভারত, যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। হামলার পরদিনই নয়াদিল্লি একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি ((Indus Waters Treaty - IWT) স্থগিতের ঘোষণা দেয়। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, “চুক্তি আর কখনোই পুনর্বহাল হবে না।” তার যুক্তি ছিল, “যখন শান্তি ভঙ্গ হয়, তখন চুক্তি রক্ষার প্রয়োজন থাকে না।”
পাকিস্তানের পাল্টা হুঁশিয়ারি ও নিরাপত্তা শঙ্কা : ভারতের এই ঘোষণার কড়া প্রতিবাদ জানায় পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ (NSC)। তারা জানায়, পানির প্রবাহ একতরফাভাবে বন্ধ করা হলে, তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে। কারণ সিন্ধু অববাহিকার নদীগুলো পাকিস্তানের কৃষি, অর্থনীতি ও জনজীবনের জন্য রীতিমতো লাইফলাইন। পাকিস্তানে সিন্ধুর পানি নির্ভর করে প্রায় ২৫ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা। দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব ও সিন্ধু অঞ্চলের কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে সেচব্যবস্থা মূলত এই নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
জলবণ্টনের ইতিহাস ও ভূরাজনীতি : সিন্ধু নদ উৎপত্তি করেছে তিব্বতের কৈলাস পর্বতে। এটি কাশ্মীর হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে। এর উপনদী চেনাব, ঝিলম, রবি, শতদ্রু ও বিপাশাও কাশ্মীর অঞ্চল অতিক্রম করে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। ভূরাজনৈতিকভাবে ভারত উজানের দেশ আর পাকিস্তান ভাটির দেশ এটাই এই দ্বন্দ্বের মূল।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে কাশ্মীর নিয়েই তিন-তিনটি যুদ্ধ করেছে ভারত-পাকিস্তান। দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালে ভারত প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর জের ধরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলে বড় ধরনের কৃষি সংকট দেখা দেয়। এই সংকটের পর ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদী রবি, বিপাশা ও শতদ্রু—ভারতের জন্য বরাদ্দ। পশ্চিমাঞ্চলের সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব বরাদ্দ হয় পাকিস্তানের জন্য। তবে ভারত ‘রান-অফ-দ্য-রিভার’ ধরনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করতে পারবে বলে অনুমতি ছিল, যাতে মূল প্রবাহে বাধা না পড়ে।
বর্তমান সংঘাত, সামরিক উত্তেজনা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ : পেহেলগামের হামলার পর ৭ মে ভারত সীমান্তে পাল্টা হামলা চালায়। পাকিস্তানও জবাব দেয় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। চার দিনের সংঘাতে দুই পক্ষের বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হয়। তবে সংঘাত থামলেও কূটনৈতিক উত্তেজনা থামেনি। পাকিস্তান সিন্ধু চুক্তি লঙ্ঘনকে যুদ্ধের প্রাক-কল্প হিসেবে দেখছে। ইসলামাবাদের ভাষ্যমতে, পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত।
এক সিন্ধু কমিশনের সাবেক সদস্য জানিয়েছেন, “পানির গতিপথ পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা পাকিস্তানের খাদ্যনিরাপত্তা ও কৌশলগত অবস্থানকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করবে।”
চুক্তি লঙ্ঘনের আইনি প্রতিকার কি সম্ভব : সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে তিন ধাপদুই দেশের সিন্ধু কমিশন, নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং স্থায়ী সালিস আদালত (PCA)। যদিও (PCA) বলেছে, চুক্তি স্থগিত হলেও আদালতের বিচারিক ক্ষমতা প্রযোজ্য থাকবে, তবুও ভারত এই আদালতের রায় মানবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। অতীতে ভারত (PCA)-এর রায়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে।
নতুন চুক্তির সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ : কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি নবায়িত বা নতুন পানি চুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক দানিশ মুস্তফার মতে, পাকিস্তান এই সংকটকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর ওপর কিছু নিয়ন্ত্রণ দাবি করতে পারে।
অপরদিকে, ভারতও চাইবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পানি ব্যবহারে নমনীয়তা।
তবে বাস্তবতা হলো, দুই পক্ষই বর্তমানে চরম অবিশ্বাসে নিমজ্জিত। পাকিস্তানের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মালিক আমিন আসলাম বলেছেন, “আলোচনার পথটাই এখনো সবচেয়ে বাস্তবসম্মত। তবে তা সম্ভব হবে কিনা, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।”
সিন্ধু পানি চুক্তি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিরল এক সহযোগিতার নিদর্শন। কিন্তু আজ সেই চুক্তিই পরিণত হয়েছে সংঘাতের কেন্দ্রে। একে অপরকে দোষারোপের রাজনীতি, ইতিহাসের রক্তাক্ত পটভূমি ও জিওপলিটিক প্রতিযোগিতা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে জটিল করে তুলেছে। পানি এখন শুধু জীবন নয়, রাজনীতির হাতিয়ারও বটে। এই পরিস্থিতিতে যদি সংলাপ ও কূটনীতির পথ খোলা না থাকে, তাহলে সংঘাত হয়তো অনিবার্য হয়ে উঠবে এবং এই সংঘাত শুধু ভারত-পাকিস্তানকেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে টেনে নিতে পারে বিপদের মুখে।
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
সিন্ধু নদ শুধু একটি জলধারা নয়, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এক অদৃশ্য স্নায়ু। এই নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে চুক্তি দীর্ঘ ছয় দশক ধরে উপমহাদেশে টিকে ছিল, তা এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার পর ভারতের একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ সম্পর্ক।
পাকিস্তান এটিকে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বিবেচনা করছে। প্রশ্ন উঠছে নদী কি শুধু পানি বয়ে আনে, না কি রাজনীতির বিস্ফোরকও হয়ে উঠতে পারে? পানি নিয়ে সংঘাত কি দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীকে নতুন এক যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে?
সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য : পানি একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, অথচ উপমহাদেশে এর রাজনীতি চিরকালই অশান্তির উৎস। ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি ছয় দশকের বেশি সময় ধরে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি ভারসাম্য রক্ষাকারী চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তে এই চুক্তি স্থগিত করা ও পাকিস্তানের কড়া প্রতিক্রিয়ায় নতুন করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত, পেহেলগাম হামলা ও ভারতের প্রতিক্রিয়া : ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। এই হামলার দায় পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর চাপায় ভারত, যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। হামলার পরদিনই নয়াদিল্লি একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি ((Indus Waters Treaty - IWT) স্থগিতের ঘোষণা দেয়। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, “চুক্তি আর কখনোই পুনর্বহাল হবে না।” তার যুক্তি ছিল, “যখন শান্তি ভঙ্গ হয়, তখন চুক্তি রক্ষার প্রয়োজন থাকে না।”
পাকিস্তানের পাল্টা হুঁশিয়ারি ও নিরাপত্তা শঙ্কা : ভারতের এই ঘোষণার কড়া প্রতিবাদ জানায় পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ (NSC)। তারা জানায়, পানির প্রবাহ একতরফাভাবে বন্ধ করা হলে, তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে। কারণ সিন্ধু অববাহিকার নদীগুলো পাকিস্তানের কৃষি, অর্থনীতি ও জনজীবনের জন্য রীতিমতো লাইফলাইন। পাকিস্তানে সিন্ধুর পানি নির্ভর করে প্রায় ২৫ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা। দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব ও সিন্ধু অঞ্চলের কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে সেচব্যবস্থা মূলত এই নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
জলবণ্টনের ইতিহাস ও ভূরাজনীতি : সিন্ধু নদ উৎপত্তি করেছে তিব্বতের কৈলাস পর্বতে। এটি কাশ্মীর হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে। এর উপনদী চেনাব, ঝিলম, রবি, শতদ্রু ও বিপাশাও কাশ্মীর অঞ্চল অতিক্রম করে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। ভূরাজনৈতিকভাবে ভারত উজানের দেশ আর পাকিস্তান ভাটির দেশ এটাই এই দ্বন্দ্বের মূল।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে কাশ্মীর নিয়েই তিন-তিনটি যুদ্ধ করেছে ভারত-পাকিস্তান। দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালে ভারত প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর জের ধরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলে বড় ধরনের কৃষি সংকট দেখা দেয়। এই সংকটের পর ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদী রবি, বিপাশা ও শতদ্রু—ভারতের জন্য বরাদ্দ। পশ্চিমাঞ্চলের সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব বরাদ্দ হয় পাকিস্তানের জন্য। তবে ভারত ‘রান-অফ-দ্য-রিভার’ ধরনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করতে পারবে বলে অনুমতি ছিল, যাতে মূল প্রবাহে বাধা না পড়ে।
বর্তমান সংঘাত, সামরিক উত্তেজনা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ : পেহেলগামের হামলার পর ৭ মে ভারত সীমান্তে পাল্টা হামলা চালায়। পাকিস্তানও জবাব দেয় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। চার দিনের সংঘাতে দুই পক্ষের বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হয়। তবে সংঘাত থামলেও কূটনৈতিক উত্তেজনা থামেনি। পাকিস্তান সিন্ধু চুক্তি লঙ্ঘনকে যুদ্ধের প্রাক-কল্প হিসেবে দেখছে। ইসলামাবাদের ভাষ্যমতে, পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত।
এক সিন্ধু কমিশনের সাবেক সদস্য জানিয়েছেন, “পানির গতিপথ পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা পাকিস্তানের খাদ্যনিরাপত্তা ও কৌশলগত অবস্থানকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করবে।”
চুক্তি লঙ্ঘনের আইনি প্রতিকার কি সম্ভব : সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে তিন ধাপদুই দেশের সিন্ধু কমিশন, নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং স্থায়ী সালিস আদালত (PCA)। যদিও (PCA) বলেছে, চুক্তি স্থগিত হলেও আদালতের বিচারিক ক্ষমতা প্রযোজ্য থাকবে, তবুও ভারত এই আদালতের রায় মানবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। অতীতে ভারত (PCA)-এর রায়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে।
নতুন চুক্তির সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ : কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি নবায়িত বা নতুন পানি চুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক দানিশ মুস্তফার মতে, পাকিস্তান এই সংকটকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর ওপর কিছু নিয়ন্ত্রণ দাবি করতে পারে।
অপরদিকে, ভারতও চাইবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পানি ব্যবহারে নমনীয়তা।
তবে বাস্তবতা হলো, দুই পক্ষই বর্তমানে চরম অবিশ্বাসে নিমজ্জিত। পাকিস্তানের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মালিক আমিন আসলাম বলেছেন, “আলোচনার পথটাই এখনো সবচেয়ে বাস্তবসম্মত। তবে তা সম্ভব হবে কিনা, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।”
সিন্ধু পানি চুক্তি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিরল এক সহযোগিতার নিদর্শন। কিন্তু আজ সেই চুক্তিই পরিণত হয়েছে সংঘাতের কেন্দ্রে। একে অপরকে দোষারোপের রাজনীতি, ইতিহাসের রক্তাক্ত পটভূমি ও জিওপলিটিক প্রতিযোগিতা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে জটিল করে তুলেছে। পানি এখন শুধু জীবন নয়, রাজনীতির হাতিয়ারও বটে। এই পরিস্থিতিতে যদি সংলাপ ও কূটনীতির পথ খোলা না থাকে, তাহলে সংঘাত হয়তো অনিবার্য হয়ে উঠবে এবং এই সংঘাত শুধু ভারত-পাকিস্তানকেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে টেনে নিতে পারে বিপদের মুখে।